নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

অকাল প্রয়াত হাসান আরিফ

০২ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:২৮



আরিফের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীর দোতালার ছোট পড়ার ঘরে। সদ্য তরুণ একটি ছেলে মায়াময় চেহারা মুখে মিষ্টি হাসি। সেদিন সম্ভবত শুক্রবার ছিল। দুপুরবেলা আরিফ এসেছিল একটি গাড় মেরুন রঙের পাঞ্জাবী পরে। এক মাথা ঝাকড়া চুল। এমন চুল সাধারনত দেখা যায় না। সুন্দর হাসিখুশি চেহারা।
প্রথম দেখায় আরিফের দুটো বিষয় আমার নজরে পরে ছিল। গাঢ় রঙের পাঞ্জাবী যা আশির দশকে ছেলেরা পরত না। আর ওর থুতনিতে এক গুচ্ছো দাড়ি। এ সময়ে সব ছেলেরাই দাড়ি রাখে, ফ্যাশন ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবে। দাড়ি ছাড়া এ সময় ছেলেরা মনে হয় সময়ের বাইরে। কিন্তু আশির দশকে ব্যাপারটা ছিল অন্য রকম।
সে সময়ে জামাত শিবিরের উত্থান হচিছল। ভেবেছিলাম ছেলেটা কি শিবির করে নাকি।
কিন্তু পরিচয় পেতে পেতে জানলাম ভুল ছিল প্রাথমিক ভাবনা আমার।
ছেলেটা প্রগতিশীল ভাবনার মানুষ। একটু বেশি রকমই প্রগতিশীল।
আরিফের মা রওশন আপা, ছেলে মেয়েকে মানুষ করেছেন আধুনিক ভাবনা দিয়ে। সমাজের সব রকম পিছন ফিরে তাকানোকে দূরে রেখে প্রগতি, খোলামনের মানবিক হওয়ার মন্ত্র দিয়ে। আরিফের বোন তুলি, অত্যন্ত সচেতন সাহসী একটা মেয়ে সেই সময়ে। লজ্জাবনত নতজানু নয় বরং নিঃসঙ্কোচ সহজ। কতদিন আরিফদের বাসায় যাওয়া হয়েছে যখন তখন হিসাব ছাড়া। আরিফের মা, একা সামলেছেন জীবনের অনেক যুদ্ধ। তিনি হয়ত দিব্যচোখে দেখতে পেতেন। তিনি আমাকে বলতেন, তোমার মধ্যে পাহাড়ের মতন দারুণ এক শক্তি আছে। তোমাকে আমি ডাকব পাহাড়িকা।
সে সময় আরিফ আবৃত্তি, নাট্য চর্চার সুুতিকাগার টি এস সিতে কেবল আসা শুরু করেছে নতুন। কবিতার প্রতি আগ্রহ নিয়ে যুক্ত হয় আবৃত্তির ক্লাসে। আরিফ আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ হয়ে উঠে ধীরে ধীরে। কতবার কত জায়গায়, কত শহরে এক সাথে গিয়েছি আমরা কবিতার দল বেঁধে। কবি, আবৃত্তিকার মিলে।
সে সময় ছিল কবিতায় প্রতিবাদ করার সময়। রাজপথে শহীদমিনারে আবৃত্তি, কবিতার ছড়াছড়ি।
একবার আমরা কুমিল্লা গিয়েছিলাম অনেকে মিলে। আহা কতজন নাই হয়ে গেছেন সেই সময়ের। সমুদ্রগুপ্ত মনে হয় সেই অনুষ্ঠান করে আসার অল্প দিন পরই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরেন। সেই অসুস্থতা থেকে আর বের হতে পারলেন না। চলে গেলেন সবার আগে অন্যলোকে। আর আজ সবার ছোট হাসান আরিফ চলে গেল। খুব খারাপ লাগছে ভাবতে। খবরটা প্রথম দেখলাম আবৃত্তিকার মেহদী হাসানের ওয়ালে। বুকের মাঝে ধক করে একটা কষ্ট জেগে উঠল। এভাবে চলে যেতে হয়। শুনেছিলাম কিছুদিন ধরে অসুস্থ কিন্তু ভালো হয়ে উঠল না ছেলেটা। অপেক্ষা ছিল ভালো হয়ে ফিরে আসার হাসপাতাল থেকে। অথচ শোকে ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল ।
