নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিনটা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:৫৯

সকালবেলা দরজা খুলে বাইরে এসেই চোখ কুঁচকে গেল মোজাম্মেল সাহেবের। বারান্দায় উনার বসার চেয়ারে রাখা পত্রিকা, একটা বল, বাচ্চাদের খেলনা। পত্রিকাটি হাতে উঠিয়ে দেখলেন, সেটি আজকের নয়, মুখটাও বিকৃত হয়ে গেল তারিখ দেখে।
ইস কি যে একটা যাতা অবস্থা সকালবেলায় মন মেজাজটা খিচড়ে গেল, কথাটি বলার সাথে সাথে মুখটাও নানান ভাবে বিকৃত হলো উনার।
নাক কুঁচকে আস্তে করে বলটা টোকা দিয়ে নিচে নামিয়ে দিলেন তার পাশে খেলনাগুলো ফেলে দিলেন। পত্রিকাটা দিয়ে চেয়ারের সিটি ঝেড়ে বসলেন ।
বিরক্তিটা ওনার মুখে নয় শুধু, দেহ জুড়ে লেগে আছে, সাথে মনের ভিতরও যেন কেমন অস্থির যন্ত্রনা। অঙ্গভঙ্গিতে সকালবেলার সহজ সরল কোনো সতেজ অবস্থা উনার শরীর,মনের মধ্যে নেই। উনি আছেন একরাশ বিরক্তি নিয়ে। যেন বিশ্রী গন্ধ আসছে এভাবে নাক মুখ কুঁচকে আছেন। যদিও পাশেই বেলি ফুলের গাছ থেকে বেশ ভালোই সৌরভ ভাসছে।
এমন সময় বাইরের গেটে কেউ যেন নক করছে, একটু পরে ভেসে আসলো কণ্ঠ একটু কিছু দেন গো .....কাল থেকে খাই নাই কিছু । মোজাম্মেল সাহেবের বিরক্তির পারা আরও আরেকটু বাড়লো।
ঘুম থেকে জাগার আগেই ভিক্ষুক এসে হাজির, কি যে হয়েছে দেশটার। অথচ সকাল বেলার পত্রিকাটা নিয়ে উনি সকাল শুরু করবেন, সেই পত্রিকাটা এখনো আসেনি আর কে যে পুরানো পত্রিকা এখানে রেখে দিয়েছে যত্তসব।
ভিক্ষুকটা দরজায় গেইটে শব্দ করেই যাচ্ছে সাথে চিৎকার, কিছু দেন গো কিছু দেন গো খাই নাই দুই দিন ধইরা।
এমন সময় দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো উনার তিন বছরের নাতি, অস্থির তার হাভভাব। এসেই উনার হাঁটু দুটো খামচে ধরে এই দাদু এই দাদু করতে লাগলো ।
কিছু বলার আগেই উনার পায়ের কাছে কিছু গরম অনুভব করলেন। ইস রে বাচ্চাটা হিসু করে দিল সকালবেলা গায়ের উপর। চোখ মুখ ভয়ংকর ভাবে বিকৃত হয়ে গেল উনার। সকালবেলাটা যাচ্ছে তাই ভাবে শুরু হল আজকের দিনটা যে কেমন যাবে । তিনি ঘাড় বেঁকিয়ে দরজার দিকে মুখ করে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন, এই মিনি , মমতা বাচ্চাটাকে নিয়ে যাও।
কেউ ডাক শুনে এলো না। মোজাম্মেল সাহেব খানিকক্ষণ বিরক্ত মুখে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
