নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদ্য বিলাস

২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৫৬

আমরা যখন নিজের পছন্দের বা অভ্যাসের বাইরে কোন খাবার দেখি তখনই না খেয়েই ঐ খাবারের প্রতি, আমাদের বিতৃষ্ণা দেখা দেয়। আমরা খাবার না খেয়ে, শুনে বা দেখেই মুখের নানা ভঙ্গী, শব্দ করতে থাকি। যা অবশ্যই অপছন্দের।
কিন্তু যে খাবার আমাদের পছন্দ না তা কিন্তু আরেক জন দিব্যি খাচ্ছে। শুধু খাচ্ছে না ভালোবেসে খাচ্ছে।
কিছুদিন আগে একটা খবর দেখলাম। মন্ট্রিয়লের সাবওয়েতে একজন মহিলা আস্ত একটা পাখির পালক ছাড়িয়ে মাংস খাচ্ছে। তা দেখে বেশ হৈ চৈ পরে গেলো যাত্রীর মাঝে।ছবি তুলে কেউ, ভিডিও করে কেউ। কেউ কেউ ওয়াক ওয়াক করে দূরে সরে যায়। কেউ রাগ করে পুলিশ ডাকে। নানা রকম প্রতিক্রিয়ায় অস্থির হয়ে ওঠে চারপাশ নিমিশে। অথচ যে খাচ্ছে সে র্নিবিকার।
জাপানের খুব প্রিয় খাবার সুশি। মূলত কাঁচা মাছ, ভাত সাব্জী সী-উইড নানা কিছু দিয়ে জড়ান। ও আমি কখনও খেতে পারি না। কিন্তু অনেকে শৌখিনতা করে খান। আর জাপানীদের তো নিত্যদিনের খাবার। সুশির সাথে একটা সস দেয় ওয়াসাবি। যে কোন সস আমার খেতে ভালো লাগে। ওয়াসাবি সস প্রথমবার খেতে গিয়ে মনে হলো অামি মরে যাচ্ছি। ধক করে মাথার চান্দিতে একটা ঝাঁঝ কামড় দিয়ে বসল। তারপর নাক মুখ চোখ জ্বলতে জ্বলতে ধীরে ধীরে ঝাঁঝটা নেমে গেলো। মরিচ খাওয়ার ঝালের মতন নয় পুরোই অন্য রকম অনুভব।
লেবুর রসে ভিজানো। মাছ নাকি রান্না হয়ে যায় লেবুর শক্তিতে। টিনজাত এমন খাবার টিন খুলেই অনেকে খেয়ে ফেলছে মহা আনন্দে। অথচ ওরাই আবার শুটকির গন্ধে দৌড় দিচ্ছে অন্য দিকে। জাপানীদের প্রিয় আরেকটা খাবার জ্যান্ত বানরের মগজ। শুনেছিলাম আসামের দিকের একদল উপজাতি। কুকুরকে পেট ভরে ঘি ভাত খাইয়ে কুকুরকে কৌশলে বমি করায়। তারপর সে ভাত উৎসবের খাবার হিসাবে খায়। এমন অদ্ভুত অদ্ভুত নানা খাবার মানুষের কাছে প্রিয় যা আমার শুনলেও বমি আসে। একবার ক্লাসে, টিচার স্ন্যাকসের কথা বলছিলেন। তো এক চাইনিজ মেয়ের মুখে জল এলে গেলো। সে বলা শুরু করল, ওহ খুব মজার খাবার খুব স্বাদ। সে মনে করেছে স্নেইকের কথা বলেছেন টিচার।
যখন সে স্নেইক বলল, তখন ক্লাসের আর সবাই জ্বিব বের করে ওয়াক ওয়াক করেতে শুরু করল। সাপ একটা মজার খাবার হতে পারে ভাবতেও পারি না। তবে ছাগল যেমন কিনা খায় চাইনিজরাও তেমন কিছুই খেতে বাদ রাখে না। প্রশান্ত সাগরের তীরে পাহাড় ঘেষে এক ধরনের ছোট পাখি বাসা বাঁধে, তাদের মুখের লালা দিয়ে। সেই পাখির বাসার স্যুপের নাকি কোন তুলনা নেই। পাখির হাগুমাখা বাসা জ্বাল করে যে স্যুপ বানানো হচ্ছে তা সবচেয়ে দামী। যতই পরিচ্ছন্ন করা হোক। পাখির মুখের লালা আর পাখি বাসা বেঁধে থাকে যেখানে তা পাখির বর্জ্য মাখা। এ আমি কোনদিনও খেতে পারব না। এছাড়া স্যুপ বানায় মানুষের বাচ্চা হওয়ার ফুল থেকেও ওরা। এক বাঙালি লোক যিনি অনেক দিন চায়না ছিলেন তার কাছে শুনেছি। তিনি নিজেও খেয়ে দেখেছেন। স্যুপই নাকি মনে হয় বেশ সুস্বাদু। আমি তো কয়েকদিন কিছু খেতে পারিনি এ গল্প শোনার পর।
