নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোট্ট লাল বোতামের উপর আঙ্গুল দিয়ে রেখেছে রোহান। কিছুক্ষণ পরই ওর দেহটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।বাহিরে প্রচণ্ড বিস্ফোরনের শব্দ।সে জানে কমাণ্ডোরা এগিয়ে আসছে।বারুদের গন্ধ ছাপিয়ে ওর নাকে এসে লাগে মানুষের রক্তের ঘ্রাণ।গতরাতে পাশের ঘরে ওরা একে একে বিশজনকে জবাই করেছে।যে মেয়েটির নাভী দেখা যাচ্ছিল তার নাভীতে ও নিজে প্রথমে চাপাতি চালায়।পরে জবাই করে।রোহান একা একাই হেসে উঠে-একদিন সে আরশোলা দেখেও ভয় পেতো।আজ ভয় কি জিনিস ও টের পায়না।এটি ভুল কি সঠিক ও জানেনা।শুধু জানে এই হত্যাকাণ্ড ওর ঈমানী দায়িত্ব।আর এটিই ওকে বেহেস্তের পথে নিয়ে যাবে।ওর সামনে ওর ট্যাব খোলা পড়ে আছে।নেট কানেকশান নেই।কিছুক্ষণ আগেও নেট কানেকশান ছিল।রোহান ওর ফেসবুক আইডিতে ডুকেছিল।নিউজ ফিডে ঢুকে ও অবাক হয়েছিল।ওদের কর্মকাণ্ডকে সবাই প্রচণ্ড ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।ওর এসব ভাল লাগেনা।ও আবার দলের নেতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে।সর্বশেষ আপডেট জানায়।ওদের উপর নির্দেশ আসে ধরা না দিতে।ওদের প্ল্যানিং এ এটা ছিলনা।ছিল বিদেশীদের হত্যা করে দ্রুত সটকে পড়বে।কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় পুলিশী তৎপরতায়।
-রোহান শোনা ,সকাল হয়েছে ঘুম থেকে উঠে পড়।চল নামাজ পড়তে যাই।রোহানের দাদা ভোরে রোহানকে ডাকে।রোহান ঝটপট উঠে পড়ে।রেডি হয়ে দাদার সাথে নামাজ পড়তে যায়।গ্রামের বাড়িতে আসলেই রোহান দাদার সাথে ফজরের নামাজ পড়ে।নামাজ পড়ে এসে কোরান শরীফ পড়ে সুর করে।সবাই কত ভাল বলে।বলে এই বংশে এমন পরহেজগার আর কেউ আসেনি।রোহান ওতসব বুঝেনা।ওর কোন বন্ধু-বান্ধব নেই।মা আর বাবা সারাদিন কাউকে কাছে পায়না।ওর ভীষণ একা একা লাগে।তাই নামাজ পড়ে,কোরান পড়ে।পরকালের চিন্তায় ডুবে থাকে।একদিন ও মাকে এসে বললো-মা,চাঁদা দাও।কোরান শরীফ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবো।সেদিন মা খুব ব্যাস্ত ছিল।শুধু প্রশ্ন করেছিল কতটাকা।টাকা দেবার সময় জানতে চেয়েছিল,কোন সংগঠন।রোহান বলেছিল-ফুলকুঁড়ি।রোহানের মা থমকে গিয়েছিল।বলেছিল-তোর বাবা যেন না জানে।জানলে মেরেই ফেলবে।রোহান জানতে চেয়েছিল –কেন?মা উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যায়।
রাতে যখন শেষ জাপানীকে নিয়ে যায় ওই ঘরে জবাই করার জন্য।রোহান দেখে সারা ঘরে রক্ত ছড়িয়ে পড়েছে।চাপ চাপ রক্ত।কালচে লাল হয়ে আছে।রোহানের গত কোরবানীর কথা মনে পড়ে।গত বছর ওর আব্বা চার লাখ টাকায় দুটি গরু কিনেছিল।ওর বাবা বড় রাজনীতিবিদ।অগাধ সম্পদের মালিক।কোরবানীর পর রোহান এবং ওর ফুফাতো ভাই বোনেরা রক্ত নিয়ে খেলেছিল। আজ এত রক্ত দেখে ওর কোরবানীর কথা মনে পড়ে।
শেষ রাতের দিকে গুলির শব্দ একটু কমলে ওর ঝিমুনি এসে যায়।স্বপ্নও দেখে।স্বপ্নে ও চলে যায় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে।যেখানে ওদের ভারী অস্ত্রের ট্রেনিং হয়েছিল।যেদিন ও বাড়ি ছেড়েছিল, সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলনা।আব্বাকে একটি মেসেজ লেখে-আমি নেট ওয়ার্কের বাহিরে চলে যাচ্ছি।এরপর মোবাইল বন্ধ করে বাড়ি হতে বেরিয়ে পড়ে।ওদের ট্রেনিং করিয়েছিল একজন পাকিস্থানী।উনি অত্যধিক ধার্মিক আর সজ্জন ছিলেন।উনিই রোহানকে বোমা বানানো থেকে একে সাতচল্লিশ সবকিছু চালানো শিখিয়েছেন।অবশ্য চাপাতি চালানো শিক্ষার জন্য বাহিরে যেতে হয়নি ।ঢাকাতেই প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
কোরান শরীফ প্রতিযোগীতার পর ওর কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়।ওরা ওর সাথে সব সময় দ্বীনের আলোচনাই করতো।উনাদের মাধ্যমে আরও কয়েকজনের সাথে আলাপ হয়।দ্বিতীয় গ্রুপটি মুসলিম উম্মাহর বিপদ সম্পর্কে বলতো।বলতো কিভাবে পশ্চিমারা মুসলিমদের উপর অত্যাচার করছে।রোহানের রক্ত টগবগ করে ফুটতো।মুসলিমদের উপর এই অত্যাচারে ওর মন বিদ্রোহী হয়ে উঠতো।এরপর একদিন আরও কয়েকজন যোগ দেয় ওদের এই আলোচনায়।তারা রোহানকে বলে-এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একটিই পথ আছে আর সেটি হলো জিহাদ।রোহান প্রস্তুত কিনা জিহাদে যেতে।আল্লাহর পথে যেতে।রোহান প্রস্তুত কিনা জীবন দিতে-নিজেকে কোরবানী দিতে।রোহানের রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে।সারারাত ঘুম আসেনা।
ভোরের দিকে গোলাগুলি বেড়ে যায়।রোহানদের গুলিও শেষ হয়ে আসছে।বাহিরে সাঁজোয়া যানের শব্দ শোনা যায়।রোহান সেজদা দেয়।তারপর লাল বাটন টিপে।
মর্গে রোহানের লাশ পড়ে থাকে বেওয়ারিশের মত।ওর বাবা-মা একজন জঙ্গীর,একজন সন্ত্রাসীর লাশ নেবে না বলে সংবাদ মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
আলম দীপ্র বলেছেন:
লিখেছেন ভালো!