নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা দিবসের ভালোবাসা আমার বাবার জন্য। এমন একজন বাবার মেয়ে হয়েছিলাম বলে নিজেকে সব সময় সৌভাগ্যবান মনে করি। হৃদয় মন, মনন বাবার ঐশ্বর্য্যে পরিপূর্ণ হয়েছে বরাবর। কোন অপূর্ণতা নাই আমার।
অনেকের গল্প শুনি, ভয়ানক বদ রাগী বাবা তাদের। বাবার ভয়ে তারা কথা বলতে ভয় পেত। অথচ আমি পেয়েছি এমন বাবা যিনি আদরে ভালোবাসায়, যত্নে শিক্ষা দিয়েছেন প্রতিটি বিষয়ে। বাবা ছিলেন বন্ধু। বাবার সাথে কথা বলতাম সব বিষয়ে। ছিল না কোন আড়াল আবডাল। খেলা, গল্পের বই ভাগাভাগি করে পড়া। একপাতে ভাত খাওয়া। মুখে তুলে আদরে বাবা সব সময় খাইয়ে দিতেন। যে কোন খাবার ভাগ করে দিতেন সব সন্তানদের। গরমে হাত পাখার বাতাস দিয়ে ঘুম পাড়াতেন।
আমার অসুখ হলে আমি বাবার কাছ থেকে নড়তে চাইতাম না । বমি করে ভাসিয়ে দিতাম গভীর ঘুমে থাকা বাবাকে। বাবা যত্ন করে সব পরিস্কার করে আমাকে ওষুধ খাইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ঘুম পাড়াতেন।
বাবার সাথেই শুরু হয় ভ্রমণের হাতে খড়ি। বাবা রোগী দেখতে যেতেন গ্রামে গঞ্জে কত জায়গায়। সাথে নিয়ে যেতেন। কখনো নৌকায় চড়ে কখনো বাবার আঙ্গুল ধরে হেঁটে। কখনো বাবার সাইকেলে বসে যেতাম। কত গ্রাম দেখার সুযোগ হয়েছে। সুযোগ হয়েছে মানুষকে কাছে থেকে দেখার, তাদের ব্যবহার, আদর, ভালোবাসা জানার এভাবে বাবার কাজের সাথে থেকে।
আবার নিয়ম করে প্রতি বছর বর্ষায় নৌকা ভ্রমণ ছিল অবশ্য করণীয় বিষয়। কতবার নৌকা ভ্রমণে গিয়ে হারিয়ে গেছে মাঝি, হাওরের অথৈ জলে। নিগূঢ় অন্ধকার, বিরাট ঢেউ পরিবার নিয়ে নৌকায় বসে বাবা আনন্দে চিহ্নিত করছেন আকাশের তারা।। চিনিয়ে দিচ্ছেন কি ভাবে ধ্রুব তারা দেখে পথের সন্ধান পাওয়া যাবে। সপ্তর্ষিমন্ডলের সাত ঋষির নাম ক্রতু, পুলহ, পুলস্ত্য, অত্রি, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ, মরীচি একে একে পরিচিত করছেন তাদের সাথে। সপ্তর্ষিমন্ডলের লেজটা কোন দিকে কেন ঘুরে আছে তার ব্যাখ্যা দিতেন। ভয়ে অস্থির হওয়া নয় বরং শান্ত নির্বিকার ভাবে সময়টা পার করার চেষ্টা করেছেন, পথ খুঁজে পাওয়ার।
সেই সময় বর্ষাকালে নৌকা বাইচ হতো। নৌকা বাইচ দেখার জন্য নৌকায় চড়ে আমারও নদীতে যেতাম প্রতিযোগীদের পিছু পিছু। কি জোড়ে জোড়ে ছুটছে তাদের হাতের বৈঠা। কত রঙের রঙিলা নাও । আর মাঝিদের দল বেঁধে, সুর করে গাওয়া গান। মাঝে একজন দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিচ্ছে। ঢোল করতাল বাদ্য বাজছে। চিকন চিকন নৌকা গুলো ছুটে চলছে দ্রুত। এমন সুন্দর লৌকিক বিষয় গুলো হারিয়ে যাচ্ছে এখন। অথচ আমার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। এবং বাবার ভালোবাসা আগ্রহে এই সুন্দরের সাথে পরিচিত হয়ে সমৃদ্ধ হয়েছি।
