নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডুব সাঁতার: পর্ব পাঁচ

৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৫৪

পাঁচ

কিছুদিন হলো নতুন একজন মাস্টার রেখেছি। পড়ুয়া ছাত্রর সংখ্য বেড়ে গেছে অনেক। তারা বেশ মনোযোগী। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তাই বাচ্চাগুলোর জন্য স্কুল চালু করতে চাইলাম। একা সামলানো সম্ভব না। তাই স্কুলের জন্য একজন মাস্টার রাখলাম।
দুজনে মিলে বাচ্চাগুলেকে পড়াব। জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয় গুলো শিখানো জরুরী। কিছু নিয়ম নীতি। সারা জীবনের জন্য যা জরুরী। এছাড়া অক্ষর জ্ঞান থেকে নিয়মিত সরকারী কারিকুলামের বই পড়ানো শুরু করব এখন থেকে।
সাথে বাচ্চাদের ছবি আঁকা এবং গল্পের বই পড়াতে হবে।
কারিগরী শিক্ষা হাতে কলমে কিছু শিখানো গেলে ওরা কাজ করে সফলতা পাবে সহজে। দিনে দিনে মানুষের জন্য কাজের মাত্রাটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। একটার সাথে আরেকটা জড়িত বিষয় এসে যাচ্ছে। কোন কিছু এড়ানো সম্ভব না। ইচ্ছা না থাকলেও অনেক কিছুতে জড়িয়ে পরছি।
মাস্টার ছেলেটি বয়স উনত্রিশের মতন হবে। গ্রামের ছেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করেছে। কোথাও ভালো কোন কাজ জোগার করতে পারেনি। মামা, চাচা বা পয়সার জোড় নেই বলে। টিউশনি করেই চলে। বাড়িতে মা আর পঙ্গু একটি ভাই আছে। বাবা পোষ্ট অফিসে চাকরি করতেন । মারা গেছেন বছর খানেক। সাদা সিধে ধরনের লোকটিকে আমার বেশ পছন্দই হলো।
বাচ্চাদের সাথে মিশে গেছে বেশ ভালো ভাবে। তাদের পড়ায়ও যত্ন করে।
নতুন ধরনের জীবন বেশ ভালোই কাটছে আমার ছুট ঝামেলাহীন। কোন মেঘ বৃষ্টির রাতে এখনও মাঝে মধ্যে রূপা হানা দেয়। বেশ কদিন মনের উপর বেশ ভালো প্রভাব ফেলে।
রুপাকে কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারি না। রুপার সাথে সময়গুলো বড় আনন্দের ছিল। মাঝে মধ্যে নীলার কথাও মনে আসে। নীলা অনেক কাজের ক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেয় সার্টটা এভাবে রাখলে কেন? লুঙ্গি পরে বাইরে হাঁটতে যাচ্ছো? প্রতিদিন মাংস খাচ্ছো? নীলা ভালোলাগার ঝর্ণাধারা হয়ে আসে না। তবে জীবনের ভুল ভ্রান্তি যা নীলার কাছে ভয়ানক রকম প্রবল সেগুলো ধরিয়ে দেয়। একটা সময় এক সাথে কাটানোর অভ্যাস। একসাথে অনেকদিন না থাকার পরও মনে হয়।
বয়স তো অনেকই হলো, প্রায় পয়তাল্লিশ। নিজের বাচ্চাটা হলে এখন এই দশ বছরের বাচ্চাগুলোর বয়সী হতো। ছেলে না মেয়ে ছিল রূপার গর্ভে; জানা হয়নি কখনও।
নীলাকে বিয়ের পর এক ধরনের দুটানায় পরেছিলাম বাচ্চা নিব নাকি না। একমন খুব বাচ্চা চাইত। আরেক মনে খুব ভয় পেতাম। নীলার যদি কিছু হয়। এই দুটানার মাঝে নীলা কখনো বাচ্চা হওয়ার বিষয়ে কথা বলেনি, এগিয়ে আসেনি। বাচ্চা হওয়া নিয়ে রূপা যেমন সহজ আনন্দে মেনে নিয়েছিল, চেয়েছিল। নীলার মধ্যে তেমন কোন চাওয়া ছিল না। নীলা নিজেকে সাজাতে, সংসার জিনিসপত্র কিনে সাজাতে, ঘুরে বেড়াতে অনেক বেশি ভালবাসত। নীলাকে বাচ্চা নেয়ার কথা বলার সাহস এবং সুযোগ হয়নি আমার। মাঝে মধ্যে এসব ভাবনা বড় বেশি চেপে ধরতে চায়। কখনও ভাবনায় ডুব দিতে চাই না। সব সময় কিছু একটা কাজে নিজেকে ব্যাস্ত রাখি। রাত হলে ভালো ঘুম হয়। সকালে আবার নতুন দিন একই রুটিন। তারপরও মাঝে মধ্যে কিছু সময় অতীত আমাকে পিছনে টেনে নিতে চায়।

