নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কমিউনিটি প্রোগরামে ঠিক কবে শেষবার গিয়েছিলাম মনে পরছে না। হয় তো কোন পিকনিকে বা কারো একটা গেটটুগেদার ছিল। তবে সেই দুই হাজার উনিশে। তারপর দু বছর তো কড়া নিয়মে কারো সাথে কারো দেখা হওয়ার সুযোগ বন্ধ ছিল।
গত দুটো বছর কেটেছে আর সব বছরের চেয়ে অন্য নিয়মে।
গতকাল অনেকদিন পর বাঙালিদের একটা অনুষ্ঠানে গেলাম। অনুষ্ঠান ছিল বইমেলা। এক সময় কমিউনিটির অনেক কিছুতে জড়িত থাকলেও এখন আর তেমন কিছুতে নিজেকে জড়াই না। যাইও না কোথাও। তবে বছরে একবার বইমেলা হয় যেহেতু লেখার সাথে জড়িত নিজে তাই বইমেলার আকর্ষণটা ছাড়তে পারি না। দেশের বাইরে বইমেলা অনেকটা দইয়ের সাধ ঘোলে মেটানোর মতন।
যিনি এই বইমেলার আয়োজন করেন, সাদী আহমেদ নিখাদ একজন ভালোমানুষ। নিজের উদ্দোগ্যে বিদেশ ভূমিতে বইমেলার আয়োজন করে চলেছেন বছরের পর বছর। উনাকেও যথেষ্ট পছন্দ করি তার ভালো মানুষির জন্য। তাই উনার অনুষ্ঠানে যাই। এক সময় সাদী ভাই কবিতা পড়ার আয়োজন করে সেখানে কবিদের সম্মানীও দিতেন। বইমেলা ছাড়াও প্রায় প্রতি মাসে উনার বইয়ের দোকানে বা পাশে কোন জায়গায় আয়োজন করে কোন বিষয়ে অনুষ্ঠান করতেন এক সময়। সব অনুষ্ঠানে না গেলেও প্রচুর অংশ গ্রহণ ছিল আমার এক সময়। বিদেশে অধিবাসীরা যারা দেশের শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করেন অনেকটাই নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতনই কাজ সেটা।
মেঘে মেঘে বেলা অনেক হলো। বইমেলা এখানে হচ্ছে দুই হাজার সাত সাল থেকে। প্রায় প্রত্যেকবারই বইমেলায় উপস্থিত থেকেছি, দু একবার হয় তো বাদ গেছে।
আমার বইয়ের আলোচনা, মোড়ক উন্মোচন। বই এবং লেখার বিষয় নিয়ে কথা বলা, আলোচনা হয়েছে। বই বিক্রি এবং কবিতা পাঠ করেছি বিদেশে এমন বইয়ের সাথে লেখা এবং লেখক পাঠকের মিলন মেলার সুযোগ পাওয়াটাও মন্দ না।
বই মেলা ঘিরে এসেছেন গুণিজন দেশ, বিদেশ থেকে। এসেছেন প্রকাশক। ভালোলাগে নতুন প্রজন্মের অংশ গ্রহণও। অনেকেই অংশ গ্রহণ করে। পাঠক লেখক প্রকাশক ভক্তকুলের মিলনমেলায় প্রতিবারই ভিন্নরকম দ্যোতানা থাকে।
একবারের একটা ঘটনা বলি, সেবার আমার দুটো বই নিয়ে বসেছি বই মেলায় পাঠকরা দেখছেন, কিনছেন। প্রতিবার স্থানীয় এম পি, কাউন্সিলর আসেন। নিজের দেশে অনুষ্ঠান অন্যদেশে বসে করছেন এবিষয়ে উৎসাহ দেন। তারা মঞ্চে কথা বলেন। কমিউনিটিকে সাহায্য সহযোগীতার কথা বলেন। করেনও যথা সাধ্য। উনারা আসলে তাদের সাথে লেগে থাকার জন্যও অনেক মানুষ ভীড় করে থাকেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে দু একটা বাংলা শব্দ বলে তারা সবাইকে আনন্দ দেন। সব শেষে ঘুরে ঘুরে টেবিলে রাখা বই দেখেন। লেখকদের সাথে পরিচিত হন। তো ভীড় করা বাঙালসিহ এম পি সাহেব আমার টেবিলে দাঁড়িয়ে আমার বইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলেন। বইয়ের নাম জিজ্ঞেস করলেন। কতদিন লিখছি জানতে চাইলেন।
বইয়ের নাম বাংলায় বলে ইংলিশ ট্রেন্সলেশনে বললাম। বইএর বিষয়ে দু কথা বললাম। দুটো বই হাতে নিয়ে দেখে দাম জিজ্ঞেস করে তিনি কিনতে চাইলেন। এবং ডলার বের করে কিনলেন। বইয়ের ভিতর আমার ছবি আর বইয়ের মলাটের ছবি ছাড়া সবই রহস্যময় উনার কাছে আমি জানি কিন্তু একজন লেখককে উৎসাহ দেওয়ার এই প্রবনতা এদের অন্যরকম। তখন পাশ থেকে একজন বাঙালি বললেন, এ বই তো আপনি পড়তে পারবেন না। কিনে কি হবে?
