নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সে আমার জন্য সব করতে পারে। খুব ভোরে শিউলি ফুল কুড়ানোর জন্য অন্ধকার থাকতেই শিশিরের হিম মাথায় চুপিসারে বেরিয়ে পরত বাড়ি থেকে। কুয়াশার চাদর ঘেরা রাস্তায় একা দ্রুত হাঁটত। শিউলি গাছের ফুলগুলো সবার আগে কুড়িয়ে নিতে হবে। ঝুড়ি ভর্তি ফুল নিয়ে আবার এক মাঠ পারি দিয়ে অপেক্ষার পালা।
ভোর পেরিয়ে সকালের রোদের আলো যখন আম গাছের কচি পাতা ছাড়িয়ে নিচে নামতে নামতে সব ঘন পাতার দেয়ালের ফাঁক দিয়ে ঝরকা কাটা আলপনা আঁকত। জানলা গলে বিছানায় আমার চোখের পাতা ছূঁয়ে দিত সূর্য রশ্মি তখন আমি চোখ মেলে তাকাতাম। কিন্ত শীতের জন্য লেপের উম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করত না। মা ডাকাডাকি শুরু করতেন, এবার উঠো নবাবজাদী, নাস্তা সেরে আমাকে ধন্য করো। তোমাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। চাকর বাকর কামলা দাসী; এক কাজ নিয়ে বসে থাকলে হবে না আরো কাজ আছে। টেবিল সাফ করে, ঘর পরিস্কার করতে লাগবে।
মা যখন শুরু করবে আর থামবে না একটানা রের্কড বাজিয়ে বলতেই থাকবে, বলতেই থাকবে।
আমি লেপের উষ্ণতায় কান ঢেকে রাখি। শুনতে চাই না ঘুম ভেঙ্গে উঠেই; এই একঘেয়ে ঘ্যান ঘ্যান। কিন্তু থামে না তীব্র শেলের মতন কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে থাকে, মার তীক্ষ্ণ তিক্ত বাক্য বান। দূর্গা দেবীর মতন যদি দশখানা হাত থাকত তবে তোমাদের কিছু বলতাম না। লেপ তেমন দেয়াল তুলতে পারে না।
তবে যতটা আঘাত করার জন্য মা নবাবজাদী বলে সম্ভোধন করে সেটা বকা না হয়ে মধুর হয়ে উঠে আমার কাছে।
নিজেকে নবান বাড়ির আয়েসি মেয়ে ভাবতে বড় ভালো লাগে। বিশাল দেয়াল ঘেরা বাড়ি। মর্মরে বাঁধানো দেয়ালে কারুকার্য। ঘরের পর ঘর কোরিডোর, মেহগনি কাঠের দরজা জানাল ভাড়ি ভাড়ি সব আসবাব পত্র। বিশাল পালঙ্কে আমি শুয়ে আছি। ময়ূর ফুল লতাপাতার নকশা। পালঙ্ক থেকে পা নামাতেই দাসী আমার পায়ে মখমলের চটি পরিয়ে দিবে। আমি অলস ভঙ্গিতে হেঁটে গরাদের সামনে দাঁড়াব। দাসী ত্রস্ত ব্যাস্ত হয়ে এসে বলবে, সাহেবান পর্দা কি সরিয়ে দিব? খড়খড়ি কি খুলে দিব? আমি কোন কথা না বলে মেহগনি কাঠের সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে চলে যাবো। সেখানে গিরিবাজ পায়রা আমার পায়ের কাছে বকবকুম বকবকুম করতে থাকবে। আমি ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে রোদের তাপ নিব ছাতার আড়াল থেকে। পাশে রাখা আধার থেকে দানা ছূঁড়ে দিব পায়রাদের জন্য। দাসী ত্রস্ত ব্যাস্ত ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি বলব, যা তুই এখান থেকে। একদম নিচে চলে যা কোথাও লুকিয়ে থাকবি না আসে পাশে।
