নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মেঘ মেয়েরা অলস ভাবে শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে সূর্য হাত বাড়িয়ে সুরসুরি দিচ্ছে, এর চুলে ওর গালে অন্যজনের পায়ে। তখন খিলখিল হেসে নড়ে চড়ে বসে আবার গল্পে মেতে উঠছে।
আজ ওদের খুব অলস লাগছে। নড়তে ইচ্ছে করছে না। আগের রাতে শানাইর সুরে অনেক নৃত্য হয়েছে। বিদ্যুৎ চমক আলোর ঝলকানি। তুমুল মেঘগর্জন। প্রায় সারারাত ব্যস্ত থেকেছে তারা ভূমি ও উদ্ভিদের সঙ্গমরত উৎসবে।
মেঘ সখিরা হাসছে কথা বলছে, কেউ বা আঁকছে হঠাৎ কখনো দেখা ভালোবাসার, কারো মুখ। অথবা ইউনিকোর্ন ঘোড়ার মাথার মধ্যিখানের শিংটি সাজাতে ব্যস্ত। যেন ঐ শিং এর মাঝে আছে সব পাওয়া না পাওয়ার যাবতিয় শক্তি লুকিয়ে। একপাশে চুপচাপ গম্ভীর কালো মুখে বসে ছিল দাদিমা হঠাৎ সে ফুপিয়ে উঠল, ঝরতে লাগল তার চোখে জল।
মেঘমেয়েরা চারপাশ থেকে দাদিমার কে দেখল মুখ ঘুরিয়ে। তারপর ধীরে এগিয়ে গেলো সবাই তার কাছে। কি হয়েছে জানতে চাইল একে একে সবাই। দাদিমা কিছুতেই ফুপানো থামাতে পারছে না কারো প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারছে না। অনেক্ষণ কেঁদে কেটে শান্ত হয়ে এক সময় বলল, আজ তোদের হাসি দেখে আমার ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো।
মেয়েরা সব এক সাথে জানতে চাইল সে সময় কি অনেক দুঃখের ছিল?
না না অনেক সুখের সময় ছিল
তবে তুমি কাঁদছো কেনো
সুখটা হারিয়ে গেলো তাই।
আহারে...মেয়েরা সব করুণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগল তোমার সে সুখের সময়ের গল্প বলো দাদিমা আমাদের। মেয়েরা অধির অপেক্ষায় নিরব হয়ে তাকিয়ে আছে দাদিমার মুখে।
ফোস ফোস করে শ্বাস ফেলে, ঘোত ঘোত করে নাক ছেড়ে, চোখ কচলিয়ে মুছে দাদিমা এক সময় বলতে শুরু করল তার গল্প।
আমি ছিলাম সাগরে। বাবা ছিল রাজা আমি রজকন্যা। বিশাল সাগরের এপার ওপার সাঁতরে বেড়াই। আনন্দে হুটপুটি করি। সুখ আর আনন্দ চারপাশে খেলে বেড়ায় আমাকে ঘিরে।
একদিন দেখা হয়ে গেলো এক অচেনা মানুষের সাথে। জাহাজে ভাসতে ভাসতে ঝড়ের কবলে পরে পানিতে ডুবে মরে যাচ্ছিল প্রায়। তাকে কোলে তুলে তীরে পৌঁছে দিয়ে অপেক্ষা করছিলাম জ্ঞান ফিরার। একসময় সে জাগল। চোখ মেলে আমাকে দেখল। সে এক মধূর অনুভব। তার চোখে চোখ রেখে আমি ভুলে গেলাম কে আমি। কি আমার পরিচয়, কি নিয়ম পালন করতে হয়। সেও যেন ভুলে গেলো সে কোথায় ছিল, কি তার পরিচয়। ছোট একটা দ্বীপে আনন্দে আমরা একে ওপরের হাত ধরে খেলে জীবন কাটাতে থাকলাম। সে গাছের ফল খায়। আমরা সাগর জলে হুটপুটি সাঁতার কেটে ক্লান্ত হয়ে জোছনার মিহিন আঁচল পেতে নীল জলের সাদা বুদবুদ মেখে জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে থাকি।
আহা কি সুখের সময়। আমরা ভুলেই গেছি পৃথিবীতে আর কেউ আছে। আমাদের আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধুই দুজনে দুজনার হয়ে এ জীবন বয়ে যাক আমাদের আর কিছু চাই না।
কত মাস কত বছর কেটেছে জানি না।
আহা কি দারুণ। মেঘ মেয়েরা আনন্দে আপ্লুত হয়। একে ওপরের হাত ধরে ঘন হয়। তাদের চোখের কোল ভালোলাগায় ভিজে উঠে। মন হয় আদ্র
অনেকটা সময় নিয়ে দাদিমা আবার বলে , ঠিক দারুণ এক মধুময় সময়। দুজনের ভিতর দুজনের মগ্ন সময়। এ আনন্দ মাঝে টের পেলাম আমি গর্ভবতি। আমি তার সন্তানের মা হবো।