বর্ষাকাল ছাড়াও শীতকালে দু চারদিনের জন্য কাছে পিঠে গ্রামে যেতাম আমরা। সমৃদ্ধ হতাম নতুন জীবনে বেড়ানোর সাথে। গ্রামিন পরিবেশ, খাবার, কীট, পশু জীবন যাপন চেনা হতো ভ্রমণের মাঝে।
শীতকালে মেলা বসত । মেলায় আসত সার্কাস, যাত্রা পুতুল নাচ। নাগরদোলা আরো কত রকমের খেলা । কত রকমের দোকানপাট। মাঠের মধ্যে যেন বাজার বসেছে সুন্দর সুন্দর দোকানের। বাবা টাকা দিয়ে রাখতেন। ইচ্ছে মতন সব কিছু কিনতাম সেই ছোট বয়সেই। পুঁথির মালা কানের দুল, খেলনা বা বন মানুষের শো বা পুতুল নাচ দেখতাম বারে বারে। আর খেতাম নানা রকমের খাবার মেলার দোকান থেকে কিনে।
শহরে তখন একটাই সিনেমা হল ছিল। নতুন সিনেমাগুলো এলেই সিনেমা হলের মালিক চাচা, বাবাকে বলে যেতেন এই ছবিটা ভালো কবে দেখতে আসবেন। বাবা দিন ঠিক করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন।
সেই সময় সিনেমা হলের এক পাশে ঘেরা পর্দা দেয়া ছিল মেয়েদের বসার জন্য জায়গা কিন্তু আমরা বসতাম সবচেয়ে পেছনের ভালো স্পেশাল সিটগুলোতে সব সময়, বাবার সাথে। সিনেমা দেখার জন্য আমাদের কোন লোকাছাপা করতে হয়নি কখনো। বরং সিনেমার গল্প গুলোতেও শিক্ষনীয় বিষয় থাকে। বিনোদন এবং আনন্দের জন্য সিনেমা দেখতে হয়, বাবা খুব ভালো করেই জনতেন। প্রতিটা ভালো সিনেমা সেই সময় আমরা বাবার সাথেই দেখেছি। সিনেমার পর ভি সি আর ভাড়া করে রাত ভর ছবি দেখাও ছিল বাবার আয়োজনে কোন কোন দিন। সেই সময় আমার সংগ্রহে ছিল কিছু কেটে ফেলা ফিল্ম যাতে নায়ক নায়িকাকে দেখা যায় আমি চাই ওগুলো তাই বাবা, চাচাকে বলে আমার জন্য এনে দিতেন সিনেমার এই ফিল্মগুলি। আমাদের এক ধরনের খেলনা ছিল, যাকে ক্যামেরা বলতাম। যার ভিতর ফিল্ম ঢুকিয়ে টেনে নিলে ছায়াছবির মতন দেখা যেত। টুকরো টুকরো এই ফিল্মগুলো বাবা নিজেও কত জোড়া দিয়ে দিয়েছেন আমাকে।
আমার মা ছিলেন ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের সদস্য। বাবাই উৎসাহ দিয়ে মাকে জনগনের কাজ করার জন্য নানান সংগঠনে যুক্ত করে দিয়েছিলেন। ঘরে থেকে মা যেন বোরড না হন। মা যে কাজ করতে চান তার সব কিছুতেই বাবার উৎসাহ ছিল। মাও খুব আনন্দ পেতেন জনগণের জন্য কিছু করতে পেরে।
