নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই লতাপাতার স্তুপ কাল পেলাম, লকলক করে বাড়ছে। ছোট বেলা বাড়িতে এমন ধরনের লতা তুলতাম ঘি শাক বলতাম আমরা। ছোট ছোট ভাড়ী গোলগাল পাতার শাক গুলো খেতে দারুণ মজার ছিল। অনেক দিন তেমন কিছু দেখি না। ঘি যেমন আমার পছন্দের ঘি শাকও তেমন আমার দারুণ পছন্দের একটা শাক। যার সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। প্রায় মুঠো ভর্তি তুলে এনে মাকে দিতাম রান্না করার জন্য। আরেকটা ফুলের মতন পাতা ছিল। থানকুচি পাতা খুব পাতলা হালকা কাগজের মতন আর হালকা সবুজ রঙের । লতার গাছ থেকে পাতা তুলেই মুখে দিয়ে চিবাতাম টক স্বাধের এই পাতাটা। হলুদ ফুলগুলোও খুব সুন্দর। এগুলোও দেখি ঘরের অশেপাশে এখানেও জন্মায় অনেক। ছোটবেলায় আরো একটা ফূল গাছ থেকে তুলেই মুখে টেনে মধু খেতাম। আর ছোট ছোট ফুলগুলো একটার ভিতর আরেকটা ঢুকিয়ে দিয়ে অলংকার বানাতাম। পিপড়ে ভর্তি সেই মধু ফুলের মতন কিছু গাছ এখানেও দেখি তবে ছোটবেলার মতন যা তা মুখে দিয়ে ফেলার মতন সাহস এখন আর করি না।
আরো আছে আকন্দ ফুলের মতন ফুল। ভাটফুলের মতন মিল্ক ফ্লাওয়ার উদ্ভিদ। প্রজাপতিগুলো এই ফুলের মাঝেই বাসা বাঁধে। আর আমি এরা ফুটলে তাদের দেখে ভাটফুলের নির্জন দুপুরের সুবাসে গ্রামবাংলা খুঁজে পাই। অদ্ভুত মিষ্টি ঘ্রাণ এই মিল্ক ফ্লাওয়ারের। গুচ্ছ ধরে অনেক এক সাথে ফুটে বিশাল একটি ফুলের তোড়া তৈরি করে হালকা গোলাপী, বেগুনি সাদার মিশেলে। অনেকে মোনার্চ বা প্রজাপতি ফুলও বলে।
আর আছে মিল্ক টেস্টলে গাড় বেগুনি রঙের এই ফুলের বিচি নাকি ক্যানসারের ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমি মরি এর কাটার জ্বালায়। এদের সংগ্রহ করা হয় না ঔষধ তৈরির জন্য। বাড়ি জুড়ে এখানে সেখানে শুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে উদ্ভিদ শীতকালেও। হাঁটতে বেরুলে গায়ে কাপড়ে জুতায় যেখানে সুযোগ পায় আটকে যায়। ছোটবেলার চোরকাটার মতন তাদের কাটা ছাড়াতে হয়। নয় তো কাটার আঘাতে জর্জরিত করে।
এখানে অনেক কিছু একই রকমের দেখি কিন্তু চিনতে পারি না বলে খাই না। উঠান জুড়ে থানকুনি পাতা জন্মে,নানা রকমের মিন্ট /পুদিনাপাতা জন্মে আপনমনে। গতবছর দেখলাম ডাটা শাকের মতন অনেক জন্মেছে আগাছা মনে করে তুলে ফেললাম। কিন্তু অনেকবার খেয়ে দেখতেও চাইছিলাম। আসলে ওগুলো একদমই ডাটা শাকের মতন ছিল।
ঠিক ডাটা শাকের মতন আরেকটি গাছ হয় পাতা গুলো ত্রিকোন লেজটা ছূঁচাল। তার মাথায় হয় অনেক বীজ অনেকটা মোরগরঝুটি ফুলের মতন লাল টুকটুকে। ওগুলো দেখতে এ্যামারান্ত শস্যের মতন। এ্যামারান্ত দারুণ উপকারি একটা শস্য। ছোটছোট কাউনের দানার মতন দেখতে। এই গাছগুলোকেও দেখে ভাবি এ্যামারান্ত । মনে হয় তুলে নিয়ে একবেলা রেঁধে খাই। কিন্তু তারপর থেমে যাই যদি বিষাক্ত কিছু হয়। বলিভিয়ার কিছু চাষি কয়েক পুরুষ ধরে পাহাড়ের ঢালে এই এ্যামারান্ত চাষ করে যাচ্ছে। ক্ষেত ভর্তি লাল এ্যমারান্ত যখন হয় কি যে সুন্দর লাগে দেখতে। নীল পাহাড়ের পায়ের কাছে লাল এ্যামারান্তের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ আহা! এমন একটা দৃশ্য অসাধারন হয়ে ডাকে।আর ফসল তোলাটাও বড় উৎসবমুখর। অনেকে মিলে এক সাথে কাজ করে। কিন্তু বর্তমানে পুরানো পদ্ধতির চাষাবাস তুলে দিয়ে হেক্টর ধরে জমি মেশিনে চাষের আওতায় আনা হয়েছে। ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে মেশিন কাজের মাঝে। এ্যামারান্তকে, কিনওয়া নামেও ডাকা হয়। বেলজিয়ামে খেয়েছিলাম প্রথম, একটি রেস্টুরেন্টে উত্তর সাগরের বাতাস খেতে খেতে।
