নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রীতম ঠিক মনে করতে পারেনা বাক্যটি কার লেখা।“ঠিক দুপুর বেলায় ভুতে মারে ঢেলা”।কোন এক উপন্যাসে সে পড়েছিল।দুপুর বেলায় সে ঘুমাবে না কাজে বেরুবে ঠিক করতে পারছিলনা।ওর জীবনটাই কাটছে এমন সিদ্ধান্তহীনতায়।দেখতে দেখতে বয়স চল্লিশ হয়ে গেলো।মধ্য যৌবনের আলো ওর শরীর জুড়ে।শেষ পর্যন্ত ফেসবুক খুলে বসে। আজকের স্টাটাসগুলি সব পুলিশের জঙ্গী আস্তানার অভিযান কেন্দ্রিক।
-ভাল আছো দাদা।
ম্যাসেঞ্জারে মেসেজটি পড়ে প্রীতম মুহূর্তে ফিরে যায় অতীতে। কত ছোট দেখেছে সে রিয়াকে।সারাদিন মেয়েটির নাক দিয়ে সর্দি পড়তো। এখন কত বড় হয়ে গিয়েছে।প্রীতম রিয়ার প্রোফাইলে যায়।রিয়ার বিয়ের ছবিই বেশী তার টাইম লাইনে।অসম্ভব সুন্দরী লাগছে রিয়াকে,কনে সাজে।প্রীতম উত্তর দেয়।
-ভাল আছি।তুই ভাল আছিস?
লিখার পর প্রীতম অপেক্ষা করতে থাকে রিয়ার উত্তরের। দেরী হচ্ছে রিয়ার উত্তর দিতে।প্রীতমের মনে হতে থাকে তুই শব্দটি হজম করতে মনে হয় কষ্ট হচ্ছে। দুপুর বেলায় রিয়া কেন ওর সাথে ইনবক্সে আলাপ করতে চাইছে?রিয়াও কি ওর মত নিঃসঙ্গ।
-বড়মা ভাল আছে?তুমি এখন কোথায় থাকো?
প্রীতম ভাল করে চেক করে রিয়ার টাইম লাইন।রিয়ার একাউন্ট হ্যাক হয়েছে কিনা জানতে চেষ্টা করে। প্রীতম একটু সাবধান থাকার চেষ্টা করে। কারণ ওর একাউন্টে জামাত-শিবির বিরোধী লেখায় ভরপুর।আর বাংলাদেশে চাপাতী হত্যাকাণ্ড খুব সাধারণ ঘটনা।
-মা ভাল আছে। আমি ট্রান্সফার হয়েছি গত মাসে। এখন মৌলভীবাজারে আছি ।ওদের বগুড়ায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
-বগুড়ায় কোথায়?
-মামার বাড়ির পাশে।ঠনঠনিয়ায়।
প্রীতম ভাবতে থাকে রিয়ার কয় সন্তান জানতে চাইবে কিনা?অবশ্য টাইম লাইনে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য দেওয়া নেই। রিয়ার স্বামী বাসায় নেই ? না থাকাই স্বাভাবিক। প্রীতম অপেক্ষা করতে থাকে রিয়ার জন্যে। পাঁচটা বেজে যায় ,রিয়া আর কিছু লেখেনা।প্রীতম কাজে বেরিয়ে পড়ে।
পাবলো নেরুদার কবিতা আচ্ছন্ন করে ফেলেছে প্রীতমকে। প্রতিদিন না পড়লে ভাল লাগেনা। ও নিজেও লেখে। কবিতা হয় কিনা বুঝতে পারেনা। লেখে আর ফেসবুকে পোস্ট করে। লাইক পায়। কিছু মন্তব্যও পায়। মন্দ লাগেনা। কবিতা হোক না হোক ওর নিঃসঙ্গ সময় বেশ কেটে যায়। নেরুদার কয়েকটি কবিতা পড়ে । এরপর ফেসবুক নিয়ে বসে। খেয়াল করে রিয়া অন লাইনে। তবে রিয়ার দিক হতে কোন সাড়া আসেনা। রাত সাড়ে এগারোটা বাজে।সুনন্দাকে ফোন দেয়।
-কি কর?
-শুয়ে পড়েছি।
-ওই দুটোর খবর কি?
-বড়টা ঘুমিয়ে পড়েছে। ছোটটা এখনও ঘুমায়নি।ছোটটা দিন দিন ভারি পাজি হয়ে যাচ্ছে ।কথা শুনতে চায়না।
-দাও,ছোটটার সাথে কথা বলি।
-হ্যালোও কি করছো বাবা?