ঘুমটা বড় মজবুত ছিল। কালরাতে বেশ দেরী করে ঘুমাতে গিয়েছি। রাতের বেলা গ্রামের মানুষ বাউল গানের আসর বসিয়ে ছিল। বেশ রাতে গানের আসর শেষ হয়। সুন্দর লোক সঙ্গীত শুনে বেশ কাটল সময়। তারপর বাড়ি ফিরে ঘুমিয়েছি।

সকালে ভয়ানক রকম হৈ চৈ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জেগে উঠে প্রথমে মনে হলো গানের আসরের শব্দ বুঝি। খানিক পরে টের পেলাম বিলকিসের মা দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকছে ক্রমাগত। ও খালুআব্বা উঠেন উঠেন কী সাংঘাতিক কাণ্ড হইছে দেখেন। খালুআব্বা গো।
বিলকিসের মা আমারে খালুআব্বা কেন ডাকে। এখানে আমার কোন বউ নাই। আমি কেন ওর খালু হই । কখনো প্রতিবাদ করিনি জানতেও চাইনি। ডেকে যাচ্ছে আমি সারা দিচ্ছি। দিনের মধ্যে দু একবার সে এই ডাক আমাকে দেয় আবার অনেক দিন ডাকার দরকারও পরে না। সামনাসামনি কথা হয়। আজ এমন ব্যস্ত হয়ে কেন ডাকছে?
গভীর ঘুম থেকে উঠে মাথাটা তালগোল পাকিয়ে গেল প্রথমে। তারপর উঠলাম যতটা দ্রুত সম্ভব দরজা খুললাম, সার্ট গায়ে দিতে দিতে। নীলা যেন চোখ রাঙ্গিয়ে বলল, খালি গায়ে দরজা খুলতে যাচেছা, কি নোংরা।
সিটকিনিতে হাত দিয়ে ফিরে এসে চেয়ারের উপর থেকে নিয়ে সার্ট গায়ে দিলাম, দরজা খোলার আগে।
দরজা খুলে অবাক হলাম। অনেক লোকের জটলা। অনেকের উদ্বিগ্ন মুখ।
কি হইছে?
দুজন মুরব্বী লোক সামনে এসে বললেন, চলেন দেখবেন।
কোথায়?
আসেন আমাদের সাথে। তাদের সাথে হেঁটে চললাম। পিছনে বিশাল একটা জটলা চলল, মৌমাছির গুঞ্জরণের মতন।
আমার বাড়ির বেশ কিছু দূরে ধানী জমি পেরিয়ে বড় সড়কের পাশে বড় একটা বিল। লোকে বলে কদমতলির বিল। একপাশে কয়েকটা কদমগাছ। বর্ষার সময়ে গাছ ভর্তি কদম ফুল থাকে।
পাড় ভেঙ্গে নিচুতে নেমে এলাম আমরা সবাই। এই হেমন্তে পানি শুকনা। কিছু কচুরিপানার দাম কালো পানির মাঝে। তার মাঝে পানিতে একটা মেয়ের শরীর ভাসছে। ফর্সা হাত আর পায়ের গোছা দেখা যাচ্ছে। পানির মধ্যে উপর হয়ে আছে মেয়েটা।
আমি রূপা বলে চিৎকার করে উঠালাম।
আমার জ্ঞান ফিরল বেশ কদিন পর হাসপাতালে। তুমুল জ্বর আর জ্ঞান হারানোর মাঝে রূপার কথা বলছিলাম, জানতে পারলাম নার্সের কাছে। গভীর আগ্রহে শ্যামলা মেয়েটি জানতে চাইল রূপা কে স্যার। আপনি কেবল তাকে ডাকছিলেন। তার সাথে কথা বলছিলেন। বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছু বলি নাই।
