নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যখনই ঘরের বাইরে বের হই কিছু না কিছু একটা নতুনের সাথে আমার দেখা হবেই। বৈচিত্রময় জীবন ভালোবাসি তো, তাই বৈচিত্র ধরা দেয় সব সময় আমার কাছে।
ঘুম থেকে জাগা, এক নিয়মে দিনটা পার করে দেয়া এমনটা আমার খুব একটা হয় না। প্রতিদিন অন্য রকম। প্রতিদিন ভিন্ন ভোরের সূর্য রাঙায় আমাকে নতুন করে। ঢেলে দেয় নতুন নতুন গল্প সারাদিন ধরে।
গত বাইশ তারিখের গল্পটা বলি । কদিন ধরে ঘরে চুলা ধরাই না। রান্না করা লাগে না। চারদিন আগে রান্না করেছিলাম তা শেষই হয় না। আজকাল খাওয়া হয়েছে পাখির মতন।
কিন্তু ফ্রিজে নতুন কেনা মাংসের টুকরো পুরানো হয়ে যাচ্ছে, আজ এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে তাই সকালের নাস্তা সেরে তাকে নিয়ে বসলাম। মনে হলো আধ ঘন্টায় কাজ শেষ হবে কিন্তু পুরো দুটো ঘন্টা কখন যেন চলে গেলো। তবে প্রিপারেশন পর্ব আধঘন্টায় সেরে বসিয়ে দিলাম ঢিমে আঁচে রান্না হওয়ার জন্য মিট বল । আর পাস্তা সেদ্ধ করে রাখলাম তার সাথে খাওয়ার জন্য। ফেসবুক আর কিছু খবরা খবর দেখা কিছু লেখার মাঝে সব কিছু পরিচ্ছন্ন করে। নিজেকে পরিছন্ন করতে গেলাম। ভেবেছিলাম ঘন্টা তিনেক আগে শহরে গিয়ে কয়েকটা কাজ সারব আর আমার বয় ফ্রেণ্ডের সাথে কিছুটা সময় কাটাব। কিন্তু শেষে দেখলাম তেমন একটা সময় হাতে রইল না। আজ শহরে যাওয়া বিশেষ এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।
আর সে অনুষ্ঠান খুব প্রিয় অনুষ্ঠান লেখকদের সম্মেলন। আর্ন্তজাতিক অর্থারস ফেস্টিবেল। দেশ বিদেশের কত লেখক আসবেন। প্রেস, প্রকাশক সংগঠক। ইয়থ এবং ওল্ড গোল্ড লেখক সবাই মিলে দশদিন ব্যাপী চলা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিচিত হবেন সবার সাথে। আসবেন লেখকের পরিচিত বন্ধু আত্মিয় এবং অনুরাগী। সংগঠকরা ঘাম ঝরিয়ে সবার সাথে যোগাযোগ করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন কয়েক মাসের প্ররিশ্রমে।
যাদের সাথে সামনা সামনি দেখা হয়নি কখনো কিন্তু অনেক কথা হয়েছে বেক এন্ড ফোর্থ ইমেল যোগাযোগের মাধ্যমে।
নিয়ম কানুন জানার জন্য তাদের সহযোগীতা অপরিহার্য ছিল। কঠিন কিছু নয় কিন্তু কিছু প্রশ্ন যখন মনে হয় তখন তা সহজ করে বুঝিয়ে দেন তারা অত্যন্ত আন্তরিকতায়।
আমি তো সময় করে উঠতে পারি না। অনেক সময় নানা রকম কাজের চক্করে পরে। নিজের পাঠানো মেইলের উত্তর দেখি তিনদিন পর। অথচ তারা এত এত মানুষের সমস্ত সমস্যার সমাধান সাথে সাথে দিয়ে রাখেন। তাদের এই কর্মকে স্যালুট জানাতে হয়।
প্রত্যেক লেখক তাদের গেস্ট এবং অন্য সব রকম আমন্ত্রিত অথিতীর জন্য নেম ট্যাগ ব্যাগ । প্রত্যেকের লেখার বিষয়সহ অনলাইন আপডেট এবং অনুষ্ঠান সূচি সময় বিভাজন প্রত্যেকের জন্য অনুষ্ঠানের বিশেষ মঞ্চ। থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা। বিশাল যজ্ঞ অত্যন্ত সুন্দর ভাবে তারা পরিচালনা করছেন।
