নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পলাতকা

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২২

রাজীব খাওয়া শেষ করে বিছানায় গিয়ে বসে । বিছানায় আসতে রত্মার দেরী হবে । সবকিছু গুছিয়ে রেখেই সে আসবে। ফেসবুকে চোখ বুলাতে থাকে রাজীব। উজ্জলের স্টাটাসে ওর চোখ আটকে যায়- ‘’আছমা খাতুন মারা গিয়েছে’’। রাজীব ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা আছমা খাতুন কে । রাজীব আছমা খাতুনের টাইম লাইনে গিয়ে রিয়াকে চিনতে পারে। টাইম লাইনের প্রোফাইল পিকচারে রিয়ার হাস্যোজ্জল ছবি। মনে মনে ভাবে , রিয়ার হাসিটা বরাবরই সুন্দর।

রিয়া আজীমপুরে ফ্ল্যাটে উঠেছে। বর্তমানে ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বিকেলে সজল আসবে ওর এখানে। তাই রান্না করছে । রান্না করতে করতে ভাবে , আজকেই বিয়ের কথা বলবে সজলকে। যদিও বিয়ের পর ওকে পারিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হতে পারে , তবুও উপায় নেই । স্বামী-স্ত্রী না হয়েও স্বামী-স্ত্রীর মত সম্পর্ক কতদিন টানা যায়। সজলকে বার বার বলার পরও সজল গায়ে মাখছে না। আজ সজলকে রাজি করাতেই হবে। আর দেখতে দেখতে বয়সও কম হলোনা । ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। প্রায় সব বন্ধু-বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে । ও ছাড়া । বাড়ির সবাই বিয়ের কথা বলে বলে ক্লান্ত । বাবা তো কথা বলাই ছেড়ে দিয়েছে । ছোটবোন ফোনে জানিয়েছে , এবার পূজার ছুটিতে বাড়ি গেলে পাত্র আসবে দেখতে । পাত্র আমেরিকায় থাকে । বেশী চিন্তা করতে চায়না রিয়া। বেশীক্ষণ চিন্তা করলেই ইদানিং ঘাড় ধরে যায় । সমস্যাটা কোথায় রিয়া ঠিক ধরতে পারছেনা ।

দরজা খুলেই সজলকে দেখতে পেয়ে খুশিতে উজ্জল হয়ে উঠে ।
-দেরী হলো অনেক ?
-আর বলোনা লঞ্চ ছাড়তে দেরী করেছে।
বলেই হাতের ব্যাগ নামিয়ে রাখে । জড়িয়ে ধরে রিয়াকে। রিয়া ছটফট করতে থাকে। কাতর গলায় বলে
-এখন নয় । রাতে ।
দু’জন প্রগাঢ় চুম্বনে আবদ্ধ হয় ।

