নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ চেনা বড় কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। সব চেয়ে কাছের মানুষটিও হয়ে উঠে একদম বিপরীত, অচেনা অন্য রকম। মাঝে মাঝেই এমন অবস্থার শিকার হন অনেকেই।চেনা মানুষ বদলে গিয়ে অন্য কেউ হয়ে উঠেন। এ তো এক ধরনের চেনা। কিন্তু অন্য আরেক ধরনের অচেনা মানুষ থাকে আমাদের পাশে। যাদের যে রূপে আমরা চিনি, তার অন্য একটি ভিতরের রূপ থাকে যা পরিচিত জনের কাছে অচেনা।
হঠাৎ কখনো এমন রূপ দেখে আমরা হয়ে উঠি সত্যি কীংকর্তব্যবিমূঢ়।
কত ভাবেই প্রতি নিয়ত চিনতে হয় মানুষ।
অনেক অনেক বছর আগে যখন প্রথম আমেরিকার মুখ দেখলাম। ঘুরি ফিরি যা দেখি তাতেই অবাক হই এমন দশা। বিশাল বিশাল দোকান, মলে ঘুরি ফিরি আর অবাক বিষ্ময়ে দেখি কত রকম বিচিত্র জিনিস। সব কিছু কিনে ফেলতে ইচ্ছে করে কিন্তু সবই সাধ্যের বাইরে।কোথাও কেউ পাহাড়া দিচ্ছে না। দোকানদার এগিয়ে এসে কিছু বলে না। নিজের মতন ঘুরে ফিরে দেখে পছন্দের জিনিস নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে দাম পরিশোধ করতে হয়।
মাথার উপর বড় বড় কালো লাইট বাল্বগুলো যে আসলে ক্যামেরা, কে কোথায় যাচ্ছে, কি ধরছে কি নাড়ছে, কি পকেটে ঢুকাচ্ছে সব ভিডিও করে রাখছে, তা আমাকে তখন কেউ চিনিয়ে দেয়নি। আমারও এমন কোন সতর্কতার দরকার ছিল না। অবাক বিষ্ময়টুকুই ছিল যথেষ্ট আমার জন্য।
এত ইচ্ছার ভিতর বহু বাছাই করে বিদেশী ডিজাইনের, একটি রূপার চেইন কিনে ছিলাম বিখ্যাত ম্যাসি থেকে।
এরপর আমি আবার ঘুরছি। আমার কেনা প্যাকেটটা যিনি আমাকে সাথে নিয়ে গিয়েছেন তার বাচ্চার হাতে।
কথা ছিল উনাদের বাসায় যাবো বেড়ানো শেষে। কিন্তু আমাদের ঘোরা ফেরার মাঝে অন্য একজনের সাথে দেখা হয়ে গেলো এবং তিনি আমাকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন।
খাওয়া, গল্পে অনেক রাত হয়ে গেলো, ঘুমাতে গেলাম। সকালে ঘুরতে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আগের দিনের কেনা প্যাকেটটা নজরে এলো।পলি ব্যাগের ভিতর থেকে কাগজের মোড়ক বের করে, তার ভিতর থেকে চেইনের বক্সটা বের করলাম। সাথে টুক করে কাগজের মোড়ক থেকে পাথর বসানো একটি ব্রেসলেট বেরিয়ে এলো। আমিতো অবাক। এ কি ভাবে হয়? আমি তো কিনলাম একটা জিনিস সাথে অন্যটা কি ওরা গিফট দিয়েছে? বেশ তো আমেরিকার দোকানগুলো খুব ভালো। কিছুই বুঝতে না পেরে হতভম্ব আমি, যাদের সাথে গিয়েছিলাম তাদের জিজ্ঞাস করে জেনে নিব মনে করলাম ওদের বাসায় ফিরে গেয়ি। তখন তো আর এমন হাতে মোবাইল ফোন ছিল না।
তাই অপেক্ষা করতে হবে আমার সঠিক আস্থানায় যাওয়া পর্যন্ত। একটা অস্বস্থি মন জুড়ে রইল। ঘুরতে ঘুরতে বন্ধু স্বজন এক একজনের বাসায় কয়েকদিন কেটে গেলো।
চার পাঁচ দিন পর যখন আমি ফিরলাম তখন শুনলাম ঐ বাসায় প্রতিদিন আমার খোঁজ করেছেন, যার সাথে গিয়েছিলাম মলে তিনি।
এখন তো উনি কাজে রাতে ফোন করব। রাতেও করা হলো না। ঘুরতে বেরিয়ে। পরদিন ঘুম ভাঙ্গল আমার উনার ফোনে,
কেমন অাছেন আপনাকে যে খুঁজে পাচ্ছি না।
জ্বী শুনেছি আপনি ফোন করেছিলেন, বলুন তো কি ব্যাপার?
