নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনযাত্রার কিছু কথা: পর্ব দুই

০২ রা নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫৯



সকাল নটা নাগাদ উঠে নাস্তা করে তৈরি আমরা । সকালটা মেঘলা। গতকালকের মতন রোদ ঝলমল না। সাড়ে দশটার দিকে বেরুনো হলো দুই জায়গায় ঘোরার পরিকল্পনা নিয়ে। ড্রাইভার আমাদের পথ চিনিয়ে গাইড করে নিয়ে যাচ্ছে। পথে পথে থামিয়ে ছবি তোলারও সুযোগ দিচ্ছে। বিভিন্ন নদী, গ্রামের নাম জানতে জানতে বর্তমান আর অতীতের গল্প শুনতে শুনতে ফাঁকা রাস্তায় বেশ ভালোই হলো পথ চলা। তবে কিছু জায়গা ছিল রাস্তা ভয়ানক রকম খারাপ। কখনো রাস্তার উপর গরু, হাঁস মোরগ। রিকসা, সিএনজি আর ট্রাকের কারনে স্মুথ পথ চলাটা হয়নি। গাড়ি চলছে কিন্তু গাড়ি দ্রুত যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
সিলেটের আবহাওয়া ঢাকার চেয়ে আরামদায়ক। গরম আছে তবে ঢাকায় যেমন গা জ্বালানো, দম বন্ধকরা গরম তেমনটা নেই। কিছুটা খোলামেলা পরিবেশের কারণে স্বস্থিদায়ক হাওয়া খেলতে পারে।
চা বাগানে, অনেকবার যাওয়া হলেও আবারও থামলাম। চা বাগানের ভিতরে ঢুকে সবুজের মায়ায় খানিক সময় হারাতে মন্দ লাগল না। এক সময় চা বাগানের ছায়া গাছ থেকে ওর্কিড সংগ্রহ করা আমার নেশা ছিল । পনের সালেও দুটো ওর্কিড সংগ্রহ করে নিয়ে বাড়ির বকুলগাছে তাদের আবাস করে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত বেশ বেঁচে বর্তে আছে তারা। একটাতে ফুল ধরেনি কিন্তু অন্যটা বেশ ফুলে ফুলে সেজে মুগ্ধ করে বাড়ির মানুষদের।
চা বাগানে চা পাতার মাঝে উঁচু নিচু পাহাড়ি ঢালের বাঁকে ঘুরে সবুজের মায়া চোখে মেখে আবার পথে।
পথের মাঝে হঠাৎ এক জায়গায় ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে বলে পাশের এই গাছে দেখেন কত পাখি। সত্যি একটা গাছ যেন পাখিদের অভয়ারণ্য হয়ে হাছে হঠাৎ করে ছন্নছাড়া ভাবে। গাছের উপর পাখি বসা। অনেক পাখি নানা রকমের পাখি। নানা রঙের পাখি। ঠিক কি কারণে এই একটা গাছে এত পাখি থাকে তা জানা গেল না। বাড়ির সামনে একটি রেইনট্রি জাতিও গাছে প্রচুর পাখি বসে আছে। রাস্তার উপর থেকে কিছু ছবি তুলে নিলাম। তবে বড় লেণ্সের অভাব অনুভব করলাম। পাখিদের কাছে এনে ছবি তুলতে পারলাম না।
চা বাগান, গাছের উপর পাখির বাসা দেখে অনেক নদী রাস্তা পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম বর্ডার এলাকায় ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের দেশে।
দূরে সবুজ নীল পাহাড়ের সারী। নদীর ওপাড়ে। ভাঁজে ভাঁজে পাহাড় তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে আর আমরা ওদের দিকে। এই পাহাড়টা আমাদের থাকতে পারত। কিন্তু না ভাগ করা হয়েছে বৃটিশদের ইচ্ছা মতন। আসাম পুরোটা সিলেটে থাকলে আমাদের অন্তত অনেক পাহাড় ঝর্ণা বৈচিত্রময় গাছ লতা, প্রাণী এবং প্রকৃতিক খনিজ সম্পদ নিজস্ব হতো। কিন্তু চারপাশে ঘেরা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে হয়েছে বাংলাদেশের আর বাকিটা ইণ্ডিয়ার। এই ভাগ করে গেছে দুশো বছর আগে ব্রিটিশ । যখনই মনে হয় তখনই রাগ হয় ভীষণ।
গড়িয়ে আসা প্রাকৃতিক সম্পদ, পাথর বালি যার উপর ভাগ বসাতে পারে না ইণ্ডিয়া তাই দিয়ে সিলেট বিভাগ সমৃদ্ধ। অথচ গোটা পাহাড়ই বাংলাদেশের হতে পারত, যদি সঠিক ভাগ করা হতো। এখন জলের ঢলে ভেসে যায় ফসল নিজের কাছে নিয়ন্ত্রণ নেই বলে। বৃটিশরা ভাগ করে দিয়ে গেছে আমাদের সেই ফল ভোগ করতে হচ্ছে।
সিলেট বিভাগ ঘিরে এমন ইণ্ডিয়ার বর্ডার অনেক জায়গা জুড়ে। যেখানে সমতল ভূমি থেকে বাংলাদেশ পাশেই উঁচু পাহাড় অন্যদেশের সীমান্তে। নারায়নতলা নামের একটা বর্ডারের কাছে এক সময় তেমন পাহারা ছিল না। দুটো একটা পোষ্ট দেখা যায় কি যায় না; যাতে সীমান্তর রেখা লেখা আছে। কতবার সে সব পার হয়ে বেশ অন্যপাশের দেশে গিয়ে হেঁটে এসেছি। মনেই হয়নি অন্যদেশ। একই মাঠ, ঘাস, ধান ক্ষেত, কলাগাছ, বাঁশঝাড়। "তাহার দুটি পালন-করা ভেড়া. চরে বেড়ায় মোদের বটমূলে,. যদি ভাঙে আমার ক্ষেতের বেড়া. কোলের 'পরে নিই তাহারে তুলে।" তেমন পার্থক্য মনে হতো না। বেশ ভিতরে ঢুকে পরলে বড়রা ডাকতেন চলে এসো, আর যায় না।
অথচ পার্থক্য হয়েছে অনেক। পালন করা গরু চড়াতে গিয়ে গুলি বিদ্ধ হয়ে কাঁটা তারেও লটকে থাকতে হচ্ছে। অসাবধানে দাগের অন্যপাশে পা পরলে জান চলে যাওয়ার আশংকা মনে থেকে যায়। কতজনার জান চলে গেছে অসাবধানে।