মাকে জেলা শহরে যেতে হতো মাসে দু মাসে একবার মিটিং করার জন্য। আমাদের শহর থেকে জেলা শহরে যাওয়া সে সময় ছিল এক বিশাল পাহাড় ডিঙ্গানো ব্যাপার। মায়ের মিটিং করার জন্য বাবা আমাদেরসহ পুরো একদিনের ভ্রমণের বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে জেলা শহরে যেতেন। সে সময় জেলা শহরের ডাক বাংলোয় থাকতাম। উর্দি পরা খানসামা খাবার বেড়ে দিত তিনবেলা। অন্য রকম খাবার। সাজগোজ করে সুন্দর হয়ে থাকা সবসময়। অন্য রকম সাহেবী জীবনের আভাষ। মিটিং শেষে বিরাট পার্টি হতো আর সেই পার্টিতে আমরা ছোটরা নানা রকম নতুন খাবার খাওয়ার স্বাদ নিতাম মজা করে। পাহাড়ি ঢালের ভিতর সে ডাকবাংলোর পাশে বয়ে গেছে সুন্দর কালো পিচের রাস্তা সেই রাস্তা ধরে গাড়ি চলাচল করত। সেই ছোট বেলায় ক্ষণে ক্ষণে এমন প্রাইভেট কার, জিপ দেখা আমাদের জন্য অবাক বিষয় ছিল। ভাই আর আমি মিলে একটা খেলা খেলতাম, দুপাশের গাড়ি গোনার। এক এক জনের এক একটা দিক। যে পাশ থেকে বেশি গাড়ি আসত অল্প সময়ে সে জিতে গেল।
আমরা অনেক দূরপ্রান্তর পাড়ি দিতাম নানা বাড়ি যাওয়ার জন্য। সেই ভ্রমণও এক আশ্চর্য ভ্রমণ ছিল। এক এক সময় এক এক যাত্রা পথ। এক এক রকম অভিজ্ঞতা শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম সময়ে। তিন দিন ব্যাপী দীর্ঘ যাত্রায় কত অভিজ্ঞতা। শুধু এই পর্বগুলো লিখলেই একটা বই হয়ে যাবে। কিছু লিখে রেখেছি বইয়ের জন্য। বাবা কত যত্ন করে সেই দীর্ঘ যাত্রা পথে আমাদের খাবার খাওয়াতেন। টয়লেটে নিয়ে যেতেন। বিছানা করে ঘুম পাড়াতেন। যাত্রা সময়ের বেশির ভাগ সময় আমাদের দেখাশোনার দায়িত্ব যেন বাবার। আবার বাবা বই কিনে পড়তেন। আমি কোন বই কিনতে চাইলে তাও কিনে দিতেন। যত্ন করে ট্রেনের দুলুনিতে ঘুম পারিয়ে দেয়া আমাদের আবার বাবা ডেকে উঠাতেন, ভৈরবের পুল দেখানোর জন্য। সেই সময়ে ভৈরবের ব্রীজটাই বাংলাদেশের সব চেয়ে লম্বা ব্রীজ ছিল।
বাবা আমাদের সমুদ্রপাড়ে নিয়ে যেতেন। বল ছূঁড়ে সমুদ্রে পাড়ে খেলা, সমুদ্র সৈকতে বালি দিয়ে ঘর বানানো, নাম লেখা, ঢেউয়ের সাথে খেলা নিজেকে পানির উপর ভাসিয়ে রাখার প্রক্রিয়া বাবা অনেক যত্ন করে শিখিয়ে দিতেন।
বাবা কত গল্প বলতেন। বাবা বলেছিলেন, ছোটবেলায় বাবা একদিন খুব কাঁদছিলেন, উনার কাছে নিরানব্বই পয়সা আছে আর একটা পয়সা উনি চান। তা হলে এক টাকা হয়ে যাবে। এখন উনি একশ পর্যন্ত গুনতে শিখে গেছেন তখন তাই একশটা পয়সা চান। এক পয়সার মূল্যমান কত তখন বাবা জানেন না। কিন্তু দাদীর কাছে নিশ্চয়ই অনেক বেশি ছিল। দাদী এক পয়সা না দিয়ে একটা ঘরে বাবাকে বন্ধ করে রাখলেন একা। আর বললেন, আর যদি কাঁদিস তোকে ধরতে নাগেস্বরের ছিয়া আসবে। আহারে আমার ছোট বাবাটার মনে কত না জানি ভয়, কত কষ্ট হয়েছিল সেদিন। নাগেস্বরের ছিয়া কেমন দেখতে তার কােন, পরিচয় পাইনি কখনো আর কোথাও শুনিনি। তবে আমার বাবার একটা পয়সা চাওয়ার সাথে, নাগেস্বরের ছিয়া ভয়টা গেঁথে ছিল মনে।