দাসী চলে গেলে, এক সময় সে দরজায় উঁঁকি দিবে হাতে ধরা শিউলি ফুলে ভরা ঝুড়ি। আমার কাছে এসে এগিয়ে দিবে ঝুড়িটা। আমি নাক ডুবিয়ে ফুলের ঘ্রাণ নিব আমার কোল ছাপিয়ে নিচে কিছু ফুল উপচে যাবে। শিউলির মিহিন ঘ্রাণে জড়িয়ে যাবে আমার হৃদয়।
ওর খালি পায়ে তখনও শিশির ভেজা ঘাস লেগে আছে। গায়ে হালকা একটি মলিন শাল অথচ কালো মুখে গ্যাজ দাঁতের হাসি চকচক করবে মায়ায় ভরে থাকবে চোখের দৃষ্টি শুধু এই মূহুর্তটি জেগে থাকবে পৃথিবী জুড়ে।
শিউলি ঘ্রাণের মধুর স্পর্শে জড়িয়ে থাকব আমরা। পৃথিবী শূন্যতায় ভরে যাবে । এই একটি মাত্র দৃশ্য ছাড়া আর কিছু থাকবে না।
চমকে উঠি স্বপ্নে বিচরণ থেকে কল্পনার আবাস থেকে ধপাস করে পড়ি। মায়া ভরা উত্তাপে জড়িয়ে রাখা লেপ খানা আমাকে ছেড়ে উড়ে চলে যাচ্ছে কোথায়। বিশাল একটা ধমক সাথে, নবাবজাদী উঠলি। আমি এক লাফে বিছানা ছেড়ে মাটিতে পা রাখি, দৌড়ে বাথরুমে আড়াল করি নিজেকে পেছনে রেকর্ড বাজতে থাকে। খেয়ে পড়ে আর কোন কাজ নাই ........আমার হয়েছে জ্বালা.......
পানির শব্দ বাড়ে রের্কড চাপা পরে। শিউলির ঝুড়িটা আমার অপেক্ষায়। এখনো ভোরের শিশির ভেজা ফুল গুলো নেতিয়ে পরার আগে আমার হাতে তুলে দেয়ার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে সে। আমি বরান্দায় দাঁড়াতেই নিচে রাস্তা থেকে চাদরের ভিতর ঢাকা ঝুড়িটি দেখায় আমাকে। আমি দরজা খুলে নিচে নামতে থাকি, মা চিৎকার করে, কই যাস নবাবজাদী।
আমার পায়ের নিচে শ্বেত পাথরের সিঁঁড়ির স্পর্শ যেন। লোহার কলাস্পিবল গেট যেন মেহগিনি কাঠের খিলান, ঘ্রাণ ছড়ায় অপূর্ব। সে চুপচাপ এড়িয়ে এসে শিউলি ফুল গুলো আমাকে দেয়। আমি ফুলের মাঝে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেই। মুখ তুলে তাকাতেই ওর চোখে চোখ পরে। অপূর্ব আলো খেলছে, সে চোখের দৃষ্টিতে দারুণ তৃপ্তি। সে আর এক মুহুর্ত আমার দিকে দেখে তারপর উচ্ছাসিত ভঙ্গীতে যাই, বলে নাচতে নাচতে চলে যায়।
আমি ফুলের ঘ্রাণে ডুবে ধীরে ধীরে উপরে এসে ডাইনং টেবিলে বসি। ঠিক মাঝখাানে সাদা কমলা রঙের ফুল ঢেলে দেই টেবিল জুড়ে মা এসে বসে আমার পাশে। ফুল গুলো দেখে অবাক হয়ে। এখন মা আর কোন কথা বলতে পারে না। ফুলের ঘ্রাণ যেন মার কথা কেড়ে নিয়েছে। নাস্তার প্লেট আর চা এর কাপ এগিয়ে দেয় আমাকে নিঃশব্দে।
আমি আর মা চুপচাপ টেবিলে বসে থাকি ফুলগুলো শুধু কথা বলে যায় আমাদের মৌনতাকে ঘিরে।
ক্লাস শেষে ফিরতে একদম বেলা শেষ। আকাশ লাল ও গোলাপী আলোয় মাখামাখি। সূর্যটা এখনই টুপ করে ডুবে যাবে রাস্তার ওপারে দেয়ালের আড়ালে। রিকাসা থেকে নামতেই একগাদা লাল পদ্ম ধরা হাতটা এগিয়ে এলো। ঘুরে তাকিয়ে দেখি তার ভেজা চুল বেয়ে পানি ঝরছে । মুখের পানিতে মনে হচ্ছে সে কাঁদছে কিন্তু সাদা দাঁতের হাসিটা অদ্ভুত সুন্দর। আমার ভিতরটা কেমন করে উঠল।
মনে হলো সে যেন ঠাণ্ডায় কাঁপছে। আমি ধমকের সুরে বললাম, এভাবে এই শীতের সন্ধ্যায় ভিজেছো কেন?
