নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

খন্ডিত রুপকথা (২য় অংশ)

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১২

(২)
কালচে সবুজ গাছ আর
ভেজা ভেজা সকালের আলো
এখানে বড্ড উদাস।

দোয়েলের শীস ব্যঙ্গ করে
কাল রঙ দিয়ে লেখা-“পুলিশ ফাঁড়ি”কে।
পোড়া বাসটি পুলিশ কম্পাউন্ডে পড়ে আছে
রাজনীতিহীনতার সাক্ষী হয়ে।

হলুদ প্রজাপতি উড়ছে
ঝরে পড়া শুকনো পাতার মাঝ দিয়ে।

রাজু লেখাটি শেষ করে।কয়েকবার পড়ে।তারপর ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে ডায়েরী।ড্রাইভার চা নিয়ে আসে।চায়ে চুমুক দিতে দিতে ড্রাইভারের সাথে কথা বলে।
-পুলিশ ফাঁড়ির ওই বাস কি গত বছরের?
-জ্বি স্যার।২০১৫ সালের তথাকথিত আন্দোলনের সময়।ড্রাইভারটিও পুড়ে মরেছে।
-মালেক,পাবনা আর কতক্ষণ লাগবে?
-দু’ঘন্টা লাগবে স্যার।
রাজু চম্পার সাথে কথা বলতে যাচ্ছে।মেট্রোন মায়া চৌধুরীর কাছে চম্পার খোঁজ পায় সে।মায়া চৌধুরী তখন ঢাকার নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে মেট্রোন হিসাবে কর্মরত ছিল।চম্পাকে মুক্তিযোদ্ধরা নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করে।চিকিৎসার পরও চম্পার কোন পরিবর্তন না হলে মায়া চৌধুরী তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
-আপনি যখন চম্পাকে পান,তখন চম্পার কি অবস্থা ছিল?মায়া চৌধুরীকে প্রশ্ন করে রাজু।
-অনেকদিন আগের কথা।সবতো বাবা ঠিকঠাক মনে নেই।তবে চম্পার বয়স তখন ১৩-১৪ বছর হবে।পাবনার মেয়ে।বদ্ধ উন্মাদ অবস্থায় আমরা পেয়েছি।যৌন সমস্যা ছিল প্রচুর।বোঝইতো বাবা অতটুকু মেয়ে পাকিস্থানী আর্মীর হাতে পড়েছিল।মানসিক আর শারীরিক ধকল সামলাতে পারেনি।আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।কিন্তু মানসিক সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে পারিনি।

পাকিস্থানী আর্মির তাড়া খেয়ে সবার সাথেই ছুটছিল চম্পা।কিশোরী চম্পা ছুটছে।ছুটছে।এ দৌড় বুঝি আর শেষ হবার নয়।ক্ষেত পেরিয়ে ছুটছে।বন-বাদার পেরিয়ে ছুটছে।আম্মা পানির খুব তিয়াস পেয়েছে।আম্মা।কোথায় চম্পার আম্মা?আব্বা।ও আব্বা।সমস্ত শক্তি দিয়ে চম্পা চিৎকার করে।কোন সারা নেই।চম্পার শরীর ভয়ে হিম হয়ে আসে।ক্যাম্পে পাকিস্থানী আর্মিদের অমানসিক নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারায়।পাগল হওয়ার পরও চম্পা রেহাই পায়নি।আসলে পাকিস্থানী আর্মিদের প্রয়োজন ছিল নারীর শরীর।পরবর্তিতে সেপ্টম্বরের শেষ ভাগে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প দখল করে ক্যাম্পের যৌনদাসীদের মুক্ত করে।

পাবনার দিকে যেতে যেতে রাজুর ঝিমুনী চলে আসে।
-রাজু ঘুমিয়ে?বিবেক প্রশ্ন করে।
-এই আরকি।
-রাজু,ইরাকে কুর্দি মেয়েদের যৌনদাসী বানিয়েছে কারা,তুমি কি জানো?
-আই এস।ইসলমিক স্ট্যাট।আমেরিকার সৃষ্টি।
“আমি রাশিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।আমি ধন্যবাদ জানাই ভাতৃ প্রতীম ভারতীয় সরকার আর সেই দেশের জনগণকে।কারণ যুদ্ধের নয় মাস তারা আমার অসহায় জনগণকে আশ্রয় দিয়েছে।খাদ্য দিয়েছে।আমি আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ জানাবো কিন্তু ওদেশের সরকারকে নয়।কারণ আমেরিকান সরকারের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী আমার দেশের জনগণকে হত্যা করেছে”।
-বিবেক,এই বক্তৃতা শেখ মুজিব কোথায় দিয়েছিল?
-মনে নেই।
ঝাঁকিতে রাজুর ঝিমুনীভাব কেটে যায়।মালেকের কাছে জানতে চায় আর কতক্ষণ।মালেক জানায়,হাসপাতালে পৌঁছাতে আর দশ মিনিট।

চম্পাকে যত বয়ষ্ক দেখবে ভেবেছিল তত বয়ষ্ক মনে হচ্ছেনা।খুব উচ্ছল মহিলা।হাসপাতালের সবাই চম্পাকে ভালোবাসে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছে চম্পাকে সাংবাদিক আসার কথা।চম্পা এসে রাজুর সামনের চেয়ারে বসে।
-আপা,আমি কোন সাক্ষাৎকার নেবোনা।আমি আপনার ফেলে আসা জীবনের গল্প শুনবো।
চম্পা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।বড় করে শ্বাস নেয়।তারপর শুরু করে।

¬চলবে

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষনীয় । কিন্তু ভন্ডরা বলেন উল্টো কথা ।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩২

সুদীপ কুমার বলেছেন: সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.