ইস!! সম্বস্বরে মেয়েরা আতংক ভালোলাগার শব্দ করে।
হ্যাঁ ভয় লেগে গেলো জীবনে। এক ভোরে ঘুম ভেঙ্গে জেগে দেখি আমাদের জোছনা ঘর অন্ধকারে ঢেকে গেছে। আমাদের দ্বীপের গাছগাছালিতে আগুন জ¦লছে। অনেক পদ শব্দ অনেক কথা ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে।
আমরা ভয়ে আতংকে একে ওপরকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে আছি। এক সময় অনেক মানুষ ঘিরে ধরল আমাদের। তাকে দেখে খুশি হয়ে উঠল সবাই সেই সাথে আমাকে দেখে রাগ করল। এবং তাকে টেনে হিছরে আমার বাহু থেকে ছুটিয়ে নিয়ে গেলো তারা। দূর থেকে দূরে এক সময় মিলিয়ে গেলো সব মানুষ, আমার প্রেমিক কে নিয়ে। সে আমার নাম ধরে ডাকছিল সমুদ্রকন্যা ....সমুদ্রকন্যা তার চিৎকার থেমে গেলো আমি আর তার কণ্ঠ শুনতে পেলাম না, এ জীবনে আর কোনদিন। আমার ভূমিপুত্র হারিয়ে গেলো আমার থেকে।
সেদিন সকালে উঠে সমুদ্র স্নান করতে গেলে তাকে জানাতে চেয়েছিলাম আমার অন্তসত্বা হওয়ার খবর। কিন্তু বলা হলো না আর। সে জানল না আমি তার সন্তানের মা হতে যাচ্ছি। আমার হঠাৎ পাওয়া ভালোবাসা হঠাৎ করে হারিয়ে গেলো। সে চলে গেলো আমি একা বসে আমি পোড়ে যাওয়া খাঁখাঁ দ্বীপের মধ্যে একা কয়লার মতন পুড়ছি।
কতদিন এভাবে কেটে গেছে মনে নেই। হঠাৎ একদিন দেখি বাবা, অনেক সঙ্গী সাথী নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
বাবার অনেক মন খারাপ আমার জন্য। অনেক কথা বাবা বলছিল আমরা হারিয়ে যাওয়া নিয়ে। বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ছিল কিন্তু আমাকে খুঁজে পাচ্ছিল না। আর এখন আমার শরীরের পরিবর্তন দেখে বাবা, অনেক রাগ হলো। অনেক বকা ঝকা করল। সব মনে নেই ।
শুধু আমাকে সাথে নিয়ে চলল তারা। আমি এক প্রাণহীন জড়ো বস্তু হয়ে গেছি। তাদের ভালো মন্দ কথার কোন উত্তর নেই আমার আমি নির্বাক। বাবা পুরোহিতের সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিল। সে অনেক মন্ত্র তন্ত্র পরল আমাকে ঘিরে। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিল আমি আর সমুদ্রে থাকতে পারব না। আমাকে ভেসে বেরাতে হবে আকাশের কোলে আজীবন।
বাড়িতে নিয়ে গেলো আমাকে ঠিক কিন্তু আমি দরজা মাড়িয়ে ঘরে ঢুকতে পারলাম না। আমার মা, আর সব আত্মিয়, সখিদের সাথে দেখা হলো না। শুধু দরজায় আমার মায়ের উদ্বিগ্ন দুটো চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখতে পেলাম। আমার দৃষ্টি আর মায়ের দৃষ্টি এক সাথে সেঁটে রইল। ওরা আমাকে ঘিরে অনেক মন্তু তন্ত্র পরছে। বিশাল যজ্ঞ হচ্ছে নানা রকম নিয়মে আমাকে ঘিরে কেউ হাতে মারছে , কেই ঝাটার বাড়ি দিচ্ছে কেই জোড়ে জোড়ে শঙ্খ বাজিয়ে যাচ্ছে। চারপাশে নৃত্যরত অনেক কিছু। এক সময় আমার শরীরটা বায়বিয় হয়ে যেতে থাকল। আমি ধূঁয়ার মতন কুণ্ডলি পাকিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বাড়ি ছেড়ে সাগরের জল ছেড়ে হাওয়া ভেসে উপরে উঠতে থাকলাম। দরজার কড়ি কাঠ ধরে থাকা আমার মাকে দেখলাম ঠাস করে পরে যাচ্ছে। আর আমি সাগর পেরিয়ে চলে এলাম আকাশে। শরীর হারিয়ে হয়ে গেলাম বায়বিয়।