আরো তিনচারদিন পর বাড়ি ফিরে এলাম। গ্রামটা থমথমে হয়ে আছে। বাচ্চাগুলো পড়তে আসছে না। কাজের মানুষগুলোও না।
কারো কোন কাজে মন নেই।
এক সকালে বিলকিসের মা চা দিয়ে আমাকে উঠানে রোদে চেয়ার পেতে বসিয়ে রেখেছে। এমন সময় বাইরে পুলিশের একটা জিপ এসে থামল।
তিনজন পুলিশ ভিতরে এলেন। তারা আমার সাথে কথা বলবেন।
এ কদিন আমার কারো সাথে তেমন কোন কথা হয়নি। পুলিশ অফিসার আমার অজ্ঞান হওয়া এবং এর পিছনে কি ঘটনা জানতে চাইলেন।
অনেকদিন পর মানুষের কাছে আমি স্বজ্ঞানে, রূপার মৃত্যু নিয়ে কথা বললাম। মেয়েটাকে পানিতে দেখে রূপার কথাই আমার মনে এসেছে জানালাম। যদিও আমি রূপাকে কখনো পানিতে ডুবা অবস্থায় দেখিনি শেষ দেখা দেখেছি খাটিয়ায় শোয়া। কিন্তু রূপা পানিতে ডুবে আছে এই দৃশ্যটা আমার মনের গভীরে আঁকা হয়ে আছে। রূপা পানিতে ডুবে মারা গেছে এবং রূপার মৃত্যু নিয়ে তেমন কোন তদন্ত করা হয়নি।
আমার মনের অবস্থা খুব খারাপ ছিল আর পরিবারে এক মাত্র মা ছিল আমার। রূপার মৃত্যুর পর মা কেবল উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করেন। পুলিশ কেস এসব কে করবে। সবার ধারনা রূপার মৃত্যুটা একটা এ্যাক্সিডেন্ট এভাবেই আমরা মেনে নিয়েছি। রূপার পরিবারেও ওর ছোট তিনবোন আর বাবা মা ছাড়া কেউ ছিল না। থানা, কেইস, পুলিশ এসব কিছু নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার মতন। সবচেয়ে বড় কথা সবাই ভেবেই নিয়েছিল পুকুর ঘাটে গিয়ে পা পিছলে পানিতে বেকায়দায় পরে আর উঠতে পারেনি। তাছাড়া গ্রামে পোয়াতি মেয়ের এমন পানিতে ডুবে যাওয়ার পিছনে নানা ধরনের বিশ্বাস ছিল। একা পোয়াতি মেয়েকে পেয়ে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়ার মতন জিন, পেত্নি গাছে থাকতে পারে। পানির নিচের দেও পা ধরে টেনে ধরে রাখতে পারে। কাছেই এমন মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু না দূর্ঘটনাই বড় করে দেখা হয়েছে।
পুলিশ কেন রূপার বিষয়ে এত কথা জানতে চাইল বুঝতে পারলাম না। উনারা আমার বাড়ির ঠিকানা নিলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন প্রয়োজন পরলে আবার আসবেন বা আমাকে যাওয়ার জন্য বলবেন। আমি যেন তাদের সাথে যোগাযোগ রাখি।
তাদের না বলে কোথাও চলে না যাই। ক'দিনের অসুস্থতার পর একটু ভালো বোধ করছিলাম। পুলিশের জেরা এবং তাদের আচরণে মন বিদ্ধস্ত হয়ে গেলো, সাথে শরীরও আবার খারাপ লাগতে শুরু করল।
পুলিশ চলে যাওয়ার পরই হড়হড় করে বমি করে ফেললাম। সকালে যা খাওয়া হয়েছিল সব বেরিয়ে গেল পেট থেকে।