সজল গোসল সেরে আসে। খাবার টেবিলে বসে ।
-তোমার বি সি এস প্রস্তুতি কেমন হচ্ছে ?
রিয়া মাথা নাড়ে।
-মন খারাপ ?
-বাড়ি হতে বিয়ের জন্যে প্রচন্ড চাপ দিচ্ছে । আমি আর প্রেসার নিতে পারছি না । তোমার আম্মাকে রাজি করাতে পারলে ?
-এখনও হননি । তবে হবেন।
-এভাবে পাঁচটি বছর কেটে গেলো । কথা ছিল দু’জনে চাকরী পেলেই বিয়ে করে ফেলবো । অথচ এখনও আমরা বিয়ে করছিনা।আমি তো ধর্মান্তরিত হতে রাজি । তবে সমস্যা কোথায় ? ওদিকে রিংকু ধর্ম চেঞ্জ করে জিল্লুর সাথে বিয়ে করে ফেললো । শুধু আমরাই বাঁকী আছি ।
-আরে বাবা , সময়তো শেষ হয়ে যায়নি । এই সময়টা আমরা উপভোগ করি।
সজল রিয়ার মুখের দিকে তাকায় । রিয়ার গাল লাল হয়ে উঠেছে । সজল ভয়ংকর সমস্যায় পড়েছে । ও ডিসিশান নিতে পারছেনা কি করবে ।আব্বা-আম্মা কেউ রাজি নয় ওদের বিয়েতে । আম্মা ফুপাতো বোনের সাথে বিয়ে এক রকম ঠিকই করে ফেলেছে । কোরবানী ঈদের পরই বিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন । বন্ধু আপেলকে ও সমস্যার কথা বলেছিল । আপেলের উত্তর শুনে সজল আর কথা বাড়ায়নি- মালাউন চুদেছিস বেশ করেছিস । তাই বলে বিয়ে করতে হবে ? সজল জানিয়েছিল , ধর্মান্তরিত করে নিয়ে বিয়ে করলে ছোয়াব পাওয়া যাবে। আপেল খেঁকিয়ে উঠে বলে , হ ছোয়াব মারাচ্ছেন উনি । আরে তোরাতো সমবয়সী । আর কয়দিন পর ওর ভোদায় যখন পানি আসবেনা , তখন তুই কি করবি ? খাঁড়া ধন নিয়ে ? তোর যা স্বভাব , তুই তখন জেনা করবি । তখন তোর এই ছোয়াব কোথায় যাবে ?

-আজকে কেমন শুকনা লাগছে ।
-ভেজে নি ।
সজল ওর ঠোঁট ধীরে ধীরে যোনীদ্বারে নামিয়ে আনে । রিয়াও ধীরে ধীরে গলতে শুরু করে।

সেদিনের পর রিয়ার সাথে সজলের আর কোনদিন সাক্ষাত হয়নি। সজল রিয়াকে মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছিল , ফুপাতো বোনকে সে বিয়ে করেছে , পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী । রিয়া যেন ওকে ক্ষমা করে দেয় । ম্যাসেজ পড়ে রিয়া চুপচাপ বসে থাকে । তৃষ্ণা পায় ওর । এক গ্লাস জল খেয়ে পড়তে বসে । সামনে চব্বিশতম বিসিএস পরীক্ষা । পূজার ছুটিতে ঢাকাতেই থাকে ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে রাজীবের সাথে সোহেল আর দীনেশের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । সোহেল আর দীনেশ দু’জনের বাড়িই নান্দাইল । ওরা তিন জনই একই হলে থাকে দীনেশ খুব ভাল গান গায় আর সবার সাথে গল্প করতে পচ্ছন্দ করে । বিশেষ করে ক্লাসের মেয়েদের সাথে ।

-আজকে পি কে স্যারের ক্লাশ হবেনা ?
রিয়া রাজীবকে প্রশ্ন করে । রাজীবরা করিম ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ।
-না , হবেনা।
এই সময় রুপা , রিংকু, দীনেশসহ আরও কয়েকজন এগিয়ে আসে । সবাই মিলে ঠিক করে ,বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে আড্ডা দেবে । বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে সবাই খোশ গল্পে মেতে উঠে । রাজীবের কাছে জায়গাটা অসাধারণ লাগে ।পাথর ফেলে রাখা হয়েছে নদীর পারে । যদিও ব্রহ্মপুত্রের সেই দিন আর নেই । ব্রহ্মপুত্র এখন শীর্ণকায় । গল্পের মধ্যেই রুপার একটা কথা রাজীবের কানে বাজে । রুপা রিয়াকে বলছে , তুই যে সুন্দরী , যে কেউ তোর প্রেমে পড়তে বাধ্য । রাজীব ঘুরে রিয়ার দিকে তাকায়। রিয়া ওর দিকেই চেয়ে আছে । বাতাসে রিয়ার বব চুল উড়ছে । রোদে রিয়াকে অসম্ভব উজ্জল লাগছে ।মনে মনে রাজীব স্বীকার করে , মেয়েটি আসলেই সুন্দরী । তবে মেয়েটি ওর টাইপ নয়। ওর স্বপ্নে শ্যামল রঙের মেয়ে ।