ফুলগুলো তুলোর জন্য। আপনার পছন্দ হয়নি? হবে না কেনো ফুল সবারই ভালোলাগে তাই বলে ফুল তোলার জন্য মরতে হবে নাকি। অসুখ বাঁধালে কে দেখবে?
কিছু হবে না বলতে বলতে সে অন্য দিকে হাঁটা দিল। টলটলে চোখের আলোর ভালোলাগা আর মুক্তার মতন দাঁতের ঝিলিক ফুলগুলোর সাথে আমাকে ছূঁয়ে থাকল।
আমি দুহাত উপচানো লাল পদ্মদল হাতে নিয়ে টগবগিয়ে সিঁড়ি ভাঙ্গি যেন সারাদিনের ক্লান্তি নিমিশে উধাও হয়ে কোন অজানায় পালিয়ে গেল। ফুলের ভাষা বোঝার আশায় অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু বুঝে উঠতে পারি না।
দরজার কড়া নাড়তে মায়ের হাঁক শুনতে পাই ভিতর থেকে। নবাবজাদী আসছো?
আমি চুপ করে থাকি। দরজা খুলতেই পদ্মফুলের গোছা এগিয়ে দেই মার মুখের সামনে নিজেকে আড়াল করে রাখি। নবাবজাদী.. বলার পর মার কথা থেমে যায় ফুলের ঘ্রাণে ফুলের ভাষায়। আমাদের ঘিরে মৌনতা কথা বলে। নিরবে যেন সারাদিনের সব কথা বলে যাই আমি। নিরবে মার সারাদিন কেমন কাটল, মা একটি শব্দ করে কিছু না বললেও আমি বুঝে যাই।
ফুলগুলো একটা বড় ফুলদানীতে মা যত্ন করে সাজায়। আমি মনোযোগ দিয়ে দেখি। ক্লান্ত ঘরের চেহারাটা কেমন বদলে যাচ্ছে একটু একটু করে। সারাদিন মা এঘর ওঘর ঝাড় পোছ করেছে। নানা পদের খাবার বানিয়েছে। মোটাসোটা শরীরে নানা জায়গায় ব্যথায় অনেক কাঁকিয়েছে। কিন্তু কাছে কাউকে পায়নি। যাদের জন্য সারাদিন এক অনন্ত অপেক্ষা মনে মনে। যার যন্ত্রনায় থেকে থেকে সব কাজ বন্ধ করে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে মায়ের।
কেউ এসে পাশে বসে না, বলে না মা, তোমাকে এত কাজ করতে হবে না। মা, তুমি বসো, আমি তোমার মাথায় কাঁকই দিয়ে বিন্যাস করে দেই চুল। মা তোমার কি কোথাও যেতে ইচ্ছে করে, পাহাড়ে অথবা সমুদ্রে? কী ভালোলাগে তোমার। অথবা আজ তোমার ছুটি মা। তোমাকে হেঁসেল ঠেলতে হবে না। আজ সব আমরা সবাই মিলে করব। তোমার দুই মেয়ে এক ছেলে তোমার স্বামী আজ তোমার জন্য নিবেদন করবে তাদের দিন। তুমি তো প্রতিদিন তাদের জন্য উৎসর্গ করো তোমার সময়। মা আজ তুমি রাজরাণী এ সংসারে। তুমি শুধু উপভোগ করো।
