নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুমেরাং

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৬:১৭

টেবিলের উপর পা তুলে দিয়ে চেয়ার পিছনে হেলিয়ে আরামে গা এলিয়ে দিল রনি। গার্ডকে ডেকে মাথার উপরে হাই ভল্টের লাইটটা নিভিয়ে দিতে বলল, পিছনে হাত নিয়ে শরীরটা টানটান করতে করতে। রাত বাজে দুটো, এখন থানা একটু চুপচাপ।
মাত্র এক ঘন্টা আগে থানায় ফিরে নতুন আনা চারজন আসামী সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে । দুটো পরটা আর গরুর মাংসর তরকারি আনিয়ে রাতের খাওয়া সেরে বাকি ফাইলপত্র দেখে একটু অবসর হওয়া গেছে । সারাদিন গাধার খাটনি তো কম না তার উপর রাত জেগে ডিউটি।
আধো অন্ধকারে চোখ লেগে এসেছে রনির দ্রুত। গভীর ঘুমের অতলে থাকা অবস্থায় হঠাৎ কানে গেলো ঝনঝন করে বাজছে টেলিফোন। খানিকটা চমকে উঠে সটান দাঁড়িয়ে, ফোনটা তুলল রনি।
হ্যালো
স্যার মার্ডার হয়েছে একটা
কোথায়?
রাস্তার উপর
ঘটনা জানা গেলো একটা গাড়ি থেকে একটি মেয়েকে ছূঁড়ে ফেলে গুলি করে চলে গেছে গাড়ি।
পুলিশ তবু শরীরের রোম গুলো দাঁড়িয়ে গেলো রনির, ঘটনা শোনে। এখনও কিছু নিষ্ঠুরতা নিতে পারে না সে।
যে ফোন করেছে, বাড়ির জানালা দিয়ে দেখেছে।
ঠিকানা নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পরল রনি। স্টাফদের কিছু নির্দেশ দিয়ে।
ঘটনা সত্য নির্জন রাস্তায় একটি মেয়ের দেহ পাওয়া গেলো, ঠিকানা অনুয়ায়ী। যেতে যেতে এম্বুল্যান্স পাঠানোর জন্য ফোন করতে বলে গেল। পুলিশ অফিসার রনি ঘটনা স্থলে পৌঁছানোর সাথে সাথেই একটি এম্বুল্যান্স এসে থামল। পাশেই একটি হাসপাতাল সেখানে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হলো মেয়েটিকে।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসার পরে এসে জানালেন, মেয়েটি বেঁচে আছে তবে গুরুতর আহত । মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সিন্টম দেখে ধারনা করা হচ্ছে।
উহহ.... নিজের অজান্তেই শব্দটা বেরিয়ে গেলো রনির মুখ দিয়ে।
কি যে হচ্ছে চারদিকে। প্রায় প্রতিদিন এমন খবর শুনতে হয়।
প্রতিদিন এমন কিছু পেসেন্ট দেখতে হয় আমাদেরও, ডাক্তার বললেন।
রাতের ইনচার্জ ডাক্তার জানালেন। এ মূহুর্তে সব ব্যবস্থা তারা নিতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে যোগাযোগ করা হয়েছে, উনারা এসে মেয়েটিকে দেখে সব ব্যবস্থা করবেন। মেয়েটি অজ্ঞান আছে এখনও।
ঠিক আছে সব ধরনের ব্যবস্থা নিন মেয়েটিকে বাঁচানোর। আর যদি মেয়েটি ধর্ষিত হয়ে থাকে আলামত নিয়ে রাখবেন, কোন হারামজাদা যাতে বাঁচতে না পারে সে ব্যবস্থা আমি করব।