এখানে অংশ গ্রহণ করবেন ইংরেজি ভাষার সাথে অন্য ভাষার লেখক । এবং তারা নিজেদের লেখা গল্প বলবেন। কবিতা পড়বেন। লেখা সম্পর্কে কথা বলবেন। প্রত্যেক বিষয় আলাদা। প্রত্যেক সময় আলাদা বিভাজন।
সপ্তাহ ব্যাপী দেশের নামি দামী লেখকদের সাথে নতুন লেখক প্রজন্ম ভিন্ন ভাষাভাষি লেখক এবং ভিন্নদেশের অনেক লেখক এর সমাগমে মুখরিত হবে হারবার ফ্রন্ট সেন্টার। যেখানে নিয়মিত শিল্পর বিভিন্ন বিষয়ে চর্চা হয়।
এই সময়টা হবে উৎসব মুখর লেখকের পদচারণায়। আসবেন অনুরাগী এবং পাঠক সমাজদার। বই বিক্রিয় হবে সাথে। লেখকের অটোগ্রাফ সহকারে ।
তৈরি হয়ে যখন বের হলাম তখনও এক ঘন্টা বেশি সময় আমার হাতে। আজ অন্য প্রোগ্রাম বাদ থাক হারবার ফ্রন্টে বসে থাকলেও ভালোলাগে। তাই আগে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। কিন্তু পথে নেমে টের ফেলাম ভীড় শুরু হয়ে গেছে কাজ শেষে বাড়ি ফিরার। আর শুক্রবারের বিকালে অনেকেই আগে ভাগে কাজ শেষ করে দুদিনের ছুটি কাটানোর জন্য নানান কটেজ লেইক, মাছধরা অথবা শুধুই অবসর যাপনের জন্য একটু আগেই রওনা হয়ে যায় নানা পছন্দের গন্তব্যে ।
উল্টো পথের রাস্তায় ভীড় বেশি, বেশির ভাগই আমার এদিকে আসতে শুরু করেছেন। তবে আমার দিক থেকেও অনেকে শহর বা অন্য কোথাও রওনা হয়েছেন, পরিমাণ কম হলেও।
কাজ শেষে বাড়ি ফিরা মানুষের চেয়ে ছুটি কাটাতে যাওয়া মানুষের গাড়ি দেখে বোঝা যায় । সেখানে থাকে অনেক মানুষ এক গাড়িতে। আর থাকে সাইকেল বাঁধা গাড়ির পিছনে। অথবা থাকে কেন্যু সাজানো গাড়ির উপরে।অনেক গাড়ির উপরে থাকে কেরিয়ার ভর্তি মালামাল।
অনেকটা পথ ভীড়ের সাথে চললেও খুব আটকে থাকতে হলো না। কিন্তু শহরে ঢুকার মুখে পরে গেলাম জ্যামে। জিপিএস জানাল পাঁচিশ মিনিটের দেরি সামনে।
আলরেডি চার মিনিট দেরি হয়ে গেছে। সাথে অল্টারনেটিভ রাস্তা দেখাল যেখানে সময় বাঁচবে। তাই সোজা চেনা পথ ছেড়ে কম সময়ের পথে নেমে গেলাম।অনেকবার গেলেও ঠিক চেনা নেই। কিছু চেনা কিছু অচেনা জিপিএসের শরনাপন্ন হয়ে চলেছি অচেনা গোলক ধাঁধায়।
এক সময় দেখলাম চলে এসেছি এয়ারপোর্টের পাশে। সারি সারি প্লেন সাজানো। আর অনেক প্লেন খুব কাছে থেকে উঠছে নামছে। একটা বিশাল ট্রাক তার পিছনে আরেকটা গাড়ি আর আমি আমরা তিনজন সমান দূরত্ব রেখে চলছি পিছু পিছু নির্জন রাস্তা। এক জায়গায় দুপাশ জুড়ে অনেক গাড়ি কিছু মানুষ রাস্তার উপর দাঁড়ানো। এমনটা হয় যখন চেন দূর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু এখানে দেখলাম মানুষগুলো হাসিখুশি। গাড়িতে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। ভালো করে খেয়াল করে বুঝলাম,পাগড়ি বাঁধা শিখজিরা কাছে দাঁড়িয়ে প্লেনের উঠা নামা দেখছেন। ছবি ভিডিও তুলছেন।