আরো একবার ঈদের সময় সবার জন্য কাপড় এলো, বাবার জন্য শুধু একটা সার্ট। বাবা বোনদের শাড়ির ভাঁজ ধরে গুনে যাচ্ছেন। ওদের জন্য এত শাড়ি, আমার জন্য শুধু একটা জামা কেন। সেই বাবাকে কোন দিন কিছু দিতে পারিনি। একটা সার্ট, প্যান্ট কিনলে রাগ হতেন। এক চশমা, এক ঘড়ি এবং এক স্টেথোস্কোপ দিয়ে সারা জীবন পার করে দিলেন।
একবার বাবা মার বিবাহ বার্ষিকিতে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলাম, নিলেন না বরং কেন দিলাম এসব করার দরকার নাই নানা উপদেশ দিলেন, কোন কিছুর প্রয়োজন নাই বাবার। আরো বেশি করে আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে তবে শান্তি পেলেন। বাবা শুধু খুশি হতেন বাবার মেয়ে, বাবার পাশে থাকলে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধে বাড়ি গেলে আমরা হৈ হৈ করতাম। সাজতাম আর গান করতাম। মেয়েদের গালগল্প হাসাহাসি বাবার পাশে থেকে বাবা এই দেখাতেই সব চেয়ে বেশি খুশি হতেন। এই ছিল বাবার সব চেয়ে বড় ভালোলাগার উপহার।
বাবা আমাদের নতুন জিনিস চেনাতে পছন্দ করতেন, একদিন গভীর রাতে বাড়ি ফিরে বাড়ি সুদ্ধ সবাইকে বাবা ডেকে তুলে রাস্তায় নিয়ে গেলেন। আকাশে আশ্চর্য একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে, যাকে বহু বছরে একবার দেখা যায় । সেদিন আকাশে একদিক আলো করে র্টচলাইটের আলোর মতন একটা আলো ছড়িয়ে আছে ঘুম কাতর চোখে বাবার কোলে করে মাঠে গিয়ে দেখেছিলাম গভীর রাতে। তার সাথে আর কোনদিন দেখা হয়নি এ জীবনে। সেটা ছিল ধুমকেতু।
ঢাকায় গেলে চিরিয়াখানায় একবেলা যাওয়া। যাদুঘর দেখতে যাওয়া হবেই। এবং সুন্দর করে ইতিহাস, জীব জন্তুর পরিচয় দিতেন বাবা। । আর যেতাম মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে যেখানে বাবা থেকেছেন অনেক বছর সেখানে বাবার ছোট বন্ধুরা থাকতেন। রুম মেট চাচা বলতাম। একবার রুমমেট চাচা মুরগির মাংস আর পরটা খেতে দিয়েছিলেন সেটা মনে আছে খুব। রুমমেট চাচা আমাদের বাড়িতেও বেড়াতে আসতেন।
একবার মনে আছে বাবা রমনা পার্কে ঘুরছেন আমাকে নিয়ে। কত ফুল কত সুন্দর আমি আনন্দের সাথে দেখছি। বাবা দেখালেন এক জায়গায় কিছু লােক কাজ করছিল সাজ সাজ ব্যাস্ততা। কিছু বানানো হচ্ছিল। কাল ওখানে রাণী আসবে, কথাটা এখনো আমার কানে লেগে আছে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কে দেখতে বাবার সাথে গিয়েছিলাম রমনা পার্কে কতটা দেখেছিলাম মনে নেই। তবে আগের দিনের কথাটা বেশ মনে আছে। কমলাপুর রেল স্টেশন তখন নতুন হচ্ছে বাবা ঢাকা থেকে চলে আসার আগে সেটাও দেখিয়ে আনলেন। কি সুন্দর পদ্ম ফুলের পাপড়ির মতন নতুন ইষ্টিশন। আমরা রেলগাড়িতে চড়তাম তখন ফুলবাড়িয়া থেকে।