বিলকিসের মাকে বললাম গরম পানি দিতে। ভালো করে গোসল দিয়ে সারা দিন শুয়ে থাকলাম।
মাথা গিজগিজ করছে নানা রকম ভাবনায়। কিন্তু কিছু লেজ মাথা ধরতে পারছি না এত রকম ভাবনার। রূপা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি মানসিক ভাবে অনেক দূর্বল হয়ে গেছি। এমনিতেও আমি খুব সাধারন হয়ে থাকতে চাই। সে ভাবেই কাটিয়ে দিয়েছি নিজের মতন একা একা।
এখন মানুষের সাথে কিছু কাজে সম্পৃক্ত হয়ে গেছি তাতে আমি কোন প্রকার ঝামেলা রাখি নাই। খুব যত্ন করে মানুষের কিছু উপকার করার চেষ্টা করছি। আসলে কি ভাবে যেন এই বিষয়গুলো আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে কোন ঝুট ঝামেলা নাই। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে এই মেয়েটার মৃত্যু কি ভাবে যেন আমাকে জড়িয়ে ফেলেছে। আমাকে বড় রকমের একটা ঝামেলায় ফেলে দিবে।
প্রায় দশদিন কেটে গেছে। এর মধ্যে পুলিশ আর যোগাযোগ করে নাই। আমি এ কদিন ঘরেই কাটাচ্ছি। কোন কাজে উৎসাহ পাচ্ছি না।
মেয়েটার নাম মিনু। খুব হাসি খুশি ফূর্তিবাজ মেয়ে ছিল। সবার সাথে ভাব ছিল। আগ বাড়িয়ে সবাইকে ডেকে কথা বলত। ফর্সা সুন্দর গোলগাল মেয়েটা হাসি আনন্দে মাতিয়ে রাখত সবসময়।পড়ালেখায় আগ্রহী ছিল। মেয়েটার বাবা এবং মা দুজনেই আমার এখানে কাজ করে। মিনুর মৃত্যুর পর থেকে আমার বাড়ির কাজকাম কিছু হচ্ছে না। আমি নিজেও সেরে উঠছি না। কেবল দূর্বল লাগে।
কামলারা আসছে, যাচ্ছে নিজের মতন কাজ করছে। আমি কিছু তদারকি করতে পারছি না। ভালোলাগছে না আমার। আনন্দময় ভুবনটায় কেবল সাজিয়ে বসছিলাম। সব যেন তছনছ হয়ে গেল কোন কালো থাবার আঘাতে।
চলবে.......

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৪৬

শেহজাদী১৯ বলেছেন: পড়ছি...

২| ০২ রা মে, ২০২১ রাত ১২:২১

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ শেহজাদী১৯

৩| ০২ রা মে, ২০২১ সকাল ৮:৪৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

ভাল লিখেছেন ।
পরে এসে আরো ভাল করে দেখব ।
শুভেচ।ছা রইল

০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ।
সময় করে আসবেন

শুভেচ্ছা রইল

৪| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর ঝরঝরে লেখা।

০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১:৪১

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.