বাচ্চাটা আবার বলছে দাদু দাদু এর মধ্যেই পায়ের কাছে পড়ল কিছু। আরে এত হাগু করে দিল, মোজাম্মেল সাহেব মুখ বিকৃত করে শক্ত হয়ে বসে আছেন। বাচ্চাটা যে কোন সময় হাগুর উপরে পা দিয়ে দিবে, তিনি বাচ্চাটাকে সরিয়ে দিচ্ছেন না । কিন্তু তাকিয়ে আছেন কঠিন চোখে। এই সময় মমতা বেরিয়ে এলেন, মুখ বিকৃত করে তিনিও বললেন, কি ব্যাপার সকালবেলা এত হইচই করে বাড়ি মাথায় তুলেছ কেন?
কঠিন মুখে রাগি চোখে মমতার দিকে তাকিয়ে আছেন মোজাম্মেল সাহেব। বাচ্চাটা তখনই হাগুর উপরে পা দিয়ে দিল। কি করছে দেখো।
মুখ ঝামটা দিয়ে মমতাও বললেন, দেখো দেখো করছ কেন তুমি ধরতে পারছো না বাচ্চাটাকে সরিয়ে দিতে পারলে না একটু, তোমার কি হাত ক্ষয়ে যায় ?
কি একটা দিন শুরু হল, মহাবিরক্ত মোজাম্মেল সাহেব উঠে দাঁড়ালেন এবং ঘরের ভিতরে ঢুকে বাথরুমে চলে গেলেন। অফিসের পোশাকে তৈরি হয়ে খাওয়ার টেবিলে বসলে, কাজের মেয়েটা চা দিতে গিয়ে উনার শার্টে চা ফেলে দিল। লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে উনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন,এই এই কি করলি কি হলো এটা।
কি একটা অশান্তির সংসার এখন আবার আমাকে কাপড় বদল করতে হবে। অফিসে যাওয়ার দেরি হয়ে যাবে।
মোজাম্মেল সাহেব চা না খেয়েই নিজের মনে বক বক করতে করতে আবার নতুন শার্ট পরতে গেলেন।
পুরোপুরি নাস্তা না করেই বিরক্ত মুখে উনি অফিসের জন্য বেরিয়ে গেলেন। ভাবছেন নীচে বোধহয় গাড়ি এসে অপেক্ষা করছে কিন্তু নিচে গিয়ে প্রায় পনের মিনিট দাঁড়িয়ে আছেন গাড়ির দেখা নাই ।
গাড়ি যখন এলো উঠতে গিয়ে দেখলেন, উনার সিটে একজন নতুন লোক বসে আছে। উনি সেই লোকের দিকে তাকালেন, চারপাশে অন্যদের দিকেও তাকালেন কিন্তু কেউ বলল না যে ওটা মোজাম্মেল সাহেবের সিট, প্রতিদিন উনি এখানে বসেন। উনার সিট ছেড়ে দিয়ে নতুন ভদ্রলোক অন্য কোথাও বসুক। বিরক্ত মুখ নিয়ে মোজাম্মেল সাহেব মিনিবাসের পিছন দিকে গেলেন এবং পিছনের সিট যেখানে খালি ছিল সেখানে উনাকে বসতে হলো।
অফিসে ঢোকার পরে পাশের টেবিলে বসা, রব্বানী সাহেব বললেন, কি ভাই আজ কাপড়ের দিকে খেয়াল ছিল না?
আপনার কাপড়ে যে কালি লেগে আছে।
সে কি কোথায়! তাকিয়ে দেখলেন ডান পাশে পেছনের দিকে লম্বালম্বি কালো দাগ, কালি লেগে আছে উনার শার্টে।
কালি কোথা থেকে আসলো উনি তো ভালো শার্টই পড়েছিলেন। নিশ্চয়ই গাড়ির পেছনে সিটে কালি ছিল।
কি করবেন এখন এই শার্ট পরে, ক্লায়েন্টের সাথে দেখা করতে যাওয়া উচিত হবে।
মোজাম্মেল সাহেবের মুখটা আবারও বিরক্তিতে চোখ মুখ, কপাল, ঠোঁট, নাক কোঁচকে গেল।
