নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মার্চ মাসে আপনি চলে গেলেন প্রিয় প্রিয়ভাষিণী অন্যলোকে এই ভবলোকের সাথে সব সংযোগ সাঙ্গ করে।
১৯৭১ সনের মার্চ মাসে আপনার বয়স কত ছিল। মন উদাস করা স্বপ্ন বোনা এক সদ্য পঁচিশ বছরের তরুণী। অযুত স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন দেখছিলেন। আলোকিত হবে আগামী দিন।
উনুসত্তরের আন্দোলন।১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রবল ভাবে ভোটে বিজয়ী শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির নেতা দেশের নেতৃত্ব দিবেন। বাঙালিরা অনেক অধিকার পাবে হেসে খেলে দিন কাটাবে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিশাল মানুষের স্রোত নেমে এসেছিল রেসকোর্স ময়দানে। স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। যার যা অাছে তা নিয়ে ঝাপিয়ে পরতে বলেছিলেন। প্রবল বাঁধা দেওয়ার আহ্ববান করে ছিলেন। আশংকা প্রকাশ করে বলেছিলেন। "আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি।" কারণ তিনি পাকিদের ষঢ়যন্ত্রের আঁচ করেছিলেন। কয়েকদিন ব্যাপী মিটিং এবং কোন কিছুই স্পষ্ট ভাবে না বলা, সময়ক্ষেপন।
তাঁর ভাষণ দেশের মানুষ না শুনতে পারে সেজন্য রেডিও প্রচারনা বন্ধ করে দিয়েছিল ভাষণ দেয়ার সময় ততকালিন সরকার।
আমার মনে আছে অধির আগ্রহে বড়দের সে অপেক্ষা সাত মার্চের বিকাল এবং রাত্রী জুড়ে। অথচ রেডিওটি আর কথা বলছিল না।
ভাষণটি আমরা শুনেছিলাম পরদিন সকাল বেলা, আট মার্চ ১৯৭১। তখনও সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। আমি টিচারের কাছে পড়ছিলাম সকালবেলা। কিন্তু সেদিন আপনার বয়সি টিচারের মন যেন ছিল অন্য রকম, পড়ানোতে মন ছিল না অস্থির ছিলেন কোন কিছুর আশাংকায়। যা আমি তখন বুঝতে পারিনি । যখন পাশের ঘরে রেডিওয় ভাষণ শুরু হলো সাথে সাথে অন্য ঘরে মায়ের পাশাপাশি বসেছিলেন টিচার। যা সাধারনত তিনি করেন না। রেডিওর কাছাকাছি বসে প্রত্যেকে নিঃশব্দ শুনছিলেন প্রতিটি শব্দ মন দিয়ে। মাঠে বসা জনতার নিঃশ্বাসের শব্দও যেন বন্ধ ছিল। শুধু একটি সুললিত কণ্ঠ দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিল একটি জাতির জন্য। মনোযোগের সাথে শুনছিল মানুষ। একবার শুনেই সে কথাগুলো প্রানে গেঁথে নিয়েছিল মানুষ।
বড়রা সবাই, পাড়া প্রতিবেশী যারা এসেছিলেন ভাষণ শুনতে সবাই মিলে কেমন উদ্বিগ্ন আর আশার হাতছানিতে কথা বলায় মেতে উঠেছিলেন। ভাষণ শেষ হওয়ার পর। কি হচ্ছে কি হচ্ছে। অপরিচিত কোন পরিবেশের আশংকায় শংকিত হচ্ছিলেন। বাবা মা যারা একবার দেশ ভাগ, স্বাধীনতার ভিতর দিয়ে গিয়েছেন। ভিটে মাটি উচ্ছেদ রিফিউজি, রেফারেন্ডম, ভাষা আন্দোলনের কথা বলতেন। আবারও নতুন দেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন মনে। পাকিস্তানের অংশ হয়ে আর থাকা হবে না একটি নতুন দেশ হবে এটা যেন তারা বুঝেছিলেন। অসহযোগ আন্দেলনে সতস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছিল বাংলার মানুষ।
আমাদের বাড়ির সামনে তখন পতপত করে উড়ছিল নতুন একটি দেশের পতাকা স্বাধীন দেশের পতকা।
শহরে অনেকে ছিলেন সে পতকা পছন্দ করতেন না তারা ছিলেন মুসলিমলীগের মানুষ। তারা পাকিস্থানকে ধরে রাখতে চাইতেন। ছোট ছিলাম কিন্ত প্রায় দেখতাম অনেকের সাথে আমার মায়ের কথা কাটাকাটি হচ্ছে দেশ স্বাধীন হবে নতুন একটি দেশ হবে বাংলাদেশ, মা এই পক্ষেই আটুট থাকতেন যুক্তি দিতেন। অন্য পক্ষে তখন পাকিস্থান ধরে রাখার পক্ষের মানুষ। চায়ের টেবিলে, রেডিও শোনায় এমন এমন সাধারন জীবন যাত্রার সময় তখন আমাদের ছোট্ট মফস্বল শহরে উত্তেজনা চলছে দেশ স্বাধীন হবে না কি হবে এনিয়ে । বাবা সব সময় শান্ত ধীর স্থির ভাবে বিষয় উপলব্ধি করতেন।