কিন্তু রাস্তাটা এত চিকন তারপাশে তারা এভাবে দল বেঁধে বিমান দেখার আয়োজন করেছেন দুপাশে গাড়ি পার্ক করে রেখে দূর্ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা।
আরো কিছুটা দূর এগিয়ে গিয়ে এয়ারপোর্টের নির্জনতা ছাড়িয়ে শহরের মেইন রাস্তায় উঠার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হলো অনেকটা সময়। এক সময় আমিও সুযোগ পেলাম পাশ থেকে রাস্তায় ঢুকে যাওয়ার। যদিও একটু আগে বিশাল গো বাস আমাকে চাপা দিয়ে দিচ্ছিল প্রায়। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা হলেও বারেবারে ট্রাফিক লাইটে বসে থাকা বিরক্তিকর। আমাকে যেতে হবে আরো অনেকটা দূর।
তাই আবার হাইওয়েতে উঠার পথ খুঁজলাম জিপিএসে। কাছেই ছিল চট করে ঢুকে পড়লাম হাইওয়েতে। বেশ নিশ্চিন্তে অনেকটা পথ পারি দিয়ে চলে আসলাম এরপর।
আর আছে মোটে চার কিলোমিটার। কিন্তু আমার সামনের গাড়ি যায় আর ব্রেক মারে। ভাবলাম ওর সামনে মনে হয় অনেক গাড়ি কিন্তু বেশ অনেক্ষন তার পিছে চলার পরে একটা বাঁকে এসে দেখতে পেলাম সে আসলে অনেক দূরে অন্য গাড়ি থেকে আর চলছে আপন মনে কখনো জোড়ে তো কখনো থেমে আর তার পিছু তাকে আমাকে অনুসরণ করতে হচ্ছে বিরক্তি নিয়ে। তাই অন্য লেনে সরে গিয়ে একটানে তাকে পাশ কাটিয়ে সামনে যখন যেতে চাইলাম তখনই সে আমার সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে শুরু করল। আমি গতি বাড়িয়ে আরেকটু সামনে গিয়ে তিন গাড়ির সামনে গিয়ে ডানের লেনে আবার গেলাম আর এক কিলোমিটারের মধ্যেই আমাকে এক্সিট নিতে হবে। ঠিক জোড়ে চলে পাশের লেনে থামার সাথে সাথেই শুনতে পেলাম পুলিশের সাইরেন। আমি তো এত বেশি স্পিড তুলি নাই যে আমাকে থামাতে আসবে। ভাবতে ভাবতেই দেখতে পেলাম মোটর সাইকেলে একজন পুলিশ আমাকে পেরিয়ে গেলো আর তার পিছনে আরো একজন খুব দ্রুত তারা পেরিয়ে গেলো। আর তারা ঐ রাস্তাতেই এক্সিট নিল যেখানে আমি এক্সিট নিব। কি হলো! সামনে কি কোন এক্সিডেন্ট হলো নাকি। এবার আমাকে থেমে থাকতে হবে আবার কাছে এসে। পিছনের গাড়িটার উপর মহা রাগ হলো এই ঝামেলায় পরতে হতো না সে যদি ঠিক মতন চলত। অনেক আগেই আমি বেরিয়ে যেতাম জায়গা মতন পৌঁছে যেতাম। কি আর করা দেখি কি হয়। আমিও পুলিশদের পিছনে এক্সিট নিয়ে বেরিয়ে আসলাম আর পুলিশরা ঠিক চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ইতিমধ্যে তিনপাশ থেকে আসা সব গাড়ি থামিয়ে দিচ্ছে । শুধু সামনে যাওয়ার রাস্তাটা ক্লিয়ার রাখতে চেষ্টা করছে তারা। সােজা যারা নেমে আসছে তাদের ডানে বামে দু দিকে চলে যেতে ইশারা করছে। ভাগ্য ভালো আমাকে আর সোজা রাস্তায় যেতে হবে না। ডানে গেলেই আমার গন্তব্য।