রব্বানী সাহেব বললেন, ভাই এক কাজ করেন শার্টটা ইন করে পরে নেন।
ভুড়িটা বের হয়ে থাকে তাই শার্ট ইন করে পরাটা উনি পছন্দ করেন না কিন্তু কালি ঢাকার জন্য এখন তাই করতে হবে। এই মুহূর্তে তো একটা নতুন শার্ট পাওয়া যাবে না।
ভাবলেন এখন থেকে অফিসে দুইটা শার্ট রেখে দিবেন বলা যায় না কখন প্রয়োজন হয়।
কি হলো আজ সকাল থেকে ঝামেলা মনে হচ্ছে।
ক্লায়েন্টের সাথে মিটিংটা ভালো মতো হবে তো। মুখটাকে যতটুক সম্ভব নরমাল করে উনি চেয়ারে বসলেন। বেল বাজিয়ে পিয়নকে ডাকলেন, একটা ডিম পোচ আর এক কাপ চা নিয়ে আসো তো । খেতে গিয়ে এক ফোটা ডিমের কুসুম প্যান্টের উপরে পড়ে গেল, আবার মুখটা বিরক্ত হয়ে উঠলো। ট্যিসু দিয়ে সেটা পরিচ্ছন্ন করলেন, কালো প্যান্টে সাদা সাদা একটা ছ্যাড়াভ্যাড়া দাগ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু উপায় নাই আর এই পরে থাকতে হবে।
চায়ে কেবল দুটো চুমুক দিয়েছেন তখনই পিওনের এসে বলল বড় সাহেব আপনাকে ডাকে, এখনই যেতে বলেছে। তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়ে, টেবিলের উপর খানিকটা চা ছলকে পড়ে গেল, ভ্রু কুচকে পিয়নকে বললেন চা মোছো।
বড় সাহেবের রুমে যেতেই বড় সাহেব বললেন, মোজাম্মেল সাহেব আজকের মিটিং এর সব আপ টু ডেট আছে ?
জি স্যার সব ঠিক ঠাক আছে,
কাগজপত্র গুলো কি আমাকে দেখাবেন?
জি স্যার দেখাচ্ছি। ফাইল টা নিয়ে আসি।
তাড়াতাড়ি আসুন
নিজের ডেস্কে এসে গতকালের তৈরি করে রাখা মিটিং এর প্রপোজাল ফাইলটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ফাইল পেলেন কিন্তু তার ভিতরে একটা কাগজ পাচ্ছেন না, হিসাবের এই কাগজটা কোথায় গেল! খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কম্পিউটার খুলে আবার কাগজটা প্রিন্ট দিলেন। তারপর সবকিছু দেখে নিয়ে বড় সাহেবের রুমে গেলে বড় সাহেব বললেন, এতক্ষণ লাগলো আপনার ফাইল নিয়ে আসতে!
মোজাম্মেল সাহেব কিছু বললেন না, মুখটা সহজ রাখার চেষ্টা করলেন ।
কিছু হওয়ার আগেই উনার মুখটা নানাভাবে কুঁচকে যায় বিরক্তিতে। বড় সাহেবের দিকে ফাইল বাড়িয়ে দিলেন। কাগজপত্র দেখে বললেন হ্যাঁ ঠিক আছে। দেখুন ক্লায়েন্টকে আটকাতে পারেন কিনা। আপনি কখন যাচ্ছেন?
সাড়ে এগারটায় মিটিং আমি দশটার দিকে বেরিয়ে পড়বো, পথে তো সময় লাগে ।
তাই বেরিয়ে পড়েন দেরি করবেন না খুবই ইম্পোর্টেন্ট ক্লায়েন্ট দরকার হলে দুপুরের লাঞ্চ করিয়ে দিবেন।
