নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাতে বজ্র বৃষ্টি, ঝড়ের তুমুল মাতনের পরই জোছনা উঠল অকাশ আলো করে। একটু আগেই যখন কিচ্ছু দেখা যাচ্ছিল না। কেবল শব্দ আলোড়িত করছিল। সব শান্ত হয়ে জোছনায় ভেসে যেতে লাগল চড়াচড়। বিদ্যুত চলে গিয়েছিল কয়েকবার ঝড়ের দাপটে। ভেবেছিলাম কতক্ষণ না জানি বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হয়। কিন্তু যাওয়াটা স্থায়ী হয়নি। ভালো কথা ঝড় বৃষ্টির দাপট ছাড়া তেমন ক্ষতি হয়নি চারপাশে।
ডরিয়ান দুই সেপ্টম্বর থেকে প্রবল আক্রশো, হামলা করে বাহামাকে বিছিয়ে দিয়ে আটলান্টা কেরোলিনা বিছিয়ে দিয়ে নোভাস্কসা,নিউফাউন্ডল্যান্ড তছনছ করে কুইবিকের দিকে ধাবিত হয়ে ছিল। গত একটা সপ্তাহ গুমট মেঘলা আর শীতের আধিক্য চলছিল। অতপর কাল দুপুরের তুমুল তাপ প্রবাহে জেনেছিলাম কিছু আসছে। রাতে তার সাথে দেখা হলো।
আজ বুঝি সে তার রাগ থামাল কাল রাতের তুমুল বয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে। সকাল থেকে দারুণ সুন্দর দিন।
এ বছর পুড়ছে বনাঞ্চল কানাডা আমেরিকা আমাজন এখন অস্ট্রেলিয়ায় পুড়ছে বনাঞ্চল।
এমনিতেই আমরা বাসযোগ্য করার জন্য কেটে সাফ করে ফেলেছি বনাঞ্চল । যেটুকু বনাঞ্চল আছে তাতেও আগুন লাগে প্রায়ই। বনের মাঝে কি এমনি এমনি আগুন লাগে, নাকি লাগিয়ে দেওয়া হয়।
দুই বছর আগে কানাডার ব্রিটিশ কলোম্বিয়ার বিশাল বনাঞ্চল পুড়ে গেল। এবারও সেখানে আবার আগুন লাগল। সেটা নিভাতে না নিভাতে ওন্টারিয়র নর্থে আগুন লাগল। আদিবাসীদের সরিয়ে নেয়া হলো হেলিকাপ্টারে করে আগুনের জন্য। একটার পর একটা বিশাল আকারের আগুন লাগছে এবার, প্যারিসের নটোরডাম চার্চ থেকে শুরু হলো। চার্চের ছাই ভষ্ম পরিস্কার করতে গিয়ে সেখানে ক্ষতিকর পদার্থ পাওয়া গেলে এখন অনেক সাবধানতা নেয়া হচ্ছে। অথচ আগুনে ছাই হয়ে মিশে গেছে সে ক্ষতিকর এডভেস্টার, আসেপাশে এলাকায়। সে সব মানুষ ভীড় করে দেখতে গেছে তাদের নিঃশ্বাসে।
রাতেরবেলা বাড়িতে বসে দেখতাম দূরে পাহাড়ে আগুন জ্বলছে। পাহাড়ে চাষ করার জন্য আগুন জ্বালিয়ে বনাঞ্চল উজাড় করে পাহাড়িরা সেখানে চাষ করত। এটাই নিয়ম ছিল। কেউ ভাবেনি কত কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে মিশে কতটা ক্ষতির পরিমাণ বাড়াচ্ছে ।
মানুষ নিঃশ্বাসে অক্সিজেন গ্রহণ করে আর কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে প্রশ্বাসে। গাছ গ্রহণ করে কার্বন ডাই অক্সাইড আর ত্যাগ করে অক্সিজেন বিশুদ্ধ করে বাতাস। আমাদের জীবন রক্ষায়। ৪৮ পাউন্ড কার্বন ডাই অক্সাইড নিতে পারে প্রতি বছরে একটি বয়স্ক গাছ।
যদি গাছ কাটা হয় বা অরণ্যবিনাশ হয় কাটা বা পুড়ে যাওয়ার মাধ্যমে। ধারনকৃত সব সব কার্বন ডাই অক্সাইড গাছ থেকে মিশে যায় বাতাসে।
চোখের আড়ালে ঘটে যাওয়া প্রকৃতির এই গ্রহণ পরিত্যাগের, পরিশোধন প্রক্রিয়া কত বিশাল প্রভাব বিস্তার করে আমাদের জীবনে আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
জনা কয় শিক্ষিত মানুষ যাও বা জানেন খুব একটা গা করেন না এই বিশাল ব্যাপার নিয়ে। পরিবেশবাদী কিছু মানুষ পরিবেশ রক্ষায় অনেক সময় জীবন মরন পণ করে বসেন।
বছর বিশ আগে একটা খবর পরেছিলাম। আমেরিকার এক মহিলা গাছের উপর চড়ে বসে আছেন গাছ কাটতে দিবেন না সে জন্য।
হুমায়ুন আহমেদ মনে হয় ঢাকায় একবার গাছ বাঁচানোর জন্য বসে ছিলেন।