এমন কথা বলার সময় কারো হয় না। যদিও সবাই ভাবে করবে অথচ মা ব্যথা নিয়ে সব সেরে রাখে। নিরেট ভালোলাগায় অপেক্ষা জড়িয়ে থাকে হৃদয় জুড়ে; চারপাশ ঘিরে বসবে প্রিয়জনরা। অনেক কিছু করতে চাইবে আগ্রহ ভরে কিন্তু কিছুই আর প্রয়োজন হবে না। শুধু ভালোলাগায় চোখ ভিজে উঠবে চোখের বৃষ্টি নামার আগে মা উঠে যাবে আড়াল করে খাবার আনার অজুহাতে। ফুলের ভাসা মার মনের গহীন কথাগুলো আমাকে বুঝতে সাহায্য করে। কি অপরূপ মনে হয় মায়ের নিপুন ফুল সাজানোর ভঙ্গিমা।
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে বর্ষাকালের অক্লান্ত বিরামহীন আকাশ ও মাটির কথা বলা। অনেকদিন পর দেখা হওয়া সখীদের কলকল চলছে। বৃষ্টির ছাটে ভিজে যাচ্ছে গাছ, পাতা, কবুতর, ফড়িং, প্রজাপতি, রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ, গাড়ির চালে, রিকসার হুডে, পলিথিনের দেয়ালে। স্রোতের নদী বইছে রাস্তা জুড়ে, ছড়িয়ে যাচ্ছে আঙ্গিনায়। মার হেঁসেলে তুলকালাম রান্না চলছে। ইলিশ ডিম, কই আরো কত রকমের মাছ। সারাদিন ঘরে বসে থাকো এই বৃষ্টির পানি ঘাটার জন্য কেউ বাইরে বেরুবে না। মায়ের তুখড় বারণ। এ অমান্য করে পরীক্ষার জন্য ক্লাসে যাওয়া যাবে না। বসার ঘরে বসে বসে ক্লান্ত সবাই মেঝেতে গড়াগড়ি খায় আর খাবার টেবিলে মায়ের সুস্বাদু খাবার খেয়ে ক্লান্তিকর সময় কাটানোর চেষ্টা টেলিভিশনে চোখ রেখে। বারান্দার গ্রীলে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ছূঁই মার চোখ এড়িয়ে।
মনে হয় মায়ের রান্নার কড়াই থেকে ইলিশের ডিম ঝাপ দিয়ে রাস্তার নদীতে পরে সাঁতার কাটছে। বাচ্চা ইলিশে ভরে গেছে শহরের কোনাকাঞ্চি। অদ্ভুত এক দৃশ্য! কেউ ঘরে থাকছে না ইলিশ ধরার জন্য ঘরে বসে থাকা মানুষ পানিতে সাঁতার কাটছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ হাবুডুবু লুকোচুরি খেলছে জলে।
সত্যি পানির ভিতর সাঁতার দিয়ে উঠে এলো এক মানব। সারা শরীর যখন রাস্তার ঘোলা জলে ডোবা একহাত উঁচুতে তুলে পরম যত্নে ধরে আছে এক গুচ্ছো কদমফুল। প্রার্থনার মতন উপরে মুখ তুলে আমাকে দেখে যেন সকল যন্ত্রনার অবসান হয়ে গেল বিদ্যুতের মতন ঝিলিক দিয়ে উঠল হাসি। আর স্পর্শ বিদ্ধ হলাম আমি।
নিষেধের সব বারতা ভুলে চলে গেলাম সাঁই সাঁই করে নিচে। জল ছূঁই ছূঁই করছে নিচতলার ফ্লোর। ঢেউ উঠছে নামছে। সেখানে এসে দাঁড়াল সে পরম মমতায় ফুলগুলো আমার হাতে দিল। কঠিন ধমকের সুরে বললাম এভাবে ফুল আনতে কে বলেছে?