মোজাম্মেল সাহেব বাথরুমে ঢুকে নিজেকে একটু ভালো করে দেখলেন। কপালটা ম্যাসাজ করলেন। ভ্রু ম্যাসাজ করলেন যাতে কুঁচকে না থাকে মুখটাকে হাসি হাসি রাখার চেষ্টা করলেন। আয়নায় তাকিয়ে ভাবলেন, এই হাসিটা মুখে ধরে রাখতে হবে সারাক্ষণ। অথচ আয়নায় তাকিয়ে দেখলেন, কপাল কুচকে আছে। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখে আবার নিজের মুখটা ঠিক করলেন। ভাবলেন একটু আগে বেরিয়ে কি একটা শার্ট কিনে নিব। সেটা ভালো হবে। দোকানে থেমে শার্ট কিনে মিটিং এর জায়গায় পৌঁছানো সময় বেশি লাগবে না। মিটিং এর ভেন্যুর কাছাকাছি জায়গায়, ড্রাইভারকে গাড়ি রাখতে বললেন, তারপর একটি দোকানে ঢুকে কিনলেন শার্ট প্যান্ট পছন্দ মত। ফিটিং রুমে যেয়ে পরিপাটি হয়ে বেরিয়ে দেখলেন একটু আগের ফাঁকা রাস্তা জ্যামে আক্রান্ত ভীষণ ভাবে। রোদে ঘেমে দশ মিনিট পথ হেঁটেই চলে গেলেন হোটেলে যেখানে উনার ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং ।
মোজাম্মেল সাহেবের বেশ ভালই লাগছে এতক্ষণে। মিটিং এর সময়ের আগেই চলে এসেছেন। নতুন শার্ট প্যান্টে বেশ সুন্দর হয়েছে, নিজেকে বেশ ভালো লাগছে। দোকানের মেয়েটা পোষাক পছন্দ করতে বেশ সাহায্য করেছে। টাই বেঁধে দিয়েছে তখন বেশ অন্য রকম লাগছিল। মমতা এখন কাছেই আসে না। দূর থেকে শুধু কথার ঘা ছূঁড়ে দেয়।
আশা করা যায় মিটিংটা ভালো হবে।
হোটেলের লবিতে সুন্দর আবহ, হালকা মিউজিক বাজছে। পরিপাটি নারী পুরুষ আসা যাওয়া করছে। খুব ভীর নেই এখন। সুন্দর পরিবেশে বসে মন ভালো করার চেষ্টা করছেন, মুখটাকে হাসি হাসি রাখার চেষ্টা করছেন। সময়ের পাঁচ মিনিট আগে থেকে মোজাম্মেল সাহেব ঘড়ির কাটা দেখছেন সাড়ে এগারোটা বেজে গেল উনি অপেক্ষায় আছেন। পৌনে বারোটা বেজে গেল উনি অপেক্ষায় আছেন।ক্লায়েন্টের কোন পাত্তা নেই। উনার হাসি হাসি করে রাখা মুখটা আবার বিরক্তিতে কুঁচকে যাচ্ছে কিছুতেই হাসি ধরে রাখতে পারছেন না মুখে। তাহলে কি ক্লায়েন্ট আসবে না, চিন্তিত হন। একটা ফোন করে জানা গেলো, জ্যামে আটকা পড়ে আছে। আরো খানিক সময় অপেক্ষা না কতক্ষণ সেটা তো কেউ বলতে পারেনা। সময়ের কোন গ্যারান্টি নাই।
উনি ড্রাইভারকে ফোন দিলেন দুপুর হয়ে যাবে ক্লায়েন্ট এখনো আসেনি তুমি খেয়ে নিও ।
