নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্ব: চার
আমার কিছু ভালোলাগে না আর। নীলার সাথে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর আমার আর ঢাকায় থাকতে ইচ্ছে হলো না। চাকরি ছেড়ে দিয়ে সব টাকা পয়সা উঠয়ে। বাড়ি বিক্রি করে গ্রামে চলে এলাম। বিদেশে চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদেশে যাওয়াটা সোজা না। নানারকম বিজ্ঞাপনের চমক দেয়া ল ফার্মের পিছনে বেশ কিছু টাকা পয়সা খরচ হয়ে গেল। এরপর বিদেশের ভুত ঝেড়ে ফেলে গ্রামে চলে এসেছি।
ছোট একটা বাংলো টাইপের বাড়ি বানিয়েছি, বেশ খোলামেলা জায়গা আছে। ফল, সবজি ফুলের আবাদ করছি, বেশ কেটে যায় সময় এদের দেখ ভাল করে। এখান থেকে আয় করে।
জমিতে কাজের কিছু মানুষ তাদের বাচ্চা নিয়ে আসে। সারাদিন বাচ্চা গুলো দৌড় ঝাপ আর খেলাধূলায় সময় কাটায়। একদিন ওদের ডেকে বড় আমগাছের নিচে পড়তে বসালাম। আট দশটা বাচ্চা সেই থেকে সকাল বিকাল আমার কাছে পড়তে আসে। গল্প শুনতে আসে।
ওরা কি বুঝে না বুঝে জানি না। আমি ওদের বিদেশি গল্পের বই থেকে গল্প পড়ে শোনাই। এক এক জনের আগ্রহ একএক দিকে। কিছুদিন পরে আবিষ্কার করলাম, ওরা আমাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে। ওদের জানতে চাওয়ার ইচ্ছা অনেক। ওদের সাথে আরো কিছু শিশু যোগ দিয়েছে। বাচ্চাদের সংখ্যা আপনা আপনি বেড়ে গেছে। মা বাপগুলো আমার মাঠে কাজ করার জন্য ধর্ণা দিতে লাগল। আমার মাঠে কাজ করলে, হিসাব নিকাশ নিয়ে ঝামেলা নাই। বাচ্চা রাখা নিয়েও সমস্যা নাই। উপরন্ত বাচ্চারা লেখা পড়া শিখছে। খাবার দাবারও পাচ্ছে। আমি একজন মানুষ কিন্তু বাড়িতে পাত পরে প্রায় পঞ্চাশজনের প্রতিদিন। এতে আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।
বিলকিসের মা মহিলাটাই প্রথম যখন আসলাম এখানে, আমার দেখ ভাল করতে আসল। বয়স্ক মহিলা খুব যত্ন করে ঘরদোর পরিচ্ছন্ন থেকে রান্না খাওয়ার জোগার দিতেন। একা সারাক্ষন বই পড়তাম আর চুপচাপ বসে আকাশ গাছপালা দেখে কেটে যেত সময়।
আস্তে আস্তে আমি বাগান মাঠে কাজ বাড়াতে লাগলাম। বিলকিসের মা আমাকে নানা মানুষের খবর দিত। সাথে করে যাকে নিয়ে আসত তাকেই কাজে নিয়ে নিতাম।
ফুলতলি গ্রামে আমার কোন পরিচিত মানুষ নেই। আমার গ্রাম সোমেস্বরি, এখান থেকে কয়েকটি গ্রাম দূরে। এখানে বাড়ি বানানোর সময় মাকসুদের দূর সম্পর্কের এক খালার বাসায় উঠেছিলাম। যেহেতু থাকার মতন আর কোন ব্যবস্থা ছিল না গ্রামে। বাধ্য হয়েই তাদের বাড়িতে কিছু দিন থাকতে হয়েছিল। সকালে উঠেই বাড়ি বানানোর তাদারকি দেখতে চলে যেতাম। ফিরতে সন্ধ্যা হতো। খেয়ে একবারে ঘরে ঢুকে যেতাম। কাজটা যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে, ওদের বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়িতে উঠে যেতে পারব।
ওদের কোন ঝামেলা ছিল না। ছেলে মেয়ে পাঁচজন শহরে এবং দেশের বাইরে থাকে। বিরাট বাড়ি খালি পরে থাকে। বুড়াবুড়ি দুজন কামলাদের নিয়ে আছেন। মাঝে মাঝে নানা আত্মীয় স্বজন আসেন। খুব যত্ন করেন সবাইকে। আমি যদি বছর ধরে থাকি তা হলেও তাদের কোন অসুবিধা হবে না। বরং একজন মানুষ আছে এতেই ওরা খুব খুশি। কিন্তু আমি এতদিন আছি ওদের উপর খাচ্ছি দাচ্ছি, কোন টাকা পয়সা দিতে পারছি না। বিনা মূল্যে এভাবে থাকতে আমার খুব খারাপ লাগছিল।
পাঁচ মাসের মধ্যে নিজের বাড়িতে উঠে এলাম।
তখনই বিলকিসের মাকে, মাকসুদের খালা ঠিক করে দেন আমার কাজকাম করার জন্য।
সেই থেকে চলছে। বছরখানেক পরে হঠাৎ একটি যুবতি মেয়ে নিয়ে হাজির হয়, পরিচয় করিয়ে দিল বিলকিসের মা। এইডা আমার মাইয়া বিলকিস বাবা। যে বিলকিসের নাম ধরে ডাকেন আমারে, হেই বিলকিস।
ও আচ্ছা ভালো, কই থাকে বিলকিস?