আর কদিন পর যে এমনটি আর পাওয়া যাবে না। তাই নিয়ে এলাম।
যাও তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে শুকনো কাপড় পরো।
ধীরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে ফিরল যাওয়ার জন্য।
আর শোন, ভালো পানিতে গোসল করবে বাড়ি ফিরে। রিকসা করে যাবে? ভাড়া নিয়ে যাও।
না লাগবে না এই তো কাছেই।
কোথায় থাকে এই চিকন কালা? কখনও জানতে চাইনি। কখনও জিজ্ঞেস করিনি কেমন তার বাড়ি ঘর। কেনই বা এমন ঝড় বাদল মাথায় করে ফুল নিয়ে আসে আমার জন্য। আমার হাতে ফুল তুলে দিয়ে আমার ভালোলাগাটুকু দেখেই তার প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শুধু এটুকু সুখের জন্য সে পাহাড় নদী সমুদ্র পাড়ি দেয় যেন। আমি সুখ অনুভব করি সে আমার জন্য দুহাত উপচানো ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে এটা যেন জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে।
শূন্য মরুভূমি সময়, কেমন সুজলা সুফলা প্রাণবন্ত হয়ে যায় তার একটু খানী উপস্থিতি। কথা নেই বার্তা নেই এই ফুলের ভাষায় কথা বলা রূপকাহিনীর দেশে টেনে নিয়ে যায়। সেখানে ফুলে ফুলে ছাওয়া বাগান পাখির কাকলী। আনন্দ বৈভব। পেখম মেলে নাচে ময়ূর; ময়ূরির মনরঞ্জণ করার জন্য। মধুর সুরে বাঁশি বাজে। হরিণ মায়াবী চোখ মেলে তাকায়। কত বছর থেকে ফুলের ভাষার এই কথা চলছে । বিনিময়হীন এই দেওয়ায় কি তার সুখ। ঠিক কবে কিভাবে শুরু হলো মনে নেই।
বসন্তদিন অনেক ফুলের বাহার। দেশিবিদেশী বাজার উপচে পরা থৈ থৈ প্লাবন। খুশিখুশি মন মানুষ ভালোবাসার উৎসবে ব্যস্ত। চারদিকের এতো ফুলের মাঝে কোন ঘ্রাণ পাই না আমি। কীট যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে ফেলেছে পাপড়ি। অনেকদিন কালো মুখটাকে দেখি না। সে ছেলেটি কোথায় আছে? আসে না কেনো আর। ফুলের ভাষায় কথা হয় না। যেদিন কয়েকটা গাড়ি করে অনেক মেহমান আসল বাড়িতে পয়গাম প্রস্তাব কথাবার্তার লেনদেন শুরু হলো সেদিন থেকে ফুলের ভাষা হারিয়ে গেছে।
আজ আমাকে আংটি পরাতে এসেছে ওবাড়ির লোক। সোনার ফুলদল দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে আমাকে। অনেক ধনী তারা। কিন্তু হীরে যহরতের ভাড়ে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার। সবাই বিদায় হলে একা ছাদে এলোমেলো বসে থাকি। ঝকঝকে ছুড়ির মতন চকচক করছে একফালি চাঁদ। সে চাঁদের হার, গলায় পরতে ইচ্ছে হচ্ছে। সন্ধ্যাতারা নাকছাবি। চুল ভর্তি দোলনচাঁপার ঝাড় দুলিয়ে ঘ্রাণ নিতে চাই। কিন্তু কোথায় পাবো কে এনে দিবে? কেমনে হবে এমন শখ পূরণ। হঠাৎ নেমে আসে দোলনচাপার ঝাড় নাচে আমার সামনে। মিশমিশে কালো মানুষটি মিশে আছে অন্ধকারে। শুধু শাদা দোলনচাপা দোলা দেয় আমার হৃদয় জুড়ে। সারাদিনের অবসাদ ঝরে যায় আমি চাঙ্গা হয়ে উঠি। ক্লান্তি সরিয়ে উঠে বসি তার সাথে অনেক কথা বলতে চাই আজ। জানতে চাই অনেক কথা, যে কথা কখনো হয়নি বলা। কিন্তু নাই কখন অগোচরে সে চলে গেছে। আমার ফুলের ভিতর মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নেয়ার ভিতর।