সাথেই আবার যোগ করল, সরি ডাক্তার আমার ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য। পুলিশে কাজ করে ভাষা সংযত রাখা কঠিন হয়ে যায়।
এই মূহুর্তে হাসপাতালে কিছু করার নেই রনির। একজন গার্ডকে পাহারায় রেখে। থানায় ফিরে এলো। ফজরের আযান পরছে। একটু পর আকাশ ফর্সা হয়ে যাবে। গাদাগাদা লোক থানায় আসা যাওয়া করতে শুরু করবে নানা রকম সমস্যা নিয়ে।
কিন্তু যখন মানুষ আরামে ঘুমাবে তখনও কি শান্তি আছে মানুষের। কেউ ধর্ষিত হচ্ছে, কেউ মার্ডার হচ্ছে, কেউ রাত জেগে রোগী দেখছে। কেউ কেইস সামলাচ্ছে।
রনি থানায় পৌঁছেই জানল গাড়িসহ চারজনকে ধরে আনা হয়েছে। ঘরে ঢুকার আগে গাড়িটা দেখতে গেলো। কালো কুচকুচে গাড়িটার টিনটেড কালো কাঁচ, এসএউভি মিতসুবিশি পাজেরো। মালদার আদমীর গাড়ি বোঝা যায়। নিষেধ না মানাও এদের কাজ। গাড়ির কাঁচ টিনটেড না করার নিষেধ্জ্ঞা এরা মানে না। গভীর রাতেই শুধু এই গাড়ি বের করে, যাতে কারো চোখে পরে না, আবার নিজের কাজ হাসিল করা যায়। অপরাধ করা আর গোপন করা এদের স্বভাব।
পাহারাদার পুলিশ জানাল আঙ্গুলের ছাপসহ, আলামত গ্রহণ করা হয়ে গেছে গাড়ির। তারপরও গ্লাবস পরে পিছনের দরজাটা খুলে দেখল প্রথমে, সিটের উপর বেশ ধকল গেছে বোঝা যায়, দুমড়ে মুচড়ে আছে। এই একটাই মেয়ে নাকি এমন আরো মেয়ের সর্বনাশ করেছে এই গাড়ির ভিতর ভাবনা ঝিলিক দেয় মনের মধ্যে।
দরজা বন্ধ করার মূহুর্তে দেখল ডানপাশের প্যাসেঞ্জার সিটের নিচে চকচক করছে কিছু একটা।
অন্যপাশের দরজা খুলে জিনিসটা তুলে আনল। মনে মনে হাসল রনি, পুলিশের কাজেও কত গাফলতি। সিটের পাশে পরে থাকা এই আংটিটা কারো চোখে পরল না। বেশ দামী আংটি মনে হয়। সাদা পাথরগুলো কি ডায়মন্ড। মহিলাদের আংটি। তাহলে নারীটি বেশ ধনী পরিবারের মনে হচ্ছে।
মেয়েটি পথের বা নিম্নবিত্ত কোন মেয়ে না। যতটুকু দেখতে পেয়েছিল চেহারা বেশ সুন্দর মনে হয়েছে। দামী পোষাক ছিল তবে এই গাড়ির যাত্রীরা এই ক্রাইমের সাথে জড়িত কিনা এমনটা এখনও বলা যাচ্ছে না।
একটা সুবিধা হবে এদের ডিএন এ পরীক্ষা করে দ্রুত ধরা যাবে অপরাধী।
সেকেন্ড অফিসার এদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তবে কেন ধরে আনা হয়েছে এসব কিছু এখনও বলেননি। নাম, পরিচয়, ঠিকানা এত রাতে কোথায় যাচ্ছিল কই থেকে আসছে এসবই খুব আন্তরিক ভাবে জানতে চেয়েছেন, জানালেন। এই একটা সমস্যা রনি সব সময় খেয়াল করেছে। বড়লোক দেখলে অফিসার গুলোর গলার স্বর নরম হয়ে যায়। আর গরিব লোক হলে এরা হিংস্র ভাবে প্রথমেই আক্রমণ করে। রনির ইচ্ছা হলো আফসার সাহেবকে জিগায় এত নরম করে জিজ্ঞাসাবাদের কারণ কি? এখনই লোক এসে এদের জামিন নেয়ার চেষ্টা করবে আর কিছু টাকার বাণ্ডিল পকেটে ঢুকিয়ে অনেকেই এদের ছেড়ে দেয়ার জন্য উঠে পরে লাগবে। আফসার সাহেবও এদের মধ্যে একজন।
