নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুকুমারের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে ফেসবুকে। দেখা সাক্ষাত হওয়ার জন্য সে বড় উদগ্রীব ছিল। সুকুমারের সাথে পরিচয় পর্বটা শুরু হলো ওর আমাকে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর মাধ্যমে।
তখন মাত্র দেড় বছর হয়েছে ফেসবুক ব্যবহার শুরুর। তখনও অনেক মানুষ জানে না ফেসবুকের খবর। যারা ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় তাদের না চিনলে প্রশ্ন করি কেন বন্ধু হতে চায়, কোথায় থাকা হয় ইত্যাদি হযবরল। তবে শুরুতেই পেয়ে গিয়েছিলাম বেশ ভালো কিছু নতুন ছেলে মেয়ে যারা সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে জড়িত। আর পেয়েছি নিজের পরিচিত অনেক লেখক কবি।
জানুয়ারী ত্রিশ দু হাজার নয়। সময়টা কত আগের হয়ে গেছে এখন কত পরিবর্তন এর মধ্যে। সেই ৩০ জানুয়ারি ২০০৯ থেকে আমরা বন্ধু হলাম ফেসবুকে।
ফেসবুক জামানার প্রথম দিকে ও যখন আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাল ওর প্রোফাইল ছবি ছিল একটা উটের সাথে। আমি বলেছিলাম তুমি কি উটের রাখাল? সে জানাল সে কবিতার রাখাল।
আমাকে চেনো নাকি?
চিনেছি তোমার লেখার মাঝে।
বডড বেশি আদরে যত্নে লালন করত কবিতা। কবিতার হাত ধরে আমাদের কত গল্প বলা। র্ভাচুয়াল জগতের মানুষের আপন হয়ে উঠা।
সুকুমারও লেখক দলের। পুরুলিয়ার ঝালদায় জন্ম নেয়া সুকুমার মহারাস্ট্রের নাগপুরে বাস করছে কাজের তাগিদে। কিন্তু নিজের মধ্যে বাংলার টান কবিতার সুর। তাই সুদূরে বসেও সে বাংলায় লিখে যায় কবিতা। শুখনো মরু অঞ্চল হিন্দি ভাষার মাঝে থেকে ও খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করত সবুজ শ্যামল বাংলার সতেজ নিশ্বাস।
রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা রয়েছে নাগপুরি, খোরথা, কুরমালি, মাগাহি , ভোজপুরি। নানা রকম কথার টানের মাঝে থেকে সুকুমার বাংলাকে চর্চা করার চেষ্টা করে মনে প্রাণে। যত কবি তার চেয়েও বেশি সম্পাদক সে। বেশ কয়েকটা ছোটখাট সাহিত্যপত্র, ম্যাগাজিন করত। আর প্রতি বছর পুজার সময় একটা সংখ্যা করতে শুরু করল খনন নামে। পুরুলিয়ায় বেড়ে উঠা সুকুমার নাগপুরে থাকত কাজের সুত্রে। কিন্তু খুঁজে বের করত সব বাংলা ভাষার কবি, লেখকদের বিভিন্ন জায়গা থেকে।
নিজের লেখাও ছেপেছে বিভিন্ন ভাষায় বাংলার সাথে।
তখন তো ফেসবুকে বাংলা লেখার সুযোগ ছিল না। আমরা যারা আগে থেকে বাংলা লেখা পারতাম ফটসপে ছবি করে সে লেখা তখন ফেসবুকে দিতাম বিশেষ করে কবিতা। মন্তব্য, কথা ইনবক্সে বাংলিশ ভাবেই চলত।
ফেসবুকে যোগাযোগ করে, সুকুমার অনেকের লেখা সংগ্রহ করত। ইমেলে লেখা পাঠাতাম। তখন ইনবক্সে বড় লেখা দেয়ার সুযোগ ছিল না।
ছবি তুলে স্কেন করে লেখা যে ছাপা যে হয়েছে তাও জানাত।
যে কোন লেখায় মন্তব্য দিত। গঠনমূলক সমালোচনা করত। এভাবেই এক সময় কখন যেন আমরা পরস্পরের লেখার মাধ্যমে সম্পর্কিত হয়ে গেলাম। কখনো দেখা না হলেও মনে হতো আমরা অনেক চেনা একে ওপরের।
খুব যত্নে প্রতি বছর শরতে বের করত খনন। অনেকবার ছেপেছে আমার লেখা, গল্প, কবিতা। নিজের খনন ছাড়াও পাঠিয়ে দিয়েছে অন্য বন্ধুদের স্মরনিকা, ম্যাগাজিন, সংকলনের জন্য আামার লেখা।
এছাড়া ওর ওয়েব পেজ গুলোতে নিয়মিত লেখা দেয়ার বায়না ছিল।
