নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুলালের ছানা ঝরানো শেষ হলে ছানা নিয়ে গুটি বানানোর কাজ শুরু করে।বড় ছেলে দুর্জয় সন্দেশের কাজ করছিল বারান্দায়।রিমি ভাত খাওয়া শেষ করে বারান্দায় এসে বসে।
-রিমি দেখতো তোর মালো দিদি পাড়া বেড়াতে কোথায় গিয়েছে?
মায়ের কথা শুনে রিমি তার মেজদি মালবিকাকে খুঁজতে যায়।
-তোমার মেজ মেয়েটি কিন্তু টো টো কোম্পানীর ম্যানেজার।
-একটু আগেই বেড়িয়েছে।বয়স কম।এখন বেড়াবেনাতো আর কখন বেড়াবে?বিয়ে দিলেইতো আমার মত অবস্থা হবে।
দুলালের কথার পিঠে সিঁথি উত্তর করে।
দুলাল আর কথা বাড়ায়না।জানে আর দু’এক কথাতেই ঝগড়া লেগে যাবে।সে রসগোল্লার জন্য গুঁটি পাকাতে থাকে।
-আমার সন্দেশের কাজ শেষ।হাফ টিনের মধ্যে রেখে এলাম।
দুর্জয় তার মাকে জানায়।
-দুর্জয় বাপ,বেলা পড়ে আসছে,তুই মাঠে যা।মুগলীদের নিয়ে আয়।
দুর্জয় খাটে নিয়ে বাড়ির পিছনের বাঁশ ঝার দিয় বেরিয়ে যায়।মালবিকার সাথে রিমি আর ধ্রুব নাচতে নাচতে বাড়িতে আসে।
-মালো মা যাতো ঘাট থেকে ছানার ন্যাকড়াগুলো ধুয়ে নিয়ে আয়।
সিঁথি বলে।
-এত্তগুলো ন্যাকড়া আমি একা পরিস্কার করবো?পারবোনা।
-তুই একা যাবি কেন?রিমিকে নিয়ে যা।
মালবিকা আর রিমি বাল্টি নিয়ে বেড়িয়ে যায়।পিছনে ধ্রুব।
-ধ্রুব যাসনা।
সিঁথি মানা করে।
কে শোনে কার কথা।ধ্রুব দিদিদের পিছনে দৌড় লাগায়।
মালবিকা ছানার ন্যাকড়াগুলি নদীর জলে ধোওয়া শুরু করে।কিছুক্ষণের মধ্যে তার চারপাশে চ্যালা আর টেংরা মাছে কিলবিল কিলবিল করতে শুরু করে।
-দিদি মাছ ধরবি?
রিমি বলে।
-কি দিয়ে ধরবি?এই ন্যাকড়া দিয়ে ধরলে আঁশটে গন্ধ হয়ে যাবে ন্যাকড়ায়।মা ফাটাবেনি।
-বাঁশের উপর কার যেন শাড়ি মেলা আছে,ওইটা নিয়ে আসি?
রিমির কথা শেষ হতেনা হতে ধ্রুব দৌড়ে গিয়ে কাপড় পেড়ে আনে।
সিঁথি বেগুন কাটছিল রান্না ঘরের বারান্দায় বসে।রেণু পিসী উঠোন ঝাটা দিয়ে পরিস্কার করছিল।মালবিকা আর রিমিকে বালতি ভরা ছোট মাছ আনতে দেখে সিঁথি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।চালের আড় থেকে কঞ্চি নামিয়ে এনে দুই মেয়েকে সপাসপ পিঠের উপর কয়েক ঘা লাগিয়ে দেয়।ধ্রুব ভয়ে ঘরের মধ্যে দৌড়ে চলে যায়।সিঁথি বাঁশ ঝারে সব মাছ ফেলে দিয়ে আসে।
-ওদের না মারলেই পারতে?
-কেন তুমি কি ওদের কান্ড দেখলে না? এক বালতি চ্যালা মেরে এনেছে নদী হতে।তুমি কি ওদের মাছ খাওয়াওনা?
দুলালের কথায় ঝমঝম করে সিঁথি বলে উঠে।
-মেয়েরা শখ করে মাছ ধরেছিল।
-ওতো মাছ কে কুটতো?তুমি?