কিন্তু ভিন্নমতের জন্য মারমুখি প্রতিবাদ তখন ছিল না শহরের পরিচিত সব মুখের মধ্যে। তবে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছিল সব কিছু।কতটা বদলাবে কতটা ভয়ঙ্কর হবে সে ধরনা ছিল না কারো।
নিভৃত সময়ে বাবা মায়ের কথায়ও তখন শেখ মুজিব, স্বাধীনতা ভুট্টো ইয়াহিয় খান, বাঙালিদের দাবায়ে রাখা চলবে না, এসব শব্দ শুনতে পেতাম। ইচ্ছে করে সময়টাকে ফিরিয়ে এনে যদি সব কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে আবার শুনতে পারতাম। এখনের মতন আগ্রহ নিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে পারতাম।
সময়গুলো বদলে যাচ্ছিল অনেক দিন ধরে। সাত মার্চের ভাষনের পর স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। অফুরন্ত ছুটির সময়,
আমরা ছোটরা তখন ভোট ভোট খেলতাম। আর মিছিল মিছিল খেলা খেলতাম।
তখন প্রতিদিন মূর্হমূহু প্রতিবাদ মিছিল। মানুষের মাঝে এক ধরনের উত্তেজনা আমার ছোট শরীরে কেমন অন্য রকম শিহরণ বয়ে যেত।
একটু একটু করে বদলে যাচ্ছিল সব কিছু।
ছোট শহরে যদি এতটা অস্থিরতা ছিল ঢাকায় তখন আপনার সময় কঠিন ছিল উপলব্ধি করার চেষ্টা করি।
প্রিয়ভাষিণী আপনি তখন রঙিন মনের উচ্ছাসে স্বাধীন হওয়ার অপেক্ষা করছেন অথচ আপনার খুব কাছেই ছিল অন্ধকারের। চারপাশে ওতপাতা কঠিন মানুষ। আপনি তখনও কিছুই জানতে পারেননি। কাছের পরিচিত মানুষদের চেহারার পিছনে আসল নিষ্ঠুর চেহারা বেরিয়ে এসেছিল। এক দেশের মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তা দেখার অপেক্ষা করতে হয়নি আপনাকে খুব বেশী দিন। যা আপনার জীবন তছনছ করে দিয়েছিল। আপনি তখনও ছিলেন স্বপ্নে বিভোর এবং বিশ্বাসী। আপনি এবং আপনার মতন আরো অনেকেই তাদের চেহারা চিনতে পারেনি তখনও।
যারা উল্লাশ করে একজন নারীকে তুলে দিতো শিকারীর হাতে। চিনিয়ে দিত বাড়িগুলো বুদ্ধিজীবী, গেরিলা এবং মুক্তিকামী মানুষের।
আপনি সাহসের সাথে প্রথম মুখ খুললেন। যুদ্ধের সময় শুধু অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেনি পাকিসেনারা। নারীর শরীরকেও যুদ্ধের ক্ষেত্র করে তুলেছিল।
আপনার নির্যাতনের কথা প্রকাশ করলেন। লক্ষ বীরাঙ্গনার পক্ষে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন সম্পর্কে বলে অবাক করলেন আপনি ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী। বাংলাদেশের মানুষ আপনার পক্ষে দাঁড়াল। কিন্তু পাকী প্রেতাত্মাদের এতে গাত্রদাহ শুরু হলো। এসব গোপন বিষয় গোপনে থাকবে। এসব অবজ্ঞা, লাঞ্ছনা, অপমান নিয়ে আপনি ধুঁকে ধুঁকে বাঁচবেন। লজ্জায় কারো কাছে মুখ দেখাবেন না। এই রক্ষনশীল সমাজে অনেক পরিবার মেয়েদের গ্রহণ করেনি। কত নারী নির্যাতিত হয়ে বেঁচে যাওয়ার পরও আত্মহত্যা করেছে। বিদেশে পালিয়ে গেছে। আপনিও সে ভাবে থাকবেন। তা নয় এই সব পর্দার বিষয় এবং লজ্জাহীন কথাবার্তার পরও একদল মানুষ আপনাকে ভালোবাসছে। আপনাকে মাথায় তুলে রাখছে। এসব সহ্য করা কষ্টকর।
এ আপনি কি করছেন সব বলে দিচ্ছেন নাম ধামসহ। আপনাকে সহ্য করা যায় না। আপনি নাস্তিক। আপনি মুরতাদ। আপনার নাম হিটলিষ্টে। কেন প্রচার করলেন এসব! নিগ্রহের কথা বলা কি ঠিক হলো! নির্লজ্জ "মেয়ে মানুষের" পরিচয় আপনি দিচেছন। আপনাকে অন্ধকার গর্তে ঢুকিয়ে রাখার জন্য আপনার বিপক্ষে কথা বলার জন্য অনেক চেলাচামুণ্ডা তারা তৈরি করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশেও সেই পাকিদের প্রেত্মাত্তা হয়ে তারা আছে এত বছর পরও। আজ আপনার স্বাভাবিক মৃত্যুর পরও তারা আপনাকে রেহাই দিচ্ছে না। আপনাকে নিয়ে মশকরা করে যাচ্ছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে মাথা উঁচু করে একজন নারী ভাস্কর্য অতি সাধারন ডাল পাতা গাছের গুড়ি দিয়ে শিল্প তৈরি করে নতুন একটি দিগন্তে আপনি মেলে দিয়েছেন ডানা সব কিছু তুচ্ছ উপেক্ষা করে। আপনার সব কাজ ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য হয়ে রইবেন আপনি নিজে, স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে, সাহসী নারীর প্রতীক হয়ে এই বাঙালাদেশের ইতিহাসে।