উদ্ভিদ চেনা যে কত জরুরী। আর ক'দিন পর এত্ত এত্ত ডেন্ডিলন হবে চারপাশ হয়ে উঠবে হলুদ। এখনি কিছু কিছু ফুল ফুটতে শুরু করেছে। ড্যাণ্ডিলনের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সব সবজী ফুলের বাগান ঘিরে ফেলা আমাকে অস্থির করে তুলবে। আর তারপর তাদের হলুদ ফুলগুলো সাদা বল হয়ে যাবে, বীজ ছড়ানোর আগে। যা দিয়ে এখানে সবাই ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে গুড উইস করে, প্রচলিত একটি প্রথা। বাচ্চাদের থেকে আমিও শিখে নিয়েছি। দারুণ লাগে উড়াতে।
বাতাসে উড়ে উড়ে আরো সব জায়গায় তাদের বীজ ছড়িয়ে যাবে প্রাকৃতিক ভাবে। এই ড্যান্ডিলন গুলোও দেখি আটি বেঁধে বাজারে বিক্রি হয় শাক হিসাবে। ড্যান্ডিলন চায়ের অনেক মাহত্ত। অনেকে সালাদ খায়। আমি তো বিনে পয়সায় খেতে পারি তুলে নিয়ে কিন্তু এদের কোন প্রজাতি খাওয়া যায় তাই জানি না। একদল ড্যান্ডিলন আছে ভয়ানক কাটাওলা পাতা। আর আছে সেই লাঞ্চইয়নের বিখ্যাত এস্পারাগাস। এগুলো যে আগাছার মতন এভাবে গজায় আগে জানা ছিল না। এই এস্পারাগাস কেন এত দাম ছিল রেস্টরেন্টে তা এখন ভেবে অবাক হই। উইলিয়াম সামারসেট মম্, বেচারা লেখকের মধ্যাহ্নভোজন গল্পটা এখনো কি দারুণ এক আতংক আর কষ্ট হয়ে লেগে আছে বুকের মাঝে। এখন পেলে কিছু এস্পারাগাস এমনিতেই দিয়ে আসতাম লেখক কে। এস্পারাগাস যে আমার চেয়ে লম্বা হয় আর ফুলের মতন হাত পা ছড়িয়ে বিশাল জায়গা দখল করতে থাকে দিনে দিনে বড় হয়ে এত্ত কিছু জানার সুযোই ছিল না এদের মাঝে বসবাস না করলে।
বুনো স্ট্রবেরি, রেশবেরি অনেক অনেক হয়। লাল সাদা হলুদ নীল ফুল গুলো ঘাসের মাঝে কী যে সুন্দর তারার মতন লেগে রয়। ব্লুবেরি, রেশবেরি আর ব্ল্যাকবেরি গুলো দেখেছি দোখানে, এগুলো চিনতে পারি।
চেনাজানা কিছু বেরি তুলি বনের ছোপ জঙ্গল থেকে। বেরি যে এত্ত উপকারি ফল আগে জানতাম না আর এখন কত্ত রকমের বেরির সাথে হলো পরিচয়। মুসকাদিনে,বাফালো বেরি,সাস্কাটুন বেরি, সালমোনবেরি, ম্যালবেরি, চোকোবেরি, গুজবেরি, ক্লাউডবেরি, এল্ডারবেরি, হাকলেবেরি। হাকলবেরিফিনের গল্প পড়েছি কিন্তু এ নামে যে বেরি ফল আছে তা জানা ছিল না। রাশান গল্পগুলো তে প্রায় পড়তাম মাশরুম আর বেরি তুলতে বেরিয়ে পরছে বাচ্চারা। তারপর কত কাণ্ড কারখানার পর, ঝুড়ি ভর্তি করে ফল নিয়ে ফিরে আসছে গাছ গাছালি ভরা জঙ্গলের ভিতর থেকে। জঙ্গলে হাঁটতে গিয়ে আমিও অনেক মাশরুমের দেখা পাই কিন্তু একটাও তুলি না বিষাক্ত হতে পারে ভেবে। গুণমান সম্পন্ন যেমন আছে গাছপাতা ফল তেমন আছে বিষাক্তও। তাই সাবধান থাকাটা জরুরী। না চিনে হাত দিলে পয়জন আক্রান্ত হয়ে মরে যাবারও সম্ভাবনা থাকে।
এইসব বেরি গুলো এক একটা ভিটামিনের আঁধার। বর্তমান সময়ের ক্রেজ এমিউন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোলাজেন এমন অনেক গুলো বেরি আর বুনো ফুল পাতার ভিতর লুকিয়ে আছে। গতবছর এত্তগুলো গাছ ভর্তি এর্ল্ডরবেরি দেখলাম। আর ভয়ে ভয়ে একটাও ছূঁয়ে দেখলাম না সব পাখিদের জন্য রেখে দিলাম। এবছর তাদের তুলে আনব কারণ অনেক পড়ালেখা করে তাদের চিনেছি। একটা লতানো লতা আছে ফুল হয় বেগুনি ফল হয় লাল। এই সেই সালমোনবেরি। এও যে বেরি চেনা ছিল না। একজন বয়স্ক মানুষ চিনিয়ে দিলেন। সব ফল তুলে জেম বানালেন কি মজা । অথচ আমি তারে এমনি এমনি ঝরে যেতে দিতাম প্রতি বছর।
