নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফল রঙ আমার ভালোবাসা

২৩ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ২:০৯



পুরো বছর জুড়ে ছিল নানা রকম দুর্যোগ কখনো বন্যা, কখনো ঝড়, ঠান্ডা, কুয়াশায় ঘেরা অদ্ভুত ধরনের ব্যবহার আবহাওয়ার। গ্রীষ্মকালে সঠিক উত্তাপ ছিল না, বৃষ্টিতে ডুবেছিল দিনগুলো । সেপ্টেম্বরেও মনে হয়েছিল শীত এসে গেছে, রাতের বেলা মাঝে মাঝে মাইনাসের ঘরে চলে যাচ্ছিল তাপমাত্রা
পুরোটা বছরের মধ্যে এই অক্টোবর অদ্ভুত সুন্দর । চারপাশে রঙের মেলা। দূরে তাকালে মনে হয় গাছের মাথায় আগুন লেগেছে,লাল, লাল গাছের সারি, ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি। বিদায় নেওয়ার আগে, কনে বউয়ের সাজে চারপাশ অপূর্ব হয়ে উঠেছে । আগস্টের শেষ দিকে ঠান্ডার জন্য রং লাগা শুরু হয়েছিল গাছে। সেপ্টেম্বরে এত বৃষ্টি হলো,ভাবলাম বুঝি পাতাগুলো ঝরেই যাবে, সময়ের আগে। কিন্তু না
অক্টোবরের এই সময়ও পাতাগুলো জড়িয়ে আছে গাছকে। প্রজাপতির মতো একটা দুটো পাতা ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে পরে যাচ্ছে মাটিতে ।এত পাতা গাছে, সবগুলো পাতা ঝরে যাবে, গাছগুলো ন্যাড়া হয়ে সারা শীত জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।
কিন্তু সবগুলো পাতা একসাথে পরছে না। একটা দুটো করে গাছের মায়া কাটিয়ে সরে যাচ্ছে, মাটিতে মাথা রাখছে। কখনো বাতাস এসে হুড়মুড় করে তাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কি যে মায়াবী লাগে দেখতে, পাতার পিছে পিছে আমিও দৌড়াই ।
লাল রঙের সারি সারি গাছ, লাল রঙের মুকুট মাথায় পরে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল, সন্ধ্যা দুই বেলা সূর্যের লালিম, রক্তিম আভায় আরো অপরুপ হয়ে উঠে প্রকৃতি। যেন একটা রঙের বক্সের ভিতর ঢুকে পরেছে, চারপাশের পৃথিবী। যত দেখি, প্রতিবছর দেখি তাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে, মন ভরে যায় প্রকৃতির নিঃস্বার্থ ভালবাসায়। মা গাছের সাথে বিচ্ছেদ, ছেড়ে চলে যাচ্ছে দূরে। পাতাগুলো বিরহে কখনো ঘুরে ঘুরে উড়ে বাতাসের মাঝে। কখনো টুক করে ঝরে যাবে নিচে। একটার পর একটা পাতা এসে জড়ো হয় মাটিতে।
পাতার আস্তরণ মাড়িয়ে আমি হাঁটি। শুকনো পাতার নূপুর বাজে আর কখনো বাতাসে হুড়মুড়িয়ে উড়ে যায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। আনমনা হয় ভাবি যেন জীবন পরিবর্তনের ছাপ, মানুষের জীবনের মতন। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বসবাস করার যাপিত জীবন। এক আবাস ঘুচিয়ে অন্য আবাসে চলে যাওয়া। কোথায় যেন মিল খুঁজে পাই, মানুষের জীবনের সাথে ।
শুধু রঙ্গিন পাতা নয় গাছে গাছে। মাঠে মাঠে ফসল গুলো পাকা টুস টুসে হয়ে গেছে, ফসল তুলার গান শুনি। হেমন্তের ধান কাটা মাঠের কথা মনে পরে। ন্যাড়ার আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাব আর যত চাষীদের বিলাবো দুইজনে। যাবে তুমি ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়ে। শিশির ভেজা মাঠে বসে পুড়িয়ে, টাটকা সবজি খাওয়া আর বারবিকিউ করে টার্কি , ভুট্টা, খাওয়ার মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখি না। থ্যাংকস গিভিং পরিবার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন পরিচিতর মধ্যে ভালবাসা বিনিময় ।
কদিন আগে অবিরাম দিনরাত গান গাওয়া, ঝিঝি পোকা কোথায় যেন লুকিয়ে গেল। তাদেরকে এখন আর দেখি না। তেমনি থেমে যাচ্ছে পাখিদের কাকলী। মাঠের ফসল তুলে নেওয়ার পরে, হরিণ পরিবারগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবারের সন্ধানে। গাছের নিচে পড়ে থাকা আপেল গুলো খেতে প্রায়ই আসে দল বেঁধে। আর ফসল তুলা মাঠে নেমে পড়েছে বনতিতির গুলো, দল বেঁধে ফসলের মাঠে পরে থাকা শস্য খুঁজে খুঁজে খায়। কৃষকরা ফসল তুলে নেওয়ার পরে, অনেকটাই রেখে যায় প্রকৃতির প্রাণীদের জন্য ।
কিছু মাঠে দেখি কাশফুলের ছড়াছড়ি। ঝালর দুলিয়ে হাসে। কারোর রং খুব ধবধবে সাদা, আবার বাদামী কত রকমের তাদের আকৃতি। আমাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে কাশফুল ছিল। কাশফুল গুলো যেন পুকুরের জলে নিজের ছায়া দেখতো নার্সিসাস এর মত। দূর্গা পূজার পরে সরস্বতী পূজা আসলে, প্রতিবেশীরা তখন কাশফুল সংগ্রহ করতে আসতো। কাশফুলের লম্বা ডাটা দিয়ে কলম তৈরি করে সরস্বতীর পাশে রাখা হতো ।
মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে যাই ভিন্ন প্রকৃতিতে নিজস্বতা খুঁজে পেয়ে। প্রকৃতি উজাড় করে ভালোবাসা দেয়। দেশ-বিদেশের কোন পার্থক্য তার মাঝে পাইনা ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৫:২২

