নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘর হতে বাহিরে আসে রুপক।সামনে তাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে যায়।ওর চোখ আটকে যায় লোপার চোখে।ঘোর লেগে যায় রুপকের।চেষ্টা করেও চোখ সরাতে পারেনা।বিষয়টা আকাশ খেয়াল করে।রুপকের হাত ধরে ঝাঁকি মারে।রুপকের হুস ফিরে আসে।চলতে শুরু করে।কেমন একটা ঘোর লাগা ভাব ওর মধ্যে কাজ করতে থাকে।
-লোপার দিকে তুই ওমন হাবার মত তাকিয়ে ছিলি কেন ?
আকাশের কথায় কান গরম হয়ে উঠে রুপকের।কিছু বলতে পারেনা।
-লোপাকে পছন্দ করিস?
রুপক কোন কথা বলেনা।আকাশও কিছু বলেনা আর।দু’জন হাঁটতে থাকে।
-লোপা,রুপক একটু হাঁদা টাইপের না?
সাদিয়ার কথায় মনে মনে একটু চটে যায় লোপা।
-কেন?
-এই যে তোকে পছন্দ করে কিন্তু বলতে পারেনা।
-কে বললো তোকে আমাকে রুপক পছন্দ করে?
-তোরা দু’জন দু’জনকে পছন্দ করিস কিন্তু স্বীকার করিসনা।যতসব ন্যাকামো।বাংলা সিনেমার মত।
-তুই কিভাবে বুঝলি আমি রুপকে পছন্দ করি।
-শোন,ভাঁড়ামো রাখ।তোরা যেভাবে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ছিলি তাতে সবাই বুঝবে।
-ভেতরে চল,কোচিং শুরু হয়ে যাবে।
-মানুষগুলো কেমন চেয়ে থাকে দেখো, যেন চিড়িয়া দেখছে।
লোপার কথায় হেসে ফেলে রুপক।
-তুমি তাকাতে যাও কেন?তুমি শুধু আমাকে দেখবে।
-দেখবোনা কেন?সবাইতো আব্বার বয়সী কিম্বা দাদার বয়সী।সকালে রমনা পার্কে জগিং করছে আর ফেরার পথে আমাদের দেখে এমন ভাব করছে যেন উনারা কোনদিন প্রেম-ভালোবাসা করেননি।
-আরে তা নয়।উনারা হয়তো ভাবছেন এতো সকালে কলেজ ড্রেস পড়ে এরা এখানে আড্ডা দিচ্ছে কেন?
-ন্যাকা,উনারা বুঝছেন না বুঝি আমরা এখানে প্রেম করছি?
-আমরা বুঝি এখানে প্রেম করছি?
রুপকের কথায় লোপা থমকে যায়।ওর ফর্সা মুখ কিছুটা লাল হয়।লোপা সামনের দিকে তাকায়।একটি পাখির মৃতদেহ আটকে আছে সামনের প্রাচীরে।আর গাছের উপর জীবিত পাখিগুলি তাদের নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।
-চুপ হয়ে গেলে যে?
-পাখি দেখছিলাম।এইখানে এই ঢাকা শহরে কত পাখি,তাইনা?
রুপক বুঝতে পারে লোপা কথা ঘুরিয়ে ফেলছে।সেও আর আগের বিষয় নিয়ে কথা বলেনা।
-এইটা ভি আই পি রোড।আর এই সব বাড়িতে সব বড় বড় সরকারী কর্মকর্তা বাস করে।এখানে পাখিদের কেউ ডিস্টার্ব করেনা।
-সকালে এই পাখিগুলি দেখতে ভালোই লাগে।কিন্তু এদের ডাক খুব বাজে।
রুপক উঠে দাঁড়ায়।
-উঠলে যে?