চেনার মধ্যে চিনি শুধু মেলরেরি। একটা গাছ আছে কিন্তু যত না আমি খেতে পারি তার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলে কাটবেড়ালি। কালোলালের ফলগুলি দারুণ মজার ।
বৈচিত্রময় লতাপাতা নিয়ে কবিরাজি আয়ুর্বেদিক ঔষধি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন দেশে তেমন বিদেশেও দেখছি। নর্দান ওন্টারিয়র আবরিজিনাল বা আদিবাসীদের দেখেছিলাম বনের গাছপাতা ডালের ধোঁয়া তৈরি করে গায়ে ছড়িয়ে দিতে। যেমন আমরা দেই নিম, তুলসি বাসক পাতা। আর মেডিসিন তাও তো তৈরি হয় এইসব লতাপাতা থেকেই। বড় প্রয়োজন আমাদের জানা এবং চেনা ও বাঁচিয়ে রাখা এই সব প্রকৃতিক সুরক্ষার রক্ষা কবজ। দেখি আর শিখি আনন্দে নানা রকম রূপ বৈচিত্র পৃথিবী জুড়ে কত্ত লতাপাতা, উদ্ভিদ গুল্ম, গাছ।
১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২০
রোকসানা লেইস বলেছেন: শৈশব স্মৃতি সবচেয়ে সুন্দর। না বুঝে কত কিছু করে ফেলা মনের আনন্দে তার তুলনা হয় না। বড় বেলার মতন বাছবিচার ছিল না।
শুভেচ্ছা জানবেন।
২| ১৩ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: প্রকৃতি মানুষের বন্ধু। অথচ মানুষ বন্ধুর ক্ষতি করছে প্রতিনিয়নত।
১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২২
রোকসানা লেইস বলেছেন: প্রকৃতি নিজের বুকে মানুষকে লালন পালন করছে মায়ের মতন। আর মানুষ যেমন মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করে তেমন ক্ষতি করে প্রকৃতিরও।
তোমার মন ভালো আছে?
ভলো থেকো
৩| ১৩ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:১৫
নেওয়াজ আলি বলেছেন: ছবিগুলি সুন্দর । ঘি শাক চিনি না। বাড়ির পাশে অনেক ঔষধি গাছ থাকে যা আমরা জানি না
৪| ১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:২৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: ঘি শাক আমিও দেখিনা অনেক দিন। প্রথম ছবিটার মতন ছোট গোলগোল পাতা। রান্না করলে প্রচুর তেল বেরুত এজন্য মনে হয় ঘি শাক নাম ছিল।
আশেপাশের উদ্ভিদ লতাগুল্ম তাদের গুণাগুণ জেনে রাখতে পারলে বেশ ভালো হয়। কখন কাজে লেগে যায়।
আমারা ছোটবেলা খেলতে গিয়ে হাত পা কেটে ফেললে। ঘাস বা গাঁদা ফুলের পাতা ডলে রস লাগাতাম। এখন দেখি এটা বিদেশেও করে।
শুভেচ্ছা নেওয়াজ আলি
৫| ১৪ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৪২
জাফরুল মবীন বলেছেন: প্রকৃতিতেই রয়েছে রোগের প্রতিকার এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।চমৎকার বিষয়টি নান্দনিকতার সাথে উপস্থাপন করেছেন এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।শুভকামনা জানবেন।
১৪ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:৫৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ জাফরুল মবীন।
প্রকৃতি আমাদের লালন করে তাকেও আমাদের ভালোবাসা দরকার নিজেদেরই প্রয়োজনে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মে, ২০২০ সকাল ৭:০১
আল-ইকরাম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার লেখা টি পড়ে বাল্য কালের অনেক কথা মনে পড়ে যায়। যা চির মধুর, অমলিন। ছবিগুলোও বেশ। শুভেচ্ছা অগনিত।