নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খন্ডিত রুপকথা (৫ম অংশ)

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৫৮


-গতকাল বেশ বৃষ্টি হয়েছে।
-এজন্য ঘুম খুব গাঢ় হয়েছিল আমার।
ঘরের ভেতর ঈমান আলী প্রবেশ করে।
-দীপ্ত বেটা তুমি কি কিছু বলছিলে?
-না তো চাচা।
-বারান্দা হতে মনে হলো তুমি কারও সাথে কথা বলছিলে।
-ভুল শুনেছেন চাচা।আচ্ছা চাচা গতমাসে চুকনগরে কি ঘটেছিল?
ঈমান আলী থমকে যায়।জানালার কাছে যায়।বাহিরে উঁকি মারে।কিছু দেখার চেষ্টা করে।তারপর ফিরে আসে দীপ্তর কাছে।
-বেটা দেয়ালেরও কান আছে।বলা মুশকিল,শুধু মনে রেখো মে মাসের দশ তারিখে পাটখোলায় দোজখ ভেঙ্গে পড়েছিল।বৃদ্ধ বয়সে এমন কিছু দেখবো কল্পনাতেও ছিলনা।ওই ঘটনার পরই বাড়ির সবাইকে ইণ্ডিয়াতে পাঠিয়ে দিয়েছি।শুধুমাত্র আমি আর তোমার চাচী রয়েছি।
-চাচা,ভয় লাগেনা?
-ভয় কিসের বেটা? তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে।ভয় লাগেনা।তবে বাড়ির পশুগুলির জন্য কষ্ট হয়।
-কেন চাচা?
-আর বলোনা সে কথা।রাজাকাররা আসে আর একটা করে গরু নিয়ে চলে যায়।
-এই যে রাজাকার যারা হয়েছে তারা মূলত আগে কোন দল করতো?
ঈমান আলী চুপ মেরে যায়।তারপর কথা ঘুরিয়ে ফেলে।
-তুমি বস বাপ।তোমার চাচী চা নিয়ে আসতেছে।
ঈমান আলী ঘর হতে বেরিয়ে যায়।
বিবেক হো হো করে হেসে ফেলে।দীপ্ত অবাক চোখে তাকায়।
-শোন দীপ্ত,চাচা তোমারে মুক্তিযোদ্ধার ইনফরমার ভেবেছে।তুমি যে ২০১৮ সাল হতে তার বাড়িতে এসেছো তা সে কল্পনাও করেনি।

চা জল-খাবার খেয়ে দীপ্ত পাটখোলার দিকে হাঁটা শুরু করে।(পাটখোলার নাম পড়ে বদলে গিয়েছে।সম্ভবত কাঁঠালতলা হয়েছে)
-তুমি নাদীর আলীর কবিতা পড়েছো?
বিবেকের কথায় অবাক হয় দীপ্ত।ভাবে এখন আবার কবি আর কবিতা কেন?
-এই যে তুমি কবিতা-টবিতা কিসব ছাইপাস লিখ,তাই বলছিলাম আর কি।
-না চিনিনা।কেন কি হয়েছে?
-কর্ণেল নাদীর আলী।বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত।এখন সে পাঞ্জাবী কবি ও লেখক।বেশ নাম করেছেন লিখে-টিখে।তিনি তার এক গ্রন্থে লিখেছেন-“আমাকে যখন নির্দেশে দেওয়া হলো তখন বলা হয়েছিল-এই স্থান মুজিবের জন্মভূমি।যতগুলি বেজন্মা পাবে সব হত্যা করবে।আর মনে রেখ কোন হিন্দু যেন জীবিত না থাকে”।মূলত পাকিস্থানীরা জাতিগত নিধন চালিয়েছিল।তবুও দেখে কত বাঙালী আছে এখনও স্টকহোম সিনড্রমে ভুগছে।
-এটা দূর করার কোন রাস্তা নেই?
বিবেক কোন কথা বলেনা।ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে যায়।সময় পিছাতে থাকে।দ্রুতবেগে।

