নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কমলেশের কেমন যেন রাগ হতে থাকে। কেন যে মা লোকটাকে আখার পাশে বসতে দিয়েছে।লোকটা সেই কখন থেকে বকেই যাচ্ছে।অবশ্য মা তেমন কোন কথা বলছেনা।আগুনের তাপে মায়ের মুখ লাল হয়ে উঠেছে।আর লোকটা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বক বক করেই যাচ্ছে।কমলেশ তার ছোট্ট হাত দিয়ে খড়ি ধরতে যায়।
-ছ্যাঁকা লাগবে হাতে।মা ধমকে উঠে কমলেশকে।
চায়ের কাপে চুমক দিতে দিতে অতীত হতে ফিরে আসে কমলেশ।আজ দু’মাস হলো কঙ্কাবতীর সাথে ওর কোন কথা হয়নি।বুকের ভেতর কেমন যেন একটা চাপা কষ্ট ভর করে আছে।কাউকে বলাও যায়না আবার সহ্য করাও যায়না।
পাত্রপক্ষ চলে গেলে কঙ্কাবতী আয়নার সামনে বসে।টান দিয়ে দিয়ে চুলের ক্লিপ খুলতে থাকে।ঘন চুলের গোছা ছড়িয়ে পড়ে কঙ্কাবতীর সারা পিঠে। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে কঙ্কাবতীর গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
-ছেলেপক্ষের খুব পচ্ছন্দ হয়েছে।ওরা যাবার ডেট দিতে বলেছে।
খাবার টেবিলে দীপুবাবু তার স্ত্রীকে বলে।
-বড়দার সাথে কথা বলে ডেট ফাইনাল করো।কণা তার স্বামীকে বলে।
দীপু খেতে খেতে ছোট মেয়ের দিকে তাকায়।
-কিরে মা কমলেশকে কেমন লাগলো?
-মাথা ভর্তি কপাল।কঙ্কাবতী চাপা স্বরে বলে।
দীপুবাবুর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।আর কোন কথা বলেন না।মাছের মাথা হতে খুব যত্ন নিয়ে ঘিলু বের করে খেতে থাকেন।
রাতে শোবার আগে কঙ্কাবতীর দিদি চুল বেঁধে দেয়।
-তোর পছন্দ হয়নি?
-না দিদি।
বিভাবতী চুল বাঁধা শেষ করে ছেলেকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।কঙ্কাবতী বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে।
গাবতলীতে নেমে দীপুবাবু সি এন জি ঠিক করে।বড়দা আর এক বন্ধুকে নিয়ে কমলেশের বাড়িতে আসে। আশীর্বাদ শেষ হলে লেন-দেনের বিষয় আলোচনায় বসে ওরা।পাঁচ লাখ টাকা আর পাঁচ ভরী সোনায় রফা হয়।বিয়ের দিন ধার্য হয়।
দুপুরে খাবার পর কঙ্কাবতী ছাদে গিয়ে বসে।জানুয়ারীর ছাব্বিশ তারিখে বিয়ে।শীতের মিষ্টি রোদে পিঠে চুল ছড়িয়ে বসে থাকে।একটা মিষ্টি হাসি কঙ্কাবতীর চারপাশে ঘুরতে থাকে।একটা সুন্দর ছটফটে মানুষ তার কাছে আসতে থাকে।বাঁশের ঝাড়ে কি এক অজানা পাখি ডেকে উঠে।কঙ্কাবতী চিনতে চেষ্টা করে, কি পাখি।মানুষটি কাছে এগিয়ে আসে।কানে কানে বলে-ওই পাখি তো পাখি নয়।তোমার স্বপ্ন।আর আমিও বিবাহিত।
-কঙ্কা মা,নীচে আয়।তোর বাবা ডাকছে।
কমলেশের উপর প্রচন্ড রাগ হয় কঙ্কাবতীর।দুম করে একটা কিল বসিয়ে দেয় কমলেশের গায়ে।আচমকা মার খেয়ে কমলেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।ঘোর কেটে গেলেই সেও চড় কষিয়ে দেয় কঙ্কাবতীকে।কঙ্কাবতী রাগে ফুঁসতে থাকে।কমলেশকে কিছু বলে না।
-কারও লাগলো নাকিরে?পাশের ঘর হতে কঙ্কাবতীর শ্বাশুড়ী প্রশ্ন করে।
-না মা কিছু হয়নি। কমলেশ বলে।
-মাকে বলো, আমরা মারামারি করছি।ফিসফিসিয়ে কঙ্কাবতী বলে।
-আর ভালো লাগেনা।বাড়িতে এলেই খালি অশান্তি আর অশান্তি।
কঙ্কাবতী আর কথা বাড়ায়না।কমলেশের দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ে।কমলেশও শুয়ে পড়ে।কঙ্কাবতী খুব আশা করে কমলেশ ওকে জড়িয়ে ধরুক।অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে।শেষে পাশ ফিরে আড়চোখে কমলেশকে দেখে।মৃদ আলোয় কমলেশের চুলহীন মাথা নদীর চরের মত লাগছে।কঙ্কাবতী শূণ্যে তাকিয়ে থাকে।আজকে রাতে ওর ভাত খাওয়া হয়নি।শ্বাশুড়ির উপর প্রচন্ড রাগ হওয়াতে খেতেই বসেনি আর।কমলেশও রাতে ফিরে এসে ওকে প্রশ্ন করেনি,খেয়েছে কিনা।