এমপি সাহেব, উনার কথা শুনেও না শোনার ভান করে আমার সাথে আরো খানিক কথা বলে পাশের টেবিলে চলে গেলেন। লোকটাকে দেখলে ঘটনাটা প্রায় মনে পরে যায়।
বেশ একটা মিলন মেলা জমজমাট। অনেক বছর ধরে একটা ঐতিহ্য দাঁড়িয়ে গেছে।
অনেকদিন কোথাও না গেলে, না যাওয়ার একটা অভ্যাস গড়ে উঠে। আগের দিন থেকে যাওয়ার একটা পরিকল্পনায় মাথায় রাখলেও সকাল থেকে ভাবছিলাম যাব কি যাব না। দুটানা চলছিল মনের মধ্যে। ভাগ্যিস গ্রীষ্মকলের সময়টা বিশাল লস্বা। সকাল থেকে ঘরে অনেক কাজ টাজ সেরে শুয়ে বসে থেকেও দিনের আলো ঝকঝক করছিল। আর তখন মনে হলো এই বসে থেকে সময় না কটিয়ে যাই একটু ঘুরেই আসি । অনেকের সাথে দেখা হবে ভালো লাগবে অনেকদিন পর।
অতএব রওনা হলাম। পথ কম না। তবে পথের দূরত্ব আরো বেড়ে গেল। অনেক মানুষের পথে নামার জন্য। রাস্তা একদম বাম্পার টু বাম্পার। শেষ বিকেলের মায়া ভরা আলোয় যখন পৌঁছালাম অবশেষে ভাবছিলাম বেশ সময় লাগবে পার্কিং পেতে কিন্তু সামনেই বেশ ভালো একটা পার্কিং পেয়ে গেলাম। ভিতরে ঢুকার মুখে দেখা হলো সব সুন্দরী রমনীরা গল্প আড্ডা আর ছবি তোলায় ব্যাস্ত। পুরুষরাও ছোট ছোট দলে দূরে দূরে গল্প করছেন। পরিচিত কেউ কেউ হ্যাগ করতে এলেন। কেউ মাস্ক পরা দেখে চিনতে পারলেন না। এখানে কোন করোনা নেই মনে হলো। সবাই খুশি মনে আনন্দে ব্যাস্ত।
আসাদ ভাই বেরিয়ে যাচ্ছেন তখন। জানতে চাইলাম চলে যাচ্ছেন কিনা। বললেন আসছেন ফিরে।
ভিতরে ঢুকে দেখলাম বাংলাদেশের কনসেলেটর, এম পি এবং অন্যান্যরা মিলে আলোচনা সভায় আলোচনা করছেন। বুঝলাম এজন্যই সবাই নিজেরা আড্ডা দিচ্ছেন বাইরে।
উনাদের আলোচনা শেষে বই দেখা কেনা, গল্প, আড্ডায় খানিক সময় কাটিয়ে নিজের কয়েকটা বই গাড়িতে ছিল তা আনতে গেলাম গাড়ি থেকে বন্ধুদের দেয়ার জন্য। ফেরার পথে দেখা হয়ে গেল কনস্যুলেট এবং সাদী ভাইয়ের সাথে পথে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বার্তা বললাম। উনাদের দিলাম আমার বই।
পরে আমাদের সাথে আরো অনেকে যোগ দিলেন। রাস্তার উপর মিনিট বিশেকের গোল মিটিং হয়ে গেল । কনস্যুলেট সাহেব চলে গেলেন আমরা আবার ভিতরে এলাম।
অনেক ছবি উঠানো হলো, অনেক গল্পের সাথে। আমি তেমন ছবি তুলিনি নিজে দু একটা ছাড়া। মনে হয় চিত্রা এবং জামানার কাছে পাওয়া যাবে সে সব ছবি। নাজমুন নাহার পিয়ারী প্রায় প্রতিবার সুদূর বার্লিন থেকে আসেন। এবারও ছিলেন। উনাকে জানালাম বার্লিনে গিয়েছিলাম সুন্দর জার্মানি দেশটা বেশ ভালোলেগেছে আমার। বললেন, আবার গেলে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।
অনেক দূরের পথ আমার বাড়ি ফিরার তাই তাড়াতাড়ি চলে আসব মনে করেও শেষ আকর্ষণ অমিত শুভ্রর গান শোনর জন্য রয়ে গেলাম। রাত বিরাতে ফিরা তো কোন ব্যাপার না আমার জন্য। বরঞ্চ সময় কম লাগে ভীড় থাকে না বলে গাড়ি চালিয়ে আরাম। এক সময় অমিতশুভ্রর সাথে এক সাথে ফোবানার অনুষ্ঠানে গান করতাম ।
