নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে অফুরন্ত অবকাশ। নতুন কেনা ইয়াসিকার পিঠে চড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহর। কখনো দু এক জন বন্ধু সহ চলে যাচ্ছে সোনারগাঁ, জয়দেবপুর, মধুপুর, নারায়নগঞ্জ, যখন যেদিকে ইচ্ছা দিকশূন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিদিন দিগ্বিদিক। জীবন বড় সুন্দর মনে হয়, প্রতিদিনের চেনা পৃথিবী নতুন রূপে ধরা দেয়। আকাশ বাতাস গাছ পাখি যা দেখে, সব কিছুর মাঝেই অন্যরকম এক ভালোলাগা খুঁজে পায় যেন কিছু করার আয়োজনে ব্যস্ত হয়।
এক দুপুরে আহসান মঞ্জিলে যাওয়ার সময় জ্যামে আটকে যায় রূপম ইডেন কলেজের সামনে। অসহ্য গরম আর গ্যঞ্জামের মধ্যে বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আর ঠিক তক্ষুনি কলেজের গেট থেকে বেরিয়ে আসে এক মেয়ে যার নিটল টানা চোখের দিকে চোখ পরতে রূপম ভুলে যায় পৃথিবীর যাবতীয় যন্ত্রণা। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যায় ওর শরীরে,মনে। পলকে মনে হয় যেন থমকে গেছে পৃথিবী, এক অসম্ভব সুন্দর বসন্ত সময়ে। মৃদুমন্দ বাতাসে পুলক লাগে ভুলে যায় যেন বাস্তবতা। পিছনে অসংখ্য গাড়ির হর্ণ। হৈ চৈ কোলাহল স্বর্গ থেকে ফিরিয়ে আনে রূপমকে বাস্তবতায়।
মেয়েটা তো রাস্তা ক্রস করে রিকসায় চড়ছে উল্টা পাশে ? তাড়াতাড়ি আইল্যান্ডের উপর দিয়ে হোন্ডা পার করে পিছু নেয় রিকসার । না কিছুতেই হারাতে দিব না এই সুন্দর পৃথিবী।
চুপচাপ বসে আছে রিকসায় অপ্সরী। সে দিকে চোখ রেখে ধীরে বয়ে যাচ্ছে রূপমের মটর সাইকেল পিছে পিছে। মিরপুরের দিকে চলেছে রিকসা, রোকেয়া সরণীতে এসে থেমে গেলো একটি বাসার সামনে। এতক্ষন এক ঘোরের ভিতর পিছু নিয়ে চলে এসেছে। এখন মেয়েটি বাসার গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি সামনে গিয়ে দাঁড়াল রূপম পথ আটকিয়ে। কি বলবে জানে না শুধু ওর মনে হলো যদি একবার হারিয়ে যায় তবে আর কোনদিন ফিরে পাবে না।
অবাক ভীতু চোখে মেয়েটা তাকাল রূপমের দিকে। অপ্রস্তুত রূপম হড়বড় করে বলে ফেলল- আপনি এই বাড়িতে থাকেন? কিছু একটা বলে কথা শুরু করা। রাগী স্বরে উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে - কেন? -না মানে ..ইতস্তত রূপম আমার এক বন্ধু টিপু এখানে থাকে তাকে খুঁজতে এসেছিলাম, চিনেন? খুব আগ্রহ ভরে তাকিয়ে থাকে অপ্সরীর চোখে রূপম।
একটু কোমল স্বর বাজে- না এ নামে কাউকে চিনি না।
ওহ.. অনেক দিন আগে থাকত এখানে যোগাযোগ নেই অনেক দিন। হারিয়েই গেলো টিপু! বড় বেদনায় ভরাক্রান্ত হয়ে বলে রূপম।
মেয়েটি চলে যেতে গিয়েও ফিরে তাকায় জানতে চায় - কোথা থেকে এসেছেন?
-ধানমন্ডি, আপনি বুঝি কলেজ থেকে ফিরেছেন? কোন কলেজ?
-ইডেন, আপনি কি করেন?