আমাদের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে পাহাড়কে সামনে রেখে। চোখ জুড়ানো দৃশ্য সামনে। নীল পাহাড়ের সারি। গাড়ির চলার সাথে বদলে যাচ্ছে পাহাড়ের চালচলনও। মেঘলা আকাশ এখানে হাসতে শুরু করেছে। বেশ রোদের আলো পড়ছে । মেঘরা্ও উড়ছে।

অনেক ইণ্ডিয়ান ট্রাক থেমে আছে এক পাশে । সেখানেই রাস্তা শেষ। ডানে বেঁকে খোলা মাঠ মতন জায়গায় গাড়ি ঢুকে গেল। ওখানে গাড়ি পার্ক করে আমরা চললাম ভিতরে। ছোট বাজার গড়ে উঠেছে পর্যটকদের আসা যাওয়া কেন্দ্র করে। বেশ লাগল ভাত, চা খাওয়ার রেস্টুরেন্টের পাশে কাপড় এবং সৌখিন জিনিসের ছোট ছোট দোকান কয়েক সারি। তার ভিতর দিয়ে হেঁটে টুকটাক জিনিস পত্র দেখে পাড় বেয়ে নিচে নেমে এলাম আমরা। পাথরবহণ করার ভাঙ্গা নৌকার স্তুপ দেখলাম। সেখান থেকে নদীর ওপর পাড়ে পাহাড়ের ভাঁজটা খুব চমৎকার দেখা যাচ্ছে। তার ভিতরে ঢুকে ছবি উঠাতে গেলাম। ছোট একটা নোটিশ লেখা আছে ভিতরে প্রবেশ করবেন না। ভিতরে সীমান্ত রক্ষিরা আছে দেখলাম। ভালো এ্যাঙ্গেলে ছবি তোলার জায়গাটা তারা আটকে রেখেছে।
সারি সারি নৌকা নদীতে। ভাড়া ঠিক করে প্রথম যে জন লাইনে আছে সেই নৌকাতে চড়ে বসলাম। ইচ্ছে ছিল পাশের নৌকাটি নেয়ার বেশ ময়ূর পঙ্খীওলা নৌকা ছিল সেটা। কিন্তা সেটা নেয়া গেল না সিরিয়াল নাই বলে।
বাজার থেকে নৌকা নিয়ে আমরা চলে গেলাম আরো ভিতরে। নদী যেখানে স্রোতের সাথে স্বচ্ছতা নিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ঝর্ণার জল বয়ে যে নদী বয়ে যাচ্ছে যেখানে নদীর ভিতর বড় বড় পাথরের স্তুপ। স্বচ্ছ জলের ধারা। চারপাশে, না তিনপাশে সবুজ পাহাড়ের আচ্ছাদন।একপাশ সমতল গ্রাম। মিনিট দশ পনের ইঞ্জিন নৌকায় চলে আমরা পৌঁছালাম।
নৌকা থেকে নেমেই বোন ছুটে চলে গেল জলের ভিতর। তার সাথে সাথে মেয়েও। আমি খানিক ঘোরা ফেরা করলাম পাড়ে। কিছু ছবি তুললাম। ভাবছি ওরা পানির ভিতর ঝাপাঝাপি করছে, আমি কি করি। কিন্তু পানি থাকবে আর আমি ভিজব না তা কি হয়। এক পা দুপা করে গভীর জলের ভিতর নেমে গেলাম। নদীতে জল খুব বেশি নেই। মাঝ নদীতে আমার গলা পানি। হেঁটেই পার হওয়া যায়। তবে পাথরের উপর হাঁটা একটু কষ্ট সাধ্য। উল্টাপাল্টা পা পাথরের মাঝে পরলে ব্যাথা পাওয়ার