কিন্তু ডানে ঘুরে উঠার পর সব গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আমার আর চলার জায়গা নেই। বায়ের দিকে একটা পার্কিং দেখতে পেলাম আর তার তিনশগজ দূরে আমার কাংক্ষিত গন্তব্য। গাড়িটা পার্ক করতে পারলে হেঁটে যেতে পারব। কারণ সামনের অনুষ্ঠানের পাকিংএ তখন যাওয়া আর সম্ভব না। কিন্তু দুই গাড়ির মাঝে এমন একটু ফাঁকা নেই যে আমি বায়ে ঢুকে যেতে পারি। অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। খানিক পরে একটা গাড়ি মনে হয় সামনে থেকে সরল। আর পিছনের সব গাড়ি এসে আবার জায়গা ভরাট করে ফেলছে। যে গাড়িটা একটু থেমে আমাকে যেতে দিবে সে টান দিয়ে আমার সামনে চলে আসল। পরের চালক একটু ভালো মনের তিনি আমাকে বামে ঢুকার সুযোগ দিলেন।
তাকে ধন্যবাদ দিয়ে একটানে পার্ক করে ফেললাম দ্রুত।
হেঁটে যখন নেমে আসছি তখন পাশের রাস্তায় গাড়ির শব্দে কান ঝালাপালা অবস্থা। চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে রাস্তায় চেয়ে দেখলাম কিসের জন্য এমন হর্ণ দেয়া চলছে। আগে কোনদিন রাস্তায় সব গাড়ি মিলে এমন হৈচৈ করতে দেখি নাই সাথে পুলিশরাও চিৎকার করছে সবাইকে থেমে থাকার জন্য। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। খানিক সময় দেখে আবার পিছুন ফিরে রওনা হতেই শুনলাম অনেক সাইরেনের শব্দ কি ব্যাপার ঘটনা কি আবার গ্যারাজের লোহার জালির ফাঁক দিয়ে রাস্তায় চোখ রাখলাম। এক ট্রেন লম্বা বিশাল গাড়ির বহর সাইরেন দিতে দিতে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে জি ২০র সময় এমন ভি আইপি বহন করা গাড়ির দলের সাথে দেখা হয়েছিল কিন্তু তারা চুপচাপ পার হয়ে গিয়েছিল আজকের মতন এত বিস্তর শব্দ ছিল না। পুলিশী হাঁক ডাক রাস্তা বন্ধ করা এই প্রথম দেখলাম।
পরে জেনেছি ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং তার স্ত্রী, ওলেনা জেলেনস্কা,ছিলেন। সেজন্যই হয় তো সতর্কতা বেশি ছিল। এবং তাদের গন্তব্য ছিল ঠিক পাঁচ মিনিট দূরে। তাদের সাথে আচমকা আমার দেখা হয়েছে বুঝতে পারি নাই। ভিআইপিরা কোথায় গেলো সেটা নিয়ে না ভেবে চলে গেলাম নিজের অনুষ্ঠানের জায়গায়। আজ আমিও ভিআইপি। অনুষ্ঠানে ঢুকে বেশ আনন্দ হলো। প্রথমে রেজিস্ট্রেশনে গিয়ে নিজের নাম লেখা পাস, ব্যাগ সব পেলাম। সেখানে যেতে যেতে দেখা হলো সুমন রহমান আর উনার স্ত্রীর সাথে। পরিচিত লোক দেখে বেশ ভালোলাগল।
আমার যারা পরিচিত আসার কথা তারা তখনও এসে পৌঁছাননি। একটা মঞ্চ একজন লেখকের বই নিয়ে আলোচনা চলছে। লেখক নিজের বই সম্পর্কে বলছেন। আমি অনেক্ষণ বসে শুনলাম বই আলোচনা। থিয়েটার রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম। আর্ট এক্সিবিশন রুমেও চটপট এক চক্কর ঘুরে বেরালাম। এর ফাঁকে কথা হলো কিছু লেখক কবির সাথে।
