নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুদিন আগে একটা খবর দেখলাম বাতাস হচ্ছিল ভীষণ জোড়ে। প্রায় একশ কিলোমিটার বেগে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাইড লোকটিকে বাতাস ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছে। হাতে ধরা ছাতা উল্টে গেছে অনেক আগেই। বিশাল দেহী আফ্রিকান লোকটা বাতাসের সাথে যুদ্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। মাটিতে পরে গেলো। বাতাস মাটিতেও অনেকটা দূর ঠেলে নিয়ে গেল লোকটাকে।
চার বছরের একটি মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে দরজা খোলার জন্য দরজার হাতল ধরতেই মেয়েটিকেসহ দরজা পিছনে চলে গেলো বাতাসের ধাক্কায়। মেয়েটি শক্ত করে হাতল ধরে ঝুলছিল। সাহসী মেযে মায়ের সেল ফোনটাও ছাড়েনি। ও মজা পেয়ে হাসছিল। এই হঠাৎ দোল খাওয়ার অবস্থায়। ভয়াবহ ব্যাপার হতে পারত। তবে সে বেশ ভালোভাবে নিজেকে রক্ষা করেছে।
বিদেশে বাড়ির সদর দরজায় সাধারনত দুটো পাল্লা থাকে। প্রথমটা কাঁচের ওটাকে স্ট্রমডোর বলে, যা তালা দেয়া হয়না। বাইরের দিকে খুলে আর অন্য পাল্লাটি মূল দরজা, ঘরের ভিতর দিকে খুলে।
কিছুদিন আগে আমার বাড়িতেও একটা দূর্ঘটনা ঘটেছিল। বাতাসের প্রবল চাপে কাঁচের দরজাটি আঙ্গুলে বসে গিয়েছিল মূহুর্তের মধ্যে।
বাতাসের দাপটে উড়ে যাওয়া দেখে আমার মনে পরে গেল ছোটবেলার স্মৃতি। পাঁচ বছর বয়স হবে আমার তখন। আমরা মামা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে বৈশাখ মাসের এক দুপুরে বাস থেকে নেমেছি শহরে। অনেকক্ষণ বাক্স পেটরা নিয়ে অপেক্ষা করা হচ্ছে রিকসার জন্য। একটা রিকসায় হবে না লাগবে কয়েকটা। অথচ একটিও পাওয়া যাচ্ছে না। বাক্স পেটরা আর লটবহরসহ আমাদের মামা বাড়ি যাওয়ার গল্পগুলো অনেক মজার।
এখন একদিনে আমরা বাংলাদেশ থেকে সাত সাগর পেরিয়ে ভিন দেশে পৌঁছে যাই। আর সে সময় তিনশ মাইল যেতে তিনদিন কম পক্ষে লেগে যেত। কত রকমের যানবাহনে চলে দীর্ঘ পথ পরিক্রমা আমাদের শেষ হতো মামা বাড়ি পৌঁছানোর আবার ফিরে আসার। এই ভ্রমণের উপর গল্পগুলো আমার আত্মস্মৃতিমূলক বইয়ে আসবে। অনেকটাই লেখা হয়ে আছে।
যা বলছিলাম, শহরে রিকসার প্রচলনও শুরু হয়েছে খুব বেশীদিন না। বৈশাখ মাসে শহরে রিকসা পাওয়া সে সময় কঠিন ছিল। রিকসাওলারা ধান কাটতে চলে যেত। রিকসা চালিয়ে যে আয় হয় তারচেয়ে বেশি আয় ধানকাটায়।
তিনদিনের একটানা ট্রেন বাস স্টিমারে পথচলার পর শরীরের অবস্থা এমনিতেই কাহিল। চোখে ঘুম ঢুলু ঢুল করছিল। সেবার আবার অনেকটা পথ বাস নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর ট্রাকের পিছনে বসে আসতে হয়েছিল। ট্রাকের একটু খানী সিটে মা বসেছিলেন। আর আমরা সবাই ট্রাকের পিছনে। এক একটা ঝাঁকুনিতে মনে হচ্ছিল ছিটকে বাইরে না পরে যাই। পাটাতন থেকে অনেকটা উপরে উঠে যাচ্ছিলাম