নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর জন্যে ভালোবাসা ( সাত)

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৩৩



ওলিম্পাসে এক রেস্তরায় বসে আছে পদ্মা। স্তেপস আসার কথা। ওর একটু দেরী হবে জানিয়েছে। পদ্মা আর স্তেপস সমবয়সী। পোষ্ট গ্রাজুয়েশনও করেছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ দু' জন এক সাথে সময় কাটাবে আর কিছু বিষয়ে আলোচনাও সেরে রাখবে। রেস্তরার কাঁচের দেয়াল দিয়ে মঙ্গলের ধূ ধূ লাল প্রান্তর দেখা যাচ্ছে। পদ্মা ভাবে পৃথিবী হলে সবুজে ডাকা প্রান্তর পাওয়া যেতো। মঙ্গলে উদ্ভিদ জন্মানোর বহু চেষ্টা হয়েছে আর হচ্ছেও সফল হচ্ছেনা। ওর ধারণা সফল হবেওনা। সেই প্রাচীন কাল হতে বিজ্ঞানীগণ ধারণা করে আসছে পৃথিবীর মত সবুজ গ্রহ আরও আছে।টেলিস্কোপিক বহু অবজার্ভেশনও আছে। কিন্তু সমস্যা একটাই আর তা হলো দূরত্ব।ভর,সময়,স্থান আর দূরত্ব এই রহস্যের সম্মিলিত সমাধানেই কি ভবিষ্যতের অগ্রযাত্রা। পদ্মা মহাভারত পড়েছে,সেখানে শ্রীকৃষ্ণ যে অর্জুনকে বিশ্বের স্বরুপ দেখিয়েছিল তা কি সময় আর স্থানকে স্থির করে নয়? ওদিকে নবীর মেরাজ গমন- সেও তো সময়কে স্থির রাখা হয়েছিল।নবী মেরাজ হতে আসা পর্যন্ত বদনার একফোঁটা পানি ঠিক ওভাবেই ঝুলে ছিল। উত্তর তো একটা আছে অবশ্যই।তবে দেখার বিষয় ঠিক আর কয়দিন বা কত সময় লাগবে এর উত্তর বের করতে।আইনস্টাইনের হাইপোথিসিসেও আছে – Time is not separate dimension. স্তেপস এর উড়ন্ত যান দেখতে পায় ও। মনে মনে ভালো লাগা কাজ করে। আজ তিতাস আর মাকারোভার বিয়ের বিষয়টি উঠাবে পদ্মা।

হাসিমুখে স্তেপস পদ্মার দিকে হেঁটে আসে।পদ্মা উঠে দাঁড়ায়।
- শুভ সকাল বন্ধু। তোমাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিলাম।আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী।
- স্বাগতম বন্ধু স্তেপস। তুমি আমার জন্যে কাজ ফেলে চলে এসেছো এই জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। না,জরুরি ছিলনা বলেই আসতে পারলাম।
- একসাথে নাস্তা করি এসো।তুমি কি খাবে?পদ্মা প্রশ্ন করে।
- তোমার যা ইচ্ছা।
পদ্মা ওয়েটারকে ডেকে রাশিয়ান ম্যানু দেখিয়ে দেয়।
খেতে খেতে পদ্মা মাকারোভার কথা তোলে। তিতাস আর মাকারোভার সাথে একটি বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে দিতে চায় ও এইটা স্তেপসকে জানায়। স্তেপস অত্যন্ত খুশি হয় আর এও জানায় সেও এই কথাই ভাবছিল।
- তবে চলো আমার একদিন বিবাহটা লাগিয়ে দিই।
- তুমি কি তিতাসের কাছে জানতে চেয়েছো ও বিয়ে করবে কিনা?
- না,তা জানা হয়নি। ওদের মধ্যের রসায়নটাই আমাকে এই চিন্তার দিকে ধাবিত করেছে।
- আমারও একই অবস্থা।মাকারোভাকে এ বিষয়ে কিছু বলাই হয়নি।
- - আজ রাতে আমরা ওদের প্রশ্ন করতে পারি। পদ্মা বলে।
- নিশ্চয়ই।
ওরা খেতে থাকে আর মাঝে মাঝে নানা বিষয়ে কথা বলে চলে। খাওয়া শেষ হলে দুইজন লবীর নির্জন স্থানে গিয়ে বসে।পদ্মাই প্রথম নীরবতা ভাঙ্গে।
- স্তেপস,মঙ্গল নিয়ে কি ভাবছো এখন?
- কোন বিষয়ে?
- এই যে আমরা যারা, মঙ্গলে বসতি করে আছি,কতদিন থাকা যেতে পারে মঙ্গলে।
- বসতি স্থাপনে মঙ্গল কোন স্থায়ী সমাধান নয়।
- তোমরা কি কোন রাস্তার কথা ভাবছো? যে রাস্তায় গেলে পৃথিবীর বিকল্প পৃথিবীর মতই গ্রহ পাওয়ার ব্যপারে।অথবা এমন একটি ব্যবস্থা করা এই মানুষ মানুষই থাকবে তবে ইনটারনালি অনেক পরিবর্তিত।
- প্রথমটা তো যুগের পর যুগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সবাই। সুতরাং জানি।কিন্তু দ্বিতীয়টি ঠিক বুঝলাম না?
- আমার বর্তমান মানুষ আর এই সমাজ ব্যবস্থা ভালো লাগছে না।আমার মনে হচ্ছে সবকিছু বদলিয়ে ফেলি।
- সবকিছু তো বদলে গিয়েছে।ধনী- দরিদ্র বলে আর কিছু আছে?
- অর্থের প্যারামিটারে হয়তো নেই।কিন্তু অন্য ফর্মে ঠিকই ফিরে এসেছে।সবকিছু ভেঙ্গে চুড়ে মানুষকে নতুন রুপে আনার বড্ড আাকাঙ্খা আমার।
- কেমন? এই মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভ করবে।ইচ্ছা করলেই সন্তান জন্ম দিতে পারবেনা।সন্তান জন্ম দিতে হলে অনুমোদন লাগবে।ফলে কোন কালেই যোগানের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাবেনা। মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকবে।কর্ম ক্ষমতা কমে গেলেই তাদের ধ্বংস করে ফেলা হবে।
- দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি বলতে চাচ্ছো এখন আমরা রোবটদের যেমন ধবংস করি তেমন? মানুষের ক্ষেত্রে কিভাবে সম্ভব হবে?
- কেন সম্ভব হবেনা? অবশ্যই সম্ভব।
পদ্মার দূঢ়তা স্তেপসকে অবাক করে দেয়।
- তুমি তো গ্রীক দেব-দেবীর মত কথা বলছো।
- হেসোনা। আমার তীব্র ঘৃণা জন্মেছে বর্তমান পৃথিবীর মানুষদের উপর। আমি সবকিছু বদলে দিতে চাই।নতুন ভাবে গড়তে চাই। যেখানে থাকবে না বিভেদ,অন্যায়,হিংসা আর ভাতৃঘাতি হানাহানি।নিজেদের আবাসস্থল ধ্বংসের মত কোন মুর্খামী তারা করবে না।
স্তেপস মুগ্ধ স্রোতা হয়ে পদ্মার কথা শুনতে থাকে। এরপর এ বিষয় নিয়ে স্তেপসের সাথে অনেক বৈঠক হয়েছে।বৈঠক হয়েছে হোয়াংহো আর ভাগিরথীসহ আরও অনেকের সাথে সেগুলি পরবর্তি আলোচনায় আসবে একে একে।