আপনি যে সেদিন একটা জিনিস কিনলেন ম্যাসিতে, সেই প্যাকেটের ভিতর একটা জিনিস রেখেছিলাম আমি।
জ্বী মনে পরেছে, আমিও ভাবছিলাম আপনাকে জিজ্ঞেস করব, ওটা এলো কি করে প্যাকেটে বুঝতে পারছিলাম না।
আমি রেখেছিলাম। জিনিষটা আমার। হাতে ছিল খুলে প্যাকেটে রেখেছিলাম।
ঠিক আছে আপনি এসে নিয়ে যান আজ সন্ধ্যায়।
আজও ভেবে কুল কিনারা পাইনা। নিজের জিনিস আমার কেনা প্যাকেটের মধ্যে কেন উনি রেখে ছিলেন উনার তো প্যান্টের জ্যাকেটের পকেট ছিল, ব্যাগ ছিল সাথে। বাচ্চার কাধেও একটা ব্যাগ ছিল। আর আমি দিব্যি সীলমারা অবৈধ্য একটা জিনিস নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলাম। যদি ধরা পরত ক্যামেরায় বা বার্জ বেজে উঠত অসম্মান যা আমার হতো। অথচ আমি কিছুই জানি না। আমার প্যাকেটের ভিতর অন্য একটি মাল আছে।
ঘটনাটা মনে পরলেই সারেং বউ ছবিতে খুশি মনে জাহাজ থেকে নামতে প্রস্তুত, ফারুকের মুখটা ভাসে। তার অজান্তে পকেটে ততক্ষণে চলান হয়ে গিয়েছিল অবৈধ মাল। ধরা পরে বিদেশের জেলে কাটাতে হলো কয়েকটা বছর বেচারাকে।
নিজের অজান্তে অনেক ঘটনার শিকার হয়ে যায় মানুষ অপরাধী না হয়েও। মানুষকে বিশ্বাস করতেই ভালোবাসি। কিন্তু মানুষের কুৎসিৎ রূপ যখন মানুষ দেখায় তাদের থেকে সতর্ক হওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না।
কত ভাবেই প্রতি নিয়ত চিনতে হয় মানুষ।
জিনিসটা ফিরিয়ে দেয়ার সাথে একজন মানুষকেও চেনা হয়ে গিয়েছিল। যাকে হৃদয় থেকে ফিরিয়ে দিয়েছি কোন কথা না বলে।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৫
রোকসানা লেইস বলেছেন: ঠিক কত ভাবে মানুষ মানুষকে ব্যবহার করে। তা জানি আর অবাক হই। এখন এয়ারপোর্টে একটা প্রশ্ন করে আপনি নিজে প্যাক করেছেন তো। নিজের ব্যাগে কি আছে তা নিজের জানা দরকার। আমরা খুব বেশী সরল বিশ্বাসে মানুষের উপর আস্থা রাখি। মনে হয় সব সময় ঠিক না।
শুভেচ্ছা কান্ডারি অথর্ব
২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০
সুমন কর বলেছেন: জিনিসটা ফিরিয়ে দেয়ার সাথে একজন মানুষকেও চেনা হয়ে গিয়েছিল। যাকে হৃদয় থেকে ফিরিয়ে দিয়েছি কোন কথা না বলে।
ঝামেলায় পড়েননি, শুনে খুশি হলাম। কেমন আছেন?
৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন কর। আমি তো আপন আনন্দে ঘুরছিলাম
এখন না জানি কতটা ভয়াবহ অবস্থা হতো।
খুব বেঁচে গেছি
৪| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৫
নেক্সাস বলেছেন: বড় বাঁচা বেঁচে গেলেন।
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪১
রোকসানা লেইস বলেছেন: নিজের অজান্তে যে ভয়ানক অসম্মানের শিকার হতে যাচ্ছিলাম তা থেকে বেঁচে গেছি। মানির মান রক্ষার দায়িত্ব যার তিনিই বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
শুভেচ্ছা নেক্সাস
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৪
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
তবু যে ভাল কোন রকম ঝামেলায় পড়তে হয়নি আপনাকে। নতুবা সারেং বউ ছবির মতো ফেঁসেও যেতে পারতেন।