-হ্যালোও,আমি শুয়ে আছি।
-আজকে কোন খবর নেই?
-হ্যাঁ, আছে।
-কি খবর?
-আমি ডিম খাচ্ছিলাম আর মা আমার গালে মারছে।মাকে বকা দিয়ে দাও।
-ফোন মায়ের কাছে দাও।
সুনন্দা ফোন নেয়।
-ও ভয় নেই। তুমি আমার মেয়েকে মেরেছো।
সুনন্দা আর প্রীতম এক সাথে হেসে ওঠে।
ম্যাসেঞ্জারে রিয়ার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে রিয়ার কথা ভুলতেই বসেছিল প্রীতম। সেও কয়েকদিন নেটে বসতে পারেনি অফিসিয়াল কাজের চাপে। রাতে ফেসবুকে গিয়ে দেখে নোটিফিকিশনে ভরপুর।আর ইনবক্সে রিয়ার মেসেজ।
-দাদা ভাল আছো ?
রিয়া অনলাইনে নেই। প্রীতম উত্তর লিখে রাখে-ভাল আছিরে ।তোর খবর কি ?
পরদিন দুপুরে রিয়াকে অনলাইনে পায় ।
-দাদা, বেশ কয়েকদিন তোমার লেখা পেলামনা ফেসবুকে।
-অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম,তাই লেখা হয়নি।
-তোমার কবিতা পড়তে ভালই লাগে।
-কবিতা হয় কিনা জানিনা তবে লিখার চেষ্টা করি।
-একটা প্রশ্ন করবো দাদা?কিছু যদি মনে না কর।
-কর।
-তোমাদের কি প্রেমের বিয়ে?
-নারে। বিয়ের পর প্রেম।হা হা হা।
-তাহলে রোমান্টিক কবিতা লেখো কিভাবে।
-প্রেমের কবিতা লিখতে হলে প্রেমে পড়তেই হবে?
-আমার তো তাই মনে হয়।
-আমার তা মনে হয়না।শোন,প্রতিটি নর-নারীই জন্মগত প্রেমিক-প্রেমিকা।
-তোমার তাই মনে হয়?
প্রীতম প্রসঙ্গ বদলায়।
-তোর শ্বশুর বাড়ি কোথায়?
-মাটিডালি।
-আমি চিনি?
-ওর বড় ভাই তোমাদের আগের ব্যাচ।
-পরিচয় কিভাবে?
-আজিজুল হক কলেজে ও বোটানিতে পড়তো।ওখানেই পরিচয়,প্রেম,বিয়ে।
-কেমন কাটছে সময়?
রিয়া আর উত্তর দেয়না। প্রীতম বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রিয়ার জন্যে । শেষ পর্যন্ত রাগ হয় ওর। ঠিক করে ম্যাসেঞ্জারে আর আলাপ করবেনা রিয়ার সাথে।রিয়া এরপর বেশ কয়েকবার ইনবক্সে এসেছে কিন্তু প্রীতম কোন সারা দিচ্ছিলনা।রিয়া চেষ্টা চালিয়ে যায়।একদিন প্রীতম বেশ বড় মেসেজ পায় রিয়ার কাছ হতে।
-দাদা,তুমি আমার উপর রাগ করেছো হয়তো সেদিন উত্তর না দেওয়াতে।সেদিন তোমার সাথে চ্যাটিংএর সময় রিপন বাসায় চলে এসেছিল ।তাই আর উত্তর দেওয়া হয়নি। রিপন সারাদিন বাহিরে কাজে ব্যস্ত থাকে। আর রাতে ফেরে। আমার সারাদিন সময় কাটতে চায়না। ফেসবুকে তোমাকে পেলাম।তুমি এখন কবি।আমি জানি যারা কবিতা লেখে তারা মেয়েদের মন পড়তে পারে।তাই তোমার কাছে মনের কথা বলতেচেয়েছিলাম। জানো দাদা, আমি আর রিপন যখন প্রেম করতাম তখন সময়গুলি কত রঙ্গীন ছিল।কতদ্রুত সময় চলে যায়। এখন আমাদের প্রেম বন্দী হয়ে আছে বিছানায়,-রাতে।বড্ড এক ঘেঁয়ে জীবন।
প্রীতম ইনবক্সে কোন মন্তব্য করেনা আর। মনে মনে ভাবে জীবনের বৈচিত্রময়তার কথা। রিয়া আগের মতই প্রীতমের কবিতায় লাইক কমেন্ট করে যায়।
১৭/০৩/২০১৭
©somewhere in net ltd.