রনি একা অনেক কিছুর সাথে যুদ্ধ করে মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে যায়। তবে দুচারজন সৎ অফিসার আছে ওর সাথে যারা ঠিকঠাক মতন ওর নির্দেশ পালন করে। নতুন এই অফিসারদের, ও বেশ পছন্দ করে। যেমন সিসি ক্যামেরা দেখে দ্রুত এই গাড়িটাকে লোকেট করে চটপট আটক করেছে। আফসার সাহেবের বয়স হয়েছে অথচ সততা বলে কিছু নাই লোকটার ভিতরে।
একটু কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করল তা ওদের বাড়িতে কি জানিয়ে দিয়েছেন?
না সবে মাত্র জিজ্ঞসাবাদ শেষ করে এলাম।
আজকেই যে কেন এই লোকটা এ সময়ে ডিউটিতে দুই চোক্ষের বিষ এই লোকটা। সব উল্টা কাজ করে সহজ কাজকে জটিল করে ফেলে। ও চিন্তায় থাকে আসামীর থেকে কি করে টাকা খেয়ে তাদের ছাড়িয়ে দিবে।
কার কি ক্ষতি হলো তাতে কিছু যায় আসে না। নিজের লাভ ষোল আনা।
আফসারকে এখন এখান থেকে সরাতে হবে নাহলে কাজ সহজ হবে না। নরম সুরে রনি বলল, দেখান কি তথ্য কালেক্ট করলেন। তথ্য লেখা কাগজটা এগিয়ে দিতে গিয়ে টুপ করে একটা ছোট কাগজ পরে গেলো আফসার সাহেবের হাত থেকে। ফ্যানের বাতাসে উড়ে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডের পায়ের কাছে গিয়ে পরল কাগজটা।
আফসার সাহেবের মুখটা হয়েছে দেখার মতন। উনি দৌড় দিয়ে কাগজটা তুলতে যাচ্ছিলেন। রনি বলল, আপনি বসেন। বোয়াল মাছের মতন বিশাল মুখটা হা করে কাগজের দিকে তাকিয়ে বসলেন।
রনি গার্ডকে বলল কাগজটা নিয়ে আসার জন্য।
হাতে পেয়ে দেখল, একটা টেলিফোন নাম্বার লেখা।
এই তো আর একটু হলেই ফোন করে জানিয়ে দিত। নাকি দিয়েছে অলরেডি কে জানে। আলাদা করে লেখাএই ফোন নাম্বার কার। কেন আলাদা চিরকুটে ফোন নাম্বার লেখা, জানতে চাইল না আর। জিজ্ঞাসাবাদের আগেই উকিল নিয়ে হাজির হয়ে জামিন নিয়ে যাবে টাকার বিনিময়ে। এই নাম্বার তার সংকেত।
আফসার সাহেব রনির সামনে থেকে যাওয়ার জন্য ব্যাস্ত হয়ে গেলেন। রনিও একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। এই লোকটার মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে ।
উনার দেয়া নোট দেখে বিশ্বস্ত একজন পুলিশকে ডেকে কিছু নির্দেশ দিয়ে আফসার সাহেবকে তার সাথে পাঠিয়ে দিল অন্য একটি দ্বায়িত্ব দিয়ে।
আসামীর সাথে দেখা করতে গেলো রনি।
রনির ইচ্ছা করছে এদেরকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে পিটিয়ে লম্বা করে ফেলতে। শয়তানগুলো যদি আর কোনদিন এই চার দেয়ালের বাইরে বেরুতে না পারত, শান্তি পেত বহু মেয়েরা, বহু মানুষও হয়তো। কিন্তু যত রাগ হোক কিছু করা যাবে না । জানতে হবে আগে এরা আসল ক্রিমিনাল কিনা।