ইস! সম্বস্বরে মেয়েরা কোরাস করে উঠল। দুঃখে বিষাদে ওদের চোখের জল স্থির হয়ে গেলো , কারো দু এক ফোটা জল গড়িয়ে গেলো গাল বেয়ে। দ্বীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভাড়ি হতে লাগল। কষ্টের দমবন্ধ এক অনুভব সবার মন জুড়ে। হালকা মেজাজে থাকা মেঘ সখিরা মুখ গম্ভীর করে দাদিমার দুঃখে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে থাকল। তাদের আনন্দ থেমে গেলো। শুধু মনে হতে থাকল কেনো, কেনো এমন করল সবাই। কেনো দাদিমা আর তার প্রেমিককে এক সাথে থাকতে দিল না। যেখানে দুজন সুখে চড়ে বেড়াচ্ছিল আর কারো কোন ক্ষতি না করে। কেনো তাদের বিচ্ছিন্ন করা হলো।
অনেক কেনো প্রশ্ন হয়ে গুমড়াতে লাগল সবার মনে। সেই কষ্টে ঘন হয়ে উঠল চারদিক, কালো অন্ধকারে।
দাদিমা আবার বলল। তোদের যেমন কষ্ট হচ্ছে আমার ও তেমন কষ্ট হয় তখন সব তঝনছ করে ফেলতে ইচ্ছে হয়।
হ্যাঁ আমাদেরও সব তছনছ করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। ভীষন ঝড় উঠল চারপাশে বাতাসে আছড়ে পরতে লাগল গাছগুলো ফুলে ফুলে উঠতে লাগল সাগর জল।
দূরন্ত বাজ পরছে কড়কড়াৎ শব্দে। যে যেখানে ছিল তাড়াতাড়ি আশ্রয়ের জন্য ছুটছে রাস্তার মানুষ।
নীলার সাথে দেখা শেষ করে আমিও ফিরে চলছিলাম। ফুটওভার ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে চারপাশে দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল। আজ থেকে জীবনটা কেমন বদলে গেলো আবার। প্রায় পাঁচ বছর নীলার সাথে প্রেম করলাম। নীলা বলেছিল আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। আমিও বলেছিলাম। তুমি আমার নীলা তোমাকে ধারন করে আমি হয়ে উঠব সমৃদ্ধ।
অথচ আমাদের ফ্যাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে নীলার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন, ওর অভিভাবক। আমি এব বেকার ছেলে এখনও চাকরি পাইনি কবে পাবো তার ঠিক নাই তারপর জীবন অনেক কঠিন। নীলা যেন আমাকে ভুলে যায় এবং এস্টাব্লিশ পাত্রকে বিয়ে করে পরিবারের শান্তি বজায় রাখে।
অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে আজ বের হয়েছিল শুধু আমাকে শেষ বার দেখার জন্য এবং জানানোর জন্য। ওর মন জুড়ে আমি থাকব। পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে ওর শরীরটা অভিবাবকের হতে তুলে দিচ্ছে কিন্তু মনটা আমার কাছে রেখে গেলো।
ফুটওভার ব্রীজের ওপর দাঁড়িয়ে বৃষ্টি এবং বাতাসের ঝাপটায় ভিজতে ভিজতে আমার মনে হলো নীলা আমাকে জড়িয়ে রেখেছে তার মন দিয়ে। আমরা এক সাথেই আছি,তুমুল বৃষ্টি এবং বাতাসের মতন।
২| ২০ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান মাহবুব
৩| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৩৫
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: চমৎকার একটি লিখা ! পাঠক কম কেন বুঝে আসছেনা !
প্যারা করে লিখলে আরেকটু দৃষ্টি নন্দন হতো ।
শুভ কামনা জানবেন রোকসানা ।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ গিয়াস উদ্দিন লিটন ।
এখানে বিনিময় প্রথা চলে। আমি সেখানে পিছিয়ে আছি ......তাই পাঠক আছে মন্তব্য কম।
৪| ১৪ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর লেখা। খুব ভালো লাগল।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ প্রামনিক
আমার ও খুব ভালোলাগছে জেনে লেখাটি আমনার ভালো লেগেছে
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৫০
হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর লেখা।