দুলাল রসগোল্লা জাল দেওয়ার কাজে মনযোগ দেয়।দুর্জয় গরু নিয়ে ফিরে আসে।তার কোলে অয়ন।মালবিকা আর রিমির কান্না বন্ধ হয়ে যায় অয়নকে দেখে।
-দেখ কারা এসেছে?
দুর্জয় অয়নকে মালবিকার কোলে দিতে দিতে বলে।
রঘুনাথকে বাড়িতে আসতে দেখে সিঁথি মাথায় ঘোমটা দিয়ে উঠোনে নেমে আসে।রঘুনাথের সাথে তার মা বেণুদাসী আর সিঁথির বড় মেয়ে স্বপ্না। সিঁথি তার বড় নাতির হাত হতে ব্যাগ নিয়ে নেয়। রবির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
-বেয়াই কেমন আছেন? বাবাজির পথে কোন কষ্ট হয়নিতো?
-না মা।
রঘুনাথ শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে প্রণাম করে।দুর্জয় ওদের সবাইকে ঘরের মধ্যে নিয়ে যায়।রবি ঘরে ঢুকেই কাঠের সিঁড়ি দিয়ে উপরের ঘরে চলে যায়।
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই মিলে বারান্দায় বসে।
-রেণু এই ভুটায় তেল নাই মনে হয়।তেল ভরে আন।
ভুটার আলো টিম টিম করতে দেখে দুলাল রেণুকে বলে।
রেণু এই বাড়ির আশ্রিত।সম্পর্কে দুলালদের কেউ নয়।বয়স চল্লিশ।চৌদ্দ বছর বয়সে বিধবা হওয়ার পর এ বাড়ি ও বাড়ি হয়ে দুলালদের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে।সে ভুটা রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে কেরোসিন তেল ভরে নিয়ে আসে।
-বিয়াই একটা প্রস্তাব ছিল।
বেণুদাসী দুলালকে বলে।
-কি প্রস্তাব বেয়ান?
-বেয়াই,আমি আর আপনারা ছাড়া রঘুনাথের কেউ নেই।আমাদের ওদিক থেক লোকজন সব ভারতে চলে যাচ্ছে।জমির দাম পাওয়া যাচ্ছেনা।তাই চাচ্ছিলাম যা জমি-জমা আছে তা বেচে আপনাদের এখানে চলে আসতে।
দুলাল চুপ করে থাকে।ভাবে বড় মেয়েটাকে একদম ভুল হাতে বিয়ে দিয়েছে।বড় ঘর দেখে বিয়ে দিয়েছিল।রঘুনাথ লম্বা চওড়া দেখতেও সুন্দর।কিন্তু দুনিয়ার অলস।কোন কাজ-কর্ম করেনা।যতদিন বাপ বেঁচেছিল ভালোই চলছিল।বাপটা মারা যাওয়ার পর জমি বেচে বেচে দিন চালাচ্ছে।
-বেয়াই কিছু ভাবছেন?
-আজ রাত্রে একটু ভাববার সময় দেন।আগামীকাল আলোচনায় বসি।
দুইদিন শ্বশুর বাড়িতে কাটিয়ে রঘুনাথ বাড়ি চলে যায়।এদিকে দুলাল সব আয়োজন করতে থাকে।বিধু দাস বাড়ি-ঘর বেচে ওপারে চলে যাবে।দুলাল বিধুর বসতবাটি রঘুনাথের জন্যে কিনে ফেলে।এক বছরের মধ্যেই রঘুনাথ ওদের বেশীর ভাগ সম্পত্তি বিক্রি করে শ্বশুর বাড়ির কাছে চলে আসে।এখানে রঘুনাথের তৃতীয় সন্তান চয়ন জন্ম গ্রহণ করে।
১৯৭০ সাল।দুর্জয় পুরোদুস্তর নৌকার পক্ষে কাজ করে।দুলাল ছেলেকে নিষেধ করেছিল কিন্তু দুর্জয় বাবার কথা শুনেনি।যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালে সিংড়া থানায় এপ্রিল মাসে দুলালকে হাজিরা দিতে হয়।
-দুলাল বাবু আপনার ছেলে মুক্তি আছে?