-আমি রূপম নটরডেম থেকে আই এসসি দিয়েছি এবার
-আমি নীতু প্রথম বর্ষ আই এ।
তুমি নীতু নও অপ্সরি মনে মনে বলে রূপম মুখে বলে, মাঝে মাঝে কি দেখা হতে পারে? এই কথাটা বলতে পেরে বড় আরাম লাগে রূপমের। এ জন্যই তো আকাশ বাতাস এক করে ফেলা এই ছুটে চলা, পিছু ধাওয়া, উল্টাপাল্টা বলা।
মিষ্টি হেসে সম্মতিতে মাথা নাড়ে নীতু । বাতাসের টানে যেন ভেসে যাচ্ছে রূপম। হালকা ফুরফুরে সব কিছু। আচ্ছা কাল দুপুরে কলেজের সামনে দেখা হবে, যাই এখন। চোখে চোখে যেন কথা বলছে দুজন দৃষ্টির মাঝে বাঁধা, পলক পড়ছে না। ছোট্ট গেইটের পাল্লা ধরে দাঁড়িয়ে আছে নীতু পেছনে হেঁটে মটর বাইকে চড়ে বসে রূপম। হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে ঝড়ের বেগে ছোটে চলে রূপম।
সব কিছু যেন বদলে গেছে রূপমের জীবনে এক নিমিষে। অপার্থিব আয়োজন যেন ওর চারপাশ ঘিরে। টেনে নিয়ে যাচ্ছে ওকে অন্য এক ভুবনে। কিছু ভাবা বোঝার কোন অবকাশ নাই। ঘোরের মধ্যে পর দিন থেকে ছুটে চলে দুজনে। কলেজ ছুটির পর একসাথে দুজন। গল্পে কখন যে সময় পার হয়ে যায়। আর সব কিছু গৌণ শুধু দুজনের জন্য উন্মুখ দুজন। বাইকের পিছনে নীতুকে নিয়ে হারিয়ে যায় রূপম এক এক জায়গায় এক এক দিন। নীতুর খুব ভালোলাগে সমুদ্র। সমুদ্রগামী জাহাজে ভেসে যেতে চায়। রূপম তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে মেরিনে যোগ দেয়ার। বছর চার দেখতে দেখতে কেটে যাবে তখন নীতুকে নিয়ে ভেসে যাবে নীল জলে। এর মাঝে নীতুর পড়ালেখাও শেষ হয়ে যাবে। স্বপ্নের ঘর বাঁধে দুজনে সাজায় আপন ভালোলাগা আর আবেগ মাখিয়ে নিজস্ব ভুবন।
রূপম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। দুবছর কখন যেন হেসে খেলে পার হয়ে গেছে। নীতুর পরীক্ষা হয়ে গেছে এ সময়টায় ও বাড়ি থেকে খুব একটা বের হতে পারছে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের গতানুগতিক নিয়ম। রূপমের বাড়িতে ওত বাঁধা নিষেধের বালাই নাই। মা এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নীতুর। মা পারলে এখনি বিয়ে দিয়ে নিয়ে আসে একমাত্র ছেলের বউ। কিন্তু রূপমই বলে আর কিছু দিন যেতে দাও মা, পড়াটা শেষ হোক তারপর নয় তো আমার কী পরিচয় দিবে? কিন্তু এ কদিনের বিচ্ছেদ আর ভালো লাগছে না মনে হয় বিয়ে করে ফেলে বরাবরের মতন নিয়ে আসে নীতুকে কাছে । রেজাল্ট হলো, খুব ভালো করেছে নীতু । ভর্তি পরীক্ষার কোচিং করতে আবার বেরুতে পারছে বাসা থেকে। মুখোমুখি দুটি পাখি আনন্দে ডানা মেলে উড়ে আবার। নীতু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো । কয়েকটা মাস কেমন করে যেন কেটে গেলো। রূপম তৃতীয় বর্ষ শেষ করে মেরিনে যোগ দিতে চলে গেলো। মা অনেক কান্নাকাটি করল । এই বিশাল সম্পত্তি ব্যবসা কে দেখবে? রূপম কেন সাগরের জলে ঘুরে বেড়াবে তার কোন কারণ খুঁজে পেল না। মা এর কান্না বাবার পিছু ডাক ফেরাতে পারল না রূপমকে ভালোবাসার আনন্দধাম সাজাতে রূপম চলে গেলো নীল দরিয়ার জলে। নীতু তখন যেন বুঝতে পারল ওর একাকিত্ব । মনে হলো রূপম না গেলেই পারত। একটা কথা বলেছি তাই সত্যি করতে এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে রূপম যেতে পারে, ওর কথার এত মূল্য রূপমের কাছে? নতুন করে ভালোবাসায় যেন বাঁধে রূপম আবার নীতুকে। অপেক্ষায় থাকে রূপমের ফিরে আসার, কঠিন দিনগুলি কাটিয়ে উঠার।
অথচ বছর খানেকের মধ্যে বদলে যায় নীতুর জীবন সম্পূর্ণ ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে, বিয়ে দিয়ে দেয় নীতুর অভিভাবক এক ব্যবসায়ীর সাথে ওকে। এত দ্রুত এত কম সময়ে সব কিছু ঘটে রূপমের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করে উঠতে পারে না নীতু।
একটি মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে বঙ্গোপসাগরের পাড়ে। টেলিভিশনে খবরটা শুনে চলে যাচ্ছিল রূপম কিন্তু মেয়েটার ছবিতে চোখ আটকে গেলো আর বদলে গেলো রূপমের পৃথিবী। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তুলতুলে আয়েসি বেড়াল যেন নীতু। বেলাভুমিতে শুয়ে আছে।
কবেকার দেখা সেই স্মৃতি কিছুতেই আর তাড়াতে পারে না মাথা থেকে রূপম।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো কত রাত এখন? ঘর একদম অন্ধকার খানিক তাকিয়ে থাকার পর বাইরের আলোয় অন্ধকার ফিকে হয়ে এলো ঘরের ভিতর। খানিক এপাশ ওপাশ করে নেমে এলো বিছানা ছেড়ে রূপম। দরজা খুলে খোলা বারান্দায় দাঁড়াল খানিক। মনে হলো যেন বউ কথা কও ডাকছে কোথাও?