বাবার এই নতুন দেখানোর মাঝেই আমার মনে, হয়তো নতুনের প্রতি আগ্রহ প্রবল ভাবে দানা বেঁধে গেছে। নতুন দেখার আগ্রহে তাই বেড়িয়ে পরলাম অচেনা নতুন দেশের উদ্দেশ্যে। বাবা আমার এই দূরে থাকা একদমই পছন্দ করলেন না। বাবা আমার পাঠানো ছবিগুলো বালিশের নিচে নিয়ে ঘুমাতেন। শুধু বলতেন বাবা তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে বিদেশ চলে এসো। কিন্তু আমার যাওয়ার আগেই বাবা চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। যাবার দিনও অনেকক্ষণ কথা বললাম, বাবার সাথে। স্বাভাবিক সুন্দর দিন কাটিয়েছেন। সন্ধ্যা বেলা যে রোগী দেখেছেন পরদিন ফলোআপ করতে এসে তিনি হতবাক আর সবার মতন এটা কি ভাবে হয়।
সেদিন বাবাকে বলেছিলাম, বাবা তুমি আসো স্পষ্ট বলে দিলেন না, আমি যাবো না। কয়েক ঘন্টা পরে সেই মানুষটা অন্য কোথাও চলে যাবেন এটা ভাবিনি কখনো অথচ তিনি হয় তো বুঝতে পেরেছিলেন। অনেকেই উনার মৃত্যু খবর পেয়ে এসে বলেছেন, সেদিন আমার সাথে দেখা হলো মাফ চাইল, বলল আর বাঁচব না স্পষ্ট উচ্চারণ অনেককে বলেছিলেন হয় তো এই শেষ দেখা। ভালো থেকো বন্ধু, ভাই। এমন কি ব্যাংকেও গিয়ে ছিলেন টাকা পয়সার একটা ব্যবস্থা করতে। ব্যাংকার উনার কথা শুনেননি বলেছেন, আপনার আরো সময় আছে। পরে সেই টাকা পয়সা উঠাতে, অনেক ঝামেলা করতে হয়েছে। তিনি ঠিক বুঝতে পেরেছিলেন উনার ডাক এসেছে।
বাবার সাথে শেষ বেড়ানোটা ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি দিন । তিন চারটা রিকসা করে আমরা বইমেলায় যাচ্ছিলাম। শাহবাগে গিয়ে দেখলাম, রাস্তা বন্ধ। এবং আমাদের অন্য সঙ্গী কাউকে পেলাম না। বাবা আর আমি ছিলাম এক রিকসায়। বাবা বললেন, ওরা হয় তো অন্য রাস্তা দিয়ে গেছে চলো, পলাশি দিয়ে ফুলার রোড হয়ে যাই। শহীদমিনারের কাছে গিয়ে দেখলাম সেই রাস্তাও বন্ধ।
বাবা তখন আমাকে নিয়ে মেডিকেল কলেজের ভিতর দিয়ে হেঁটে চলেছেন। মেডিকেলেও পাহারা বসেছে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না। কিন্তু বাবার মুখের দিকে এক ঝলক চেয়েই দারোয়ান বলল, আসেন, বাবা আর আমি ভিতরে ঢুকে গেলাম। দারোয়ান যেন অনেক বছর পর দেখে চিনে ফেলল, বাবা এই কলেজে ছাত্র ছিলেন, অনেক সময় কাটিয়েছেন এই ইট পাথরের দেয়ালের ভিতর পদচারনায়, জ্ঞান আহরণে। মুখর হয়েছে এই চত্তরের ধূলা মাটি এই যুবকের চলাফেরায়। বাবা বাহান্ন সনের একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছিলেন সেদিন আবার সেই সব জায়গা গুলোয় দাঁড়িয়ে অনেকবার বলা একুশে ফেব্রুয়ারি বাহান্নর ঘটনা।
ঢাকা এয়ারপোর্টে বাবার শেষ আলিঙ্গন, বাবার গায়ের ঘ্রাণ এখনো ঠিক তেমনি পাই যেমন ছোট মেয়েটি বাবার পাশে শুয়ে থাকতাম। ভালো থেকো বাবা যেখানে আছো।
২১ শে জুন, ২০২১ রাত ১১:৫৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ কামাল ১৮