সকালে রবীন্দ্র সংগীতের আওয়াজে রাজীবের ঘুম ভেঙ্গে যায় । রুম হতে বেরিয়ে আসে । তাকিয়ে দেখে এ ব্লকের নীচতলায় একজন ঘুরে ঘুরে নাচছে , আর উপর হতে একজন গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিচ্ছে । হলে হাই ভলিউমে বাজছে – আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোটে , আর কত পাখি ডাকে । আহা আজি এ বসন্তে । দৃশ্যটা দেখে রাজীবের মনটা ভাল হয়ে যায় ।
-সোহেল , রাজীব চল সবাই ক্যাম্পাসে যাই ।
ক্যন্টিনে দীনেশ প্রস্তাব করে ওদের । ওরা সবাই মিলে ক্যাম্পাসে যায় । ক্যাম্পাসে এসে রাজীব অবাক হয়ে যায় । চারিদিকে সবাই ঘুরে ঘুরে বসন্ত উৎসব পালন করছে। কি সুন্দরভাবে সেজেছে মেয়েরা ! ক্যাম্পাসে এসে সবার সাথে দেখা হয়ে যায় ।রিয়া , রুপা , রিংকু , সজল , তারেকসহ সবার সাথে ।সবাই মিলে হই চই করে ক্যাম্পাসে ঘুরতে থাকে ।

সেশন জটের কারণে রিয়াদের প্রথমবর্ষ শেষ হতে দুই বছর লেগে যায় । ওদের বন্ধুত্বের সার্কেল আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে । রিংকু জিল্লুর সাথে চুটিয়ে প্রেম শুরু করে দেয় । যদিও হিন্দু-মুসলিম জুটি , তবে ক্যাম্পাসে এ বিষয়ে মাথা ঘামায় না কেউ ।কেয়া কলেজ লাইফ হতেই এনগেজড । রুপাও বাদ যায়নি। অনেকটাই একা হয়ে গিয়েছে রিয়া । আর এই সময় সজল এগিয়ে আসে ওকে সঙ্গ দিতে । সজল প্রতিদিন বিকেলে লেডিজ হলের গেটে এসে রিয়াকে খবর পাঠায় । দু’জনে ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায় । রিয়া লক্ষ্য করে রাজীব , দীনেশ এখন ওদের অনেকটা এড়িয়ে চলে ।

-রিংকু , তোদের সম্পর্কটা তোর বাড়ি হতে মেনে নেবে ?
-না মানলে না মানবে । এখন তো প্রেম করি।
রিয়া , রিংকু আর কেয়া সুলতানা রাজিয়া হলের একই রুমে থাকে । রিংকু আর রিয়ার গল্পের মাঝে কেয়া রুমে আসে। কেয়াকে অনেকক্ষণ অবজার্ভ করে রিংকু।
-কি রে আজ কি শুধু চুমাচুমিই হলো, না আরও কিছু ?
রিংকু হাসতে হাসতে বলে ।
-দরজা পর্যন্ত , ঘরে ঢোকার আগেই বমি করে দিয়েছে । কি আঠালো ?
একথা বলেই কেয়া হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ে ।
-কি রিয়া , তোর কাউকে মনে ধরেনি ? প্রেম-টেম কর কারও সাথে ।
কেয়ার প্রশ্ন শুনে রিয়া নড়ে চড়ে বসে । রিংকু হাসে।
-আমাদের সাথের হিন্দু ছেলেগুলি কেমন যেন । কেউ ভেন্দা টাইপ , কেউবা অহংকারী।
রিয়ার উত্তর শুনে রিংকু বলে –হাতের কাছে সজল আছে ।
-সজল তো মুসলমান ।
-মানুষ না ? মুসলমান । আরে যতদিন ক্যাম্পাসে থাকবি প্রেম করবি , চুমু খাবি ,চাইলে শুবি ।ক্যাম্পাস লাইফ শেষ তো সব শেষ । বিয়ের পর প্রথম রাতে স্বামীর কাছে এমন ভাব দেখাবি যে উনিই প্রথম তোর সতীত্ব হরণ করছে। পতি দেবতা বলে কথা।
রিংকুর কথা শেষ হতেই তিন বান্ধবী উচ্চস্বরে হেসে উঠে । ওদের হাসির শব্দে পাশের রুম থেকে রুপা চলে আসে।
-এতো হাসি কেন ?
-কেয়ার ঘরে না ঢুকে কেউ একজন দরজায় বমি করে ফেলেছেন। তাই কেয়া রতিচিহ্নসহ বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন।
রুপাকে রিংকু বলে।

