নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখছি আর মাঝে মাঝে বাইরে দৃষ্টি মেলে দেখছি। ভয়াবহ শুভ্র পৃথিবী। মেঘের কুন্তল উড়ে যাওয়া যেন জল ছবির ছাপ আঁকছে আপন মনে পৃথিবী। সাদা চাদরের ঘেরা টোপের মাঝে আছি। না কোথাও তেমন কোন অস্থিরতা নেই।
অথচ থেকে থেকেই লেখা থেমে যাচ্ছে। ইচ্ছেরা উথালপাতাল বেসামাল হয়ে যায়। মনের ভিতর একট রক্তের নদী বয়। নদীটা দীর্ঘ হয়। ফেব্রুয়ারির শেষের দিনগুলো ভয়াবহ যন্ত্রণাময় হয়ে উঠে। নদীর বিশালতা বাড়তে থাকে। নদী অনেক ভালোবাসলেও এই নদীটির প্রবাহ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে আমি খুশি হই। একদম মরে হেজে যাক। চড়া পরে সব ধারা গতি এক্কেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি ২০০৪ প্রিয় লেখক হুমায়ুন আজাদের রক্তাক্ত শরীর বারবার এসে চোখের সামনে দাঁড়াচ্ছে। যেমন ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা বলতেন তেমন ভাবে যেন একটা তাচ্ছিলের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে, প্রশ্নটা করে যাচ্ছেন, কিছুই করা হলো না! কেউ সাবধান হলোনা। হাত ঝেড়ে ঘুরে চলে গিয়ে আবারও ফিরে আসছেন। ঘাড় গলা থেকে গলগল গড়িয়ে যাওয়া রক্তে বুক ভেজা। রক্তাক্ত হৃদয় যেন বাংলাদেশের মুক্ত মানুষের। রক্ত গলা বেয়ে নেমে যাচ্ছে। দৃশ্যটা অসহ্য হয়ে উঠছে। বলছি আপনি চলে যান আমার সম্মুখ থেকে। ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে মেঘের পর্দার আড়ালে চলে গেলেন তিনি ঠিকই আর কিছু না বলে। কিন্তু আমার মনের ভিতর একটা অস্বস্থি একটা দলাপাকানো কান্না ঠেলে আসতে লাগল। ছায়ার মতন রক্তাক্ত অনেক মানুষ হুমায়ুন আজাদকে ঘিরে দাঁড়িয়ে মেঘের আড়ালে।
বইমেলা আনন্দ বই প্রকাশ ভাবনাগুলো ভাবতে গিয়ে আবারো মনে হয়ে গেলো ২০০৯ উন্মুখ প্রতীক্ষা, আমার বইটা কবে আসবে মেলায়? প্রতিদিনের অপেক্ষা অস্থির মেলার অনুষ্ঠান দেখার জন্য রাত জেগে বসে থাকা অন লাইন টেলিভিশনে চোখ রেখে। আগের বছর থেকে এই সুযোগটা পাওয়া গেছে আর নেশা হয়ে গেছে অন্য কাজের সাথে দেশের টিভি দেখা ল্যাপটপে। ভোর হয়ে আসছে ঘুমাতে যাবো অথচ একি ভয়াবহ খবর! পীলখানায় দরবার কক্ষে হামলা। কি হচ্ছে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। রাত ভোর রাতের খবরটা অস্বস্থিতে রাখল ঘুমের ভিতর। উন্মুখ হয়ে থাকলাম কি হয়েছে জানার জন্য। শেষরাতে শোনা খবরটা যে কতটা ভয়াবহ ছিল আন্দাজ করতে পারিনি। ৫৬ জন বি ডি আর অফিসারকে র্নিমম ভাবে হত্যা করা হয়নি শুধু অকথ্য অত্যাচার হয়েছে অনেক পরিবারের সদ্যস্যদের উপর। ওদের সবাইকে আমি চিনি না। কিন্তু মঞ্চুর এলাহি লিটন, যার নিথর দেহ সবার শেষে খুঁজে পাওয়া যায় ড্রেনের ভিতর, ঘটনার কয়েকদিন পরে। তার শান্ত চেহারা, ভদ্র ব্যবহার, ছোট সেই ছেলেটি আমাদের শহরের; তার নিঃশব্দ তাকিয়ে থাকা আমার বুকের ভিতর হীম করে দেয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদের সামরিক অফিসার সবার কথা শুনি, পড়ি, দেখি আর চোখের জলে ভাসি সবাই আমার কাছে লিটন হয়ে যায়। প্রতিটি অফিসারের পরিবার আমার পরিবার হয়ে যায়। এই দেশের সাধারন মানুষ কেন তাদের এমন অত্যচার সহ্য করতে হলো।