সম্ভাবনা। আবার সাঁতার কাটার মতন বেশি পানি কেবল মাঝ নদীতেই আছে। প্রচুর সাঁতার কাটলাম অনেক দিন প্রায় বছরখানেক পরে। সবুজের ঘেরা পাহাড়ের এই দারুণ উত্তাপের জল কত যে আকর্ষণীয় সেটা যারা ঠাণ্ডা জলের কাছে থাকে, তারা জানে। উষ্ণ জলের ছোঁয়া পেতে কতদূর চলে যাই আমরা বিদেশে, আবার সারা বছর জুড়েও পাই না সে সুযোগ উষ্ণ খোলা জলে ঝাঁপাঝাপি করার। হট ওয়ারটা বা স্প্রিং ওয়াটার জলের আঁধার গুলো খুব প্রিয় বিদেশি মানুষদের। তা ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র মোটেল, হোটেল, রিসোর্ট করা হয়।
ঘণ্টা দুই পানির সাথে কাটিয়ে উঠলাম। বাচ্চাটা পানিতে নেমে বসে আছে অথচ ও নাকি সাঁতার পারে না। ওকে সাঁতার শিখানোর চেষ্টা করলাম তাই নিয়ে হৈ চৈই জল ছিটানো হলো বেশ।
এ্ই সময় ঘোড়া নিয়ে একজন হাজির। মেয়ে যেয়ে ঘোড়ার উপর চড়ে বসল। ঘোড়ার মালিক বেশ পরিচালকের ভূমিকায় অবতির্ণ হয়ে তাকে নানা ভঙ্গীতে ছবি তোলার কায়দা কানুন শিখাতে লাগল। কিন্তু ঘোড়া দেখি নড়ে চড়ে না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।
আমরা পানি থেকে উঠলে ঘোড়ার মালিক জানাল কাপড় বদলের জায়গা আছে। এখানেও কয়েকটা দোকান আছে। তার পিছন দিয়ে খানিকা ফাঁকা জায়ায় পাকা একটা ঘর। ঘোড়ার দড়ি টেনে নিয়ে তাকে হাঁটিয়ে ঐ পর্যন্ত আনা হলো। মেয়ে বেশ আরামে ঘেড়ায় চড়ে। চেঞ্জিং রুম পর্যন্ত আসল। বেশ পরিচ্ছন্ন্ ঝকঝকে একটি শাওয়ার রুম। আধুনিক ফিটিংস দেয়া পানিও আছে বেশ আনন্দ হলো দেখে। বেশ একটা গোসল দেয়া গেল। চেঞ্জ করে বেরিয়ে দেখি ফাঁকা জায়গায় বেশ লাইন পরে গেছে।
কোন আঞ্চলিক নাচ বা গানের দল মনে হয় অনুষ্ঠান রের্কোডিং করতে এসেছে। অথবা ব্যাক্তিগতও বেড়ানোর দল ও হতে পারে। তবে তাদের সাজগোছের বাহারে মনে হচ্ছিল তারা অনুষ্ঠান করতে এসেছে। আমরা আগে এসেছিলাম বলে ওদের আগে তিনজনই যেতে পারলাম।
আমরা বেরিয়ে আসতে আসতে দেখলাম আরো কিছু মানুষ লাইনে চলে এসেছে।
এতক্ষণের নির্জন শান্তি ভটভট ইঞ্জিনের শব্দ নষ্ট করছিল। কিন্তু তাতে চড়েই ফিরতে হলো। পাড়ে উঠেই বোন দেখি সরাসরি একটা ভাতের রেস্টুরেন্টে যেয়ে ঢুকল। খাওয়ার ওর্ডার দিয়ে বলে আমার খুব খিদা লেগেছে এখন আরাম করে খাবো।