তারপর রিস্পিশনের দিকে রওনা দিলাম। সেখানে পৌঁছে শুনলাম তাদের একটু দেরি আছে দরজা খোলার। সামনে দাঁড়িয়ে অনেকের সাথে কথা হচ্ছিল। কত দেশের কত লেখক। কত রকমের লেখা তাদের।
আসলেন আমার পরিচিতজনরা। সুব্রত কুমার দাস। সুজিত কুসুম পাল। তাদের সাথে মাহসিন ভূঁইয়া এবং উনার স্ত্রী। অনেক লেখকের সমাগম হুট করেই জমজমাট হয়ে গেল পরিবেশ। আর খুলে দেয়া হলো অনুষ্ঠান রুমের দরজা তখনই।
ভিতরে ঢুকে পরেছেন তখন অনেকেই।
ঘুরে ঘুরে পরিচিতি এবং গল্প শুরু হলো । পানিয় হাতে চির্য়াস চলছে। আর সাথে মজাদার নানা রকম ফিঙ্গার বাইট খাবার সার্ভ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ডিরেক্টর রোল্যান্ড গালিভার আধো অন্ধকারে পার্পল কালার আলোর মাঝ থেকে কথা বলে উঠলেন। ভীড়ের মাঝে তার দর্শন পাওয়া বেশ কষ্ট সাধ্য ছিল আলো আঁধারী মাঝে। কিন্তু তার কণ্ঠ শোনার সাথে সব গুঞ্জন থেমে গেলো সবাই মগ্ন হলো উনার বক্তব্য শোনায়। পরিমিত কথায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহজ বক্তব্য দিলেন পরিচালক যিনি এতজন লেখককে এক সাথে করেছেন। বেঁধেছেন এক সুতোয় মালা নানা বর্ণের লেখক ফুলের। বিশাল আয়োজনের এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করতে অনেকেই এসেছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে। পাঁচশতর বেশি লেখকের প্রোগ্রাম। কল্পকাহিনী এবং নন-ফিকশন এবং পুরস্কার বিজয়ী, নতুন লেখক আত্মপ্রকাশকারী সবার জন্যই ছিল সুযোগ। পুরানো আর বিখ্যাতরা তো আছেনই সাথে যোগ হয়েছে অন্যভাষার লেখকরাও। একটা বিষয় খেয়াল করলাম আয়োজকরা যত্ন করে ঘুরে ঘুরে প্রত্যেকের সাথে কথা বলছেন। খুবই উপভোগ্য একটি অনুষ্ঠানে কখন যে অনেকটা সময় কেটে গেছে গল্পে গল্পে টের পাইনি। এক সময় দেখলাম ঘড়ির কাটা দশটা পেরিয়েছে।
কিন্তু লেখকরা তখনও মগ্ন কথা বলায়। আমাকে যেতে হবে দূরে তাই বেরিয়ে পরলাম বিদায় নিয়ে। ঘুরে ফিরে আমার বাঙালী বন্ধুদের দেখা পেলাম না। সবাই কখন চলে গেছেন।
পথে বেরিয়ে দেখলাম সিএন টাওয়ার সবুজ রঙের আলো ছড়াচ্ছে চোখের সামনে। প্রতিদিন দেখলেও টাওয়ারটা খুব ভালোলাগে। আর যখন নানা রঙের আলো ছড়ায় তার সৌন্দর্যও ভালোলাগে।
ফিরার পথেও অনেকটা দূর যেতে হলো ভীড়ের সাথে। শুক্রবার রাতের উন্মাদনা দেখতে দেখতে। তারপর নিরিবিলি ফাঁকা এবং অন্ধকার। যখন তারার আলো স্পস্ট হলো অন্ধকারে তখনই চোখে পরল পশ্চিম আকাশে সপ্তমীর চাঁদ লাল হয়ে অস্ত যাচ্ছে। এত্ত বড় দেখাচ্ছিল অর্ধেক চাঁদ মনে হচ্ছিল যেন সূর্য। হঠাৎ ভেবে পাচ্ছিলাম না মাঝরাতের কাছাকাছি সময়ে কেন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। তারপর মনে পরল চাঁদের হিসাবটা।