নৃশংস সেই হত্যার বর্ণনা আমি করতে পারি না। শুধু দেখি একটি স্বাধীন দেশে রক্ত নদীর দীর্ঘ হওয়া। নানা ভাবে মানুষের উপর খর্গহস্ত হয় মানুষ আর প্রবাহিত হয় রক্তেরধারা।
আমার বইটা ফেব্রুয়ারির শেষে এলো কিনা তা নিয়ে আর উৎসাহিত হই না। দেশের মানুষ স্তব্ধ হয়ে যাওয়া দেখি। সাথে আমিও স্তব্ধ হয়ে থাকি। ঠিক কেন এই ভয়াবহতা তার সঠিক উত্তর আজো পাইনি, খুঁজি, হাতড়িয়ে ফিরি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটানোর পিছনে আসল কলকাঠি কে নেড়েছিল জানতে।জানা হয়না অস্পষ্টতা যন্ত্রনার কবন্ধ হয়, বিবমিষা জাগায়।
ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদের পছন্দের বাইরে কথা বলা মানুষদের তালিকা করে, হুমকি দিয়ে , জন সমুখে হত্যা করছে। রাজপথে ঘরে, কার্যালয়ে। সর্বত্র তাদের অবাধ বিচরণ। তারা জঙ্গীবাদী তারা ধর্মের রক্ষক। তারা মানুষ হত্যা করে ঘোষনা দিয়ে। রাজীব থেকে অভিজিৎ, দীপন একের পর এক মুক্তমনা মানুষ হত্যা হচ্ছে। লুটিয়ে পরছে অলোকিত চিন্তা ধূলায়। আতংক, স্তব্ধ খবর। রক্ত নদীর দ্রুত প্রবাহ তৈরি করে চলেছে। অথচ ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজ হাতে বিচার তুলে নেয়া অসুর ধরা ছূঁয়ার বাইরে চড়ে বেড়াচ্ছে আনন্দে, ধরা না পরে। সব জেনেও না জানার ভান চলছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে হত্যাকারীদের আশকারা দেয়া হচ্ছে। মুক্তমনাদের চিন্তা ভাবনায় শিকল দিতে বলা হচ্ছে। পরিকল্পনা চলছে কোথায় কে জানে। কার কাঁধ থেকে মাথাটি নামিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে অনায়াসে কাজটিও সেরে ফেলছে। আর মাথা হারানোর ভয় নিয়ে মুক্তমনের মাথাগুলো চলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ভয় আর র্দূবিসহ ধুঁকে ধুঁকে। মুক্ত চিন্তা করছে বলে তারা যেন অচ্ছুত হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রের কাছে। তারা দেশ ছেড়ে চলে যাক। অথবা চুপচাপ হয়ে থাক। দেশ চলে যাক ধর্ম পালনের অশ্লীল আচরণের দখলে। এই অসভ্য অনৈতিক আচরণ পছন্দ হলো না বলে কারো উপর ঝাঁপিয়ে পরে কুপানো থামিয়ে দেয়ার সত্যিকারের কোন উদ্যোগ নেই সরকারের মাঝে। বরঞ্চ ভাব তোমরা তাদের উসকাও কেনো! তবে তো তারা মারতে আসবেই। অথচ জানা উচিত প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার। বিশ্বাস এবং অবিশ্বসের ক্ষেত্রে। মানা এবং না মানার জন্য। ব্যাক্তিগত ইচ্ছার উপর জোড় করার অধিকার কারো নাই। আর তা বলার জন্য লেখার জন্য তাদের মেরে ফেরার অধিকারও নাই। যদি অন্য ভাবে মুসল্লিদের বক্তব্য শোনে নারীরাই প্রতিবাদ করে চাপাতি নিয়ে তাদের আক্রমণ করতে যায় তা হলে কেমন হবে? অশ্লীলভাবে নারীদের বর্ননা করার বিষয়ে তাদের থামিয়ে দেয়ার জন্য। দুচারজন মুক্তচিন্তার মানুষ এই বিষয়ে বলছে ওরা সহ্য করতে পারছে না। অথচ অলিতে গলিতে গ্রামগঞ্জে মহল্লায় পাড়ায়, মসজিদে প্রতিদিন অসংখ্য উল্টাপাল্টা শব্দবলি মানুষ শুনছে। শুধু ধর্মের নামে এসবের কোন প্রতিবাদ নাই। মানুষের ভীরুতা এবং অজ্ঞতা ধর্মের নামে এই ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