দীপ্ত যখন পাটখোলায় পৌঁছায়,তখন রাত নেমে এসেছে।ঘুটঘুটে অন্ধকার।দীপ্তর পায়ে কাদা লাগে।দীপ্ত পা ঝেড়ে আলোর কাছে আসে।পায়ের দিকে তাকায়।কাদা নয় থকথকে রক্ত ভরে আছে ওর পায়ে।দীপ্ত ফ্যাকাশে দৃস্টিতে বিবেকের দিকে তাকায়।বিবেক সামনে স্টর্চ মারে।দীপ্তর মুখ দিয়ে কথা সরেনা।যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু বাঙালীর লাশ।পুরুষের লাশ।নারীর লাশ।শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা-যুবক-যুবতীর লাশের স্তূপ চারপাশে।
১৯৭১ সাল।১০ মে।চুকনগরের পাটখোলায় হাজার দশেক মানুষ অপেক্ষায় ছিল কখন বর্ডার ক্রস করবে।সকালের আলো বেশ অন্যরকম ছিল সেদিন।দুটি পাকিস্থানী আর্মির ট্রাক পাটখোলায় এসে থেমে যায়।সৈন্যরা শান্ত ভঙ্গিতে নেমে আসে।তারপর ফায়ার শুরু করে।গুলি শেষ হয়ে গেলে বেয়োনেট চার্জ শুরু করে।যখন তারা বুঝে যায় আর কেউ জীবিত নেই,তখন হাসতে হাসতে ট্রাকে উঠে চলে যায়।

দীপ্ত সারারাত লাশের মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।সকাল হলে যন্ত্রের মত চলা শুরু করে।মৃতদেহগুলি দেখে।এক মা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে মরে পড়ে আছে।বাবা তার মেয়েকে বুলেট থেকে বাঁচাতে চেয়েছে কিন্ত কেউ বাঁচেনি।দীপ্ত কল্পনা করে দশ হাজার মানুষ যখন এখানে জীবিত ছিল তখন কেমন প্রাণ-চঞ্চল ছিল এই স্থান।আর এখন শ্মশানের নীরবতা গ্রাস করেছে সবকিছু।

-গণহত্যার আটটি ধাপ আছে।তার সর্বশেষ ধাপ হলো যারা গণহত্যা ঘটায় তারা বিষয়টিকে অস্বীকার করে।এবং এটাই গণহত্যার সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ।তুমি দেখ এখন এই বাংলাদেশে যারা পাকিস্থানী সমর্থক তারা গণহত্যাকে অস্বীকার করে আর বিতর্কিত করার জন্য দালাল নিয়োগ করে।সেই দালাল হতে পারে কোন মানুষ যেমন ডেভিড বার্গম্যান।অথবা প্রচার মাধ্যম যেমন আল-জাজিরা।
-বিবেক ডেভিড বার্গম্যান তো ডক্টর কামালের জামাই।
-তাতে কি হয়েছে?
-আচ্ছা যাদের বয়স বিশ-পঁচিশ বছর তারা কেন পাকিস্থানী সমর্থক?
-আচ্ছা,তুমি একটা বাড়ি দেখতে পাচ্ছো?
-পাচ্ছি।তবে আমার প্রশ্নের সাথে ওই বাড়ির কি সম্পর্ক?
-সম্পর্ক আছে।তুমি জানোনা ওই বাড়ির পিছনে কি আছে।ফলে তোমার ব্রেণে ওই বাড়ির পিছনের কোন ইতিহাস নেই।তাই ধর যারা এই বাংলাদেশে বড় হচ্ছে অথচ একাত্তর নিয়ে কিছুই জানেনা,তাদেরকে তুমি দোষারোপ করবে কিভাবে?শোন এই বাংলাদেশে রাজাকার দু’ধরণের।এক-যারা ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে।দুই-যারা মানসিকভাবে পাকিস্থানের সমর্থক।তারা মানসিক রাজাকার।এই দ্বিতীয় শ্রেণীতে তারা পড়েছে যারা একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম।যাদের কথা শুনলে তুমি বুঝতেই পারবে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানেইনা বা জানলেও বিতর্কিত ইতিহাস জানে।
(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: লেখা সুন্দর হয়েছে।
চলুক---

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৫

সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই।চলুক-----

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.