চারটা শয়তান, সুন্দর পোষাকের আড়ালে। ঝকমকে দামী ঘড়ি,ব্রেসলেট হাতের রিস্ট দখল করে আছে। কানে দুল, গলায় চেইন চকচক করছে। চুলে নানা রকম রঙ দেয়া নানা ভঙ্গির ডিজাইন করা। টাকা খরচ করতে এদের হিসাব করতে হয় না দেখলেই বোঝা যায়।
কিন্তু এদের দিকে তাকালে এই বয়সেই নেশার ছাপে ক্লিষ্ট মুখ, চোখের নিচে থলথলে চামড়া, কারো কালো হয়ে যাওয়া গর্ত মুখে কারো বা পেট উঁচু হয়ে উঠছে। অনেক রকম পরিচর্চায়ও এদের শরীরের আকৃতি নিকৃষ্ট মনে হয়। চামড়া আর হাড় চিমশে শরীর। একজন আবার খুব মোটাসোটা । শরীরে পেশী বলতে কিছু নাই কারো।
রনি শান্ত ভাবেই জিজ্ঞেস করল এত রাতে কােথায় যাচ্ছিলে। একটা বলে উঠল বলব কেন। আরেকজন বলল যেখানেই যাই বলতে বাধ্য নই। আরেকজন কিছু বলল না।
মোটা বলল, স্যার আমরা বাড়ি যাচ্ছিলাম।
বাড়ি এতত রাতে কেন?
পার্টি ছিল
কিসের পার্টি?
বার্থ ডে
খাওয়া দাওয়া কেমন হয়েছে?
ভালো
এতরাত পর্যন্ত বার্থডে পার্টি হয়?
আপনি কেমন পুলিশ সারারাত পার্টি হয় জানেন না!
ওহ তাই নাকি? আমাদের তো তেমন পার্টি হয় না তাই জানি না।
যে কথা বলছিল না সে এবার বলে উঠল, আমাদের ধরে এনেছেন কেন? আমরা বাড়ি যাচিছলাম বাড়ি যেতে দিন।
দিব। বলে রনি বাইরে চলে এলো।
এবার একটা একটা করে আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ হবে।
তাদের চরিত্র যাচাই করে ফেলেছে রনি। দুজন কিছু বলবে না বাপের গরম দেখাবে। উল্টাপাল্টা কথা বলবে। খবর শেষ পর্যন্ত মোটা এবং চুপ করে থাকা এই দুজনের থেকেই কিছু পাওয়া যেতে পারে।