আমি বাইরে কিছু খাই না, খিদাও লাগেনি আমার। বললাম তোরা খা আমি খাব না। কিন্তু নিজেরা খাচ্ছে সাথে আমাকে একটু খাও কিচ্ছ হবে না বলে খুব সাধাসাধি। অনেক মজার খাবার।
অনেকদিন যা করি না আগে তো কতই রাস্তা ঘাটে খাবার খেয়েছি। কিন্তু অনেক দিন এ সব খাবার শরীর সহ্য করতে পারে না। গরম ভাত আর ভর্তা ভাজি শুটকি, হাঁসের মাংস আর ডাল দিয়ে খেয়েই ফেললাম এক প্লেট ভাত, যদিও জানি নদীর পানিতে রান্না করা তবে শরীরে বৈরি কোন ভাব দেখায়নি খাবারের পর।
প্রথম থেকে মাস্ক পরে থাকলেও এই সময় থেকে আমরা মাস্ক পরা বাদ দিয়ে স্বস্থিতেই ঘুরছিলাম। মনে হলো করোনা নামের কেউ এখানে আসেনি।জায়গাটা তার ছায়ার বাইরে আছে। সব স্থানীয় মানুষ মাস্ক ছাড়া র্নিবিগ্নে চলাচল করছে। শুধু আমাদের মতন পর্যটকরা মাস্ক পরে আছে এখানে। কিছু সময়ের জন্য যেন আমরা ভুলে গেলাম করোনা আতংক।
খাওয়া সেরে আমরা রওনা হলাম রাতারগুলের উদ্দেশ্যে।
রাতারগুল যেতে লাগল প্রায় এক ঘন্টা। শ্যামল প্রকৃতির গ্রামগুলো সাজানো রাস্তার পাশে। চোখের সামনে। রাতারগুল পৌঁছে নৌকা ভাড়া করে আবার শুরু হলো আমাদের নৌকা যাত্রা। এবারের নৌকা বৈঠার নৌকা। শান্ত ধীর জলের সাথে বৈঠার ছলাত ছলাত শব্দ।
মাঝির বয়স পনের ষোল হবে। তবে বেশ দক্ষতার সাথে ও আমাদের নিয়ে চলেছে। সোয়াম্প ফরেস্টের যে গাছগুলো কোমর ডুবিয়ে পানির উপর দারুণ বৈচিত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার ভিতর দিয়ে। কখনো জলের বিস্তার নদীর মতন কখনো খালের মতন চিকন। গাছগুলো এঁকে বেঁকে ডালপালা মেলে চলে এসেছে নৌকা চলার পথের উপর।
গাছে গাছে নানা বর্ণের পাখি। বানর নিজেদের মধ্যে মত্ত।পাখিরা গান গাইছে কেউ চুপচাপ বসে আছে। কেউ আবার লাফঝাপ দিচ্ছে। গাছে প্যাঁচিয়ে বা নদীর জলে সাপও থাকতে পারে জানাল মাঝি।
মেঘলা বৃষ্টি শেষে রোদের আলোর চমক ছিল তখন । বিকালের রঙ হয়ে উঠেছিল বড় মায়াময়।
নয়শ একর জায়গা বর্ষার জলে ডুবে থাকে। সেই পানির ভিতর ডুবে থাকা গাছ অন্য রকম এক প্রকৃতির সৃষ্টি করে শরৎ হেমন্ত পর্যন্ত তারপর পানি শুকিয়ে মাঠ হয়ে যায়। এই পানির সময়টাই উপভোগ্য। তার উপর ভিত্তি করে বেশ কিছু মানুষ ভ্রমনকারীর উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করছে।
আমাদের মাঝির নাম আতিক। এক জায়গা দিয়ে পার হচ্ছি তখন পাশ থেকে কেউ একজন ডাকছিল এই আতিক্যা আতিক্যারে মাছ নিবিনি। সে মাছ ধরছে। বৈঠা নিয়ে আমিও খানিক নৌকা বাইলাম । আতিকের সাাথে চুক্তি হলো ও আমাকে নৌতা বাওয়ায় সাহায্য করার জন্য আধা টাকা, দিয়ে দিবে। ও বলল না পুরাটাই আপনি নিয়েন। এই সব কথা বার্তা মজার মাঝে আতিককে জিজ্ঞেস করা হলো গান গায় নাকি। সে প্রথমে একটু না ভাব দেখিয়ে। তারপর বেশ ভালোই গান গাইল। পুরো একটা গান জুড়ে বিভিন্ন দেশে আত্মিয় স্বজন আছে দেখিয়ে,ডলার , পাউন্ড, রিয়েল, আইফোন, হানিমুনে নিয়ে যাওয়ার যত রকম সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়ের মন জয় করার চিন্তা। ও ফুরি কউ আমারে ভালা ফাওনি গানটা গাইল। গানটা আবার আমার বোন রেকর্ড করে ইউটিউবে দিয়ে রেখেছে।