একজন শিল্পী মন চারপাশ থেকে শৈল্পিক আয়োজনে শিল্প সাজাতে ব্যস্ত আপনি। অথচ সেই আপনার শরীর জুড়ে তুমুল অত্যাচারের বন্যা বইয়ে দিল তারা ১৯৭১ এ। ক্ষতবিক্ষত মন নিয়ে আপনি যাতে হারিয়ে যান সে চেষ্টা করে যেতে থাকল স্বাধীন দেশেও। এটাই সবচেয়ে দুঃখের বিষয়। পাকিপন্থিরা এত বছর পরও দখল করে রেখেছে এদেশের অনেকটা জায়গা।
আপনাকে বিরাঙ্গনা নয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক বছর পর এই সরকার। কিন্তু এইসব খেতাব পাওয়ার অপেক্ষায় না থেকে আপনি আপনার একক কণ্ঠে অনেক নারীর কথা বলে গেছেন বারে বারে গত সাতচল্লিশ বছর ধরে অনেক বৈরি পরিস্থির মধ্যেও। যারা এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য অত্যাচারিত হয়েছেন রেখেছেন তাদের অবদান সে নারীদের একক মুখপাত্র আপনি।
রক্ষনশীল সমাজ সে নারীদের অবমূল্যায়ন করেছে নির্লজ্জ ভাবে। তাদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস আপনি দেখিয়েছেন। আপনাকে স্যালুট প্রিয়ভাষিণী।
"জগতকে আনন্দ বিলিয়ে যেতে হয়। দুঃখ বিলিয়ে করুণা পাওয়া যায় বটে কিন্তু তাতে আত্মসম্মান থাকে না"'...আত্মসম্মান নিয়ে চলে গেলেন এই জীবনের খেলা সাঙ্গ করে ভালো থাকুন আপনি । জগতকে আনন্দ বিলিয়ে সম্মান পাওয়ার যোগ্য হয়ে উঠুক এই জাতি।
০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৪৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক শুভেচ্ছা আকিব হাসান জাভেদ। দেশের জন্য মানুষের জন্য এমন অনুভূতি প্রতিটি দেশ প্রিয় মানুষের মধ্যে থাকাটা বাঞ্চনিয়। আবার যুদ্ধ না হলেও সে ভাবে ডাক দেয়ার অবস্থা থেকে দেশ এখনও মুক্ত হয়নি। দেশটা সুন্দর সাবলীল কাঠামোতে ফেলার জন্য তেমন কারো প্রয়োজন আছে এখনও।
ভালো থাকার কামনা
২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৪৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা পড়ার জন্য রাজীব নুর
৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২৮
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: বাংলার গৌরবময় ইতিহাস।
০৮ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: ইতিহাস সবাই যদি ঠিক ভাবে জানত।
শুভেচ্ছা রইল জুনায়েদ বি রাহমান
৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:২৩
বারিধারা ২ বলেছেন: শুনেছি উনি বীরঙ্গনা ছিলেন, কিন্তু কিভাবে বীরঙ্গনা হয়েছেন, সে সম্পর্কে কোথাও কিছু দেখলাম না।
০৯ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:৪৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: দারুণ প্রশ্ন করেছেন। আপনার কৌতুহল দেখে চমকৃত হলাম বারিধারা ২
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:৪৭
আকিব হাসান জাভেদ বলেছেন: টানটান উত্তেজনায় পুরোটাই পড়লাম । প্রথম দিকে আপনার শিক্ষকের মতো স্বভাব হয়েছিলো আমার । ভাবতে লাগলাম আবার যদি যুদ্ধ হতো আমি সেই যু্দ্ধে শহীদ হব। দেশের মান রক্ষাত্বে যা দরকার হতো তাই করতাম । হয়তো শেখ সাহেবের মতো বলে ফেলতাম যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড় আমি বাঙ্গালিদের স্বাধীন করতে এসেছি। প্রিয় ভাষিণীকে স্যালুট সাথে আপনাকে । যারা স্বাধীন দেশের মানুষ নিয়ে ভাবে।