কুমিল্লায় সেবার আমরা তিনদিন ছিলাম। খুব মজা হয়ে ছিল। সেই থাকার ব্যবস্থা হয়ে ছিল আরিফের খালার বাসায়। বিশাল বাড়ি পুরোটাই খালী ছিল। খালা থাকতেন ঢাকায়। কিন্তু বাড়ি তত্বাবধানের লোক ছিল। প্রতিটি ঘর নিপুন করে সাজানো গোছান। বাইরে উঠান গাছপালা। পুরানো বনেদি বাড়ি, ঝকঝকে তকতকে। আমাদের খুব আনন্দ হলো এমন হাতপা ছড়িয়ে নিজের মতন পুরো একটা বাড়ির সব টুকু উপভোগ করার সুযোগ পেয়ে।
যেদিন দুপুরে আমরা ঢাকা থেকে গেলাম তারপর দিন ছিল আমাদের কবিতার অনুষ্ঠান। পরেরদিন থেকে ঘুরে ফিরে আমরা ফিরেছিলাম। আর এই তিনদিন আমাদের জন্য তিনবেলা সে কি রাজকীয় খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা। নিজেদের মধ্যে গল্প আড্ডা। কবিতা কথন হৈ চৈ দারুণ একটা সময় ছিল কবিতার অনুষ্ঠান করার পাশাপাশি।
সেবার পরিচয় হলো ফুটফুটে একটা মেয়ের সাথে বড় টিপ ফর্সা কপাল জুড়ে। সুন্দর মায়াময় দুটো চোখ। কালো কুচকুচে চুলের ফর্সা রমনী। তাঁতের শাড়ি কি সুন্দর করে পরে আর সব চেয়ে ভালো গুণটি হলো দারুণ আবৃত্তি করে। লায়লা আফরোজ।
এক সময় দেখলাম দক্ষ আবৃত্তি শিল্পী হয়ে উঠা হাসান আরিফ আর লায়লা আফরোজ এক সাথে জোট বেধেছে ভালোবাসায়।
তারপর কেটে গেছে সময় কতদিন দেখা হয় না আর। কিছুদিন আগে জানলাম রওসন আপা চলে গেছেন অন্যলোকে। আর আজ ছেলেও চলে গেল মায়ের কাছে।
সেই ছোট আরিফ নিজের গুণে নিজের মতন জায়গা করে নিয়েছে মানুষের মনে। দারুণ একটা জায়গা ভালোবাসা পাওয়ার। বাংলাদেশের গুণিজন উপস্থিত হাসান আরিফকে বিদায় জানাতে।
গতকাল দেখছিলাম ভালোবাসায় উপচে পরা মানুষের ভীড় শহীদমিনারে যেখানে শেষবার দেখার জন্য রাখা হয়েছিল হাসান আরিফকে। সম্মান সে নিজেই অর্জন করেছে। খুব মন খারাপ হয়ে গেল। কত স্বপ্ন ছিল ওর সবটুকু শেষ করার সময় পেলো না।
খুব অল্প সময়ে চলে গেল। মন খারাপ হয়ে গেলো তুলির কথা শুনে। ওদের ভাইবোনদের বন্ধন ছিল দারুণ।
মানুষের জীবনটাই এক অদ্ভুত মরীচিকা।
যেতে যেতে মানবিক শেষ কাজটি করে গেল আরিফ নিজের শরীরটি দান করে গেছে মানবিকতার কাজে। সবাই এতটা সাহসী হতে পারে না। আরিফ তার আধুনিক ভাবনার প্রতিফলন রেখে গেলো আমাদের মাঝে।
ভালো থেকো আরিফ অন্যলোকে ।


মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:৩২

গরল বলেছেন: আমার এক বন্ধু আবৃত্তি শিখত টিএসসিতে, ওর সাথে মাঝে মাঝে যেতাম দেখতে, ৯৬ বা ৯৭ এর দিকে। মনে হয় দেখেছি উনাকে কয়েক বার। খুবই খারাপ লাগলো পড়ে, আর এত সুন্দর করে লিখেছেন যে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লাম। মনে হচ্ছে উনাকে কতকাল চিনি আমি।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:২০

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ গড়ল। টিএসসিতে আগে সবাইকে দেখা যেত। এখনকার অবস্থা জানি না।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: উনি মরে গিয়েও ভালো কাজ করেছেন। আমিও মৃত্যুর পর আমার শরীর দান করে যাবো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১১:২৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: ভালো সিদ্ধান্ত রাজীব নুর।
বিদেশে অনেক প্রচলিত শরীরের অর্গান দান করে যাওয়া। দেশে তেমন ভাবে প্রচার নাই তাই মানুষ উৎসাহীত হয় না।

৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:৫১

সোবুজ বলেছেন: শেষের শব্দটা আরিফদের সাথে যায় না।যে মৃত্যুর পরেও অন্যদের উপকারের কথা চিন্তা করে দেহ দান করতে পারে সে মৃত্যুর পরের জগতের কথা চিন্তা করে না।এরা মহত প্রান।
বাংলাদেশে কম বয়সে মৃত্যুর জন্য ভেজাল খাদ্য দায়ী সেই সাথে আছে বায়ু দূষণ।অনেকেই মধ্য বয়সে হঠাৎ করে মরে যাংয়।আপনি সাংকৃতিক জগতের মানুষ ছিলেন,জেনে ভাল লাগছে।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:১৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: আত্মা অবিনশ্বর এই ভাবনা থেকেই বলা। বিশ্বাস আমার তার নয়।
যা হোক ধন্যবাদ সোবুজ
ওর মৃত্যুর কারন মনে হয় করোনা।
হ্যাঁ দেশের অনেক তরুণ ইদানিং খুব অল্প বয়সে মারা যাচ্ছে আপনার উল্লেখিত কারণে।
পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো দরকার

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:০০

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:

হাসান আরিফ কে শ্রদ্ধা জানাই।
৭১ এ বুদ্ধিজীবি নিধনের পর ৮০-৯০ দশকের বিপুল উদ্যোমী একটা জেনারেশন। যারা স্বপ্ন দেখিয়েছিল জাতীকে। কিন্তু একে একে ধিরে ধিরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নতুন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
ভাবতে খুবই খুবই খারাপ লাগে।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:২৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান কালবৈশাখী
একটা উদ্যমী প্রজন্মকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলেছে অনেকদিন ধরে। এখনও যারা ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে তাদের আগের মতন সংগঠিত হতে দেখা যায় না। র্ভাচুয়াল প্রতিবাদ চলে। সেটারও মুখ বন্ধ।
প্রতিবাদের সুযোগ না থাকলে সমাজের ক্ষতগুলো চোখে পরবে না। প্রতিবাদ তখনই প্রয়োজন হবে না যখন সব কিছু ঠিকঠাক চলবে।

৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ রাত ২:১০

সোনাগাজী বলেছেন:



বয়স কত হয়েছিলো, কোন বিষয়ে পড়েছিলেন?

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৩০

রোকসানা লেইস বলেছেন: বয়স হয়তো পঞ্চাশের কাছাকাছি।
কোন বিষয়ে পড়েছেন সেটা বলতে পারব না মনে নেই এখন তবে সংস্কৃতি চর্চটা সব কিছু ছাপিয়ে ছিল এটা অনেক বড় শিক্ষা যা অনেক পড়ুয়াদের নেই।
ধন্যবাদ সোনাগাজী

৬| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৮:২০

আহমেদ জী এস বলেছেন: রোকসানা লেইস,




অনিশ্চয়তায় ভরা মানুষেরই জীবন! তবুও শুনে খারাপ লাগলো।
হাসান আরিফ চলে গেলেও তার কন্ঠ থেকে যাবে।
অন্যলোকে ভালো থাকুক আরিফ।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৩৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: আসলে অনিশ্চয়তায় ভরা মানুষেরই জীবন কখন কার ডাক আসবে এটা অজানা।
তবু আশা থাকে আরও অনেক দিন থাকার। বর্তমান সময়ে আশি নব্বই এমনকি একশ বছর বাঁচা সহজ মানুষের
তার কণ্ঠ থাকবে আমাদের মাঝে।
ধন্যবাদ আহমেদ জী এস

৭| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৮:৫৫

সোহানী বলেছেন: পুরো লিখা জুড়ে বয়ে বেড়ানো কষ্ট। অনেক অনেক ভালো থাকুক ওপারে।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৩৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: কত মানুষ চলে যায় প্রতিদিন। আর এখন তো বেহিসাবী সংখ্যা।
পরিচিতদের জন্য অন্যরকম বুকে বাজে কষ্টটা মনে পরে যায় স্মৃতি।
ধন্যবাদ সোহানী

৮| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৩৮

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: আপনার স্মৃতিরোমন্থনে জানতে পারলাম আরো অনেক কিছু। ওনার আবৃতি ছিল অসাধারণ।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:০৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ সৈয়দ মশিউর রহমান
সবার স্মৃতিগুলো আলাদা আলাদা।
কিছুটা শেয়ার করলাম

৯| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:৩০

প্রামানিক বলেছেন: লেখা পড়ে কষ্টই লাগল। এদের ভুলে যাওয়া কখনই সম্ভব নয়।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:০৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক
মনে রাখা দরকার। তার কণ্ঠ বাজবে আমাদের মাঝে তবু

১০| ০৩ রা এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সেদিন সন্ধ্যায় যখন ওনার মৃত্যু সংবাদ শুনি তখন একটা কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমরা ওনার জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করেছিলাম অনুষ্ঠান শুরুর আগে।

১১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১:১২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ভালো হয়েছে আপনারা সামিল হয়েছেন সাথে সাথে।
আগে আমরা একসাথে মিলিত হতাম শ্রদ্ধাজানাতে। দেশের প্রখ্যাত কারো মৃত্যু খবর পেলে। গত দু বছর থেকে সব বন্ধ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.