দূর, বউ কথা কও কেমন করে ডাকবে এই দেশে। কোকিলের কুহুতান, রাত জাগা বউ কথা কও পাখির সুমিষ্ট গান কতদিন শোনা হয় না কিন্তু বুকের মধ্যে বাজে । ভুলা যায় না বেড়ে উঠার লালিত্য সময়। তেমনি হৃদয় তোলপাড় করে বুকের ভিতর ঝড় তুলে স্মৃতির অফুরান ভাণ্ডার। সুখের সময়গুলো সুখ হয়ে না থেকে কেন দুঃখ পাখির ঠোঁটে ঠোকরায়? ভুলতে না পারা স্মৃতি কুরেকুরে খায় বুকের ভিতর। রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় তখন। আজ আর ঘুম আসবে না কিছুতেই তাই দরজা ঠেলে বাইরের ব্যালকুনীতে দাঁড়ায় রূপম।
জোছনায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর হালকা আয়েসী বাতাস বয়ে যায় রূপমের শরীর ছূঁয়ে। খানিক চারপাশে তাকিয়ে ঘরে ঢুকে যায় আবার রূপম। দ্রুত জিন্স, র্সাট, কেডস পরে বেরিয়ে পরে ঘর থেকে । নীচে চুপ করে বসে আছে র্স্পোটস কার। নিঃসঙ্গ সময়ের একমাত্র সঙ্গী। শব্দ তুলে র্স্টাট দিয়ে বাংলো টাইপের বাড়িটি পিছনে ফেলে ছুটে যায় সাগর পাড়ে মৎসকন্যা স্টেচুর পাশে। সাগরের বিশাল ঢেউ শব্দ তুলে আছরে পরছে । চাঁদের আলো ভেঙ্গে যাচ্ছে জলের ভিতর সে দিকে তাকিয়ে বাতাসের ঝাপটায় স্ট্যাচুর পাশে স্থির হয়ে বসে থাকে রূপম।
গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে সাগর পারেই তাই ছুটে আসে নীতুর খুঁজে। অনেক সাগর, অনেক জল ঘেটে ডেনমার্কের এই মৎসকন্যার স্টেচুর পাশে বাসা বঁধেছে রূপম। মাঝরাতে চাঁদের বন্যায় ভাসতে ভাসতে সাগরের জল থেকে উঠে আসে নীতু। মৎসকন্যার মতন এত সাঁতার পারে নীতু, বঙ্গপোসাগর থেকে ডেনমার্কের সাগর তীরে উঠে আসে। আয়েসি বেড়ালের আড়মোরা ভেঙ্গে উঠে বসে বড় পাথরটার উপর, ভালোবাসায় , আবেগে কথা বলে রূপমের সাথে সারারাত ধরে।
০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: আপনি একটু শক্ত করে বুনে দিন তো
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৫৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর ভাষা শৈলী।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৪৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ সেলিম আনোয়ার
৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৫৯
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভাল লাগলো।রুপম- নীতুর প্রেম থাকুক বেঁচে।
০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৫১
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পদাতিক চৌধুরি
বেঁচে থাকুক রূপম- নীতুর প্রেম....
কখনো কোন ঘটনা মানুষের জীবনটা এলোমেলো করে দেয়। সেই ঘটনাই জীবন হয়ে যায় তার জন্য।
৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:০৫
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লিখেছেন,
শুভকামনা
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন
৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৪
মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: চমৎকার আবেগী লেখা।
০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ মনিরুল ইসলাম বাবু
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৫:০৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
আবেগ আছে, কথার জাল বোনা হয়েছে অনেক, কিন্তু শক্ত প্লট নেই