গান শুনতে শুনতে মুগ্ধ হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি পরিচিত একটি মুখ। বাংলাদেশের মুখটা এখানে কেমন করে। সত্যি কি তিনি, নাকি উনার মতন দেখে কেউ। ভাবতে ভাবতে উঠে গেলাম উনার কাছে। উনিও অবাক হলেন কত দিন পরে দেখা। জানতে চাইলাম চেনা গেলো নাকি ভুলে গেছেন? চিনব না কেন, খুব মনে আছে।
নাদের বললেন আমার শহরে গিয়েছিলেন কাজে কিছুদিন আগে, আমার ভাইকে খুঁজে দেখা করেছেন। আমার নাম দিয়েই।
নাদের চৌধুরী এখন মঞ্চ নাটক থেকে, টেলিভিশন, ছবির জগতের পরিচিত মুখ। কিন্তু উনার সাথে আমার পরিচয়, উনার এই পরিচিতি পাওয়ার আগে থেকে। আহমেদ হোসেন এসে অনেক পুরানো স্মৃতি বলতে লাগল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দূরন্ত দিনের গল্প। মুনির নামের একজন আমাদের ছবি উঠিয়ে দিলেন।
বললাম আপনার সাথে এখানে দেখা হলো আর একবার চীন থেকে ফিরছি। সিকিউরিটি চেক আপ সেরে প্লেনে উঠার অপেক্ষা করছি হঠাৎ দেখি, সামনে এসে একজন বলছেন, আপনি কি তাকিয়ে দেখি মুনির ভাই,ডাকসুর ভিপি সেই মুনির ভাই । আমি অবাক হয়ে বলি আরে মুনির ভাই আপনি। কিসের আপনি আপনি করেন, আপনি তো আমাকে ছোটবোনের মতন আদর করতেন, তুমি করে বলতেন। অনেকদিন পরে দেখা তো যদি না হয় কনফিউজ ছিলাম একটু।
উনি আরো কয়েকজন মিলে একটা প্রোগরামে গিয়েছিলেন চীনে।
নাদের অবাক হয়ে পুরো নাম বলেন, মুনির উদ্দিন আহমেদ? হ্যাঁ খুবই আশ্চর্য হয়েছি মুনির ভাই আমাকে চিনে ফেলেছেন অচেনা বিদেশের এয়ারপোর্টে। সারা পথ অনেক গল্প করে আসা হলো।
নাদেরের ছেলে হৃদয় আর ইমদাদুল হক মিলনের মেয়ে একা দুজনে ঘর বেঁধেছে। তারও আমেরিকায় থাকে। ভাবীও প্রায় বিদেশেই থাকেন।
অনেকের সাথে দেখা হলো ভালোলাগল। অনেক নতুন মানুষ এখন শহরে, চেনাজানা হলো কয়েকজনের সাথে নতুন করে।
বাড়ির দীর্ঘ পথ আমার যখন চলতে চলতে শেষ হলো সপ্তমীর চাঁদও আকাশ ছেড়ে তখন ঘুমের জন্য মাটিতে নেমে এসেছে। তাকিয়ে দেখলাম অন্ধকারে প্রচুর তারা আকাশ জুড়ে। কালপুরুষ আর সপ্তঋষির হাসাহাসি এক সাথে। কি জানি আকাশের মানচিত্র বদলে যায় কখন। বিজ্ঞানীরা তেমনই আভাষ দিয়েছেন। কালপুরুষকে একইরকম, দেখতে পাবো কি যদি বিস্ফোরণ ঘটে তার একটি তারায়।
আগস্ট মাসে রাতের অন্ধকাটে দাঁড়িয়ে উল্কাপাত দেখা আমার একটা ঝোঁক। বিজ্ঞানের ভাস্য অনুযায়ী এ সময়ে প্রচুর উল্কাপাত হয়। আগে অন্ধকার গ্রামে চলে যেতাম এখন নিজেই গ্রামে থাকি। তাই আঙ্গিনায় বেরুলেই দেখতে পাই। টুপটাপ ঝরে পরে আকাশের তারা।
আমার ছোটবেলায় জানতাম উল্কাপাত দেখা ভালো না। আর বিদেশে প্রতিটি উল্কাপাতের সাথে একটা উইস করা হয় জীবনের ইচ্ছা পূরণের জন্য।
০৯ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:০৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: আপনার ভালোলেগেছে জেনে আমারও ভালো লাগল খুব।
শুভেচ্ছা জানবেন কামাল ৮০
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
কামাল৮০ বলেছেন: সব মিলিয়ে খুব সুন্দর স্মৃতিচারন।পড়ে খুব ভাল লাগলো।