খুব উৎসাহ দিত লেখার জন্য। তুমি খুব ভালো লেখো রক্স । লেখা চালিয়ে যাবে। একটা নতুন লেখা লিখে একজন বুদ্ধার সাথে আলোচনা করার আনন্দ ছিল অনেক।
সে বছর হুট করে খবর পেলাম জয়দেব বসু মারা গেছেন যার সাথে পরিচয় ছিল। এসেছিলেন আমার বাড়িতে ঢাকায়। কলকাতায় লেইক ক্লাবে কত স্মৃতি মনে হয় স্মরণ করে একটা লেখা লিখেছিলাম জয়দেব বসুর উপর ফেসবুকে। সুকুমার সেই লেখাটা ছেপে দিল বিশেষ জয়দেব বসুর সংখ্যায় নিজেই সংগ্রহ করে পরে জানাল আমাকে।
সে বছর আমার দেয়া গল্প পুজা সংখ্যার খননে ছাপা হলে অনেকের প্রশংসা পেলাম অনেক গুনি জনের থেকে। যাদের চিনতাম না। পড়েছেন আমার লেখা সুকুমারের ছাপানো খনন ম্যাগাজিনে।
এরপর অনেকের সাথে যোগাযোগ হলো লেখালেখির সুত্রে।
ঢাকায় বইমেলায় যাচ্ছিল আমাকে অনেকবার বলল, চলে আসোনা রক্স, দেখা হোক তোমার সাথে। যেতে পারিনি তার সময় মতন।
ষোল সালে দিল্লীতে লেখক কবির সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছিল। আমাকে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করল লেখক হিসাবে। আসো নিজের লেখা নিয়ে পরিচিত হও ভিন্ন ভাষার সাহিত্যিকদের সাথে। অথচ তখনও যেতে পারলাম না। সদ্য ঘুরে এসেছি দেশ থেকে। বলেছিলাম আগামীতে অবশ্যই যাবো। তোমার সাথে দেখা হবে, খুব অসহায় হয়ে বলেছিল আমি যে কলকাতায় থাকি না। তাতে কি তোমার জন্য না হয় নাগপুর আসব আমি। ইণ্ডিয়ায় শুধু কলকাতা ঘুরতে আমি যাই না। দেখা হয়ে যাবে মহারাষ্ট্রর জনপদ আমার, তোমার উপলক্ষে।
তাই! খুব খুশি হলো। তুমি পারবে। তুমি এডভেঞ্চারস আছো।
বিশ সালে পরিকল্পনা ছিল বইমেলা শেষেই ইণ্ডিয়া যাবো। অথচ বই মেলায়ই যেতে পারলাম না শেষ পর্যন্ত বই বেরুনোর পরও। কোথাও যাওয়া হলো না, সব এলোমেলো হয়ে যাওয়া পরিবেশে।
সব সময়ই বলত, আসছি আসছি তোমার ওখানে আসছি। ও এলে অনেক কিছুই ঘুরিয়ে দেখাব ভেবেছিলাম। ওর খুব দেখার ইচ্ছা ছিল।
অথচ এত ভাবনার ফাইল, মাথায় নিয়ে এভাবে হুট করে, সব ছেড়ে চলে যেতে হলো। জীবনের দেনা পাওনা শেষ, এত্ত খারাপ লাগে ভাবতে, কত কিছু অধরা থেকে যায় এ জীবনে। এত কিছু করি শেষে কেউ কি মনে রাখে আর।
একুশ সালের চৌদ্দ জানুয়ারি জন্মদিনের শুভকামানা জানালাম সুকুমারকে। বেশ অনেকদিন কথা হয় না। ভাবছিলাম একটু সময় করে কথা বলব।
উনিশ সালের শেষের দিকে হঠাৎ মেরুদণ্ডের একটা ডিসক নড়ে গিয়েছিল সুকুমারের, সামান্য এক বালতি পানি সরাতে গিয়ে। তখন থেকে বিছানায় শোয়া। ভালো হয়ে উঠছিল ধীরে ধীরে।
অথচ একুশ সালের জানুয়ারী ত্রিশ রাতে যখন ঘুমাতে যাব তখন দেখলাম ফেসবুক লগিন আছি। অফ করতে গিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেখে থমকে গেলাম। অসম্ভব মন খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ করেই বদলে গেলো সব অনুভুতি।
বন্ধু কবি সুকুমার চৌধুরীর শোকসভা। এ কেমন কথা মাত্র কদিন আগে জন্মদিন গেল। সে চলে গেছে জীবনের পাঠ শেষ করে।
কখন চলে গেছে আমাদের ছেড়ে জানতে পারিনি। কেন যেন গত কিছুদিন ধরে মনে পরছিল, কথা বলতে হবে, অনেকদিন কথা হয় না। আজকাল বড় বেশি বেয়াড়া সময় কাটছে গুছিয়ে বসতে পারছি না। চারপাশ থেকে অনেক কাজ ছেঁকে রাখছে সারাক্ষণ। করোনার হাতছানী কাটাতে পারল না সুকুমারের দূর্বল শরীর।
