নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নদীর পারে চুপচাপ বসে আছে দীপ।শরৎকাল।সাদা সাদা মেঘের স্তূপ আকাশ জুড়ে।কিছুক্ষণ পরপর মেঘগুলি তাদের আকৃতি পরিবর্তন করছে।বদলে যাচ্ছে।দীপ বসে বসে মেঘের খেলা দেখে।দেখে বারিহারা মেঘের ছুটোছুটি।একটার পর একটা মেঘ বাতাসে ভেসে যাচ্ছে রুপ বদলাতে বদলাতে।দীপ নিজেকে নিয়ে ভাবে।প্রশ্ন করে নিজেকে-কি চায় ওর মন।দু’জনকেই কি চায়?ও যেন নিজেকেই চিনতে পারছে না।রুপা ভারতে চলে গেলে ও মনে মনে খুব ভেঙ্গে পড়েছিল।জীবনের প্রথম ভালবাসা।রুপার কথা মনে হলে আজও বুকটা চিনচিন করে ওঠে।কেন যে সবাই মাতৃভূমি ত্যাগ করে?কেন ওদের মধ্যে থাকেনা লড়াই করার মানসিকতা?বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার বছরটিতে পাড়া থেকে অনেকেই চলে গেলো।কেউ বলে গেলোনা।চলে যাবার পর জানাজানি হয়।রুপাকে হারানোর পর রত্নাকে খুঁজে পায় দীপ।ফিজিক্স ক্লাসে রত্নার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে ।ঘনিষ্ঠতা থেকেই প্রেমে পড়া দু’জনের।এরপর ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কলেজের পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প।বেশ দিন কেটে যাচ্ছিল দীপের।এর মধ্যে তার জীবনে আর একটি ঘটনা ঘটে যায়।মামার বিয়েতে গিয়ে পরিচয় হয় শিল্পীর সাথে।বিয়ের বাড়ি, চারদিকে হইহুল্লোড়।এরমধ্যেই মেয়েটি নানা ছুতোয় বারবার তার কাছে আসতে থাকে।এসব লক্ষণ দীপের চেনা।শিল্পী ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ে দীপের জীবনে।দীপের কাছে মনে হতে থাকে জীবনে প্রেম-ভালাবাসা ঠিক যেন শরৎকালের বারিহারা মেঘ বালিকা।বাতাসে ঘন ঘন রুপ বদলায়।
“তাহলে তুমিই হচ্ছো সাজনের সেই যাদুকর,
শাড়ির আলমারি থেকে বেছে নিয়ে ঘন নীল শাড়ি
শরীরে জড়ালে যেই –থই থই অথই সাগর!—
আমাকে জাহাজ যেন দিলে ডাক,এসো,দাও পাড়ি”।
শিল্পী শাড়ি পড়ে সামনে আসলেই দীপের মনে পড়ে সৈয়দ শামসুল হকের এই কবিতার কথা।তখন নবম শ্রেণীতে পড়তো শিল্পী।এতটুকু মেয়ে সে কত ভাবেই না দীপের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেষ্টা করতো।দিদির বাড়িতে যখন বেড়াতে আসতো তখন সব সময়ই দীপদের বাসায় সময় কাটাতো।দীপ নিজে এটি স্বীকার করতে বাধ্য শিল্পীকে দেখলে তারও মন চঞ্চল হয়ে উঠতো।তবে সেটিতে বোধহয় শরীরের টান ছিল বেশী।এভাবেই দীপের কলেজ জীবন শেষ হয়।বিশ্বিদ্যালয়ের দরজায় এসে রত্না আর ওর মধ্যে দূরত্ব তৈরী হতে থাকে।রত্না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর দীপ বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।দু’জনেই নতুন জগতে প্রবেশ করে।
দীপ নদীর জলের দিকে চেয়ে থাকে।নদীর স্রোত দেখে।জলের উপর আলোর নাচানাচি দেখে।আর ভাবতে থাকে তনুশ্রীর কথা।কিশোরগঞ্জের মেয়ে তনুশ্রী।একই ব্যাবহারিক ক্লাশে পড়ে যায় ওরা।একসাথে লাইব্রেরীতে পড়া।নোটের আদান-প্রদান।বিকেলে দল বেঁধে ব্রহ্মপুত্রের পারে বেড়ানো।এ সব কিছুই যেন রত্নার সাথে ওর বন্ধনকে শিথিল করে দিচ্ছিল।এর মধ্যে দীপ সেই খবর পেয়ে যায়।রত্নাই ফোন করে।বলে ওর কোন কথাই পরিবার শুনলোনা।প্রবাসী পাত্র।আমেরিকান সিটিজেন।পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেয় ওর।বাড়ির বড় মেয়ে তাই বাধা দিতে পারেনি।খবরটা যেদিন প্রথম পেলো,দীপের মনে অন্যরকম এক অনুভূতি হতে থাকে।দুঃখ?না তা নয়।তব কি আনন্দ?-মুক্তির।মনের বন্ধনের।ক্রমেই তার মনোআকাশ তনুশ্রীময় হতে থাকে।দীপ ভাবতে থাকে-ভালবাসা আসলে কি?ভালবাসা কি মনের শূণ্যঘরকে সাজানো?নিত্য-নতুন প্রেম দিয়ে?দীপ বসে বসে ভাবতে থাকে।তবে একটি জিনিস সে টের পায়,রুপাকে এক ঝলক দেখলেই যেমন বুকের ভেতর দরাম দরাম শব্দ হতো।কান গরম হয়ে যেতো।অন্যদের ক্ষেত্রে ওর সেটা হয়না।কেন?সেকি কৈশোরের ভাললাগা-ভালবাসার জন্য?
আকাশে একটি চিল স্থির হয়ে আছে।যেন ক্যানভাসে আঁকা ছবি।দীপ তাকিয়ে থাকে ।ভাবতে থাকে লীপার কথা।ওর সন্তানের মা।লীপাকে দীপ অসম্ভব ভালবাসে সে জানে।তবুও একটি প্রশ্ন খচখচ করে মনের মধ্যে।এই ভালবাসা কি বৈবাহিক চুক্তিপত্র?
আকাশে বারিহারা মেঘের দল।উড়ছে।রুপ বদলাচ্ছে বাতাসের সাথে।দীপ বসে থাকে চুপচাপ।নদী বয়ে যায়।
2016
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:১২
অপ্রিয় সত্য বলেছেন: ভালবাসা কি বৈবাহিক চুক্তিপত্র? সুন্দর লিখেছেন