কিভাবে যে দিনগুলি কেটে গেলো বুঝতেই পাড়লোনা কঙ্কাবতী।ওর অমত সত্ত্বেও বড়রা ওর বিয়েটা দিয়ে দিলো।বড় জামাইবাবু যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে বিয়েটা থামানোর জন্যে কিন্তু লাভ হলোনা শেষে।
বিয়ের পর প্রথম কয়েকটি দিন যেন স্বপ্নের মত।সবাই কত আদর শুরু করলো।শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি,বাবা-মা সবাই।কঙ্কাবতীর কাছে নিজেকে মনে হতে লাগলো বলির পাঁঠা।সেই ছোটবেলা হতে দেখছে,বলির আগে পাঁঠাকে কত যত্ন করে সবাই।আর বিয়ের যাবতীয় আয়োজনের অর্থ একটি মেয়েকে নিয়ে গিয়ে এক বিছানায় এক অপরিচিত পুরুষের সাথে শুইয়ে দেওয়া।তাই প্রথম সহবাসের দিনটি কঙ্কাবতীর কাছে শুধু একটা যন্ত্রণাকর রাত।যদিও দিদি আর মা পই পই করে অনেককিছু বুঝিয়ে দিয়েছিল।তবুও ওর কাছে সহবাস একটা যন্ত্রণাকর নিয়মতান্ত্রিক বৈধ সময়।
প্রকৃতিতে সবকিছুই এক সময় সয়ে যায়।কঙ্কাবতীও আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে শুরু করে নতুন পরিবেশের সাথে।আঁধার রাতে কমলেশের টাকমাথাকে এখন আর নদীর চর মনে হয়না।মনে হয় নদীর জলে রুপালী জ্যোৎস্না খেলছে।ধীরে ধীরে যৌনতাও উপভোগ করতে শিখে।নিজে খেলে কমলেশকেও খেলিয়ে নেয়।কমলেশের আনাড়িপনায় হেসে উঠে খিলখিলিয়ে।কমলেশও হেসে উঠে।তবে কোন শব্দ করেনা।কঙ্কাবতী পশ্ন করলে বলে,মা পাশের ঘরে।টের পাবে।কঙ্কাবতীর রাগ হয়,-খাঠের যে শব্দ হয় তখন মা টের পায়না?কমলেশ এড়িয়ে যায় কঙ্কাবতীর প্রশ্ন।
-বউমা তুমি কি খেয়াল করেছো কমলেশ দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।শোন যেদিন ও রাত করে ফিরবে সেইদিন ওকে রেষ্ট নিতে দিও।কমলেশ খুব যত্নে মানুষ হয়েছে।ও বেশী পরিশ্রম সহ্য করতে পারেনা।তুমি না হয় মাঝে মাঝে আমার কাছে শুতে এসো।
শ্বাশুড়ির কথা শুনে কঙ্কাবতীর কান গরম হয়ে উঠে।সারাদিন ঠিকমত খায়না।কমলেশেরও ফিরতে বেশ রাত হয়।সেই রাতে কমলেশের সাথে খুব একচোট হয়ে যায়।কমলেশ বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে।বলে-বাবা মারা যাবার পর মা একটু বদলে গিয়েছে।কিন্তু কঙ্কাবতী কোন কথাই শুনতে চায়না।শেষে কমলেশ মারধোর শুরু করে।কঙ্কাবতীও ছেড়ে কথা বলার পাত্রী নয়।সেও কিল-ঘুঁসি,খামচি সমানে চালিয়ে যায়।
-তুমি কি খেয়াল করেছো,মেয়েটার চোখ সব সময় ফুলা থাকে।কণা স্বামীকে বলে।
-হ্যাঁ।শরীর খারাপ কি ওর?দীপুবাবু প্রশ্ন করে।
-না।আজ দুই মাস হয়ে গেলো কমলেশ ওকে নিতে আসেনা।মেয়ে আমার চুপি চুপি কাঁদে।
-ওই বেয়াদপের কথা বলো না আর,আমি ওকে আর শ্বশুড় বাড়ি পাঠাবোনা।
-কি করবে?
-ছাড়িয়ে নেবো।
স্বামীর কথায় কণা আকাশ থেকে পড়ে।মুখ দিয়ে কোন কথা বলেনা।
যারা এতক্ষণ এই গল্পটা পড়েছেন,তাদেরকে বলছি।আমার গল্প এখানেই শেষ।এরপর গল্পটা আপনারা আপনাদের মত করে সাজিয়ে নিন।তবে মনে রাখবেন-কঙ্কাবতীর চোখে যেন জল না আসে।
২৪/১১/২০১৭
২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৫
সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫০
শামচুল হক বলেছেন: ভালই লিখেছেন।