দুই

মা বারবার বলেছিল রনি পুলিশের চাকরি নিস না। অন্য কিছু কর। কিন্তু রনির হিরো ছিল রনির বাবা। ইউনিফর্ম পরে বাবা যখন সামনে থাকতেন। রনি মুগ্ধ হয়ে বাবাকে দেখত। সেই ছোটবেলা থেকে সপ্ন দেখত বাবার মতন অফিসার হয়ে এমন ইউনিফর্ম পরবে।
বাবা ছিলেন অনেস্ট অফিসার। সারাজীবন নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন। কখনো ঘুষ নেন নাই। বরং এই ঘুষ না নিয়ে আসামীকে ছেড়ে না দেয়ার ফল পেলেন নিজের জীবন দিয়ে।
রনি তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবার এমন হঠাৎ অপমৃত্যু রনির জীবনটা বদলে যায় মূহুর্তে। মা বহু কষ্টে রনিকে নিয়ে জীবনের ঝড় সামলেছেন তখন।
সারা জীবন পুলিশ কোয়ার্টারে থাকা সম্মান পাওয়া অবস্থা থেকে হুট করে একদম নিম্ন অবস্থার একটি এলাকায় বাসা ভাড়া করে চলে যেতে হয় তাদের।
রনির নানা বাড়ির লোকজন খুব বড়লোক কিন্তু রনির মা পুলিশকে পছন্দ করে বিয়ে করায়, তাদের সাথে সম্পর্ক একবারেই শেষ হয়ে যায়।
রনির দাদা দাদী ছিলেন কিন্তু রনির ছোট বয়সেই তারা মারা গেছেন। বাবার আর কোন ভাইবোন নাই। রনিও এক সন্তান ওর পিতামাতার।
পুরান ঢাকার একটা পুরানো দালানের দুটো রুমের বাসায় মা যখন রনিকে নিয়ে উঠলেন। বাবার কিছু পেনসনের টাকা আর নিজে কিছু সেলাই, হাতের কাজ করে সংসার চালাতেন। রনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বিএ পরীক্ষা দিয়ে পড়া শেষ করতে চায়। কিন্তু মা কিছুতেই রাজী হন না। ওকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করতেই হবে। পড়ার সাথে কিছু টিউশনি করত । চার বছরের পড়াশোনা করা একটা কঠিন সময় ছিল। সাথে ছিল হঠাৎ করে সরকারী কোয়ার্টার ছেড়ে সাধারন মানুষের সাথে বসবাসের অন্য রকম একটা অপরিচিত জীবন। চারপাশে সারাক্ষণ ঝগড়া, চিল্লাপাল্লা লেগে আছে। এই এলাকার মানুষের মেজাজ যেমন গরম, তেমন নরম। এই ঝগড়া মারামারি তো এই আনন্দ হৈ হৈ করছে। কে যে কাকে ডেকে বিরিয়ানী খাওয়াচ্ছে. মিষ্টি বিলাচ্ছে কিসের খুশিতে বোঝা মুসকিল। আবার একই মানুষ ঝগড়া করে রক্তারক্তি কাণ্ড করতেও বেশি সময় লাগত না।
ভার্সিটির অবস্থাও ছিল সারাক্ষন অস্থির। রাজনৈতিক নানা জটিলতায় পড়াশোনার ক্ষতি।
বাবা থাকতে আগে থেকে সাবধান করে দিতেন রনিকে আজ গোলমাল হতে পারে সাবধানে থাকিস। বেশি দরকার না থাকলে আজ ভার্সিটিই যাস না।
বাবা না থাকায়, সে সব খবর আগে ভাগে পাওয়া যেত না। ভার্সিটিতে গিয়ে দেখা যায় ঝামেলা হচ্ছে, ক্লাস হচ্ছে না।
একবার তো ধাওয়া খেয়ে ধরা পরে গেলো মিছিলের ছেলেদের সাথে। গাদাগাদি করে পুলিশের ভ্যানে করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পরিচিত অফিসার পুলিশ আংকেল ওকে ছেড়ে দিলেন।
মা এত কিছু বুঝতে নারাজ। মার কথা পড়া শেষ করতে হবে। ওর বাবা অনেক আশা করে ওকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। নিজে পড়তে পারেননি ছেলে মাস্টার্স করে বের হবে এটা দেখার খুব ইচ্ছা ছিল।
বাবা তো নেই এখন, তাও বাবা কি দেখতে পাবেন মা?
রনির এমন কথায় মায়ের কান্নার জোয়াড় উঠত। মাকে মানসিক শান্তি দেয়ার ভাবনায়,বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া চালিয়ে যায়।
মাস্টর্স শেষ করে একটা চাকরি পেয়ে যায় রনি। মাকে নিয়ে পুরান ঢাকা থেকে উত্তরার দিকে চলে আসে। ওর চাকরিও ওদিকে ছিল।
সাথে বি সি এস দিয়ে পুলিশের চাকরিতে জয়েন করে অবশেষে কয়েক বছর পর।
মায়ের বুকটা কেঁপে উঠে। পুলিশ কেন হতে হবে। বি সি এস পাশ করে আরো অনেক কাজ করা যায়। এতদিন যে কাজ করছিস সেটাই বা মন্দ কি। ভালোই তো আছি আমরা। মায়ের অনুযোগের শেষ নেই।
পুলিশকে বিয়ে করার জন্য বাবা বাড়ির সাথে সম্পর্ক শেষ হয়। সংসারটাও ঠিক মতন করতে পারলেন না। মানুষটাই মারা গেল।
মায়ের যেন আতংক পুলিশ এখন। আর রনির কাছে হিরো বাবার মতন হওয়ার স্বপ্ন। অফিসার পদে যোগ দিয়ে এখন বাবার আততায়ীকে খুঁজে পাওয়া কর্তব্য মনে করেছে। এই একটাই শপথ ওর পুলিশ হওয়ার সাথে।

