নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য আকাশে জীবন যেমন

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১:৩৫

পর্ব --এক
এ বছরটা শুরু হলো সম্পূর্ণ নতুন ভাবে। ইউরোপিয়ান পরিবারের মাঝে। সন্ধ্যা থেকে ডিনার শেষে ফল চকলেট ডেজার্ট খাওয়া চলল। সাথে গল্প, হাসি কথা আর টিভির অনুষ্ঠান উপভোগ। ঠিক বারোটায় হ্যাপী নিউ ইয়ার বলে হ্যাগ করে উইস করা হলো। মনে হলো বাড়িতে মা বাবা ভাই বোন এভাবেই আমরা নিউ ইয়ার উজ্জাপন করতাম। অন্য আকাশের অন্য সংস্কৃতিতে তেমনি জীবন মিশে গিয়ে অদ্ভুত নষ্টালজিক করল।
যেহেতু ভোরে আমাকে এয়ারপোর্টে যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি আমারা গুড নাইট বলে যে যার রুমে চলে গেলাম। কিন্তু বাইরে তখন দারুণ হল্লা; বাজী পুরানো শব্দ এবং আলোর ছটা সাথে মানুষের আনন্দ চিৎকার। শিশুদের প্রাণ খোলা হাসি শোনা যাচ্ছিল। প্রতিটি বাড়ির মানুষ, নিজেদের মতন বাজী ফুটাচ্ছে। জানলাম, আগে এত বাজী পুরানোর প্রচলন ছিল না। এখন নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে যাদের বাড়িতে বাচ্চা আছে তারাই আতস বাজী করে, বাচ্চাদের আনন্দ দেয়ার জন্য।
ঘরের জানালা খোলে দিতেই শব্দ আলো এবং ধূঁয়ার সাথে বাজী পুড়ানো গন্ধ নাকে লাগল। প্রতিবেশী প্রতিটি বাড়ির ছূঁড়ে দেওয়া পটকা মনে হয় গায়ের উপর এসে পরবে।
জানালায় তাকিয়ে উপভোগ করালাম আলোর ঝলক। শীতের তীব্রতা নেই মনোরম আবহাওয়া। পনের মিনিট পর সব শুনসান হয়ে গেলো ধূয়া মাখা বাতাস ভেদ করে জোছনা দেখলাম খানিক।
গোছগাছের শেষ চেক আপ করে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরলাম লেপের ওমে। বাইরে জোছনার বন্যা। একটু পরে তুমুল বৃষ্টির শব্দ জানালায়। যেন সব ধূয়ে মুঝে শান্তির পরশ বুলিয়ে পরিচ্ছন্ন করে দিচ্ছে ধরা। রিমঝিম শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ঘুম আসছিল না। শরীরের অভ্যাস সময়ের সাথে না মেলায়। গত পনের দিনে তেমন অভ্যাস হয়নি ইউরোপের সময়ের সাথে।
ভোরের দিকে একটু ক্লান্তি নামল শরীর জুড়ে। কিন্তু ঠিক তখনই পাপা, মানে বাড়ির কর্তা উঠে পড়তে ডাকলেন। এর্লাম ক্লকটা বেজেছিল কিনা শুনিনি। বাবা যেমন ডেকে উঠাতেন সকালে কোথাও যাওয়ার তাগদা থাকলে অনেক দিন পর সে অনুভুতি পেলাম মনে। নতুন বছরের শুরুর সকালে। মর্নিং উইস সেরে, ব্রেকফাস্ট শেষ করে,আধঘন্টার মধ্যেই বেরিয়ে পরলাম তৈরি হয়ে।