বন্ধু হওয়া খুব জরুরী সন্তানের মা বাবা দুজনেরই। আমাদের দেশে ভুল চিন্তা আছে বাবার শাসন না হলে সন্তান বখে যায়। অনেক বাবা তো সন্তানদের নিজস্ব সম্পত্তি মনে করে গরুর মতন পিটায়।
সন্তানের সাথে কেমন ব্যাবহার করতে হবে এ নিয়ে কয়েকটা পোষ্ট দিয়েছিলাম আগে। তবে এখনও আমাদের অনেকের ধারনা সন্তানকে পিটায়ে মানুষ করতে হবে এবং শিক্ষককেও পিটানোর অনুমতি দেন সে সব অভিভাবক।
ভুল একটা যন্ত্রনার মাঝে আমাদের সন্তানরা বড় হয়ে উঠে।
আমি এ দিকে সৌভাগ্যবান অসাধারন ভালো একজন বাবা পেয়েছি কোন শাসন তাঁর কাছে ছিল না।
আমার ভাই আছে কিনা। লেখাটা আরেকবার পড়তে অনুরোধ করব।
শুভেচ্ছা থাকল
২| ২১ শে জুন, ২০২১ ভোর ৬:৩২
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
আপনার প্রাণপ্রিয় বাবার জন্য রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
দয়াবান ও দায়িত্বশীল একজন বাবার সকল গুণই
ছিল উনার মধ্যে । এমন একজন গুণী বাবা
পাওয়া সত্যিই খুবই ভাগ্যের ব্যপার ।
আপনার জননিও কম যান না, উনিউ ছিলেন
জনদরদী সমাজ সেবক । সে সময়ে জেলা
পরিষদের সদ্স্যগন ছিলেন খুবই সন্মানীয়
ব্যক্তিত্ব ।
হাউরে নৌকা বাইচ, আর নানা বাড়ীতে
যাত্রাপথে ভৈরব নদীর ব্রিজ পারি দেয়ার
কথা, সাথে আপনাদের শহড় হতে জেলা
শহড়ে যেতে হওয়ার কথামালায় মনে
হয় আপনি হয় কিশুরগঞ্জ না হয়
নেত্রকোনার মেয়ে হবেন । ধারণা
আমার ভুলও হতে পারে ।
যাহোক, হাউরের নৌকা বাইচের সুন্দর
বিবরণ দিয়েছেন । নদী নালা খাল বিল আর
হাউর সমৃদ্ধ গ্রাম বাংলায় তখন বিশেষ বিশেষ
উৎসব বা পালা পার্বনে অনুষ্ঠিত হতো নৌকা বাইচ।
অনেক লম্বা লম্বা বাইচের নৌকা ( কোন কোনটি
১০০ হাতের থেকেও বেশী ) যখন সারি গান গেয়ে
প্রতিযোগীতায় নামতো তখন তা দেখে কি যে ভাল
লাগত তা ভাষায় প্রকাশ করা বেশ কঠিন ।
ছবি সুত্র : কৃতজ্ঞতার সহিত গুগল ছবি ইমেজ ।
বাবা দিবসে একজন সফল বাবার কিছু জীবনালেক্ষ
তুলে ধরে পোষ্ট দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
শুভেচ্ছা রইল
২২ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:১৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী ।
আসলে এত প্রাণপ্রিয় ব্যাক্তি খুব মিস করি। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা শুধু বাবা মায়ের কাছেই পাওয়া যায়। সব কিছুর উর্ধে তাদের জীবন বাজী সন্তানের জন্য।
মা বাবা দুজনই খুব জনপ্রিয় ছিলেন মানুষের কাছে । মানুষের জন্য জনহিতকর কাজ করে আনন্দ পেতেন। আমার বাবার মৃত্যুর পর এলাকার কত মানুষ বলেছে আমরা অভিভাবক হারালাম। কত গ্রামের মানুষ নিজেদের উদ্যোগে দোয়া কালাম পড়েছে জমায়েত করে বাবার জন্য শোনে আমরা হতবাক।