এক জায়গায় নৌকার উপর বাজার, দোকান। সেখানে গিয়ে ডাব কিনে খাওয়া হলো। চা বিক্রি হচ্ছে। পাশে টা্ওয়ার। সেখান থেকে ডাকাডাকি চলছে ছবি তুলে দিবে টাওয়ারে উঠার বা নৌকায়। ডাব খাওয়া শেষ করে রওনা হয়ে দেখলাম বেশ অনেক গুলো নৌকা আসছে আমাদের পিছু পিছু। সারা সময়ই জায়গাটা ব্যস্ত থাকে বোঝা গেল।
বেশ কিছুদিন ঢাকার হৈ চৈ রাস্তার কোলাহল পলিউশনের মধ্যে থেকে শান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশে গিয়ে একদিনেই যেন অনেক প্রশান্তি পেলাম শরীর মনে।
আমার পথ চলার পথে যোগাযোগ হচ্ছিল আমাদের ব্লগের বন্ধু সুরঞ্জনা মায়ার সাথে। ও সিলেট থাকে জানি। আমন্ত্রণ করে রেখেছিল ওর সাথে দেখা করার। কিন্তু আরো একবার আমি যখন সিলেট গেলাম তখন ও ঢাকা ছিল বলে যোগাযোগ হয়নি। এবার অনেকদিন আমি ঢাকায় তখন ও সিলেটে। তাই ঐ একদিনে ওর সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ হবে কিনা জানতে চাইলাম। ও জানাল চলে এসো। আমি জানালাম ঘুরছি। শেষ হলে আসব। সন্ধ্যা নাগাদ আমরা ফিরে এলাম ঘুরে ঘাটে। গাড়ি চলছে আবার গ্রামের মাঝ দিয়ে । এক পসলা বৃষ্টি হয়ে গেল। সবুজ ধানক্ষেতের ছবি তুলছিলাম হঠাৎ দেখি ছবির মাঝে রঙধনু লেগে আছে। তখন খুঁজে পেলাম আকাশ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে দুটো রঙধনু ।
প্রকৃতির সঙ্গ ছেড়ে এবার ছুটলাম বন্ধুর সাথে দেখা করতে সন্ধ্যার আলো আঁধারি সঙ্গে করে। ঘন্টাখানেক সময় পরে সুরঞ্জনার বাড়িতে পৌঁছাতেই মায়ার, মায়ায় জড়িয়ে পরলাম। বেল বাজাতেই দরজা খুলে, দুটো মেয়ে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেল । প্রতিক্ষায় বসেছিল সবাই বোঝা গেল। মায়া বেরিয়ে এলো মায়া মমতা নিয়ে। মনেই হলো না কখনো আমাদের আগে দেখা হয়নি। যেন কত যুগের পরিচয় আমাদের। আমাদের কথার ঝাঁপি কত রকমের কথা নিয়ে এক সাথে জেগে উঠেছে। এক গল্প থেকে ছুটে যাচিছ অন্য গল্পে। পরিচয় হলো ওর মেয়ে আর নাতনীর সাথে।
এর মাঝে ও টেনে নিল আমাদের খাওয়ার টেবিলে। ও তো স্পেশালিস্ট রান্নায়। সুরঞ্জনার উন্দাল থেকে পাক করা রান্না না খেয়ে উপায় আছে। ঝাল ঝাল কাবাব আর মচমচে পরটা দিয়ে রাতের খাবারই শেষ করে ফেললাম। আরো খানিক কথায় গল্পে মুগ্ধতায় থেকে আমাদের কথার ঝাঁপির কথা না ফুরালেও উঠে পরতে হলো। ছোটগল্পের মতনই অতৃপ্তি নিয়ে চলে আসতে হলো। আবারো কখনো পুরো কথা হবে এই আশা নিয়ে। আমাদের আবার বেরিয়ে পরতে হবে বাড়ির পথে ।
আমরা যে এত কিছু ঘুরে এলাম সে সব তোয়াক্কা না করে মায়া আমাদের জড়িয়ে হাগ করল। মন ভালো করা অনুভুতি নিয়ে ফিরলাম।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভ্রমণে মন সতেজ হয় যান্ত্রিকতা দুর হয়।

