নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

উথালপাতাল হৃদয়

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬

প্রতিদিন ভাবে কিছু কথা কিন্তু বলা হয় না। আজ বলব মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয় মুনিরা। প্রায় তিনমাস ধরে এনজিওর কিছু আপা আসছে গ্রামে। মহিলাদের ডেকে বসছে স্কুলের মাঠে। অনেক বিষয়ে কথা বলে, তারা। সংসার জীবনে, যে কথাগুলো আগে কেউ কোনদিন বলেনি। তেমন অনেক কথা বলে। শুনতে খুব ভালোলাগে মুনিরার।
কথা শেষে প্রশ্ন করে আপনাদের কোন প্রশ্ন আছে
একদিন মুনিরার দিকে আপাটা এমন ভাবে চেয়েছিল, যেন বুঝতে পেরে ছিল মুনিরার মনে অনেক প্রশ্ন থৈ থৈ করছে। বুকের ভিতর বান কথার, অনেক প্রশ্নের, অনেক না বলা কথার কিন্তু এতো লোকের সামনে নিজের গোপন কথা কেমনে বলবে মুনিরা। ঠোঁট দুটো যেন গাম দিয়ে সেটে গেল। মুখ খুলে একটি শব্দও বের করতে পারল না মুনিরা।
ও জানে এখানে উপস্থিত মানুষগুলো কেউ ওর বন্ধু না। সালেহা যে আজীবন সখি। এক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে। দুজনে জা। এবং দুজনেই প্রতিদিন সম্মুখিন হয় এই সমস্যা গুলোর। সেই সালেহাও মুনিরা প্রশ্ন করলে, সবার আগে গিয়ে বাড়িতে বলবে স্বামীর কাছে, দেবর, মুনিরার স্বামীর কাছে। শাশুড়ির কানে তুলবে কথা। আর মুনিরার জীবন হবে নাজেহাল। কথায় এবং মারে।
ননদের কানেও চলে যাবে তাদের শ্বশুড় বাড়িতে। সুযোগ খুঁজতে থাকবে তারা বাড়ি আসার। যদিও তারাও একই সমস্যায় থাকে কিন্তু সে এক বছর পরেই হোক, নাইয়র এসেই তারা মুনিরাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দিবে। তুমি নাকি আপাদের কাছে প্রশ্ন করছিলা। এবং এই হাসাহাসির সূত্র জ্বলাময় কঠিন আঘাতে ফিরবে, মুনিরার পিঠে। বয়স মোটে সতের হলেও এই বিষয়গুলো খুব ভালো বুঝে ফেলেছে মুনিরা। গত দু বছরে।

বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় স্বামী মানুষটি বদলে গেলো। আদর সোহাগের নরম কথাবর্তা কেমন তেলেবেগুনে চর্চর করে উঠে। পীলে চমকে উঠে মুনিরার। ভয়ে বুক ধরফর করে। কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে তোতলাতে থাকে। ভয়ের তোতলামির কারণে হাত পা কেঁপে সালুন সুদ্ধ বাসন পরে যায় হাত থেকে, চীনা মাটির বাসন ভেঙ্গে যায়। এসব কারণে আরো ধমক খায়, জন্মের মরন মার খায়। হাসির জন্যও ধমক খায় মুনিরা।
মুনিরা জীবনের সব কথা বলা পাখিগুলো উড়িয়ে দেয়, আকাশে। হাসির স্বপ্নগুলো দীঘির জলে গভীর ডুবিয়ে দেয়।
পায়ের নূপুর খুলে রাখে শব্দে,শাশুড়ির ঘুম ভেঙ্গে যায় বলে। হাতে রিনিঝিনি কাঁচের চুড়ি আর বাজে না মারের সময় ভেঙ্গে হাত কেটে রক্ত ঝরায় বলে। অসংখ্য কাটা আর কালসিটে দাগ ওর শরীর জুড়ে। তার চেয়ে বেশী কালো অন্ধকার ওর সমস্ত বন্ধ দরজার মন। যেখানে কোন আলো ঢুকার সুযোগ নাই। কোন প্রশ্ন বেড়ুনোর ফাঁক নাই দুই ঠোঁটের মাঝে। সব কিছু কুলুপ এঁটে লেপে দিয়েছে মুনিরা। ও জেনেছে নিরব দিঘীর মতন হয়ে গেলে কেউ তেমন আর আমল দেয় না। শ্যাওলায় ঢেকে থাকে নীচে টলটলে জল। মাঝে মধ্যে তবু দু একটা ঢিল ছুঁড়ে ঢেউ তুলে দিঘীর বুকে দূরন্ত বালক। এ ছাড়া সব শুনশান পরে থাকে।
এনজিও আপাদের কথা শুনে ওর মনের বন্ধ দরজায় খলবলে ঢেউ উঠে। চিতকার করে সব গোমড় ফাঁক করে দিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এরপর কি হবে এই ভেবে নিরব হয়ে থাকে। মন যতই খোঁচায়, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়, প্রশ্ন করার জন্য। অনেক প্রশ্ন করেও কেউ ওর মুখ দিয়ে টু শব্দটি বের করতে পারেনা। কঠিন ভাবে দুই ঠোঁটে আগল দিয়ে রাখে একটি শব্দও যেন বের না হয় সে জন্য।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭

জসিম বলেছেন:
কঠিন অবস্থা. যাই হোক, প্রশ্ন করেই সমাধান বের করতে হবে. ভেতরে উথালপাথাল আর কত!

এটা কি গল্প! হলেই ভালো.

ধন্যবাদ.

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ জসিম। গল্প এবং বাস্তব। চারপাশে বিরাজমান অবস্থা থেকে তুলে আনা।

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: এভাবেই মুনিরারা শেষ হয়ে যায়। কেউ কি সে খবর রাখে?

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪৬

রোকসানা লেইস বলেছেন: যা একটু খবর রাখার সময় এসেছিল সব কেমন পিছন দিকে চলে যাচ্ছে এখন।
মুনিরাদের মুখ খুলবে কেনো বা তাদের পক্ষে কেউ কথা বলবে। এটা সহ্য করা যায় না। যতটা সম্ভব দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে।
ভালো থাকুন হাসান মাহবুব।

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০

আমিনুর রহমান বলেছেন:


মুনিরারা এভাবে আর কতদিন মুখ বুঝে সবকিছু সয়ে যাবে।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৩২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ততদিন যতদিন অজ্ঞতা থাকবে মানুষের মন জুড়ে আমিনুর রহমান
শুভেচ্ছা

৪| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: এভাবেই তিলে তিলে শেষ হয়ে যায় , আহারে !!!!

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৪০

রোকসানা লেইস বলেছেন: আদিকাল থেকে কত মুনিরা মুখ বুজে জীবন যাপন করেছে এ ধরায়! চিন্তা করলে পীলে চমকে যায়।
কতদিন অপেক্ষা করতে হবে "আহারে" শব্দটি আর ব্যবহার না করতে।
শুভেচ্ছা গিয়াসলিটন।


৫| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:৩০

জে এম নাদিম হোসেন বলেছেন: তোমার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু তুমি হাসতে পারবে না,
তোমার স্বাধীনতা আছে, নুপুর পড়তে পারবে না ।
তোমার বলার ইচ্ছা আছে, কিন্তু ক্ষমতা নাই।

৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৫২

রোকসানা লেইস বলেছেন: এ না পারা 'না' এর নিয়মগুলো প্রত্যেকের মন থেকে মুঝে দিতে পারলে বেশ হতো।
ধন্যবাদ জে এম নাদিম হোসেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.