নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বনভূমির মাঝে একলা

১৭ ই মে, ২০২০ রাত ২:০৮

উত্তরের অনন্ত শীতের পরে, গতপরশু দিনটি ছিল বড় সুন্দর যদিও বসন্ত চলছে অনেকদিন প্রায় শেষ হওয়ার পথে বসন্ত সময় কিন্তু এখনো হালকা পর্দার মতন লেগে আছে শীতের পর্দা। যাই যাই করে যাচ্ছে না। শীতের কাপড় খুলি খুলি করেও জড়িয়ে রাখতেই হচ্ছে। তবুও বেরিয়ে পরলাম হাঁটতে। প্রথমে একটু শীত শীতই করছিল তার কারণ হাওয়া। এই হাওয়ার জন্য শীতের তীব্রতা অনেক বেশি মনে হয়। কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে শীতের তীব্রতা তেমন আর অনুভব করলাম না।
ঘাস কেবল মাথা তুলছে। এক মাঠ পেরিয়ে গাছের বনের ভিতর চলে গেলাম। অনেকটা জায়গা জুড়ে নানা রকম গাছ প্রতিযোগীতা করে লম্বা হয়েছে। নিজেদের জায়গা দখল করে নিয়েছে। কেউ গায়ে গায়ে লেগে আছে। কেউ একটু দূরে দূরে। বড় গাছের নিচে মাঝারি গাছের ডালপালা ছড়ানো। চলার পথে এরা দাঁড়িয়ে আছে প্রহরির মতন। একটু অসাবধান হলেই চোখে মুখে গায়ে খোঁচা দিবে । গুতা দিবে। পায়ে বেঁধে উল্টে পরে যাওয়ারও সম্ভাবনা। ওদের সাথে আছে অসংখ্য ভেঙ্গে পড়া গাছের ডাল। আর ঝরা শুকনো পাতার মর্মর।
সবার নিচে মাটি ঘেসে জেগে উঠছে কত রকমের লতা গুল্ম, ফার্ন, মুস, ঝোপঝাড় । পুরোদমে প্রকৃতিক একটা অবস্থা যেখানে সভ্য মানুষের হাত লাগেনি। আপন মনে তাদের বেড়ে উঠা জীবনাবসান। নতুন রূপের বৈচিত্র।



প্রতিবছর এই সময়ে কয়েকবার বনের ভিতর ঘুরতে যাই। আর অবিস্কার করি নতুন নতুন উদ্ভিদ, গুল্ম, ফুল, বুনো মাশরুম। ঠিক সময় মতন না যেতে পারলে সবার সাথে দেখা হয় না। নতুন ধরনের কিছু প্রতিবার আবিস্কার করি। সবার আগে ফোটে ভূঁইচাপা। জাফরান আর লিলি অফ দ্যা ভ্যালি। এত মিষ্টি গন্ধ এই লিলি অফ দ্যা ভ্যালির ছোটছোট ফুলগুলোতে। মনে হয় একটা পারফিউম বানিয়ে জড়িয়ে রাখি গায়ে সারাদিন। অথচ ও কে ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না। ভীষণ রকম বিষাক্ত। যেমন আইভি নামের একটি লতাও বিষে ভরা।
বনভূমি বড় বেশি নির্জন। ভেবেছিলাম অনেক পাখির ছানা, হরিণ, তিতিরের দেখা পাবো। কিন্তু একটা খোরগোশ, কাটবেড়ালি পর্যন্ত নাই। সব শুনশান। দুটো পাখির বাসা দেখলাম বড় গাছের বেশ উপরে। অনেকক্ষণ পরে দেখলাম পাঁচটি সোনালী ডানার চিল উড়ছে। বড় বড় গাছের মাথার উপরে। এছাড়া আর কোন প্রাণীর সাথে দেখা হলো না।
নিচে আমার হাঁটার সাথে শুকনোপাতার নূপুর বাজে এ ছাড়া শুনশান নিরব।

প্রচুর রোদের আলো তাও অন্ধকার ভিতরে। একটা বিষয় দেখলাম বনের মাঝে এক এক জায়গায় এক এক ধরনের লতা গুল্ম গজায় সবাই এক জায়গায় গজায় না।