প্রশ্ন শুনেই বিলকিসের মা, কান্না শুরু করল। পুড়া কপাল বাবা। আছিল জামাইর বাড়ি। বিয়া হইছে গত ফালগুন মাসে। ভালোই আছিল।এখন চইলা আইছে জামাই বুলে আরেকখান বিয়া কইরা বউ লইয়া আইছে । পরতিবাদ করছিল । হেজন্য মাইরা রাখে নাই। তালাক দিয়া বাইর কইরা দিছে।
মাইয়া ওখন আমার ঘাড়ো আইয়া পরছে।
মাঝে মধ্যে মায়ের সাথে বিলকিসও কাজে আসে। কখনো দেখি আমার নাস্তা চা দেয়া, ঘর গোছানো বিলকিস করে।
বেশ কয়েক মাস পরে বিলকিস বেশ অপলক নয়নে দেখি আমার দিখে তাকিয়ে থাকে। ওর মাকে ডেকে বলে দিলাম, বিলকিস যেন আমার ঘরে না আসে। আপনি কাজ করতে না পারলে অন্য মানুষ রাখব। এই কথার পর বিলকিসরে আর দেখি নাই। বিলকিসের মাও আগের মতনই কাজ করতে লাগল। বিলকিসের মার নিজের মেয়ে ছাড়া আর সবাইকে কাজে রাখলাম কিন্তু ওরে কাজে রাখতে পারলাম না।
কয়েক মাস পরে শুনলাম বিলকিসের বিয়া হইছে। ঢাকা চলে গেছে, জামাইর সাথে।
রূপা আর নীলা দুই নারীর দ্বন্ধে জীবনটা দুই রকম টানাপুড়েনে পুড়ছিল।
রূপার সাথে হৃদয় মেলে মিশে যাওয়া আর নীলার ভালোবাসায় সায় দিয়ে নিজেকে ভুলে যাওয়ার মতন একটা অবস্থায় নীলার সাথে মানিয়েও নেয়ার চেষ্ট করছিলাম, ওর মতন করে।
কিন্তু অদ্ভুত এক বৃষ্টিমুখর রাতে অনেক দিন পরে রূপা কোথা থেকে হানা দিল জীবনে। জ্যান্ত নীলা আর আমার মাঝে মৃত রূপা বিশাল এক ভুমিকা রাখল। যে রূপাকে ভুলিয়ে দিয়ে আমার দুঃখ মুছে দিতে চাইছিল নীলা। রূপা এসে সব তছনছ করে দিল।
রূপার মৃত্যুর পর মা যেন কেমন হয়ে গিয়েছিল। একটু পাগলাটে স্বভাব হয়ে ছিল মায়ের। মা অনেক কথা বলত যার অর্থ হয় না। আবার অনেক অকারণ ঘটনা নিয়ে খুব হৈ চৈ করত। নীলার সাথে মায়ের দেখাই হয়নি। মাকে ঢাকা নিয়ে আসতে চাইলাম, মা আসতে চাইল না। নীলাও কোন আগ্রহ দেখাল না কখনও গ্রামে গিয়ে মাযের সাথে দেখ করার। নীলাকে গ্রামে নিয়ে যাব এমন ভাবনা ভাবতেও আমার ভয় করত। ওকে গ্রামে যাওয়ার কথা বলাই যাবে না। নিজে যদি কখনও আমার মা এবং গ্রাম দেখতে চায় তাহলেই হয় তো নীলাকে নিয়ে গ্রামে যাওয়া যাবে। কিন্তু অপেক্ষার পালা বেশি লম্বা হলো না।
নীলার সাথে বিয়ের বছর দুই পরে মা মারা যায়। বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা তখন থেকে আর হয় না। এমনিতেও বাড়িতে গেলে রূপার কথা বেশি মনে হয় তাই আমি বাড়িতে খুব একটা যেতাম না।
নিপু ভাই রাগে জ্বলতে জ্বলতে পারলে আমাকে কাবাব বানিয়ে খেয়ে ফেলত। ওর বোনের অমর্যাদা করেছি আমার এতো সাহস। হেন করেঙ্গা, তেন করেঙ্গা করে অস্থির হয়ে উঠল। আদরের বোনের চোখের পানি কিছুতেই তিনি সহ্য করতে পারেন না।
মিস্টার এণ্ড মিসেস চৌধুরি নীলার বাবা মা, ছেলেকে মানিয়ে নীলাকে আমার কাছে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কথা ভাইবোন কেউ পাত্তা দিল না। নীলা তখন ভাইয়ের প্রভাবে আমার উপর অনেক বেশি রাগে জ্বলছে। আর ভাই জেদে অস্থির হয়ে। আমার সাথে বোনের সম্পর্ক ছেদ করানোর জন্য সব কাজের পিছনে,দ্রুত দৌড়াতে লাগলেন।