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: যারা ভ্রমণ ভালোবাসে তাদের। অন্যদের অনেক সমস্যা হয়।

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: মৎকার লেখনি।
তবে আমার ব্যাক্তিগত মতামত, ভ্রমণ কথায় ছবি না থাকলে ঠিক জমে না।

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ্ । লেখাটা পড়ে সবার মনে নিজের একটা ছবি আসুক এটাই ইচ্ছা। ছবি দিলে ছবিই লেখাকে খেয়ে ফেলে।
আর দুটো সমস্যা হলো
সময় হচ্ছিল না লেখা পোষ্ট করার।
ছবি আপলোডে অনেক বেশি সময় লাগে আর ছবির মাঝে আমাদের চেহারা বেশি দৃশ্যবলির সাথে।
ছবির একটা পোষ্ট দেয়ার চেষ্টা করব।

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: আপু তুমি এত প্রকৃতিপ্রিয়। যেন তুমি প্রকৃতির নিজের মেয়ে। এমনই মনে হয় আমার।

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩২

রোকসানা লেইস বলেছেন: আহা তাই বুঝি ; খুব ভালোলাগল তোমার মনে হওয়া জেনে।
প্রকৃতি উদার হয়ে কত কিছু আমাদের দিয়ে যাচ্ছে নিঃস্বার্থ ভাবে অথচ আমরা সেটা দেখতে যদি না পাই সে আমাদের দোষ। আমি মুটেও নিজেকে বঞ্চিত করতে চাই না প্রকৃতি দেখা থেকে।
শুভেচ্ছা জেনো কবিতা পড়ার প্রহর

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫৮

কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: সিলেট বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল এলাকায় প্রবেশ, ভিডিও ধারণ ও নৌকা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারকে ফি দিতে হবে।

ফি নির্ধারণ করে সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, রাতারগুল বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রবেশ ফি ৫০ টাকা, অপ্রাপ্তবয়স্ক (১২ বছরের নিচে) ও পরিচয়পত্র ধারী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রবেশ ফি ২৫ টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ ফি ৫০০ টাকা। প্রতিদিনের প্রতিদিনের ফিল্মমিং ফি (প্রতি ক্যামেরা) ১০ হাজার টাকা। দেশি দর্শনার্থীদের প্রতিবার নৌকা (ইঞ্জিনবিহীন) ভ্রমণের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা দিতে হবে। আর বিদেশিদের দিতে হবে এক হাজার টাকা। এছাড়া বাস বা ট্রাকের প্রতিবারের পার্কিং ফি ২০০ টাকা। পিকআপ/জিপ/কার/মাইক্রোবাস পার্কিং ফি ১০০ টাকা এবং সিএনজি/মোটরসাইকেল পার্কিং ফি ২৫ টাকা দিতে হবে।



-যে দেশে পর্যটনকে সম্ভাবনাময় করে তোলার দরকার; সেখানে এ ধরণের প্রজ্ঞাপন কার সুবিধার্থে জানি না!!!

