নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খন্ডিত রুপকথা(১০ম অংশ)

১০ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:১৭


-ভেড়ামোহনার কালো জল কেমন শীতল,দীপ্ত তুমি জানো?
জগতজ্যোতির কথায় দীপ্ত কোন উত্তর করেনা। জগতও যেন উত্তর জানতে চাওয়ার জন্য প্রশ্ন করেনি।সে বলতে থাকে-রাতেই আমার লাশ তারা বিলের জলে খুঁজে পায়।পরদিন ছিল ঈদ।বাজারের মধ্যে এক খুঁটির সাথে রাজাকাররা আমার লাশ বেঁধে রাখে, সবাইকে দেখানোর জন্যে।পাকিস্থানীরা আমাকে যেমন ভয় পেতো তেমনই আমার লাশকেও ভয় পেয়েছিল মনে হয়। দিনে সবাইকে ডেকে আমার বেঁধে রাখা মৃতদেহ দেখালো।এক রাজাকার আবার অতি উৎসাহি হয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্লান্ত হলে আরোগ্য ভবনের বারান্দায় গিয়ে বসলো।সে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলা শুরু করলো,শালা মালোওয়ানের বাচ্চারা দেখ ভারতীয় দালালের পরিণতি।মুক্তিযোদ্ধার পরিণতি।পাকিস্থানী আর্মি আর রাজাকাররা সবার বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিলো। কয়েকজন গিয়ে আমার বাবা-মাকে ধরে আনে।আমার লাশ দেখিয়ে জানতে চায়,এটা জগতজ্যোতির লাশ কিনা।মা চোয়াল শক্ত করে জানায়,এটা তার ছেলের লাশ নয়।
-দাদা,তোমার মা তোমার মৃতদেহ অস্বীকার করলো কেন?
দীপ্ত জানতে চায়।
আসলে এর কোন সঠিক উত্তর আমার কাছেও নেই।হয়তো পাকিস্থানীদের কনফিউজড করতে চেয়েছে।হয়তো আমার ভাইটির জীবন রক্ষার তাগিদে আমাকে অস্বীকার করেছে।আসলে আমার মাই ভালো বলতে পারবে কেন আমার মৃতদেহ অস্বীকার করেছিল।