আজব লিংকন বলেছেন: দারুণ ভাবে প্রকৃতিকে নিজের কলমের আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছে আপি। যেন সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আপনাদের ওখানে হরিণ আছে?

আপনার লেখা পড়ে জীবু দা'র কথা মনে পরে গেল,
❝আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়— হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে;
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে❞

আর জলের গানের ঝড়া পাতার গান।

ভোরের শিউলি কিংবা ঘসের ডগায় ঝলমলে রোদে মুক্তার মতো চকচকে শিশির বিন্দুর শুভেচ্ছা রইলো।।

২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১:৩৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ভালোলাগল আপনার মন্তব্য। জীবন বাবুর কথা মনে পরা সে তো অনেক বড় ঘটনা। আমার সাথে প্রকৃতির একটা নিবীর সম্পর্ক আছে । খুব কাছে থেকে অন্তর দিয়ে উপলব্ধী করি তার শ্বাস প্রশ্বাস।অন্য লেখা পড়ে দেখতে পারেন।
আপনার সাথে মনে হয় আজই প্রথম দেখা হলো।
বন্য প্রাণীরা আমার আসেপাশে ঘোরাফেরা করে নিজেদের মতন। হরিণরা বাড়ির পাশেই বসবাস করে।
হেমন্তের কমলা রঙ শুভকামনা রইল

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ২:০৬

কামাল১৮ বলেছেন: সুন্দর বর্ননা,পড়ে মুগ্ধ হলাম।।আমার বাসার সামনে ছোট ছোট দুটি গছ আছে।তাদের পাতা ঝড়া শুরু হয়ে গেছে।
দুই একটা জাঁত ছাড়া সব গাছের পাতাই শীতে পড়ে যায়।কিন্তু ম্যাপেলের মতো এতো রং বদলায় না।অন্য গুলো হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়ে।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:০৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: চিরহরিৎ গাছগুলো সব সময় সবুজ থাকে। শীতকালে এরাই আমাদের অক্সিজেনের উৎস, সব কিছু যখন সাদা হয়ে যায় বরফে ঢেকে।
ম্যাপেল অনেক রঙের হয়। লাল টুকটুকে খয়েরি, কমলা, হলুদ।
যেদিকে তাকাই রঙ দেখি এই রঙটুকু চোখে নিয়ে কাটাতে হবে আগামী কয়েকটা মাস। ধন্যবাদ