গতবছর ঠিক আগের দিন যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম। অনেক গল্প আড্ডায় হাসিতে মেতেছিলাম। সেখানে অভিজিতের বুদ্ধিমান মাথা ধূলায় লুটিয়ে আছে রক্ত জড়িয়ে আছে বাংলার মাটি। অনেক মানুষের সামনে এসে কুপিয়ে গেলো অভিজিৎ রায় এবং তার স্ত্রী বন্যাকে। অভিজিতের মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা চলে গেলো অথচ আজো হত্যাকারীকে জানা হলো না।
চারজন ব্লগার হত্যার পরিকল্পনা হয়েছে এ বছর হুমকি পেয়ে অনিশ্চিত জীবন যাপন করেছেন তারা। এবছর সুযোগ পেলেই ধর্ম রক্ষা করতে মানুষ হত্যা করবে কলমের জবাবে চাপাতি চালাবে ধর্মের বর্ম-ধারক।
আনন্দময় লেখা থেমে যায় এইসব ভাবনায় মন ভারী হয়ে যায়। রক্তের মতন লাল হয়ে যায় আর কালো চাদরে ঢেকে যায় সব আশার আলো। যখন জানা হয় না এই সব হত্যার বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে দ্রুত। নাগরিকের জীবন যখন অনিশ্চিত সর্বত্র। যদি আর কোন মৃত্যু খবর শোনার আতংক না থাকত। তবে বেশ লাগত সুন্দর একটি দেশের কথা ভাবতে। তবুও স্বপ্ন দেখি আশা জিইয়ে রাখি হয়তো কোন একদিন হবে সর্বত সুন্দর । শুধু অল্প কিছু মানুষ নয় প্রতিটি মানুষ হবে নিষ্ঠাবান দেশের প্রতি তাদের দায়িত্বের প্রতি।
০১ লা মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:৫৮
রোকসানা লেইস বলেছেন: দেশের চেহারাটা পাল্টানোর অপেক্ষা করি। অজ্ঞতার মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়নোর দ্বায়িত্ব সবার ধন্যবাদ মাহবুবুল আজাদ শুভ সুন্দর থেকো।
২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮
বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর লেখা, বরাবরের মতো।
+++
০১ লা মার্চ, ২০১৬ ভোর ৪:৫৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক শুভকামনা বিজন রয়
৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০১
সৌহার্দ্য মুত্তাকিন বলেছেন: গোঁড়া থেকে শুরু করতে হবে...
০১ লা মার্চ, ২০১৬ ভোর ৫:১৬
রোকসানা লেইস বলেছেন: গোড়া খুঁজতে গিয়ে গড়বড় হয়ে যাবে এখান থেকেই শুরু হোক।
শুভেচ্ছা সৌহার্দ্য মুত্তাকিন
৪| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯
রানার ব্লগ বলেছেন: দেশে যখন বলদ আর ছাগলের সংখ্যা বেরে যায় তখন অনাকাঙ্ক্ষিত গুঁতো খেতেই হবে।
বাঙ্গালী সবসময় শিক্ষানবিস জাতি, এরা শিখছে, কবে যে পাস করে শিক্ষিত জাতি হিসাবে সার্টিফিকেট পাবে তা আল্লাহ্ জানে একমাত্র ।
৫| ০২ রা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৩২
রোকসানা লেইস বলেছেন: দেশে যেমন কয়েক রকম শিক্ষ ব্যবস্থা প্রচলিত। বিভিন্ন রকম ধারনার সম্মেলন চলছে তেমন।
কিছু ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স হওয়া দরকার।
নিজস্ব পরিচয়ের মতন।
শুভকামনা রানার ব্লগ
৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:১১
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
অপেক্ষা করি সুন্দরের...
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৩৩
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: শুধু অল্প কিছু মানুষ নয় প্রতিটি মানুষ হবে নিষ্ঠাবান দেশের প্রতি তাদের দায়িত্বের প্রতি। দেশটার চেহারাই পাল্টে যাবে।