রাজীব আর দীনেশ নাস্তা করতে বসে ।ফোরথ ইয়ারের দুই দাদা ওদের টেবিলে এসে বসে। রঞ্জনদা কৃষিতে আর হেমায়েত দাদা ফিসারিজে পড়েন। রঞ্জন প্রথম মুখ খোলে।
-এই তোমাদের ইয়ারের সব হিন্দু মেয়েগুলি মুসলমান ছেলেদের সাথে প্রেম করে কেন ? তোমরা কিছু বলোনা ওদের।
-সবাই কেন হবে ? শুধু রিংকু। রাজীব উত্তর করে।
-কেন রিয়া ?
-আরে রিয়া আর সজল ভাই-বোন পাতিয়েছে । দীনেশ বলে।
-ভাই-বোন কি রাতের আঁধারে চিপা জায়গায় চুমাচুমি করে।
হেমায়েতের কথা শুনে রাজীব আর দীনেশ মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।

চব্বিশতম বিসিএসে সোহেলের হয়ে যায়। ফাউন্ডেশন ট্রেনিং এর জন্যে সাভারে আসে । আর এখানেই রিয়ার সাথে আবার দেখা হয় । রিয়া আগের চেয়ে মোটা হয়ে গিয়েছে। তথ্য ক্যাডারে চান্স পেয়েছে । রিয়া টেনিং এসে আবার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সোহেল মনে মনে ভাবে কিভাবে সম্ভব হয় ? অবশ্য ফাউন্ডেশন ট্রেনিং পরিবেশটাও এমন। সবাই চায় বিয়ে করে স্থিতু হতে ।

রিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আনোয়ারকে বিয়ে করে । আনোয়ারও চব্বিশতম তথ্য ক্যাডার । ওদের প্রথম সন্তান বাংলাদেশে হয় দ্বিতীয় সন্তান লণ্ডনে হয় । দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর রিয়া আনোয়ারের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করে।
-তুমি কেমন বদলে যাচ্ছো দিন দিন ।
-কেন ? আনোয়ার রুক্ষভাবে বলে।
-না , বিছানায় আগে কত আদর করতে ,এখন তেমন আর করোনা ।
-রিয়া , সজল কে ?
রিয়া থমকে যায়। তারপর ধীরে ধীরে বলে- আমরা একসাথে পড়তাম ।
আনোয়ার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে । তারপর বলে
-এক সাথে পড়তে । এতটুকুই ?

রিয়ার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে রাজীব সোহেলকে ফোন করে । সোহেলের কাছে জানতে পারে, রিয়া লন্ডনে মারা গিয়েছে । স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে রিয়ার। রত্মা কাজ শেষ করে বিছানায় এসে বসে ।
-মন খারাপ কেন?
-আমাদের এক বান্ধবী মারা গিয়েছে । রিয়া নাম । খুব সুন্দরী ছিলো।
রত্মা স্বামীর মুখের দিকে তাকায় । কোন কথা বলেনা।

১৭/০২/২০১৭

ময়মনসিংহ
( সব চরিত্রই কাল্পনিক)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.