বয়স্ক মানুষ দুজন এত্ত সকালে উঠে আমার আগেই তৈরি হয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তারা আমাকে একঘণ্টা দূরের শহরের এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিবেন। রাতের বৃষ্টি ভেজা শহর স্নিগ্ধ সতেজ লাগছে। সাড়ে সাতটায় মনে হলো, ভোর পাঁচটার মতন অন্ধকার। নিউ ইয়ারের রাত্রি শেষে, মানুষের আজ বাইরে বেরুনোর তাড়া নেই। সবাই ঘুমাচ্ছে বিছানার ওম জড়িয়ে আনন্দে। ফাঁকা রাস্তা পেরিয়ে চলছি। সূর্য জাগার কোন লক্ষণ দেখছি না। কুয়াশা মাখা মেঘ ঢাকা আকাশ।
সাড়ে আটটায় পৌঁছে গেলাম এয়ারপোর্ট। তাদের সাথে শেষ কুশল বিনিময় শেষ করে তাদের বিদায় দিয়ে রওনা দিলাম এয়ারপোর্টের ভিতর। দিন দিন চেকিং এর সতর্কতা সব এয়ারপোর্টে জোড়দার হচ্ছে। বোর্ডিংপাশ নিয়ে সিকিউরিটি চেকিংয়ে ঢুকলাম। দরজা পাড় হতেই ক্যাক ক্যাক বাজতে থাকল কিছু একটা। কোমরের ব্যাল্ট খুলার পরও শব্দ হচ্ছে, দেখা গেল হাতে দুখানা সোনার চুড়ি ছিল তাই জানান দিচ্ছে শব্দ করে। শিউর হয়ে ছেড়ে দিল। ব্যাগ আসার অপেক্ষা থেকে দেখলাম মহিলাদের মেক আপের বস্তু সব জব্দ হয়ে যাচ্ছে। বড় বোতলের লিকুয়িড এখন ক্যারিওনে নেয়া যাবে না। কেউ মায়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে কেউ আবার চেকিং এ ফিরে যাচ্ছে। এ ঝামেলার জায়গাটা পাড় হওয়ার জন্য প্লেন ছাড়ার অনেক আগে এখন যাত্রীকে আসতে হয় এয়ারপোর্টে।
নিরাপদ হয়ে বসে অপেক্ষার পালা আর তা হলো ফোনে চোখ দিয়ে থাকা কিন্তু যখন ইন্টারনেট নাই তখন সমস্যা। শূন্য ফোনে কিছু করার নেই । তাই খুঁচাখুচি করে এয়ারপোর্টের ইন্টারনেট লাগালাম। তারপর পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়। তবে বেশী সময় পাওয়া গেল না। নিউ ইয়ারের এক ঝাঁক উইশ বার্তা ইনবক্সে আর শখানেক নোটিফিকেশনে জমা হয়ে আছে দেখলাম। সেদিকে মন দেয়ার সময় নাই। বাড়ি ফেরার এবং পিক আপ করার সময় জানিয়ে বার্তা দিয়ে শেষ করতেই প্লেনে উঠার ডাক পেলাম। স্থানীয় সময় তখন সকাল সাড়ে এগারটা। যে আমাকে এয়ারপোর্টে নিতে আসবে পৌঁছানোর পর। নিশ্চিন্ত ভাবে এখন গভীর ঘুমে রাত বারোটার হ্যাপি নিউ ইয়ার শেষে রাত তিনটা বাজে তাদের সময়ে।
হুস করে প্লেনটা আকাশে উড়ে যেতেই ভেসে গেলাম আলোর বন্যায়। ঝকঝক ঝকঝক সূর্য আলো ছড়াচ্ছে । বছরের প্রথম দিনটি দারুণ সুন্দর ঝলমলে সূর্যালোকিত উজ্জ্বলতায় আদর জানাল। এত্তদিন বিষন্নতার মতন শুধুই কুয়শা শুধুই বৃষ্টি আর ছিটে ফোটা বরফ বলের উড়াউড়ি দেখে আকাশে যে এমন একটা সূর্য থাকে তার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
নতুন দিনটা বড়ই ঝকঝকে সুন্দর বছরের প্রথমদিন আলোর পথ বেয়ে যাত্রা শুরু হলো বাতাসে ভেসে। পৃথিবীর কিছু মানুষের সাথে এক যানে এক পথের যাত্রায় চলেছি এক সাথে। সবার বিচ্ছিন্ন ভিন্ন জীবন যাত্রার সাথে একটা বিষয় মনে হলো মিল আছে ছুটি কাটিয়ে সবাই ফিরছে আজকের দিনে। পাইলট এবং কেবিন ক্রুর আজকের দিনের বিশেষ শব্দ ব্যবহার হ্যাপী নিউ ইয়ার বলা।