যাক এখন কিছু করার নেই নিজের আনন্দে এই ফাইভ স্টার হোটেলের লবিটা উপভোগ করা যাক ওরা না আসা পর্যন্ত । মোজাম্মেল সাহেব উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করলেন চারপাশে। এরা এত সুন্দর করে সাজায় খুব ভালোলাগে দেখতে। উনি পরিপাটি থাকতে পছন্দ করেন কিন্তু উনার বাড়িটা হয়ে থাকে একটা গরুর খোয়াড়। গাদা করা কাপড় এখানে ওখানে জিনিস পরে থাকে। বসতে গেলে চেয়ার খালি পাওয়া যায় না, কি যে একটা অবস্থা।
পাশে একটা সুইমিং পুল আছে এখন কেউ নেই পুলে। মাঝে মাঝে এখানে এসে সাঁতার কাটলে কেমন হয়, শরীর দিন দিন ভারী হয়ে উঠছে। মোজাম্মেল সাহেব কাউন্টারে গিয়ে সুইমিং করতে আসা যাবে কিনা জানতে চাইলেন। ওরা জানালো এখানে তো আপনি সুইমিং করতে পারবেন না মেম্বারশিপ না থাকলে। মেম্বারশিপের একটা ফর্ম ধরিয়ে দিল উনার হাতে। কিছু টাকা না হয় গেল শরীর ঠিক করার জন্য মোজাম্মেল সাহেব বেশ খুশি মনে ভাবলেন। সাঁতার কাটার জন্য কিছু কাপড় কিনতে হবে। সাঁতার কাটতে এসে ভালোই সময় কাটবে। উনি পুলের পাশে গিয়ে বেশ চার-পাঁচটা ঘুরে আসলেন। সময় কতক্ষণ গেছে ওনার খেয়াল নাই। উনি বেশ আনন্দ পাচ্ছেন, সুইমিং পুলের পাশে হাঁটতে ওনার বেশ আনন্দ লাগছে। এমন সময় উনার ফোনটা বেজে উঠলো বড় সাহেবের ফোন !
মোজাম্মেল সাহেব আপনি কোথায়?
স্যার আমি তো হোটেলে, ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা করছি ।
ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা করছেন, ক্লায়েন্ট তো আপনাকে খুঁজে পাচ্ছে না ? আপনি কি রুমে গিয়ে আনন্দ ফুর্তি করছেন ?
কি বলছেন স্যার ছি ছি
ক্লায়েন্ট আপনার জন্য অপেক্ষা করছে লবিতে।
বিরক্ত মুখে একদলা থুতু সবুজ লনে ফেলে দিয়ে উনি ভাবলেন ওরা আমাকে ফোন না দিয়ে বড় সাহেবকে ফোন দিল কেন?
মোজাম্মেল সাহেব প্রায় দৌড়ে লবির ভিতরে ঢুকলেন। একজন কালো একজন চাইনিজ বসে আছে পাশাপাশি দুই চেয়ারে। লবিতে আর কোন মানুষ নেই। এরাই কি ক্লায়েন্ট এদের চেহারা দেখা হয়নি আগে কখনো।
উনি বিনীত ভঙ্গিতে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, এক্সকিউজ মি,আপনারা কি মিস্টার উইলিয়াম আর মিস্টার লি?
ইয়েস শরীফ, আর ইউ শরিফ চৌধুরি?
নাহ্ ,আমি মোজাম্মেল হোসেন সেলস রিপ্রেসেন্টেটিভ কোম্পানির।
কোম্পানির নামটা বলার সাথে উনারা উঠে দাঁড়ালো এবং সরি বলল, ওদের দেরি হয়ে গেছে জন্য ট্রাফিকের কারণে সময় মতন পৌঁছাতে পারেনি।
সরি স্যার আমি একটু বাইরে হাঁটাহাঁটি করছিলাম অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম তো আপনাদের জন্য।
ইটস ওকে
স্যার আপনাদের জন্য কি কফি বলবো অথবা লাঞ্চ করবেন লাঞ্চ টাইম শেষ হয়ে যাচ্ছে। মোজাম্মেল সাহেব ওদেরকে নিয়ে লাঞ্চের জন্য গেলেন।