তিন

রনি স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ সে ডিসিসন নিতে পারছে না। তদন্ত করে রাতের বেলা নারী ধর্ষণ এবং মার্ডার করে ফেলার যে কেইসটা নিয়ে গত কয়েকদিন ওর নাওয়া খাওয়া বন্ধ আজ সব প্রমাণপত্র হাতে আসার পর এই রেজাল্ট তাকে থমকে দিয়েছে।
যে মেয়েটাকে বাঁচানোর জন্য তার সঠিক বিচার পাওয়ানোর জন্য দিনরাত এক করে সব প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
ধর্ষক ছেলেগুলোর উপর অমানুষিক অত্যাচার পর্যন্ত করে তথ্য আদায় করেছে, যা সাধারনত সে করে না। আজ জানতে পারল সেই ধর্ষিতা নারীর বাবা বিশাল ধনী শিল্পপতি।
বছর পনের আগে তখন সদ্য ব্যবসায়ী হওয়ার নেশায়, অর্থ উপার্জনের সুযোগ নেয়ার জন্য নানা রকম কুটচালে উৎকোচ দিয়ে মানুষকে ঠকিয়ে হেন কোন কাজ নাই যা তিনি করেনি।
আঠার মতন লেগে থেকে সবরকম চাল, কুটচালে তিনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর পদমর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দিনে দিনে হয়ে উঠৈছেন দেশের স্বনামধন্য বিখ্যাত শিল্পপতিও।
এক সময় রনির বাবা এই লোককে গ্রেফতার করে জেলে পাঠান, একজনকে খুন করার দায়ে।
সমস্ত প্রমাণ থাকার পরেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের এই আসামী মাত্র দুই বছরে জেল থেকে, ছাড়া পেয়ে যায় উচ্চ আদালতে আপিল করে বিচারককে উৎকোচ দিয়ে নির্দোষ প্রমাণের রায় নিয়ে।
প্রতিটি পত্রিকায় বড় বড় শিরোনাম আসে, মিথ্যা মামলার অভিযোগে অভিযুক্ত বিশিষ্ট শিল্পপতি, ব্যবসায়ী নির্দোষ প্রমাণিত। ছাড়া পেলেন শিল্পপতি। অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস। পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করবেন, সংবাদ সম্মেলন করে এমন ঘোষনা দেন শিল্পপতি। কিন্তু মানহানীর মামলা হওয়ার আগেই হঠাৎ হারিয়ে যান অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার। নিখোঁজ একেবারেই।
মাস খানেক পর পাওয়া গেলো নদীর পারে পুলিশ অফিসার, রনির বাবার লাশ। শুধু গুলি নয় প্রচুর অত্যাচারের চিহ্নও ছিল শরীর জুড়ে।
শিল্পপতি জেল থেকে বের হওয়ার মাস খানেকের মধ্যে রনির বাবা নিখোঁজ থাকার পর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। কে এই হত্যার আসামী, কেন পুলিশ অফিসার নিহত হলেন এর কোন সূত্র পাওয়া যায়নি। ধরা পরেনি কেউ কখনও।
এই শিল্পপতির মেয়ে, আসামী চার ছেলের বান্ধবী। অথচ চারজন মিলে বার্থ ডে পার্টি থেকে ঘুরতে বেরিয়ে, গাড়িতে গ্যাং রেপ করে ছূঁড়ে ফেলে মেরে ফেলতে চায় মেয়েটিকে।
মেয়েটি এমন শাস্তি পেলো কি বাবার অপরাধে। ছেলেগুলো ভয়ানক, ধর্ষক । গ্যাংরেপ করেছে বান্ধবীকে। জানে মেরে ফেলতেও চেয়েছে। এদের অপরাধ অনেক বড়। তারপরও মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভালোলাগা অনুভব করতে থাকে রনি। ভাবনাটা ঠিক না। নিজের কাছেই বিশ্রী লাগে ব্যাপারটা। কিন্তু ভাবনাটা কিছুতেই তাড়াতে পারছে না মন থেকে।
ব্যবসায়ী, বিরাট শিল্পপতি যখন রনির হাত ধরে কেঁদে কেঁদে মেয়ের ধর্ষকদের যেন মৃত্যুদণ্ড হয় এই আবেদন করছিল তখনও রনি ভেবেছিল হ্যাঁ এদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।
এখন ওর ভিতরটা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে চারজন আসামীর চেয়ে মেয়েটির বাবার উপর রাগ হচ্ছে। বাপের পাপের শাস্তি ফুলের মতন মেয়েটা এভাবে না পেলেও পারত। প্রকৃতির কি ভীষণ প্রতিশোধ ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:২৩