ঘন্টা তিন পর আইসল্যাণ্ডে ল্যাণ্ড- করলাম। জার্নিটা খুবই মনোরম ছিল। কোন ঝাঁকুনি বাম্পিং নেই স্মুথ লাইক সিল্ক" বাতাসে ভেসে ডানা মেলে চলা।
আইসল্যাণ্ড যতটা তুষারাবৃত্ত থাকবে মনে করেছিলাম তেমনটা দেখলাম না। একপাশে আটলান্টিকের উত্তর প্রান্ত অন্যপাশে পাহাড়ের সারি। মাঝে কিছু ঘরবাড়ি ছোট দ্বীপটার। সামার হলে দু একদিন থেকে যাওয়া যেত। অন্য সময় দেখব ঠিক করলাম । এখানে খুব সুন্দর একটা ফলস আছে। আর আছে ব্লু লেগুন। ন্যাচারেল হট স্প্রিং ওয়াটার। চাকমা দের যে খড়িমাটি পাওয়া যায় মুখে দেয়ার। আইসল্যাণ্ডের মানুষরাও কাদা মাটি ব্যবহার করে, মুখে গায়ে খুব পপুলার। দেখার জন্য মন নিশপিস করছিল সব বিশেষ করে অরোরা আলো। তবে এবার যতটুকু উপরে উঠা আর নামার সময় দেখা যায় ততটুকু দেখেই শান্তি পেলাম। বাকিটুকু সময় নিয়ে যাওয়ার জন্য রেখে দিলাম। রেয়কোভিক শহরের ছোট এয়ারপোর্ট ব্যস্ত নববর্ষের প্রথম দিনেও।
এয়ার পোর্টের টয়লেটে গিয়ে একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো। কেউ একজন দু প্যাকেট ভর্তি চকলেট রেখে চলে গেছে দেখতে পেলাম বেসিনের পাশে। আমি বেরিয়ে এলাম অন্য একজন ঢুকল এবং আমাকে ডেকে বলল তুমি প্যাকেট রেখে চলে যাচ্ছো। জানালাম আমার নয়। যে ফেলে গেছে সে ফিরে এসে নিয়ে গেল কিনা ভাবছি। নাকি অন্য কেউ নিল শেষ পর্যন্ত।
একঘণ্টার বিরতি দিয়ে নতুন যাত্রীর সাথে নতুন গন্তব্যে রওনা হলাম। স্থানীয় সময় সাড়ে তিনটা আমার পৌঁছানোর সময় সাড়ে চারটা। অথচ পথ চলার সময় পাঁচ ঘন্টা।
প্লেন যখন উড়ছে সূর্যাটা তখন ডুবছে আইসল্যাণ্ড দ্বীপে। সন্ধ্যা এখানে অনেক তাড়াতাড়ি আসে। শীতের সময় দিন মোটে কয়েক ঘন্টার জন্য দেখা দেয়। সমুদ্রের তটরেখায় সূর্য ডুবার অসাধারন দৃশ্য মন ছূঁয়ে দিল। অন্ধকার হয় হয় সময়। অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল পৃথিবী। সেই সাথে সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে অন্ধকার পৃথিবীর পথ চলার জন্য তৈরি হচ্ছি মনে মনে। সূর্য ডুবার কিছু ছবি তুললাম প্লেনের জানালা থেকে।
প্লেন যত এগিয়ে যেত থাকল সময় তত পিছনের দিকে ফিরতে লাগল। বছরের প্রথম দিনটা বড্ড লম্বা হয়ে গেল। সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চার ঘন্টার সময় পাঁচ ঘন্টা ব্যাপী দীর্ঘ হয়ে, আমার জীবনে রয়ে গেল।
যখন গন্তব্যে পৌঁছে, এয়ার পোর্টে ছেলের সাথে দেখা হলো তখন সূর্য আবার ডুবছে। আর পথে নামতেই বিশাল বড় সুপার মুন রাস্তার বড় বড় আলোর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজের উপস্থিতি দেখাতে লাগল আমার চোখের সামনে এসে। বছর শুরুর দিনটি বড় বেশী জোছনা আলোকিত করেছে চাঁদ।
অনেকদিন পর আমাদের ঘরে আবার আড্ডা বসল। ফিরে আসার ঘুরে বেড়ানোর গল্পসহ। অনুপস্থির সময়ে তাদের কেমন কাটল, জীবনের নতুন অনেক কিছুর গল্পে অনেকটা রাত কাটিয়ে দেখলাম তখনো মধ্যরাত পার হয়নি। এসময় প্রতিদিন জেগে উঠার সময় হয়ে যেত ইউরোপের সময়ে। অথচ আমার ঘুমই আসত না তখন পর্যন্ত। আজ দুচোখ ভরে ঘুম নামছে যেহেতু গত রাতের ঘুম পুরো বাদ গিয়েছে। আজ থেকে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আপা আপনার লেখাটি খুব মন দিয়ে পড়লাম।

আপনি এত কম লিখেন কেন?
আর লেখার সাথে একটা ছবি দিতে পারেন।

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব
লেখাটা মনদিয়ে পড়ার জন্য।
লিখি তবে যত লিখি তত পোষ্ট দেই না।

ছবি দিয়ে লেখা আকর্ষন করতে আমি পছন্দ করি না।
ভালো থেকো অনেক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.