এবার পেলাম কিছু হলুদ ফুলের দেখা। অর্কিডের মতন পাঁচ পাপড়ির সুন্দর ফুলগুলো, মাটির একটু উপরে মাথা তুলো হাসছে। ওরা যেখানে মাথা তুলে আছে সেখানে সবুজ পাতার দল লিলি ফুলের মতন কিন্তু লক্ষ করে পেলাম হলুদ ফুলগুলো এই উদ্ভিদের নয়। হলুদ ফুলের গাছের পাতাগুলো পাতাবাহারের মতন ছাপাওলা। সারা বনভূমির ভিতর জুড়েই অনেক জায়গায় এই ফুলগুলো ফুটে আছে। এদের নাম সিলপিং বিউটি।



প্রথম জেগে উঠা ঘুমন্ত সুন্দরীদের আমি বনের ভিতর খুঁজে পেয়ে আপনমনে পুলকিত হলাম। অনেকটা সময় বিভোরতায় কাটালাম তাদের সাথে।



একপাশে অনেক লম্বা লম্বা বাঁশের গাছ মনে হলো জেগে উঠছে। কিন্তু এখানে বাঁশগাছ হওয়ার কথা না। ধরে দেখলাম এদের ভিতরটা পুরোই ফাঁকা, পাটকাঠির মতন এবং নরম। একটা অদ্ভুত পেয়াজ পাতার মতন ঘ্রাণ। সেগুলো আসছে লিলির মতন পাতাগুলো থেকে। বনের ভিতর কতরকম জীবন, নিজের মতন বৃদ্ধি পায় মরে যায় । বার্চ গাছের ছালগুলো খুলে পরছে। ভিতরে দারুণ একটা রঙ। সাপের খোলশ বদলের মতন এই গাছ নিজের খোলশ বদল করে নেয়।
অসংখ্য ম্যাপেলের চাড়া মাথা তুলছে লাল পাতার আভাস তাদের মাথায়।



ঘুরতে ঘুরতে মাশরুমের মতন কিছু পেলাম একটা ভাঙ্গা গাছের গুড়িতে কিন্তু সেগুলো মাশরুম নয় গাছের আঠা বেরিয়ে ঐ রকম রূপ ধরেছে। শক্ত পাথরের মতন মাশরুম রূপের এই জিনিসগুলো দেখে মনে পরে গেলো ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখা পেট্রিফাইড ফরেস্টের কথা। যেখানে গাছগুলো পাথর হয়ে আছে।
প্রকৃতি একই জিনিসকে কত ভিন্নরূপে রপান্তরিত করে সময়ের অবগাহনে।





তাদের ফাঁকে ফাঁকে খুঁজে পেলাম কিছু ব্লুবেরি গত সামারে যা গজিয়ে ছিল। পাখিদের খাওয়ার পরও মাটি কিছু ধারন করে আছে। নতুন গাছ গজানোর জন্য।



পাতাহীন গাছের বন বেশ ফাঁকা ফাঁকা এখন। আর কিছুদিন পর ঘন পাতার ফাঁকে অন্ধকার হয়ে থাকবে সব। কিছু ফল হবে কিছু ফুল ধরবে। তখন হবে বনভূমির সবুজে ছাওয়া আরেক অনিন্দ্য সুন্দর রূপ।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০২০ রাত ৩:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: বন জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো ভালো।
তাতে মন শান্ত থাকে।

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ১০:০৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: এখন আমরা সভ্য মানুষ শুধু বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালে চলে না। তবে মাঝে মধ্যে বনে হানা দিতে মন্দলাগে না। অনেক কিছু চেনা হয় নতুন করে

২| ১৭ ই মে, ২০২০ ভোর ৪:২৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: প্রকৃতি প্রেমিক আপনি । সুন্দর ছবি

২০ শে মে, ২০২০ রাত ৩:৪৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: সব মানুষেরই প্রকৃতি প্রেমী হওয়া জরুরী। নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। অবশ্য বর্তমান মানুষের সময় কম প্রকৃতির সাথে কাটানোর।
ধন্যবাদ
শুভেচ্ছা থাকল নেওয়াজ আলি