একজন সেনা অফিসার দুলালের কাছে জানতে চায়।
দুলালের পরনে ধুতি আর পাঞ্জাবি।গলায় কাঠের মালা।কপালে চন্দনের তিলক।
-না স্যার।কেউ হয়তো ভুল তথ্য দিয়েছে আপনাদের।আমরা সামাণ্য মিষ্টি বিক্রেতা।আমি আর আমার ছেলে বিভিন্ন গ্রামের হাটে হাটে মিষ্টি বিক্রি করি।
-গলায় ও কিসের মালা?
অফিসারটি জানতে চায়।
-তুলসী কাঠের মালা।
-কেন পড়েছো?
-আমরা বরেগী স্যার।এটি ধর্মীয় রীতি।
-তুমি হিন্দু নও?
-জ্বি স্যার আমি হিন্দু এবং বরেগী।
অফিসারটি চেয়ার ছেড়ে উঠে আসে।দুলালের কপালে পিস্তল ঠেসে ধরে। দুলাল নির্ভিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
দুর্জয় হাঁপাতে হাঁপাতে মাকে এসে খবর দেয় যে,বাবা ভাগের বাড়ির ওদিক দিয়ে হেঁটে আসছে। হারিকেন হাতে নিয়ে সিঁথি বাড়ি হতে নদীর ঘাটের দিকে এগিয়ে আসে।জ্যোৎস্না রাত্রি।দৃঢ় গঠনের দুলালকে এগিয়ে আসতে দেখে সিঁথি।সাথে আনু।
ছোট ছেলেমেয়ে কারও চোখে ঘুম নেই।সবার চোখে বাবাকে ফিরে পাবার উচ্ছাস।রিমি বারবার জানতে চায় থানায় নিয়ে গিয়ে কি কি করেছে তার বাবার সাথে।দুলাল সবাইকে খুলে বলে।
-অফিসারটি যখন আমার মাথায় পিস্তল ধরলো তখন আমি তাকে বললাম গুলি করতে।আমি গলায় কাঠের মালা আর কপালে তিলক পড়া অবস্থায় মারা যেতে চাই।আমার কথা শুনে অফিসারটি কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকে।তারপর পিস্তল নামিয়ে নিয়ে আমার পিঠ চাপড়ে বলে যে সাবাস বাঙাল।
-বাবা তোমার ভয় লাগেনি?
মালবিকা জানতে চায়।
-ভয়তো লেগেছিলই বাবা।তবে কেন জানিনা ভীষণ জেদ চেপে গিয়েছিল।
রাত্রে ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে গেলে দুলাল সিঁথিকে ডেকে উঠায়।
-কি হলো?
ঘুম জড়ানো গলায় সিঁথি জানতে চায়।
-ছেলেমেয়েদের বালুরঘাটে পাঠিয়ে দিতে হবে।
-কেন?
-দেশের অবস্থা ভালোনা। সরকার আর্মি নামিয়ে দিয়েছে।গতমাসে ঢাকায় আর্মিরা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।অনেক লোক মারা গিয়েছে।মেয়েদের উপরও অত্যাচার হচ্ছে।
স্বামীর কথায় সিঁথির ঘুমের রেস কেটে যায়।
-বল কি?তাহলে তো খুব ভয়ের কথা।
-দেখি আগামীকাল হারাণ জ্যাঠাদের সাথে আলোচনা করি।তারা কি করবে জেনে নিই।
রিমি তার ছোট বোন স্মৃতিকে নিয়ে ঘাটপার থেকে আসছিল।পথে দেখে নগেন কাকাদের বাড়ির সামনে মোষের গাড়ি।তাতে কাঁসা আর পিতলের বাসন পত্র বোঝাই করে রাখা।নগেন কাকারা চার ভাই মিলে সেই মালপত্র নামাচ্ছে।
-বাবা জানো নগেন কাকারা এক মোষের গাড়ি ভর্তি বাসনপত্র এনেছে আজ।
-ওগুলো লুটের মাল।
খেতে খেতে দুলাল জবাব দেয়।
-লুটের মাল মানে কি বাবা?
ধ্রুব বাবার কাছে প্রশ্ন করে।
-বড় হলে বুঝবি।
দুলাল উত্তর দেয়।
নিঃশব্দ দূরত্বে (১) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (২) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৩) (Click This Link)
চলব…………
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৬
সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। উৎসাহিত হলাম।
২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০৬
নীলপরি বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৬
সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ নীলপরি।
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৭
সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪০
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সুন্দর হচ্ছে।চলমান রাখুন।