স্বপ্নের মতন শূন্য সময় মাতাল দিন পেরিয়ে যায়। আমাকে ঘিরে চারপাশের ব্যস্ততা আমার দম বন্ধ করে রাখে। অথচ কে তা বোঝে। অনুষ্ঠান আয়োজন আলোর ঝাড়বাতি সৌরভহীন ফুলে মনে হয় শশ্মানে পুড়ানোর আয়োজন, আমাকে ঘিরে। ইচ্ছে করে তাকে খুঁজে আনি যার ঠিক মনে থাকে কখন আমার কোন ফুল চাই। হাস্নুহেনা, গোলাপ, বেলি, জারুল, পলাশ, গাঁদা অপরাজিতা, চন্দ্রমল্লিকা এতফুল সে কোথা থেকে তুলে এনে দেয় আমাকে যখন তখন। আমার নিঃশ্বাস সতেজ হয়ে যায়। জীবনটা পাখির ডানার মতন ফুরফুরে হয়ে যায়। আমি নেচে উঠি প্রজাপতির রঙিন আলো মেখে। কখনো চাইনি কিন্তু কত বছর ধরে এই ফুল দেয়ার খেলা নিরবে চলছে আমাদের মাঝে অথচ সে আর আসে না। অনন্ত অপেক্ষা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় নীরব বেদনায় হৃদয় আমার। যে কথা বলতে পারি না।
শিকলে বাঁধা পাখির মতন খাঁচা থেকে খাঁচা বদল হয়ে আমি চলে যাই, বাড়ি থেকে বিয়ের আসর ঘরে, সেখান থেকে অন্য বাড়ির আলোর ঝলকানি, ফ্লাস লাইটের চমক চোখ ধাঁধায়। আমি কিছু দেখতে পারি না। মুখে প্রলেপের পর প্রলেপ। কনের লতি, গলার ঘের, বাহু লতা জড়িয়ে আছে হরেক রকমের গহনা। এসবের ভাড়ে নুয়ে পরছি আমি। চোখের পাতা তুলে তাকাতে পারছি না ভালো করে নানা রকম সাজের যন্ত্রনায়। আমার পাশের মানুষটির চেহারাও দেখতে পারছি না ভালো করে, যার সাথে আমার জীবনের গাটছরা বেঁধে দেয়া হলো। আমি ছটফট করছি টাটকা বাতাসের জন্য। ফুলের সৌরভের জন্য। যদিও অনেক ফুলে সাজানো আমার চাপপাশ। ঘিরে আছে আমাকে লক্ষ মৃত ফুল, যাদের নাই কোন সুগন্ধ,প্রাণ।
তুমুল শব্দে ফোন বাজছে। অবসাদে ক্লান্ত শরীর তুলে, কোন মতনে চোখ মেলে তাকালাম ফোনের স্ক্রীনে মা এর ছবি। এত সকলে কী ব্যাপার। মা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না।রাত না পোহাতেই ফোন করল।
আস্তে উঠে গেলাম বিছানা থেকে পাশের মানুষের হাত গলে। ব্যালকুনিতে এসে বসলাম।
বললাম বলো মা, কেমন আছো? বেশী কষ্ট হচ্ছে আমাকে ছেড়ে থাকতে মা? তুমি না একটা পাগল। বিয়ে দিয়ে বিদায় করার জন্য কী যে ব্যাস্ত হয়ে ছিলে এখন আবার থাকতে পারছো না।
আমি মাকে আহ্লাদে আক্রমণ করি কিন্তু মা কোন কথা বলছে না।
কি মা নবাবজাদী বলে বকা দিবে, দাও না। আমি শোনার অপেক্ষা করছি তোমার আদরের বকা।
নাহ ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কোন কথা ভেসে আসে না। হঠাৎই শুনতে পেলাম ফোঁস ফোঁস শব্দ কি ব্যপার মা কাঁদছো কেনো? মন খারাপ করো না। আমি আসব তোমাকে দেখতে।
শোন মা...