এসব হিসাব নিকাশ করে গান শুনতে শুনতে বাড়ির কাছে এসে অন্ধকার রাস্তার উপর দাঁড়ালাম। গাড়ি বন্ধ করে আলো নিভিয়ে। কদিন ধরে অরোরার আলো খেলছে আকাশে। খুব হাই সময় এখন। কিন্তু দেখতে পাইনা মেঘের কারণে। আজ আকাশ চমৎকার তারার আলোয় ঝকঝক করছে। অরোরা নাহোক তারার রূপ দেখি নির্জনতায়।
কিছু তারার ছবি দেখতে দেখতেই চোখের সামনে সবুজ আলোর নাচন জাগল। অদ্ভত মুগ্ধতায় মন ভরে উঠল। এত আরাধনার অরোরার আলো আমার চোখের সামনে। যাকে দেখার জন্য কত রাত আকাশে তাকিয়ে খোলা মাঠে কাটিয়েছি আমি। আজ সে ধরা দিল আমার দৃষ্টির সীমানায়। দেখায় এতটাই ব্যাস্ত ছিলাম ছবি তোলার কথা ভুলে গেছি। যখন মনে হলো ছবি তুলতে গেলাম তখন ফেড হয়ে গেছে অনেকটা। দারুণ আনন্দ নিয়ে রাত গভীরে দিন শেষ করলাম ঘড়ির কাটায় আরেকটা দিন তখন শুরু হয়ে গেছে।
এই পথের যাত্রার মজাটা নানা রকম ভাবে বৈচিত্রপূর্ণ হয়ে উঠে সেদিন যেমন হলো শেষ বেলায়। তবে কিছুটা সময় দিতে হয় । ঘরে ঢুকে পারলে এই অরোরা আনন্দটা পেতাম না।
তবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল টিফার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া একজন সম্মানিত আমন্ত্রতি অতিথী হয়ে একজন রাইটার হিসাবে।
২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক সুন্দর মন্তব্য মিরোরডডল
আনন্দে ভেসে গেলাম।
জীবনটা আসলে বড় সুন্দর আমি খুব উপভোগ করি এই নতুন নতুন সময়।
শেষ সময়টা আসলে বড্ডবেশি সুন্দর ছিল সেদিন।
এই পথের যাত্রার মজাটা নানা রকম ভাবে বৈচিত্রপূর্ণ হয়ে উঠে সেদিন যেমন হলো শেষ বেলায়। তবে কিছুটা সময় দিতে হয় । ঘরে ঢুকে পারলে এই অরোরা আনন্দটা পেতাম না।
তবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল টিফার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া একজন সম্মানিত আমন্ত্রতি অতিথী হয়ে একজন রাইটার হিসাবে।
জীবনটা আসলেই সুন্দর ভালো থেকো।
২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪২
কামাল১৮ বলেছেন: লেখালেখির সাথে যুক্তছিলাম না কিন্তু লেখকদের আমার ভালো লাগতো।৭২ পর বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠান গুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের আলোচনা গুলো শুনতাম।কবিদের কন্ঠে কবিতা পড়া শুনতাম,কি যে ভালো লাগতো।মুস্তাফার আবৃত্তি শুনেছি বহুবার।এনের শিল্পীর গান শুনেছি মঞ্চে।সে এক অন্য রকম দিন ছিলো।
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:০০
রোকসানা লেইস বলেছেন: আপনি এখানে যেমন সবার লেখা পড়েন এবং মন্তব্য করেন এটা দারুণ। আপনার আগ্রহ বোঝা য়ায়। অথচ নিজে কোন পোষ্ট দেন না। পড়তে ভালোবাসেন।