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: ভালো হয়ে ছে গল্পটা।
শুভ কামনা।

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:২৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ কবিতা ক্থ্য

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:০১

শেরজা তপন বলেছেন: পড়লাম!
লেখার কন্টেন্ট ভাল- তবে কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি খুব বেশী তাড়াহুড়ো করেছেন। বেশ কিছু ভুল-ত্রুটি নজরে পড়ল, যা আপনার লেখার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে!
আপনি আমার প্রিয় একজন উঁচু্মানের লেখিকা- সমালোচনাটা আন্তরিকতার জন্য করলাম। আমার নিজের ভুল-ত্রুটি সীমাহীন তবে সেটা কেউ ধরিয়ে দিলে কষ্ট পাই না। আশা করি ফের রিভাইস করে কিছু অংশ এডিট করে দিবেন।

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শেরজা তপন ।

আপনি আমার প্রিয় একজন উঁচু্মানের লেখিকা- সমালোচনাটা আন্তরিকতার জন্য করলাম।


জেনে অনেক প্রীত হলাম আমি আপনার প্রিয় লেখক ( আমি লেখিকা না বলে লেখক বলতে পছন্দ করি :) )। সমালোচনা অবশ্যই করবেন এবং আন্তরিক ভাবে করবেন। আমি পছন্দ করি।
তাড়া একটু ছিল লেখাটা দ্রুত শেষ করেই পোষ্ট করেছি। পোষ্টের পরে পরেই নিজেই দ্রুত আবার কিছু এডিট করেছি। পোষ্টের পরে যা চোখে পরে। আগে কেন যেন দৃষ্টি এড়ায়।
সাধরনত গল্প, কবিতা আমি লেখার সাথে সাথে পোষ্ট করি না।
এ লেখাটা ছেড়ে দিতে ইচ্ছা হলো এবং জানতাম আমি কয়েকদিন আর সময় পাবো না আসার। এই মাত্র ঢুকে মন্তব্যর উত্তর দিচ্ছি এখনো রিভাইস করা হয়নি।
মন্তব্যের উত্তর না পেয়ে হয় তো ভিন্ন কিছু ভাবতে পারেন। আসলে তা না। সমালোচনায় আমি খুশি হয়েছি।
আপনার যে জায়গায় ভুল মনে হয়েছে পয়েন্ট আউট করলে আরেকটু সুবিধা হতো।

৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৩০

বিটপি বলেছেন: ফুলের মত মেয়ে বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন? যে মেয়ে চারটি বয়ফ্রেন্ড সামলায় আর তাদের সাথে টিনটেড গাড়িতে রাতের বেলা ঘুরতে বের হয়, সে ফুলের মত মেয়ে?