স্তেপস পদ্মার কাছ হতে বিদায় নেয় আর কথা দেয় আগামী সপ্তাহে তারা পুনরায় মিলিত হবে।উড়ন্ত যানে চড়ে স্তেপস পদ্মার কথা নিয়ে ভাবতে থাকে। কিভাবে সম্ভব মানুষকে রোবটের মত ব্যবহার করা। তবে কি মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে? পদ্মা কি তাই ভাবছে? পদ্মার মত জ্ঞানী ব্যক্তির কথা মাথা থেকে ফেলতেও পারছে না। স্তেপস এই চিন্তা বাদ দেয়। মাকারোভার কথা ভাবতে বসে।আজ রাতে মাকারোভার সাথে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

- শুভসন্ধ্যা প্রিয় স্তেপস।
- শুভসন্ধ্যা মাকারোভা।
- আজ তোমার জন্যে তোমার প্রিয় খাবার রান্নার ব্যবস্থা করেছি।
- ও, তাই নাকি! খুব ভালো করেছো আমার প্রিয় বোন।
তারা একসাথে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে। প্রথমে মাকারোভাই কথা বলে।
- তোমাকে কেমন চিন্তিত লাগছে?
- না,তেমন কিছু নয়। তোমার বিষয়ে ভাবছিলাম
- আমার বিষয়ে?
- তোমার তিতাসকে কেমন লাগে।
মাকারোভা মাথা নীচু করে। খাবারে মনোযোগ দেয়।স্তেপস বনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। উপভোগ করে সুন্দর মুহূর্ত।
- আমি আর পদ্মা তোমাদের বিয়ের কথা ভাবছি।
- তোমাদের যেটি ভালো মনে হয় তোমরা করো।
স্তেপস খুব খুশি হয়।প্রসঙ্গ বদলায়।
- মাকারোভা, আমরা যদি এক গ্যালাক্সী হতে অন্য গ্যালাক্সীতে যেতে চাই। সেক্ষেত্রে দুটি প্রধান অন্তরায় দূরত্ব আর গতি। কিভাবে সম্ভব হতে পারে এই দুটি বিষয় সামলিয়ে গ্যালাক্সী ভ্রমণ।
- আলো যদি সব জায়গায় পৌঁছাতে পারে তবে প্রাণও করবে আমার বিশ্বাস।
- বিশ্বাস আর বাস্তবতা এক কি?
- তুমি যা ভাবছো বহু আগে থেকেই মানুষ এই বিষয় নিয়ে ভাবছে।আর বাধা অতিক্রমও করছে। এই ধরো আমাদের পূর্বপুরুষের কল্পনায় ছিল মঙ্গল ভ্রমণ। এখন এটি বাস্তবতা। এখন আমরা যা ভাবছি ভবিষ্যতে সেগুলিই বাস্তবতা। কারণ আমরা কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করার জন্যে অনবরত কাজ করে যাচ্ছি।অর্থাৎ চেষ্টা করছি। কল্পনাকে জয় করার মূল চালিকাশক্তি চেষ্টা।
স্তেপস সম্মিহিত হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর পদ্মার কথাগুলি নিয়ে ভাবতে ভাবতে রিডিং রুমে চলে যায়

http://www.somewhereinblog.net/blog/SudipKumar/30201227
( চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.