ভুল হলো আপনাকে আমন্ত্রণ জানানো দরকার ছিল ২৪ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানে। খুব উপভোগ করতেন। এ বিষয়ে লিখব।
আপনি এখনও যেতে পারেন হারবার ফন্ট্র সেন্টারে অনুষ্ঠান চলছে অক্টোবর এক তারিখ পর্যন্ত। তবে টিকেট করতে হবে।
৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৪৮
শেরজা তপন বলেছেন: একটু পড়লাম- পরে পড়ব বলে জমিয়ে রাখছি।
আপনার লেখা আমি পড়তে মিস করি না....
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৪৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: লেখাটা লিখতে আমারও সময় লেগেছে। বাইশ তারিখেই প্রচার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় হয়নি। শেষ করার। আপনি আস্তে ধীরে পড়ে ফেলুন। লেখাটা যখন পোষ্ট দিলাম তখন সকাল পাঁচটা এর মধ্যে রাতের ঘুমের জন্য সময় হয়নি। কিন্তু পোষ্ট না দিলে দেওয়া হতো না আরো দুদিন হয় তো। কিছু এডিট দরকার থাকলেও ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এর পরের লেখাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ খবর থাকবে চোখ রাখবেন মিস করবেন না তা হলে।
জেনে আপ্লত হলাম অপনার মতন গুনীজন আমার লেখা পড়তে আগ্রহী।
আনন্দ হচ্ছে ছোট ছোট এই সুখগুলো জীবনের সঞ্চয়।
ভালো থাকবেন।
৪| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৩১
কামাল১৮ বলেছেন: আমার প্রিয় সাহিত্যিকদের মাঝে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ছাড়া আর কেউ জীবিত নাই।সবাই চলে গেছে না ফেরার দেশে।তাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।আমি নিজে গুনি না হলেও গুনি লোকদের চিনি।
৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৪৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: এক সময় হারিয়ে যেতে হবে সবাইকে।
এই নিষ্ঠুর বাস্তব।
গুনি জনকে চিনতে পারা এটাও বিশার গুন।
ভালো থাকুন নিজের পছন্দ নিয়ে ।
শুভেচ্ছা নিরস্তর
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫
মিরোরডডল বলেছেন:
লেইস আপু তোমার জীবন থেকে নেয়া লেখাগুলো পড়তে খুব ভালো লাগে।
আজকেও সেরকম বড় লেখাটা একটানে পড়ে ফেললাম।
সবচেয়ে ভালো লেগেছে শেষের অংশটুকু।
লেইট নাইট ড্রাইভ, সাথে চাঁদের আলো আর গান।
পরিশেষে অরোরার মুগ্ধতা!
বুঝতে পারছি কি ভীষণ মায়াময় ছিলো।
কতকিছু যে মনে করিয়ে দেয়। আমারও এমন রাত গেছে।
রাত দুটা তিনটায় বাড়ি ফিরছি। পুরো রাস্তা শুনশান, কোথাও কেউ নেই, একটা গাড়িও নেই।
বৃষ্টির পর মেঘলা আকাশের ভেতর থেকে চাঁদটা এসে আলো ছড়িয়ে প্রহরীর মতো আমার সাথে সাথে আর সঙ্গে ছিলো গান।
আর কি চাই!
এরকম কিছু মুহূর্তে জন্য বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে আপু।
মনে হয় জীবনটা আসলেই অনেক সুন্দর।