-খিদা লেগেছে।আমি ওই পুলিশের জীপ থেকে বিস্কুট কিনে আনছি।
লোপা রুপকের চলে যাওয়া দেখে।আর ভাবে ওদের প্রেমের গভীরতা কতটুকু।রুপক বিস্কুট কিনে আনে।দু’জন বসে বিস্কুট খেতে থাকে আর মানুষের চলে যাওয়া দেখে।
সাদিয়া আর রুপকদের ফ্লাট একই ফ্লোরে।সাদিয়াদের সাথে রুপকদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।আর পাশের বিল্ডিং এ লোপারা থাকে।লোপা আর সাদিয়া সিদ্ধেশ্বরী কলেজে পড়ে।রুপক পড়ে মতিঝিল আইডিয়েল কলেজে।ওরা সবাই শান্তিনগরের বাসিন্দা।
সাদিয়ার মন কিছুতেই ভাল হচ্ছেনা।কোচিং থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে টিভির সামনে বসে পড়ে।আজ আর পড়তে বসতে ইচ্ছে করছেনা।সাদিয়ার আম্মা অফিস থেকে ফিরে আসেন।মেয়েকে টিভির সামনে দেখে ভীষণ খেপে যান।লোপাকে বকাঝকা শুরু করেন। বাধ্য হয়ে লোপা পড়তে বসে।লোপার সামনে বই খোলা আর অক্ষরগুলি চোখের সামনে ভাসতে থাকে।ভাসতে ভাসতে এক সময় লোপা আর রুপকের চেহারায় বদলে যায়।
শুক্রবারের দিনটা খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়।জুম্মার নামাজ পড়ে ফেরার পথে রুপকের মনে হয়।বাসার কাছাকাছি এসে রুপক উপরের দিকে তাকায়।বেলকনিতে সাদিয়া দাঁড়িয়ে আছে।দু’জনের চোখাচোখি হয়।রুপক একটা হাসি দেয়।মনে মনে ভাবে সাদিয়ার মাধ্যমে কাজটা করতে হবে।আকাশের সাথে আলোচনা করেছে।আকাশের মতও তাই।কিন্তু সাদিয়াকে একা পাওয়াই যাচ্ছেনা। রুপক যখন বাসায় একা থাকে তখন সাদিয়া আসেইনা।সাদিয়ার বাসাতেও ওর যেতে ভালো লাগেনা।
-সাদিয়া আমারে একটু হেল্প করবি?
বাড়ি থেকে বেরুবার সময় সাদিয়াকে রুপক বলে।
-বাসায় কথা হবে।
এই কথা বলে সাদিয়া হন হন করে হেঁটে চলে যায়।রুপক সাদিয়ার চলে যাওয়া দেখে।এরপর রিক্সায় উঠে বসে।
-জানো ইদানিং সাদিয়া আমাকে এড়িয়ে চলে।
লোপার কথার কোন উত্তর দেয়না।লোপাকে প্রোপজ করার পর হতেই সাদিয়া কেমন বদলে গিয়েছে।গতদিন ওদের দু’জনের মধ্যে যা হয়েছে রুপক কাউকেই তা বলতে পারবেনা।
-কিছু বলছোনা যে?
-সাদিয়ার কথা থাক।
-ওতো তোমার প্রতিবেশী।আর অনেকদিন ধরেই ওকে তুমি চেনো।ওর কথা থাকবে কেন?
রুপক কথা বলেনা।লোপার দিকে সরাসরি চায়।আজ লোপা শাড়ি পড়ে এসেছে।অসম্ভব সুন্দর লাগছে লোপাকে।লোপার বুকের খাঁজে রুপকের চোখ আটকে যায়।চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেনা।
-তুমি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো।মেয়েদের বুকের দিকে এমন ভাবে চাইতে নেই।যখন পাওয়ার এমনি পাবে।
রুপক চোখ সরিয়ে নেয়।মনে মনে চটে যায়। দু’জন হাঁটতে থাকে টি এস সির দিকে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত বাথরুমে ঢুকে পড়ে রুপক।গোসল করতে হবে।সাদিয়ার সাথে জড়াজড়ি করতে করতে রুপকের বীর্যপাত হয়ে যায়।এমন স্বপ্ন দেখবে রুপকের কল্পনাতেও ছিলোনা। স্বপ্ন দেখলে দেখবে লোপাকে নিয়ে।সাদিয়াকে নিয়ে কেন?আজকাল বাসা ফাঁকা থাকলেই বিভিন্ন নোটের অজুহাতে সাদিয়া চলে আসে ওর কাছে।আর লোপার গল্প তোলে।কোথায় কোথায় ডেট করলো জানতে চায়।
লোপার হাত ধরে কাছে টানে রুপক।
-কি করছো?মানুষ দেখবে?