৩| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৩:১০

আজব লিংকন বলেছেন: হ্যাঁ আপি। আমাদের এই প্রথম দেখা।
আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।
আমাদের এখানে সবে কার্তিক শুরু। এই মাস শেষ হলেই শীত শুরু হবে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে পুরো দেশের ওয়েদার খারাপ। অনবরত বৃষ্টির কারণে মনে হচ্ছে শীত পড়েই গেছে। ভালোই লাগছে।

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:২০

রোকসানা লেইস বলেছেন: হ্যাঁ আপি। আমাদের এই প্রথম দেখা।
সুন্দর হোক পথচলা।
আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।
আমারও অনেক ভালোলাগছে
আমাদের এখানে সবে কার্তিক শুরু। এই মাস শেষ হলেই শীত শুরু হবে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে পুরো দেশের ওয়েদার খারাপ। অনবরত বৃষ্টির কারণে মনে হচ্ছে শীত পড়েই গেছে। ভালোই লাগছে।
দেশের এই সময়টা আমার খুব প্রিয়। চারপাশে মৌ মৌ করে ছাতিমের ঘ্রাণ।
একটু অদ্ভুত না এই খবরটা।সবাই পায় না ছাতিমের ঘ্রাণ।আমি পাই আরো পাই, নাগলিঙ্গম ফুলের ঘ্রাণ, নিতে পারেন রমনা পার্কে গিয়ে।
ঘূর্ণিঝড় আশাকরি দেশকে আরও ধ্বংস যজ্ঞে নিয়ে যাবে না।

৪| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১০:২৪

আহরণ বলেছেন: আমি ঝরাপাতাদের দলে। বাওকুমটা বাতাসে সরসর শব্দ, এখানের পাতা সেখানে, সেখানের পাতা এখানে মুহূর্তেই। এই সে দিন, সেন্ট লরেন্স নদীর ধারে দেখলাম লাল-হলুদের উৎসব, রঙ..... @ রোকসানা?

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:৩২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ঝরাপাতা গো আমি তোমারই দলে...........আমিও কদিন শুধু উড়ন, ঘূর্ণি নাচন দেখছি শুনছি তাদের গান। তবে সেন্ট লরেন্সের পাশে যেতে হচ্ছে না। ওরা আমার চারপাশ ঘিরে আছে, রঙিন পত্রপল্লব।

একদেশে আমাদের কত রকমের ভাষা শব্দ। বাওকুমটা,অনেকদিন পর শুনলাম শব্দটা। এক একটা শব্দর সাথেও এক একটা স্মৃতি জড়িয়ে থাকে।
ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আহরণ।

৫| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:০৪

শায়মা বলেছেন: কি সুন্দর রঙ্গিন পাতা!!!!!!!!!

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:৩৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: তোমার ছড়া পড়তে পড়তে ঢুকলাম। তারপর নিজের লেখার মন্তব্যের উত্তর দিতে দিতে। তোমাকেও পেয়ে গেলাম।
ছবির চেয়ে বাস্তবে আরো অনেক বেশি সুন্দর। আসো একবার দেখে যাও স্বচক্ষে।

৬| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০০

শায়মা বলেছেন: আচ্ছা আসবো।

নেক্সট ইয়ার..... আমার কাজিন আমাকে ডেকেছে তাহার ছুটির নিমন্ত্রনে!!!!

তোমাকেও জানাবো আপুনি!!!

২৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৪২

রোকসানা লেইস বলেছেন: এসো অপেক্ষায় রইলাম।
এ সময় এলে রঙ দেখেতে পাবে তবে হালকা ঠান্ডা । বসন্তও খুব সুন্দর। প্রতিটা ঋতুর আলাদা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় এখানে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.