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪২

রোকসানা লেইস বলেছেন: এ নিয়ম কি মাত্র আসল? আমি তেমন কিছু দেখিনি।
তবে সব খরচ বিনিময় হয় নগদ অথে। ক্রেতা কোন রশিদ পান না । একটা নির্ধারিত টাকা সরকার ট্যাক্স হিসাবে পেতে পারে। বিদেশে আমরা সব কিছুতেই ট্যাক্স দে্ই। যা সরাসরি সরকারের ঘরে চলে যায়। কোন রকম মার প্যাঁচ করার সুযোগ থাকে না।
দেশি এবং বিদেশিদের উপর ভিন্ন মাত্রার ফি নির্ধারন একটা হাস্যকর সিস্টেম। বিদেশে ভিনদেশি বয়স্ক নাগরিকদেরও কম টাকার টিকেট দেয় যে কোন পর্যটন কেন্দ্রে।
নিয়ম করলে সেটা সঠিক নিয়মে করা দরকার যাচ্ছে তাই ভাবে না।

৫| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০০

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর করে লিখেছেন, ভ্রমনের গল্প।
আমি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গিয়েছি সিলেট। অরি মনোরম পরিবেশ।

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ
বৈচিত্রময় প্রকৃতি সবুজ অনেক বেশি।

৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



মোটামুটি, পরীক্ষার খাতায় লেখা ভ্রমণ কাহিনীর মতো মনে হলো; পাখি দেখা হলো, মানুষ নেই কোথায়ও।

১০ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৫৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: হা হা হা মানুষগুলোকে দেখলেন না কেন? আতিক মাঝি গান করল। আমাদের নৌকার পিছে লাইন ধরে আরো নৌকার সারি। নৌকায় দোকান। আর ব্লগার সুরঞ্জনার বাড়িতে অনেক মানুষ ছিল চারপাশে ।

৭| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এক টুকরো প্রকৃতির ছোঁয়া যেন . . .

আহা! কবে যাব? আক্ষেপটাই বেজে উঠলো মনে !

ভ্রমন কাহিনীতে ভাল লাগা
+++

২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভৃগু
চলে যাবেন মন টানলেই। আমারও এমন মনে হয় যে কোন ভ্রমণের লেখা পড়লে, কবে যাবো।
এ বছর কোথাও যাওয়া হলো না অনেক পরিকল্পনা ছিল। তবে হুট করে দেশে ঘুরে এলাম এই করোনার মাঝে।

৮| ০২ রা নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:১৩

করুণাধারা বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পড়তে। আমি ফেব্রুয়ারিতে সিলেটে গিয়েছিলাম, কিন্তু রাতারগুল যাইনি, মায়ার হাতের কাবাবও খাওয়া হয়নি।

২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: সিলেটে দেখার ঘোরার মতন অনেক জায়গা, সব এক সাথে দেখা সম্ভব না। ফেব্রুয়ারিতে রাতারগুলের জলের উপর ভাসা গাছের শোভা দেখা যাবেনা ।
আরেকবার মায়ার সাথে যোগাযোগ করে চলে যেও। মায়া অবশ্য সব সময় সিলেটে থাকে না এখন।

৯| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪১

সোহানী বলেছেন: আহ্ চমৎকার ভ্রমণ কাহিনী। তবে তা বুঝি পরিপূর্ণ হলো সুরন্জনার মায়ায়। অনেকবারেই গেছি সিলেটে কিন্তু এরপর সিলেটে গেলে সব মায়াদের সাথে দেখা না করে ফিরবো না, নিশ্চিত ;)

২৩ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৪০

রোকসানা লেইস বলেছেন: জীবনের সব কিছুর সাথেই সব কিছুর যোগাযোগ। তাই ভ্রমণের সাথে মায়ার মায়া ব্লগের গল্প যোগাযোগ আর খাবার সব মিলে আনন্দময় হলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.