নীলার অভাবের চেয়ে নীলার জন্য আমার বেশি কষ্ট হচ্ছিল। মেয়েটা ভাইয়ের আশকারা পেয়ে এমন স্পয়েল্ড হয়েছে, ভালো মন্দ অনেক কিছু বুঝতে পারে না। জেদ করে উন্মাদ হয়ে যায়। বাবা মা এই বিষয়টা বুঝেছিলেন বলে, আমার সাথে বিয়েটা না ভাঙ্গে তাই চাইছিলেন। কিন্তু ভাইবোনের জেদের কাছে তাদের কিছু করার সুযোগ ছিল না।
আমি ওর সব আবদার মেনে ওকে মর্যাদা দিয়েই চলছিলাম সচেতন ভাবে। কিন্তু মনের অজান্তে জ্বরের ঘোরে আমি যদি রূপার কথা দুচারটা বলে ফেলেছি সেইটকু, ও ক্ষমা করতে পারল না। আমাকে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও একবার দিল না। শাশুড়ি আম্মাজান আমাকে বলেছেন, ছেলেটার কাছে না গেলে নীলাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তারা পাঠাতে পারতেন। কিন্তু ভাইয়ের দূর্গে রূপা অপ্রতিরোধ্য। তাদের কোন কথা নীলার কানে পৌঁছানোর মতন অবস্থাও তাদের নাই।
আমার কিছুই করার ছিল না। যেমন বিয়ের সময় নিজের অনিচ্ছায় দ্রুত সব ঘটে গিয়েছিল। বিচ্ছেদও তেমনি হয়ে গেল ওদের আয়োজনে। জীবনের অনেকটা সময় একটা পুতুলের মতন সময় অতিবাহিত করলাম। অন্য কিছু মানুষের ইচ্ছা পুতুল হয়ে। তার প্রভাবে আবার জীবন ধ্বসে পরার মতন হলো। কিন্তু সব ছেড়ে গ্রামে এসে এই বাচ্চাদের সাথে মিশে বেশ কেটে যাচ্ছে।
চলবে........
৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:৪৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: পড়তে ইচ্ছা হলে অল্প করেই পড়ে ফেলবেন। আপনার সুবিধা মতন।
শুভেচ্ছা থাকল।
২| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৫৩
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ভাল লাগল গল্প পাঠে ।
নীলা কি লোকটাকে সত্যিই ভালবেসেছিল ,
নাকি পতিকে তাঁর জবর দখলে রাখতে চেয়েছিল ।
ভালবাসা কাকে বলে তাকি নীলা বুঝে না অন্যের
প্রভাবে তার ভালবাসার পারদ উঠানামা করে ।
দেখা যাক বিরহীর ভালবাসা কোন দিকে
মোর নেয় ।
পরের পর্ব পাঠের অপেক্ষায় থাকলাম ।
শুভেচ্ছা রইল
৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৫:৪৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: আপনার মনে নীলার মনস্তত্ব খেলা করুক।
খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করুন।
আমি আসছি পরের পর্ব নিয়ে।
সাথে থাকবেন।
শুভেচ্ছা
৪| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১:৫৭
রাজীব নুর বলেছেন: যত পড়ছি। ততই ভালো লাগছে।
০৮ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:০১
রোকসানা লেইস বলেছেন: তাই জেনে আনন্দিত হলাম।
শুভেচ্ছা রাজীব নুর
৫| ১৮ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:২৯
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগলো গল্প। ধন্যবাদ আপি
৬| ১৮ ই মে, ২০২১ রাত ১০:৩৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ভালোলাগল আমারও জেনে। একজন পাঠক সময় করে ফিরে আসছেন গল্প পাঠে। এটা খুব আনন্দের বিষয়।
শুভেচ্ছা কাজী ফাতেমা ছবি
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৪৭
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: একটু ছোট করে লেখেন তাহলে পড়া যায় এতো বড় পড়ার সময় কোথায় বলুন?