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ বিটিপি আপনার মন্তব্যে জন্য।
একটি মেয়ে অবশ্যই ফুলের মতন। চারজন বা আট জন বা বারো বা ষোল বা তার বেশি ছেলে বন্ধু থাকতে পারে একটি মেয়ের। এর মানে সে নষ্ট মেয়ে নয়।
চারজন ছেলে মেয়েটির বয় ফ্রেন্ড না বন্ধু ।
এমন কি বয় ফ্রেণ্ড হলেও মেয়েটিকে যদি ধর্ষণ করে বয় ফ্রেণ্ড, তাতে মেয়েটির কোন দোষ নেই।
কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার শরীর স্পর্শ করা তাকে এবিউজ করা।
কিন্তু মেয়েরা রাস্তায় বাজারে নানা ভাবে পুরুষের স্পর্শে অপদস্ত হয় যা অনেক পুরুষ নিজেদের অধিকার মনে করে।
এই ধারনা বদলানো জরুরী।

৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৫

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: গল্পটা দারুণ হয়েছে। প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয় কি না ঠিক জানি না, তবে এই প্রতিশোধটা ওই ব্যবসায়ীর মেয়ের উপর না নিয়ে উক্ত ব্যবসায়ীর উপর নিলে আরও ভালো হতো; নাকি প্রকৃতি এভাবেই প্রতিশোধ নেয়?
আমাদের দেশের পুলিশগুলো যদি রনির মত হতো তাহলে অপরাধের সংখ্যা অনেকাংশে কমে যেতো।

১২ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ জ্যাক স্মিথ
ভালোলাগল আপনার সুন্দর মন্তব্য। গল্প দারুণ লেগেছে আপনার, জেনেও ভালোলাগছে।
আমিও জানি না প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয় কিনা। কিন্তু প্রচলিত কিছু কথা আমরা বলি। গল্পের প্রয়োজনে অনেক কিছু ব্যবহার হয়ে যায়।
হয়তো ভাঙ্গনটা আসেপাশে থেকে শুরু হয় সরাসরি না হয়ে। তাদের খারাপ সময়টা উপভোগ করতে হবে তো।

আমারও খুব ভালো লাগত যদি সারা দেশের পুলিশ রনির মতন পুলিশ হতো। হবে এই আশাও করি।
বাস্তবে কিছু অবশ্যই আছেন সৎ নিষ্ঠাবান পুলিশ।

৫| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: মনে হলো যেন বিদেশী গল্পের অনুবাদ পড়লাম।

সুন্দর গল্প। সুন্দর ও সহজ সরল ভাষায় লিখেছেন। গল্পে কোনো ভান বা ভনিতা করেন নি।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৩:৫২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীর নুর।
ভালোলাগল জেনে তোমার গল্প পড়ার অনুভুতি।

৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০০

মিরোরডডল বলেছেন:



বড়লোক দেখলে অফিসার গুলোর গলার স্বর নরম হয়ে যায়। আর গরিব লোক হলে এরা হিংস্র ভাবে প্রথমেই আক্রমণ করে।

কথা সত্যি ।

প্রকৃতি যদি প্রতিশোধ নিতো তাহলে ভালোই হতো, কিন্তু সেটা আর হচ্ছে কোথায় !
একের অপরাধে আরেকজনের শাস্তি, এটা অবশ্য কখনোই কাম্য না ।

আপু যে গল্পও লেখে জানতাম না, আগে পড়েছি কিনা মনে করতে পারছি না :)

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:১৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: আপু যে গল্পও লেখে জানতাম না, আগে পড়েছি কিনা মনে করতে পারছি না :)

মিরোরডডল এতদিন পরে এই লেখা পড়ে গল্প লেখককে জানা গেলো।

গল্প কবিতা দিয়েই শুরু করেছিলাম। চুরির জ্বালায় সে সব লেখা দেয়া বন্ধ রেখেছি।
হঠাৎ কখনো দেই দু একটা।
রকমারিতে আমার নাম দিয়ে সার্চ দিও। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.