অথচ মানুষের খানিকের অসর্ততায় পিকনিকের ফেলে যাওয়া আগুন বা সিগারেরটে না নিভানো আগুন। হাজার হাজার গাছ বনাঞ্চল পুড়ে অনেক কার্বন ডাই অক্সাইড এনে দেয় পৃথিবীর বুকে। মানুষ এক সময় কার্বন ডাই অক্সাইডের চাপে হারিয়ে যাবে।
আমাদের আধুনিক জীবন যাপনে, প্রশ্বাসের মতন আমাদের ব্যাবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে সমানে বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছি কার্বন ডাই অক্সাইড।
আমাজনের বিশাল বনাঞ্চল পুড়ে ছাই হতে সময় লাগল কতক্ষণ। অথচ এক একটা বিশাল গাছ শত বছর ধরে নিজের বুকে জমিয়ে রেখেছিল যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড আকাশে ছড়িয়ে পরল তা এই ভয়াবহ সময়ে। যখন বিশ্ব উষ্ণতার হুমকির কবলে পরে গেছে এ সময়ে আরো আরো কার্বন ডাই অক্সাইড মিশে গেল বাতাসে। মরে গেল শত বছরের গাছ। অনেক ওষুধি গাছ আর কখনোই পাওয়া যাবে না হয় তো যা ছাই হয়ে গেল আগুনে। বিরল প্রজাতির গাছ যা শুধু আমাজানেই দেখা যেত তাদের সাথে দেখা হলো না আর।
প্রকৃতির এই পুড়ে যাওয়ার সাথে মানুষের তৈরি পুড়ে যাওয়া বিশাল প্রভাব ফেলছে মানুষের জীবনে। আজ এগার সেপ্টেম্বর। উনিশ বছর আগে টুইন টাওয়ার পুড়িয়ে যে প্রভাব ফেলা হয়েছে মানুষের জীবনে তার প্রভাবে মানুষের সম্পর্ক কেবল পিছনের দিকে ফিরছে। শত্রুতার চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সন্দেহের চোখে মানুষ একে অপরের দিকে। এখন কেউ কাউকে সহজে বিশ্বাস করে না। অথচ হেইট ক্রাইমের এই চিহ্ন আগে চোখে পড়েনি তেমন। প্রকৃতির ধ্বংসের সাথে মিলে মিশে যাচ্ছে মানুষের ধ্বংস প্রক্রিয়া।
০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর।
টাকা ছাড়া জীবন বৃথা এইটাই অনেকের ভাবনা। তাই টাকাটাকা করে। এখন শুনছি টাকার পাহাড় জমিয়েছে অনেকে।
গাছের প্রয়োজনীয়তা তাদের জীবনে নেই। তারা তাই গাছের কথা ভাবে না।
২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৮:১২
ডঃ এম এ আলী বলেছেন: দারুন লিখেছেন । দাবানলের আগুন নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন । একবার লাগলে যতক্ষণ খুশি আপন মনে জ্বলতে থাকে আগুন। জ্বলতে জ্বলতে যখন খাদ্যের প্রচণ্ড অভাব হয় কেবল তখনই মরে যায়, দুর্ভিক্ষে মরার মতোই। ইতোমধ্যে মাটি পুড়ে টেরাকোটা হয়ে যায়, হারিয়ে ফেলে দরকারি জলশোষণ ক্ষমতা।
বজ্রপাতসহ এই আগুন লাগবার পেছনে প্রাকৃতিক কারণ মাত্র পাঁচ ভাগের একভাগ। বাকী চারভাগের জন্যে দায়ী মানুষ।
আগুন প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যেভাবেই লাগুক এবং এক পর্যায়ে এটা ক্ষতিকর রূপ নিলেও এর ভেতর কিছু কল্যাণকর দিকও আছে। প্রকৃত প্রস্তাবে, মাঝে মাঝে আগুন না লাগলে বনাঞ্চলের ন্যাচারাল ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়ে যেতে চায়। মৃত ও পচনশীল দ্রব্যাদি পুড়ে গিয়ে শুদ্ধ হয় পরিবেশ, গাছের কাণ্ডে জমে থাকা পুষ্টি, অগ্নিকান্ডের পরে আবার ফেরত আসে জমিতে। যাবতীয় ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস হয় এতে, রোগশোকের জীবাণুও নষ্ট হয়ে যায়। উচুঁ গাছের শামিয়ানা পুড়ে গেলে অন্ধকার স্যাঁতসেতে বনের উঠানে সূর্যের আলো ঢুকে পড়ে। তখন ছাইয়ের গাদায় শুরু হয় নতুন জীবন। প্রথমে তৃণ, তারপর বড় গাছ এবং ক্রমশ নিবিড় অরণ্য। আবার কখনো বজ্রপাতে পুড়ে যাবার জন্যে তৈরি হয় বন। এভাবেই চলতে থাকে প্রাকৃতিক অগ্নি-চক্র।
