নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জিয়ানা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অনেক্ষণ। লক ডাউন হওয়ার পর কেবল এই গ্রোসারি দোকানো আসা হয়। জিয়ানা শুরু থেকেই গ্রোসারি দোকানে প্রতিদিন আসছিল। দশ থেকে পনের ব্যাগ দিন দশেকের মতন খাদ্য সামুগ্রির প্যাকেট ও কিনছিল। তারপর কিছু বৃদ্ধ মানুষের দরজায় রেখে আসছিল। গত তিনদিন ধরে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম ছয় ফুট করার পর দোকানে ঢুকার নিয়ম বদলে গেছে। এখন গ্রোসারি দোকানে এসেই ঢুকা যায় না। দশ পনের বিশ জন করে ঢুকতে দেয় দোকানের আয়তন অনুযায়ী। কিছু মানুষ বেড়িয়ে এলে আবার কিছু ঢুকতে দেয়া হয়। অপেক্ষার সময়টা বড় বেশি হয়ে গেছে।
প্রায় পনের মিনিট জিয়ানা দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ লক্ষ করে ওর পিছনে বয়স্ক একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। খুব বাতাস হচ্ছে মাঝে মাঝে বরফও পরছে আজ। বৃদ্ধ তাও ধৈর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘরে খাবার না থাকলে বাইরে বেরুতেই হবে।
জিয়ানা পিছনে তাকিয়ে বৃদ্ধকে বলল, তোমার বাজারের লিষ্ট আমাকে দিলে আমি তোমার বাজারটা করে দিতে পারি। তুমি বরং গাড়িতে গিয়ে বসে থাকো। এক মুখ হেসে বৃদ্ধ বলে, খুব ভালো প্রস্তাব কিন্তু আমার সাথে গাড়ি নাই, প্রিয় সুইট হার্ট।
আহা তুমি কতদূর থাকো, ফিরবে কিভাবে?
আমি হেঁটে যাবো এই তো দু রাস্তা পার হলেই আমার বাড়ি।
জিয়ানা বলল, কিছু মনে না করলে তুমি আমার গাড়িতে গিয়ে বসে থাকো। আমি তোমার বাজার সদাই করে আনছি, তোমাকে পৌঁছে দিব বাড়িতে।
বৃদ্ধ ততক্ষণে কাঁপছে শীতের প্রোকপে। ঠাণ্ডায় হাঁটা চলে বাইরে কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকলে শীতে খুব বেশি লাগে। তুমি একটা এঞ্জেল দেখছি বলে, বৃদ্ধ কাগজে লেখা একটা লিষ্ট জিয়ানার হাতে এগিয়ে দিল। তারপর টাকা দেয়ার জন্য মানিব্যাগ খুঁজছে। ওর হাত কাঁপছে। জিয়ানা গাড়ির চাবি এগিয়ে দিয়ে বলল। ঐ যে সাদা গাড়িটা প্রথম রোতে সেটাই আমার গাড়ি ওখানে যাও।
টাকা পরে নেয়া যাবে। সময় লাগবে বসে থাকো ততক্ষণ আরাম করে হিট চালিয়ে দিও।
এক গাল হাসি দিয়ে বৃদ্ধ ধীর পায়ে গাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল। প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে জিয়ানা ফিরে এলো অনেকগুলো বাজারের প্যাকেট নিয়ে। পেমেন্ট করতেও অনেক অপেক্ষা করতে হয়।
বৃদ্ধ আরামে ঘুমিয়ে পরেছে গাড়ির ভিতরে তখন। ওকে বাড়িতে নামিয়ে বাজারের ব্যাগগুলো ঘরে তুলে দিয়ে, বাই বলে চলে যাচ্ছে জিয়ানা । বৃদ্ধ বলছে তোমার টাকা নিয়ে যাও এঞ্জেল।
লাগবে না এই সদাই গিফট তোমার জন্য। নেক্সট টাইম আমাকে ফোন দিও তোমার বাজারের দরকার হলে। বৃদ্ধ অবাক দৃষ্টিতে মাত্র আঠারো বছরের মেয়েটির দিকে একরাশ ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে আছে। জিয়ানা তখন ছুটছে অন্যদের বাজারগুলো পৌঁছে দেয়ার জন্য।
প্রতিদিন বৃদ্ধ মানুষদের বাজার করে দেয়ার এই দায়িত্বটা নিজে থেকে নিয়ে নিয়েছে জিয়ানা। আর নিজের স্কুলে ভর্তি হওয়ার জমানো টাকাটা খরচ করছে এর জন্য। ভর্তির সময় এলে দেখা যাবে। এখন এই বৃদ্ধ মানুষগুলো ঘরে থেকে ভালো থাকুক। কোভিড ১৯ এর প্রথম আক্রমণে জিয়ানা হারিয়েছে ওর প্রিয় গ্রাণ্ডমাদারকে। যার সাথে জীবনের অনেক সুখের স্মৃতি। হাসপাতালে যাওয়ার পর নেনার সাথে আর একদিনও দেখা হলো না। বড় নিভৃতে একা শেষ বিদায় নিয়েছে গ্রাণ্ডমা । এমন যেন আর কারো গ্রাণ্ডমার জীবনে না ঘটে।
ওর স্বল্প সঞ্চয়ে স্বল্প সামর্থে যতটুকু করা যায় প্রাণ দিয়ে করে যাচ্ছে। এ্যাথেলেট জিয়ানা ভলিবল ট্যুরনামেম্ট খেলে গত চার বছরে জমিয়ে ছিল কিছু টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। জিয়ানা গ্রাণ্ডমাদারের সাথেই থাকত। কিন্তু ও গিয়েছিল অন্য একটি শহরে খেলার জন্য। আর গ্রাণ্ডমাদার বাজার করতে গিয়ে কোভিড ১৯ এর ভাইরাস শরীরে নিয়ে আসে। ভীষণ শরীর খারাপ হলে স্পেশাল টিম এসে নিয়ে গেছে হাসপাতালে। খেলাটা বাতিল হয়ে যায় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য। চারদিন পর ফিরে এসে নেনার সাথে আর দেখা হয় না জিয়ানার। শূন্য বাড়িতে একা চোখের জল ফেলতে ফেলতে মাত্র একদিন কথা বলতে পেরেছিল হাসপাতালে নেনার সাথে। প্রচণ্ড কাশির দমকে কথা বলতে পারছিল না নেনা। তার পরদিনই আসে সেই ভয়ংকর খবর, নেনা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