দুজন মিলে খুবই ভালো খাওয়া দাওয়া করলো প্রায় বিশ হাজার টাকার বিল দেয়া হলো। কিন্তু খাওয়া দাওয়ার সময়ে কাজের বিষয়ে কোনো কথা হলো না। মোজাম্মেল সাহেবেরও সকাল থেকে ভালো করে খাওয়া হয়নি তাই খাওয়ার দিকে মনোযোগী ছিলেন।
বিল পেমেন্ট করে মোজাম্মের সাহেব ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা করছেন, মিটিং স্পেসে। ওরা দুজন ওয়াশরুমে ঢুকেছে। কিন্তু এক ঘন্টা পরিয়ে গেলেও দুজন ক্লায়েন্ট ওয়াসরুম থেকে আসছে না। ওরা বাথরুমে যেয়ে ভেনিস হয়ে গেছে যেন।
মোজাম্মেল সাহেব ঠিক কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। কাউন্টার গিয়ে জানতে চাইলেন, মিস্টার উইলিয়াম আর মিস্টার লি বাথরুমে গেল এখনো বেরিয়ে আসছে না ।
ইয়াং ছেলেটি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, স্যার ওদের সাথে আপনার কি কাজ?
ওরা তো আমার সাথে ব্যবসার একটা ডিল করতে এসেছিল ।
অনেক লোক আছে, এমন ক্লায়েন্ট সেজে এসে খেয়েদেয়ে চলে যায় ডিলটা খাওয়ার আগে করে নিয়েছিলেন? না ভাবলাম লাঞ্চ টাইম পেরিয়ে যাচ্ছে খাওয়ার পরেই করব ওরা আসতে দেরি করল।
স্যার ওরা হওয়া হয়ে গেছে ওদেরকে আর পাবেন না ফোন করে দেখেন যদি ধরে।
অনেকক্ষণ ফোন করা হলো হোটেলের নাম্বার থেকে ফোন করা হলো কিন্তু ওদের ফোন বন্ধ। বাথরুমের ভিতরেও ভালোভাবে খোঁজা হলো দুটো মানুষ যেন হাওয়া হয়ে মিশে গেছে বাথরুমের ভিতর। কখন কোন দিক দিয়ে বেরিয়ে গেল এটা বুঝতে পারলেন না মোজাম্মেল সাহেব।
বিদেশি লোক এরা এরকম ফ্রড আশ্চর্য হয়ে বললেন।
অনেকেই আছে এরকম দুই নাম্বারি করে। এখানে মানুষদের বোকা বানিয়ে ওরাও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাঁচ হাজার টাকার প্যান্ট শার্ট, বিশ হাজার টাকার খাবার বিল সব মিলিয়ে পঁচিশ হাজার টাকা চলে গেল আর ক্লায়েন্ট ছিল ভুয়া। মোজাম্মেল সাহেবের চোখ মুখ কুঁচকে গেল বড় সাহেবের সামনে এখন কিভাবে দাঁড়াবেন সেটা ভাবতে ভাবতে আবার অফিসে পথ ধরলেন।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৫:২৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: শণির দশা একেই বলে। তবে মোজাম্মেল সাহেবের সব কিছু নিয়ে খুতখুত করার শাস্তিটা ভালোই হয়েছে।
ইয়ে..........একদিনে এতো সমস্যা একজনের ঘাড়ে পড়লো মোটামুটি দুপুর নাগাদ। বাকী সময়ে আর কি কি হয়েছিল? বেশী বেশী হয়ে গেল না!!! B:-)