আর পরছিলাম ধপাস করে। ছোট হাতে শক্ত করে ট্রাকের কিনারা ধরে রেখেও স্থির থাকা যাচ্ছিল না। কারন রাস্তা তো এমন পীচ ঢালা মশৃণ ছিল না। রাস্তা ছিল বড় বড় বোল্ডার দেয়া এবং খানাখন্দ গর্তে ভরা। মাঝে মাঝে ট্রাক যখন ব্রেক করে থামছিল তখন পিছন থেকে সামনে গড়িয়ে যাচ্ছিলাম। নাক মুখ ট্রাকের দেয়ালে ধাকাকা খাচ্ছিল প্রায়। আর বৈশাখ মাসে বৃষ্টিহীন রাস্তার শুকনো ধূলার পাউডার উড়ে এসে আদরে পলেস্তরা দিয়ে দিচ্ছিল সারা শরীরের জুড়ে। উড়ুখুড়ু ধূলা ভর্তি চেহারা। এমন দারুণ ট্রাকের পিঠে জাম ঝাঁকানো হয়ে কিমভুত চেহারা নিয়ে, নেমে এখন আবার রিকশার জন্য অপেক্ষা চলছে সদর রাস্তার উপর। মন চাইছে বাড়ি গিয়ে বিছানায় গড়াব। অথচ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছি আমরা অনেকক্ষণ। বৈশাখের রুদ্র খরতাপ মাথায়। এক সময় বাবা বললেন তোমরা হাঁটতে থাকো। আসে পাশে কয়েকজন পরিচিত লোকজন এসে গেছে। কিছু ব্যাগ স্যুটকেস মাথায় তারা হাঁটতে শুরু করেছে তাদের সাথে আমি আর ভাই মিলে হাঁটছি। পিছনে মা বাবা আরো বাক্স ট্রাংক নিয়ে ঠেলা বা কিছু পাওয়ার অপেক্ষায় রয়ে গেছেন। ছোট ছোট পায়ে আর শরীরে শক্তি নাই আমার। কয়েকটা রাস্তা ঘুরে আমরা বাসায় আসার শেষ রাস্তায় পৌঁছেছি। এর মধ্যে আকাশের রঙ পরিবর্তন হয়ে কখন প্রখর রোদ ঢেকে দিয়েছে, নীল আকাশ ঘন মেঘে কালো হয়ে নানা রকম ফনা তুলে ছুঠে আসছে খেয়াল করিনি।
সুইপার কলোনি পেরিয়ে আর কয়েকটি বাড়ি পেরুলেই আমাদের বাড়ি। ঐ তো দেখা যায় বটগাছটা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনে দোতলা কাঠের বাড়ি। এক একটা বাড়ি মানে তো এখনকার মতন বাক্সর ভিতরে অনেক মানুষের বাস ছিল না তখন। এক বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুপা পেরুলেই অন্য বাড়িতে যাওয়া যায় এখন।
সে সময় শহরের এক একটা বাড়ি অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়ানো ছিটানো। উঠান পুকুর চারপাশে তার মাঝে কাছরী রান্নাঘর থাকার ঘর চারপাশ ঘিরে। চারটা বাড়ি পুরো এটা রাস্তা জুড়ে। এই বাড়িগুলো পেরুলেই আমাদের বাড়ি।
আমার ছোট পায়ে হেঁটে সেখানে পৌঁছাতে অনেকটা সময় লাগে রাস্তা শেষ হতে চায় না। তেপান্তরের মাঠ পেরুচ্ছি যেন। গলা শুখিয়ে যাচ্ছে। বুক ধরফর করছে। তবু চোখে দেখতে পাচ্ছি বাড়ি, তাকে ধরে ফেলব সে আসায় চলছি। সুইপার কলোনি পার হওয়ার পরই উত্তর পাশে বিশাল খেলার মাঠ। খোলা ধূধূ প্রান্তর। হাওয়া ভেসে আসে নদীর পার থেকে পাহাড়ের কোল থেকে। সেই ধূধূ প্রান্তর থেকে ঈষান কোনের প্রবল হাওয়া উড়ে এলো হঠাৎ দমকা হাওয়া। বৈশাখের ঝড় তাণ্ডব। ঈষানকোনে ঝড় উঠেছে আর আমি উড়ে যাচ্ছি বাতাসের সাথে। সুইপার কলোনির আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতেই বাতাস আমাকে উড়াতে লাগল। রাস্তার উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে চলে যাচ্ছি বাতাসের ঠেলায়, কিছুতেই পুব মুখো হাঁটতে পারছি না। দক্ষিণে রাস্তার পাশে ডোবা। আমি সেই ডোবার জলে হাবুডুবু খাব এই ভয়ে নিজেকে প্রাণ পণে রাস্তার সাথে সেটে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি । কিন্তু কিছু তো ধরার নেই। ফাঁকা ধূধূ রাস্তায়। আর একটু হলে আমি উড়েই যেতাম হয়ত। হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ একজন পিছন থেকে আমার বাম হাতটা ধরলেন। বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিতে চাচ্ছে পূবে বা দক্ষিণে আর উনি আমাকে ধরে রেখেছেন। এবং আমি বাতাসের সাথে উড়ে গেলাম না। আমাদের পাড়াতুতো চাচা। আমার বান্ধবীর বাবা উনাকে চারপাশে কোথাও দেখিনি আগে উনি যেন দেবদুতের মতন আমাকে ধরার জন্য ওখানে হাজির হলেন। বাড়ি পর্যন্ত হাত ধরে এনে আমাকে পৌঁছে দিলেন বাতাসের সাথে টানাটানি করে।
সেই উড়ে যাওয়ার অনুভবটা এখনও আমি টের পাই যেন । কিছুতেই আমি মাটির সাথে পা সেটে রাখতে পারছি না। বিদেশে অনেক সময় তেমন প্রবল বাতাসের পাল্লায় পরেছি। এখানে প্রায় সময় অমন তুমুল উড়িয়ে নেয়া বাতাস বয় ঝড় হওয়া ছাড়াও।
১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:০৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: হা হা হা..... তাই তো! এমনটি তো ভাবিনি। ধন্যবাদ মুশি ১৯৯৪
মজা পেলাম গান আপুর গল্প শুনে বেচারা গান গাওয়ার বড় শখছির নিশ্চয়।
শুভেচ্ছা রইল
২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:৩২
চাঁদগাজী বলেছেন:
চৈত্র, বৈশাখের কাল-বৈশাখী ছিল ছোটবেলায় ছুটোছুটির সময়, শক্তি পরীক্ষা ও নিজের বীরত্ব পরীক্ষার সময়।
১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:০৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: বাহ ঝড়ের সাথে পাল্লা দেয়া। আমি একবার হাসতে হাসতে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম গভীর রাতে ঝড়ের বাতাস শুনে। খানিক পর পর প্রবল দমকা হওিয়া আসছে আর চলে যাচ্ছে।
পরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঝড় যদি সব লণ্ডভণ্ড করে ফেলে তবে মরণরে তুঁহু মম শ্যাম সমান গাইতে গাইতে আলিঙ্গন করব।
শুভেচ্ছা রইল
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৩:০৮
মুশি-১৯৯৪ বলেছেন:
ভাগ্যিস সেদিনের সেই দমকা হাওয়া আমাদের এই মিষ্টি আপুকে উড়িয়ে নিয়ে যায় নি, নয়তো এত সুন্দর লেখাটি কে লিখতো।
যাই হোক আমার ছেলেবেলার এক আপুর কথা মনে পড়ে গেল। সম্ভবত আমিই ছিলাম তার গানের একমাত্র শ্রোতা। তার বিশ্বাস ছিল আপনার গানে, কিন্তু তার গলায় যে আওয়াজ বেরোত সেটা চেচানি প্রজাতির। আমি অবশ্য তার প্রশংসা করে যেতাম। তবে মাঝে মাঝে কেউ কেউ ছুটে আসত বাড়িতে কিছু বিপদ ঘটেছে মনে করে।