মা বাবা গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল জিয়ানার ছয় বছর বয়সের সময়। তারপর থেকে এই নেনাই তার একমাত্র আপনজন। তিনদিন নিথর হয়ে বসে থেকে বেরিয়েছে বাড়ি থেকে জিয়ানা। পাড়ায় পাড়ায় খুঁজে বের করেছে, একা থাকা বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের । তাদের নাম লিস্ট করে তখন থেকে একাই বাজার করে তাদের পৌঁছে দিচ্ছে প্রতি পনের দিন অন্তর এক একজনকে।
সবাই অনেক ভালোবাসে জিয়ানাকে। এঞ্জেল ফেইরি বলে ডাকে ওকে। একজন গ্রাণ্ডমাদার হারিয়ে অনেক গ্রাণ্ডমাদার গ্রাণ্ডফাদারের আদর পেয়েছে জিয়ানা। নেনা যেন ওর পাশে গাড়িতে বসে থাকে ছায়া হয়ে। প্রতিদিন ওর কাজকামের হিসাব রাখে আর অনেক খুশি হয় জিয়ানার উপর। আর অনেকগুলো চামড়া কুচকে যাওয়া সাদা চুল, শীর্ণ শরীরের বয়সের ভাড়ে নুয়ে পরা মানুষ, ফোকলা মুখে বয়স্ক চোখের দৃষ্টির মায়ায় ওর দিকে চেয়ে প্রাণ ভরানো হাসি হাসে।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৮:৫৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: উন্নত বিশ্বের মানবিকতা বাচ্চা, বয়স্কদের দেখি আর শিখি। হ্যাঁ এমন ঘটনা আছে অনেক। তবে এটা আমি সৃষ্টি করলাম এসময়ের একটা বাস্তবভিত্তিক গল্প।
ভালো থাকবেন। সাবধানে থাকবেন। গতকাল পরিচিত একজন বাংলাদেশি সজ্জন ব্যাক্তি মারা গেছেন করোনায়। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে খবর শুনে।
২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:০৬
শের শায়রী বলেছেন: প্রচুর অমানবিকতার (মুলতঃ এই সাব কন্টিনেন্টে) পাশাপাশি অনেক এঞ্জেল ফেইরিদের তৈরী হচ্ছে এই সময়টাতে। আমাদের দেশেও ঘটছে তবে তুলনামুলক ভাবে অমানবিকতা বেশী। সব থেকে ভালো কাজ করছে পুলিশ এদেশে।
১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৯:০৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: সত্যি মানবতা দেখানোর নামে এক ধরনের অমানবতা চলে কন্টিনেন্টে । এই দেখানো প্রতিযোগীতা যতদিন চলবে ফেইরিদের কাজগুলো চাপা পরে যাবে। বিদেশে কিন্তু কেউ দেখানোর জন্য কিছু করে না। করলে অন্তর থেকে করে।
১২ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করলেন ৯৭ বছরের ক্যাপ্টেন টম মোর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন যুদ্ধা। এদের চিন্তা ভাবনাগুলোই খুব সলিড।
দেশে কিছু ভালো কাজ হচ্ছে কিন্তু প্রয়োজন প্রতিটি মানুষের মানবিক হয়ে উঠা। যাক অন্তত যদি পুলিশের চরিত্র এ উপলক্ষে বদলে যায় তাও মন্দ না।
৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:১০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: মানবতা আছে বলেই আমরা এখনো বেঁচে আছি
২০ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০১
রোকসানা লেইস বলেছেন: মানবতা ছিল আছে থাকবে সাথে কিছু ইবলিশ মানুষও থাকবে
৪| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: জিয়ানা ভালো থাকুক।
২০ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০২
রোকসানা লেইস বলেছেন: জিয়ানারা ভালো থাকুক মানবতার উন্নতি হবে
৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:৪৪
মা.হাসান বলেছেন: এর কাছাকাছি বেশ কয়েকটা ঘটনা পত্রিকায় দেখেছি।
মানবতা বেঁচে থাক।
২০ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:০৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: প্রতিদিন এমন দারুণ কিছু খবর শুনছি পড়ছি। সেই বাস্তবতার আলোকেই লেখা হলো।
৬| ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৩১
অধীতি বলেছেন: ভালবাসা এঞ্জেলের জন্য।দারুণ লিখেছেন।
২২ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:১৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ অধীতি
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৫:৫৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আমি জানি না এটা বাস্তব কিনা, নাকি আপনার সৃষ্টি; তবে, এর কাছাকাছি হাজার ঘটনা ঘটছে প্রতি সপ্তাহে; আমার বয়স বেশী না'হলে আমি নিজেই যেতাম বয়স্কদের জন্য বাজার করতে।