-দেখলে কি হবে?
-তুমি বদলে যাচ্ছো দিন দিন।
-কেন?আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা নই?আমি তোমাকে কাছে পেতে চাইতেই পারি।
লোপা কথা বলেনা।রুপকও চুপ করে থাকে।
-পরীক্ষার পর।
-তোমার ইচ্ছা। নিরস গলায় রুপক বলে।
দরজায় কলিংবেলের শব্দে রুপক টিভির সাউন্ড কমিয়ে দরজা খুলতে যায়।দরজা খুলে দেখে সাদিয়া।
-আমি দুই দিন কোচিং সেন্টারে যাইনি।তোর কাছে লেকচার সিট হবে?
-ভেতরে আয়।
সাদিয়া বসার ঘরে গিয়ে বসে। রুপক ওর ঘরে যায় সিট আনতে।সিট নিয়ে ফিরে আসে।
-টাইটানিক দেখছিস পড়া বাদ দিয়ে?
-হ্যাঁ,দেখছি।তো?
-বেশী করে পড়।ও সিনেমা আমিও দেখেছি।
ঠিক এই সময় টাইটানিকে ছবি আঁকার মূহুর্ত পর্দায় ভেসে উঠে।দু’জন চুপ করে দেখতে থাকে।দৃশ্য শেষে রুপক লেকচার সিট সাদিয়ার হাতে দেয়। হাতে ছোঁয়াছুঁয়ি হয় যায়।কে যে কাকে আগে জড়িয়ে ধরেছে দু’জনের কারও মনে নেই।এই প্রথম কোন মেয়ের বুক দেখে রুপক।ছুঁয়ে দেখে।সাদিয়া ওর ঠোঁট জোড়া রুপকের মুখে গুঁজে দেয়।
রুপকের এইচ এসসি রেজাল্ট খুব খারাপ হয়ে যায়।ও ৪.৫ পায়।লোপা আর সাদিয়া জিপিএ ৫ পেয়েছে।রুপক নামাজের সময় ছাড়া বাসা হতে বেশী আর বেরোয়না।
-সাদিয়া,রুপকের সাথে আজ এক সপ্তাহ যাবৎ যোগাযোগ করতে পারছিনা। একবার খবর দিবি ওকে?
-ঠিক আছে।আগামীকাল তোকে জানাবো।
বিকেলে রুপকদের বাসায় যায় সাদিয়া।
-খালাম্মা ভালো আছেন?
-কিভাবে ভালো থাকি মা,একটাই ছেলে,সে যা রেজাল্ট করলো।
-চিন্তা করেন না খালাম্মা।
-কি করবো মা,ইচ্ছা করলেও তো চিন্তা দূর করতে পারিনা। আর এর মধ্যে ও কাউকে কিছু না বলে চিল্লায় চলে গিয়েছে।
-কবে?
-এক সপ্তাহ হলো।
চিল্লা থেকে ফিরে আসে রুপক।নতুন এক রুপক।নতুন বেশে।যে কিনা এখন মেয়েদের সাথে মেশেনা।মুখে তার শরীয়তের কথা।ধর্মের কথা।
রুপকের রুপান্তর পর্ব এখানেই শেষ। আমরা অন্য কোনদিন , অন্যকোন সময় রুপকের নতুন গল্প শুনবো।
১৫/০৮/২০১৭
©somewhere in net ltd.