মা আমাকে মা, বলে ডাকছে অজান্তে আমার চোখ ভিজে উঠে।
মা আরো কি যেন বলতে চায় কিন্তু কান্নার জন্য বলতে পারছে না।
আমারও দুচোখে জলের ধারা। মুখে কথা থেমে আছে। কোন রকমে বললাম, মা, মন খারাপ করে না। আমি আসব তোমাকে দেখতে। এরা মানুষ ভালো মনে হচ্ছে, আমাকে যেতে দিবে তোমাকে দেখতে।
মা আমার কথা শুনতে পায়নি মনে হলো জোড়ে করে কথা বলছে.... ঐ.. ঐ যে...ছেলেটা, যে তোকে ফুল এনে দিত সে এ্য এ্য ....প্রচণ্ড কান্না করছে মা।
কি হয়েছে মা? আমি সোজা হই আমার শিড়দাঁড়া বেয়ে একটা শীতল অনুভুতি নামতে থাকে। আমার পেটের মধ্যে ব্যাথা জমা হয়। আমি কেন যে আতংকিত হই মার কথা শোনে বুঝতে পারি না।
অস্থির হয়ে জোড়েই জানতে চাই, বলো কি হয়েছে?
ছেলেটা আত্মহত্যা করেছে, রেললাইনের উপর এক থোকা কৃষ্ণচূড়ার মতন সে পরে আছে।
এরপর থেকে লাল ফুল দেখলেই আমি আতংকগ্রস্ত হয়ে যাই ভয়ানক রকম।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: এইটুকু গল্প এত্ত বড় মনে হলো আপনার!
এর চেয়ে বড় গল্প আছে আমি তো লিখে ফেলতে পারি আর আপনি পড়তে পারেন না!
আমি তো একটা বই শেষ করে ফেলি এক বসায়।
পড়বেন কিনা সেটা আপনার ইচ্ছা।
তবে লেখা কতটা লিখব এটা আমার ইচছা।
পড়া হলে কেমন লাগল জানাবেন
শুভেচ্ছা রইল
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯
বিজন রয় বলেছেন: শেষটা করুণ!!
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ বিজন রয়
পুরোটা পড়ে ফেলেছেন জেনে ভালো লাগল
শুভেচ্ছা রইল
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬
হিমু রির্টান বলেছেন: কিছুটা পড়েছি ভালোই লাগলো
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ হিমু রির্টান
শেষ করবেন
শুভেচ্ছা
৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখার দরকার ছিলো, "ঐ ছেলেটা এসেছিল ফুল নিয়ে"।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: আহা তাই নাকি!
কী দারুণ
শুভেচ্ছা চাঁদগাজী
৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: অতি মনোরম।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা রাজীব
৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৫১
জনৈক অচম ভুত বলেছেন: মর্মান্তিক! কিছু কিছু মানুষকে চাইলেও মনের কথা বলা যায় না।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:০১
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ জনৈক অচম ভুত
ভিন্ন মননের মানুষ
৭| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১৩
পালক পালক বলেছেন: খুব সুনর লাগলো
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ পালক পালক
৮| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:১৫
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: সুন্দর।
০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:১৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ অনন্য দায়িত্বশীল আমি
শুভেচ্ছা থাকল
৯| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২
রিএ্যাক্ট বিডি বলেছেন: MOBILE CHOR (মোবাইল চোর) BANGLA NEW SHORT FILM 2018[Emotional] | Team Rohitpur
Watch Now:- https://youtu.be/kcJnjzeg-mA
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: লেখা পড়লেন কিনা কেমন লাগল সে বিষয়ে কিছু না বলে একটা লিঙ্ক দিয়ে দিলে এটা কি ঠিক হলো?