এমন তো কথা ছিল না সুকুমার। তোমার খুব ইচছা ছিল আমার সাথে দেখা করার। দেখা হলো না। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বটা নিবিড় ছিল।
সুকুমারের লেখা কবিতা
মৃত্যু
সুকুমার চৌধুরী
তার মৃত্যুর খবর আসে
অন্য দেশে থাকে সে, যাওয়া হয় না।
দূরত্ব কি দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
জানি শরীরের শেষ বিন্দু মিশে গেছে
এতক্ষণে মিশে গেছে পরম নিখিলে
কতদিন দেখা হয় না হিসাব করি
মুখটা অস্পষ্ট ভেসে উঠে তার ছবি খুঁজি
আজ তার মৃত্যুর খবরে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি।
যাওয়া হয় না এতদূর
দূরত্ব কি দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়, ভাবতে পারি না।
মৃত্যু সব শেষ করে যায় সব লজ্জা ক্ষোভ।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫২
রোকসানা লেইস বলেছেন: বন্ধুত্ব গড়ে উঠে মনের সংযোগ থেকে। ভার্চুয়াল হলেও অনেক ভালো হয় সম্পর্ক অনেক সময়। তেমনই ছিল আমাদের বন্ধত্ব। একবার দেখা হওয়ার ইচ্ছা ছিল আমাদের দুজনের মধ্যেই। কিন্তু করোনা সর্বনাশা এলোমেলো করে দিল সব, নয় তো সেবাার দেখা হতো। ছিনিয়ে নিল আমার বন্ধুকেও অন্যলোকে।
মনে পরবেই মাঝে মধ্যে তার কথা স্মৃতি।
২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৪৮
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: একবার দেখা হলে ভালো হত।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: হয়তো ভালো হতো। স্মৃতি আরো সুন্দর থাকত। কিছু অপূর্ণতা রয়ে যায় ।
৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:২৬
সোনাগাজী বলেছেন:
মানুষ বেঁচে থাকে মানুষের ভাবনায়।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
৪| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: আহারে--
লেখার সাথে সুকুমারের একটা ছবি দেন। দেখি।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৫৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: ছবি দেয়া যেত। তবে দেইনি ইচ্ছা করে।
চেহারার চেয়েও ব্যবহার আর কাজ গুলো গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই থেকে যাবে মনে
৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৪০
কামাল১৮ বলেছেন: ব্লগারদের পুনর্মিলনীতে গেলে অনেকের সাথে দেখা হবে।বই মেলাও চলছে।সুকুমাররা কেন জানি একটু তাড়াতাড়িই চলে যায়।দুঃখই পেলাম পুরাটা পড়ে।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ২:০০
রোকসানা লেইস বলেছেন: ব্লগারদের পুনর্মিলনী দেশে হচ্ছে আমি তো যেতে পারছি না।
ভালো লাগলে জেনে আপনি যাচ্ছেন।
আসলে সুকুমাররা তাড়াতাড়ি চলে যায় যারা সুকুমার বৃত্তি চর্চায় সাজাতে চায় চারপাশ।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:৪৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ফেসবুকে থেকে পরিচয় বন্ধুত্ব আবার মৃত্যুর মাধ্যমে বিচ্ছেদ। ফেসবুকে যুগের গল্প। দেখা না হয়েও হতে পারে নিবিড় সম্পর্ক। মৃত্যুর পর আর দেখা হবার সুযোগ থাকে না। তখন মনে না না প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকা অমূলক নয়। দেখা হলে কি হতো ব্লা ব্লা ব্লা আরও কতো কি। বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝে না।