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: গল্প পাঠে আপনাকে দেখে ভালোলাগল।
ঠিক বলেছেন শনির দশা।
পরে যখন এক সাথে পঞ্চাশ এমনই তো হওয়ার কথা।
বাকি দিনের হিসাব দিলে আর পড়ার আগ্রহ থাকবে না। :D
খুতখুতে স্বভাবের জন্য বেশি ঝামেলা মনে হয় তাদের।
ধন্যবাদ

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৩২

নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন আপা। শিক্ষণীয় গল্প। শিক্ষা নেওয়ার অনেক উপাদান আছে। আমি অপরিচিত কাউকেই বিশ্বাস করিনা। তিনবার ধরা খাওয়ার পর। কিছুদিন আগে এক ফ্রিল্যান্সের কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি ঘরে বসে ইনকাম করতে চান? বললাম, নাহ। আমি আপনাদের এইসব কাজে আগ্রহী নই। তখন ওরা বলে, ২০ হাজার টাকার মত ইনকাম করতে পারেন। আপনাকে শুধু প্রথমে একটা কোর্স করতে হবে। পুরো নাছোড়বান্দা ছিলো ওরা। পরে কল কেটে দিলাম।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৪০

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ নয়ন বড়ুয়া
ছোট ছোট বিষয়গুলো আপনার চোখে পরেছে দেখে বেশ ভালোলাগছে।
সুন্দর মন্তব্যে নিজের ধরা খাওয়া আর সতর্ক হওয়ার বিষয়টি জানলাম, গল্পের সূত্রে।
প্রতি নিয়ত নতুন কিছু শিখতে হয়; ভালো মন্দ।
সাবধানতাই শ্রেষ্ঠ পথ বর্তমান সময়ে।

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৫৩

এম ডি মুসা বলেছেন: সকাল বেলা যদি খারাপ লাগে সারাদিন খারাপ যায় , এটা হতে পারে! কতটুকু সত্য জানিনা , আপনার গল্প পড়ে বুঝতে পারছি এটা তো এক বাস্তব ঘটনা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৪৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক মানুষ নিজের ভাবনার বাইরে যেতেই পারে না। এতই স্টাবার্ন থাকে একটু বিচ্যুতি দেখলে অসহিষ্ণু হয়ে উঠে
বাস্তবের সাথে কল্পনার মিশেল।
ধন্যবাদ এম ডি মুসা

৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২১

আহমেদ জী এস বলেছেন: রোকসানা লেইস,




বাহ বেশ মজার একটা গল্প।
সক্কাল বেলাতেই হাগু-মুতু গায়ে লাগলে দিনটা এমন হবারই কথা!
ভুয়া মফিজ এর মতো বলতেই হয়- শনির দশা একেই বলে।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৫২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ আহমেদ জী এস

শনিরদশা নিজেই ডেকে আনলেন মনে হয় সক্কাল বেলা।
অথবা কখনো কখনো নিয়তিও হতে পারে ডিজাস্টার ডে হয়ে যায় অনিচ্ছায়।

৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৬

শেরজা তপন বলেছেন: গল্প ভাল- তবে শেষ দিকটা একটু গোঁজামিল মনে হয়েছে। এমন প্রতিষ্ঠিত একটা কোম্পানীর সাথে উটকো বায়ার সেজে ধোঁকা দিয়ে খাবার খেয়ে হাওয়া হয়ে যাওয়া অনেকটা অসম্ভব! এরপরেও যে হচ্ছে না তা নয়। অনেক কোম্পানী এসব গা করছে না আর এই ফাঁকে কিছু বিদেশী বাটপার বায়ার সেজে দিনের পর দিন ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।
আমার মনে হচ্ছে লেখাটা সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে। ভাল লাগল।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ শেরজা তপন
বড়শিতে মাছ ধরার জন্য সবাই অপেক্ষায় থাকে।
কে যে কার কাছে ধরা পরে যায়। :P
গোঁজামিল মনে হলেও নিজেই বললেন হয় এমন । তাই আমার মনে হয় ঠিকই আছে।
কিছু বিদেশী বাটপার বেশ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে, বাংলাদেশেও।
সত্য কল্পনা মিলে মিশে তৈরি হলো ।

৬| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৫২

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: প্রায় প্রতিটি মানুষ এর কিছু দিন এমন হয় আপু। ধুফহু কুফা আর কুফা।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন মোহাম্মদ গোফরান প্রতিটি মানুষ কখনো এমন এমনদিন পায়।
কুফা শব্দটা অনেকদিন পর শুনলাম।

৭| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো মন্দ মিলিয়েই আমাদের এই সমাজ। আমাদের উচিত দুষ্ট লোক থেকে দূরে থাকা।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৩০

রোকসানা লেইস বলেছেন: ঠিক

৮| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫৪

মিরোরডডল বলেছেন:




what a day!!!


২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৩১

রোকসানা লেইস বলেছেন: দারুণ না B-) মিরোরডডল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.