আমি ১৯৬৯ সালে ভারতের গৌহাটিতে যাই আর সেখানে নকশালপন্থীদের সাথে জড়িয়ে পড়ি।নকশালদের সাথে থাকার সময় আমার অস্ত্র,গোলাবারুদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা হয়।১৯৭১ সালে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।টেকেরহাট সাব-সেক্টরে আমার নেতৃত্বে একদল চৌকস গেরিলা নিয়ে গঠিত হয় “দাস প্লাটুন” বা “দাস পার্টি”।আমাদের সবচাইতে সফল অপারেশন ছিল পাকিস্থানী বাহিনীর বার্জ ডুবিয়ে দেওয়া।পরবর্তিতে পাহাড়পুর অপারেশন,বানিয়াচংয়ে কার্গো বিধ্বস্ত করি,বানিয়াচং থানায় সফল অপারেশন চালাই।তবে বদলপুর অপারেশনের কথা না বললেই নয়। আমার সঙ্গে এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিল ইলিয়াস,বানিয়াচং এর মমিন,আমির,খালেক মাস্টার,ধন মিয়া,আজমিরীগঞ্জের কাজল,মতিউর,নিত্যানন্দ,রশীদ,নিপেন্দ্র,ছাতকের আয়ুব,মজিদ আর দিরাই উপজেলার হোসেন ও নীলু।আমরা আজমিরীগঞ্জ,মারকুলি ও গুঙ্গিয়ারগাঁও অঞ্চলে শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস করে ফেলি।ফলে আমরা যখন বদলপুর আক্রমণ করি তখন ওরা গুলি ছোঁড়ার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছিল।
-এক্কেবারে হলিউড স্টাইল।
দীপ্ত বলে উঠে।
জগতজ্যোতি হো হো করে হেসে উঠে।বলে,দীপ্ত আমাদের সময় রেম্বু ছিলনা।শোন আমাদের ভয়ে পাকিস্থানী আর্মিরা এ অঞ্চলে তাদের নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়।তবে আক্ষেপ হলো আমার শেষযুদ্ধ।
-নৌকায় দাদা আছেননি?
-কে ইলিয়াস?
জগতজ্যোতি জানতে চায়।
-হ্যাঁ,দাদা।
-আয় নৌকায় আয়।দীপ্ত আর আমি যুদ্ধদিনের গল্প করছি।
ইলিয়াস নৌকায় চড়ে।দীপ্ত সালাম দেয়।
-তা কতদূর গড়িয়েছে গল্প?
ইলিয়াস জানতে চায়।
জগতজ্যোতি চুপ করে থাকে।দীপ্তও কোন কথা বলেনা।ইলিয়াস আবার জানতে চায়।দীপ্ত জানায় শেষযুদ্ধের গল্প বলতে চাইছিল শ্যামা দাদা।এবার সবাই চুপ হয়ে যায়।দীপ্ত খেয়াল করে ইলিয়াসের গালের জলে চাঁদের আলো চমকাচ্ছে।
-দাদা,তুমি কি জানো “যাইগ্যা” শব্দটি আজও আমার কানে ভাসে।
জগতজ্যোতি মৃদ হাসে,কিছু বলেনা।
-দীপ্তদা যুদ্ধক্ষেত্রে সাহস ও দুঃসাহস দুই ভালো কিন্তু অতি সাহস বিপদের কারণ।দাদা,জানতো পাকিস্থানী বাহিনী তাকে ধরার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি ও কৌশল নিয়োগ করবে তবুও সেদিন আমাদের ১২ জনকে নিয়ে রাজাকারদের তাড়া করলো।সেদিন রাজাকাররা ছিল আমাদের জন্য টোপ।আর আমাদের সাথে এম্যুনিশনও কম ছিল।মূলত বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি ছিলনা আমাদের।আমরা শাহজীবাজার বিদ্যুত লাইন বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ১৬ নভেম্বর সকাল আটটায় ভেড়ামোহনা নদীতে পৌঁছি।বদলপুর ইউপি অফিসের সামনে পৌঁছার পর দেখি রাজাকাররা ব্যবসায়ীদের কাছ হতে চাঁদা উঠাচ্ছে।ওদের দেখেই দাদা নির্দেশ দেন তেলাপোকাগুলিরে পিষে মারতে।আমরা তাড়া করি।আমাদের গুলিতে ওদের দু’জন মারা যায়।আর একটা পালিয়ে যায়।এটা ছিল একটা সুপরিকল্পিত ফাঁদ।ফেরার পথে পাকিস্থানী বাহিনীর ভারী অস্ত্র গর্জে ওঠে।
-আপনারা এ্যামবুশে পা দিয়েছিলেন।
দীপ্ত বলে।
-ও দাদা,দীপ্তদাদা কি বলে?এ্যামবুশে পা দিয়েছি।
জগতজ্যোতি কথা বলেনা।জগতজ্যোতির শরীর ভেদ করে জ্যোৎস্নার আলো চলে যায়।ধীরে ধীরে জগতজ্যোতির শরীর বাতাসে মিলিয়ে যায়।ইলিয়াস হাউমাউ করে কেঁদে উঠে।দীপ্ত উঠে দাঁড়ায়।নৌকা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে।দূর হতে ইলিয়াসের কান্নার করুণ সুর ভেসে আসে।ইলিয়াস কাঁদছে আর বলছে,দাদা আমারে ফেলে তুমি কেন চলে গেলে।

(৬)
-আপা “শিলালিপি” চমৎকার একটি নাম।আপনার দেওয়া?
রাজুর সামনে বসে থাকা মহিলা মাথা নাড়ান।
-আপনার ছেলের বয়স তখন সাত বছর ছিল?
মহিলা রাজুর কথার উত্তর করেননা।চুপ করে থাকেন।রাজু বুঝতে পারে উনি আজকে কথা বলার মুডে নেই।সে বাড়ি হতে বেড়িয়ে আসে।সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেইলী রোডে আসে।

(চলবে)

১ম অংশ (Click This Link)
২য় অংশ (Click This Link)
৩য় অংশ (Click This Link)
৪র্থ অংশ (Click This Link)
৫ম অংশ (Click This Link)
৬ষ্ঠ অংশ (Click This Link)
৭ম অংশ (Click This Link)
৮ম অংশ (Click This Link)
৯ম অংশ (Click This Link)


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ১০ ম পর্ব পড়লাম।
আগের পর্ব গুলো কি পড়েছিলাম?

যাই হোক, না পড়লে পরে নিব।

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:০৬

সুদীপ কুমার বলেছেন: পড়েছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.