১০| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩০
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভাল লেগেছে। লেখাটা আরো ছোট হলে মন্দ হতো না।
শুভেচ্ছা নিন।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ বিএম বরকতউল্লাহ গল্প ভালোলেগেছে জেনে ভালোলাগল।
১১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এম এম করিম বলেছেন: শেষটা ভাল ছিল।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:১০
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ এম এম করিম মন্তব্যের জন্য।
শেষে আসার জন্য শুরুটারও প্রয়োজন আছে যে।
ভালো থাকবেন
১২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৬
ব্লগবাজী বলেছেন: করুন পরিনতির অসাধারন এক গল্প। যদিও এতটু বড়।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৩:১২
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ব্লগবাজী
করুণ হয়ে যায় সামাজিক অবস্থানের বৈসম্যের জন্য।
বড় হয়ে যায় বিস্তারিত তুলে আনতে।
অনেক ভালো থাকবেন
১৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:০৫
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ছোট গলপটি সুন্দর হয়েছে । প্রিয়তে তুলে রাখলাম ।
ফুল ও এর সাথে জড়িত চরিত্র গুলিকে কাব্যিক কথামালায়
গল্পের সাথে সুন্দরভাবে একিভুত করেছেন অতি দক্ষতার সাথে ,
দেখে ভাল লাগল । গল্পটিতে ফুলের ভাষার আবহে একটি জীবনের
যে খন্ড চিত্র উঠেছে ভেসে, বাকী জীবনের উপরে তার কি
প্রভাব পরে তা কি জানা যাবে এ কস্মিনকালে !!!
গল্পটি পাঠে মনে হল ফুলের ভাষা হতে পারে নীচের মতন করে :
প্রাসাদ কাননে অতি যতনে ফুটা নবাবজাদি পদ্ম ফুলটি কেবলি ভাবে
আহা চিকনকালা ফুলটি যদি এসে ধরত আমায় একান্ত ভালবেসে
দুরে একা শুন্যে ভেসে থাকা চিকন কালা ফুলটি ভাবে
কি দুষ করেছি আমি দুরন্ত বায়ুর তোরে বৃন্ত চুত্য হয়ে ।
বিরহিনী দুরদেশী সোনা মুখী পদ্ম ফুলটিও পারেনা কইতে
আয়না কাছে আদর করে সোহাগ ভরে টেনে নিব যে কাছে।
দুর আকাশে ধ্রুব তারা হয়ে মিলিয়ে থাকা কৃঞ্চচূড়া সহাস্যে বলে
ফুলেরা কভু থাকেনা একেলা ফুলের বুকে শতফুল হয়ে ফোটে,
দু:খ করোনা বন্ধু, নিযুম রাতের আকাশে দেখবে ফুলেরা কথা বলে
ফুলেদের সে ভাষা তখন বুজে নিও একান্তমনে আপন ভেবে ।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: কী দারুণ করে উপলব্ধি করলেন ডঃ এম এ আলী ।
আপনার মন্তব্যটি লেখার আনন্দটা সার্থক হলো।
সাথে গল্প অনুসরণ করে আপনার রচিত কবিতাটি সাহিত্যে যোগ হলো।
বেশ ভালো হয়েছে কবিতাটি।
লেখাটা উপন্যাস করার ইচ্ছা ছিল। তা হলে হয় তো বিস্তৃত আসত সবার মনের ভাবনা। মনস্তাতিক আর সামাজিক দোলচাল।
অনেকদিন আগে লিখে রেখেছিলাম। গত বছর একটা সংকলনে ছাপা হয়েছে গল্পটি। এবার সামুতে দিলাম
হয় তো এলেখাটা নিয়ে আর ভাবব না।
প্রিয়তে নিয়ে রাখলেন এটা বাড়তি পাওনা হয়ে রইল।
অনেক শুভেচ্ছা ভালো থাকুন
১৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৯
আহমেদ জী এস বলেছেন: রোকসানা লেইস ,
চমৎকার লেখা । সব মায়েরাই অমন হয় আর মায়েদের সব মেয়েরাই এক সময় নবাবজাদী থাকে !
শেষটা কষ্টকর করে দিয়েছেন ।
০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আহমেদ জী এস
গল্পটা পড়ে চমৎকার মন্তব্য করেছেন।
নবাবজাদী মেয়েরা সব সময় যদি নবাবজাদী থাকত বড় ভালোলাগত।
শেষটা আমি কষ্টকর করিনি।
করেছে, আমাদের বৈষ্যম্যময় সমাজ। ভালোবাসা মানে যেখানে অনেক প্রশ্ন। অনেক না বলা কথা।
অনেক শুভেচ্ছা থাকল ভাল থাকুন
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:২৮
আটলান্টিক বলেছেন: এতো বড় গল্প
পড়তাম?