৩| ১৭ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ প্রকৃতির সন্তান । প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারলেই ভালো।

২০ শে মে, ২০২০ রাত ৩:৫০

রোকসানা লেইস বলেছেন: সেই প্রকৃতির সাথে সব সময় না পারলেও মাঝে মধ্যে মানুষের মিতালি করা উচিৎ। আমরা কিন্তু এখন এমন হয়েছি। ঘর থেকে এক পা ফেলে ঘাসের উপর শিশির বিন্দু দেখি না মন দিয়ে। সব সময় চোখ দিয়ে রাখি মোবাইলে।
প্রকৃতির সাথে আরো মেলামেশা করায় কোন ক্ষতি নেই
শুভেচ্ছা নিবেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন

৪| ২০ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৪৫

শের শায়রী বলেছেন: আমাকে সারা জীবন জঙ্গল এবং পাহাড় ডাকে। আপনার লেখার সাথে সাথে এক পাক ঘুরে আসলাম।

২১ শে মে, ২০২০ রাত ১২:৩৫

রোকসানা লেইস বলেছেন: বাহ! দারুণ।
জঙ্গলে পাহাড়ে অদ্ভুত এক রহস্যময়তা থাকে যা অচেনা তাকে দেখার আগ্রহ মানে অজানার প্রতি আগ্রহ। আমারও এমন অচেনা ভুবনে নতুন কিছু খুঁজে পেতে ভালোলাগে।
কিছুটা ঘুরলেন আমার সাথে । ছবি আরো দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু যোগ করা গেল না।

৫| ২০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:০৩

শোভন শামস বলেছেন: বন পথ বনের দৃশ্য এবং আশেপাশের নৈসর্গিক বর্ণনা ভাল লাগে, সাথে সে সব দেশের যাপিত জীবনের কথা আরও আনন্দ দেয়, সুন্দর লিখেছেন।

২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১২:০৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ আসলেই বড় সুন্দর তবে অবশ্যই যে উপভোগ করে তার জন্য। সবার জন্য নয়।
অনেক শুভেচ্ছা রইল শোভন শামস

৬| ২২ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৫

মেহবুবা বলেছেন: অনবদ্য ।
এমন দেখলে মনে হয় চলে যাই সেখানে।


এসব কোথায়?

৭| ২৪ শে মে, ২০২০ রাত ১২:০৭

রোকসানা লেইস বলেছেন: চলে যেতে পারলে যাবেন যখনই সুয়োগ পাবেন। পৃথিবীর সব জায়গায় এমন সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে ।
শুভেচ্ছা থাকল

৮| ২৫ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২৬

আখেনাটেন বলেছেন: আপনি মারাত্মক প্রকৃতিপ্রেমী মনে হচ্ছে। ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়ার জন্যও একটি বড় মন দরকার। লেখাটুকু পড়ে ভালো লাগল।

আমি নিজেও কোথাও ঘুরতে গেলে ক্যামেরা হাতে চারপাশের তুচ্ছ বিষয়ের ছবি তুলতে শুরু করলে, কাছের মানুষেরা সমস্বরে ,'এই শুরু হল'। কিন্তু তারা বোঝে না এর মমত্ব।


২৬ শে মে, ২০২০ রাত ১:২৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: কমপ্লিমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। আসলে স্বভাব দোষ আর কি। যখনই যেদিকে তাকাই সব কিছু বেশি বেশি অন্যরকম হয়ে যায়। কাউকে তুচ্ছ মনে হয় না।
বড় বড় অনেক কিছু অনেকে দেখেন ছোটখাটো তুচ্ছাতি তুচ্ছ বিষয়গুলো দেখার জন্য আপনার আমার মতন দু একজন থাকতে হবে তো।
দুদিন আগে পথে হাটতে ডানাভাঙ্গা একটা পোকার সাথে দেখা হলো কি দারুণ তার রঙ। আপনার জন্য ছবিটা দিলাম।

শুভেচ্ছা থাকল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.