এক কথায় অমায়িক ভালোমানুষ হিসাবে উনাকে যে কেউ বর্ণনা করবে।
আমি তোমার বাংলাদেশের মেয়ে, সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দিয়েছেন আমাকে মানুষ করে গড়তে। করেছেন পুরোপুরি
অন্তরে বাহিরে মিল হয়েছে, সেকালে আর আজকের কালে। মিল হয়েছে ব্যথায় আর বুদ্ধিতে, মিল হয়েছে শক্তিতে আর ইচ্ছায়।মিল হয়েছে বুদ্ধিতে আর ইচ্ছায় ।
আমি তোমার বাংলাদেশের মেয়ে।
সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দেন নি
আমাকে মানুষ করে গড়তে--
রেখেছেন আধাআধি করে।
অন্তরে বাহিরে মিল হয় নি
সেকালে আর আজকের কালে,
মিল হয় নি ব্যথায় আর বুদ্ধিতে,
মিল হয় নি শক্তিতে আর ইচ্ছায়।
রবি ঠাকুরের কবিতাকে একটু ঠিক করে নিলাম আমার জন্য। আর এই ঠিক করাটা পেরেছি আমার বাবার জন্য। পুরোটুকু হওয়ার সাহস যুগিয়েছেন অন্তর দিয়ে।
আসলেই আমি পুরো বাংলাদেশের মেয়েছিলাম সাথে এখন পুরো পৃথিবী আমার। আমি পৃথিবীর অভিবাসী। শুধু কোন এলাকায় আমাকে খুঁজে পাবেন না।
লেখাটা একটু বড় হয়েছে কিন্তু আমাদের লৌকিক সংস্কৃতি দিনে দিনে কি ভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তা বলার জন্যও এই সব ছোট বিষয়গুলো তুলে আনলাম।
শুভকামনা ভালো থাকুন সব সময়
৩| ২১ শে জুন, ২০২১ দুপুর ২:৩১
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বাবা মানে স্নেহ-তৃষিত মনের দুর্ভেদ্য আশা।
২২ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:১৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ নূরু
এই তৃষা সারা জীবন থাকবে যারা পেয়েছে এবং হারিয়েছে তারাই কেবল মর্ম উপলব্ধি করবে মর্মে
শুভকামনা
৪| ২১ শে জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৩৭
শেরজা তপন বলেছেন: আপনার বাবাকে নিয়ে আপনার চমৎকার লেখাটা পড়লাম!
বাবা ও মেয়ের আত্মিক সম্পর্ক অন্য যে কোন সম্পর্কের উর্দ্ধে!
প্রত্যাশা রইল ওপারে ভাল থাকবেন তিনি- তার প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা
৫| ২২ শে জুন, ২০২১ রাত ১২:২২
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ শেরজা তপন তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় শরিক হওয়ার জন্য।
এই বন্ধন সত্যি অলিক এক বন্ধন। বাবাদের খুব কাছের মানুষ হওয়া দরকার সন্তানের যার কাছে মন খুলে সব বলা যায়।
শুভেচ্ছা থাকল। অনেক ভালো থাকুন
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুন, ২০২১ ভোর ৬:২৬
কামাল১৮ বলেছেন: বাবা এবং সন্তানদের সাথে সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো।আপনাদের সম্পর্ক তাই ছিল যেটা হলো আদর্শ সম্পর্ক।আপনার কি কোন ভাই আছে?