১৬৬৫ সনে প্লেগের ভয়াবহ আক্রমণের পরে ১৬৬৬ সনে বেকারির আগুন থেকে সূত্রপাত হয় গ্রেট ফায়ার অব লন্ডনের। প্রচণ্ড তাপে তখন সেন্ট পল ক্যাথেড্রালের ছাদের সীসা গলে রাস্তায় স্রোত নেমেছিল। আশ্চর্যজনক হলেও, এই অগ্নিকাণ্ডে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে মাত্র ৬ জনের, যার ভেতর একজন হলেন ভুল করে বেকারির ওভেন খোলা রেখে যাওয়া মহিলা, যিনি জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করতে চেয়েছিলেন শহরকে। শহরের মেয়রের কাছে যখন প্রকাশ করা হয়েছিল আগুনের উদ্বেগের কথা, তিনি তা গুরুত্ব দেননি, তাচ্ছিল্য করে বলেছেন, এটা আর কি এমন আগুন "এ ওম্যান ক্যান পিস ইট আউট"। এসব অযত্ন-অবহেলায় বড্ড দেরি হয়ে গেল, জ্বলে গেল লন্ডন শহর। তবে শেষমেষ এতে কিন্তু শাপে বর হল। প্লেগ অধ্যুষিত বস্তিগুলো নিঃশেষে পুড়ে গেল, পুতিগন্ধময় বিষাক্ত উপনদীর পানি টগবগ করে ফুটে জীবাণুমুক্ত করে দিল, শেষ হয়ে গেল প্লেগের অধ্যায়। তাই হতাশ হওয়ার কোন কারণ নাই । এই দাবানল সহ বড় বড় অগ্নিকান্ড ধরার বুকে ভারসাম্য রক্ষা করে । তারপরেও অবশ্য এর ক্ষতির পরিমানই বেশী ।
শুভেচ্ছা রইল
০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক দারুণ মন্তব্য অনেক তথ্য সমৃদ্ধ।
পাঁচ কারণের এক কারণকে অসহায় ভাবে মেনে নেয়া যায় । বাকি চার কারণকে মানতে কষ্ট হয়। এক সময়ের জুম চাষের নিয়ম যথেষ্ট বনাঞ্চল ছিল এবং মানুষের ব্যবহারিক যন্ত্রপাতির সুযোগের অভাবে আগুন লাগানোই ছিল এক মাত্র পন্থা।
ইকো সিস্টেম ঠিক রাখার জন্য প্রকৃতি নিজেই যখন নিজের রক্ষণাবেক্ষণ করে বদলে ফেলে এক ধরনের পরিবেশ অন্য রূপে। তখনও মানুষ অসহায় হওয়া ছাড়া কিছু করতে পারে না। মেনে নিতেই হবে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার ধরন।
তবে বর্তমানে যে ভাবে বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে কার্বনের পরিমাণ বাড়ছে আর উষ্ণতার প্রভাবে বদলে যাচ্ছে জলবায়ু তাতে আতংকিত হই। এ বছর বন্যার পানি যে ভাবে বসন্তবকাল জুড়ে ডুবিয়ে রেখেছিল মানুষের ঘরবাড়ি কুইবেক, ল্যাব্রাডর অঞ্চল সে রকমটা কখনই দেখি নাই।
এক মাত্র বন ছাড়া আর কেউ পরিশোধন করতে পারে না বায়ুমণ্ডল । সেদিন আরেকটি খবর শুনলাম অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড সাগর তলে জমা হচ্ছে।
লণ্ডন শহর জ্বলে গিয়েছিল সাথে জীবানুমুক্ত হয়েছিল ঘটনাটা জানা ছিল না। ধন্যবাদ জানানোর জন্য।
আগুন পরিশুদ্ধ করে এটাও মানতে হবে। তবে আগুন ছাড়খার করে ছাই করে ফেলে সাথে উড়ায় ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড এটাও অবধারিত সত্য।
লাভ ক্ষতির মাঝেই বসবাস করতে হবে।
শুভকামনা ভালো থাকবেন
৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:১৩
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: সামনে ভয়ংকর দুঃসময় আসছে - - - - -
০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:২১
রোকসানা লেইস বলেছেন: অবসম্ভাবি ভাবে যদি না আমরা এখনও সতর্ক না হই , সঠিক ব্যবস্থা না নেই দুঃসময় আমাদের গ্রাস করবে
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপা চমৎকার একটি পোষ্ট দিয়েছেন।
আমাদের দেশে গাছের প্রতি কেউ যত্নবান না। সরকারী গাছ গুলো পর্যন্ত কেটে ফেলার অশ্লীল এক প্রতিযোগিতা চলছে।
সবাই টাকা টাকা করছে। গাছ যে আমাদের পরম বন্ধু সে বিষয়ে কারো মনোযোগ নেই।