কোরিয়ানরা কুকুর খায়। রাস্তা বানাতে এসে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের পথের কুকুর সব নাকি খেয়ে শেষ করে ফেলেছিল । তবে তারা যে পোকামাকড়ও ভালোবাসে সে দেখলাম এক কোরিয়ানের সাথে ঝোপঝাড়ে হাঁটতে গিয়ে।
সামারে বেশ পোকা মাকড় দেখা যায়। খয়েরি রঙের ঘাস ফরিং উড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে। মাঠের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে সে কোরিয়ান মেয়ে ফড়িং শিকার শুরু করল। একটা করে ধরে আর টপ করে মুখে দিয়ে দেয় আস্ত জ্যান্ত ফড়িং। মনে হলো জীবনের শ্রেষ্ট ধন সে পেয়েছে। তার সাথে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে দেখলাম সে কুমির ভাজা খাওয়ার ওর্ডার করে বসল। আমাদের পুকুরে মাঝে মধ্যে কচ্ছপ ধরা পরত। তো বড় কচ্ছপ ধরা পরলে আমাদের হিন্দু প্রতিবেশেদের দিয়ে দিতাম। তারা খেয়ে তার স্বাদ বর্ণনা করত।ভীষণ মজা। হিন্দুদের গরু খাওয়া নিষেধ থাকলেও অনেকে কোরবানীর সময় বিশেষ আয়োজন করে গরুর গোস্ত খেতে আসত আমাদের বাসায়। পোকা বিছা শুধু আমাদের উপজাতিরা খায় না বিদেশের অনেক মানুষের কাছে খুবই ডেলিসাস খাবার পোকা ভাজা। পোকার অাকৃতির চকলেটও ওরা তৈরী করে। যা দেখলেও আমার গা রি রি করে। ক্যালিফোর্নিয়ায় একটা জায়গায় বেড়াতে গিয়েছি। যার সাথে গিয়েছি সে হঠাৎ বলে আপা, পোকা ভাজা খাবে? ভাবলাম মজা করছে। কিন্তু না! এত মজাদার পোকা ভাজা থরে থরে নানা রকম সাজানো প্লেটে। ভাজা হচ্ছে আর গরম গরম সবাই বাদাম ভাজার মতন খাচ্ছে। দোকান গুলোর সামনে বেশী ভীড় দর্শনের জায়গার চেয়ে।এমন জিনিস অফার না করলে যদি আমার অদেখা থেকে যায় নতুন কালচার তাই সে জানতে চাইছে, আমি খাব কিনা?
একবার ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে আমরা বোন কাজিন বন্ধু মিলে সারাদিন ছেলেসহ বেটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরাফেরার পরিকল্পনা করলাম। ছুটির দিন সকালে যানবাহন কোন কিছু পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক অপেক্ষার পরে একটা স্কুটার পাওয়া গেলো। বেশী ভাড়ায় এক স্কুটারে সাড়ে সাতজন চড়ে রওনা হলাম বাগান বিলাশ করতে। মিরপুরের উঁচু রাস্তায় স্কুটার আর আমাদের নিয়ে উঠতে পারে না। একটু পর পর আমাদের নেমে স্কুটার ঠেলে নিয়ে যেতে হলো। যা হোক সব অস্বাভাবিক কিছুই মজা, হাসি আর অানন্দের। অনেক সময় ধরে ঘোরা ফেরা করে বৃক্ষ ফুল পাতা দেখা শেষ করে আমরা চাইনিজ খেতে গেলাম। স্যুপ নিয়ে সবাই যখন মহা আনন্দে খাওয়া শুরু করেছি। তখন একজন, নিজেকে গুটিয়ে বসে থাকল। সে কিছুতেই খাবে না। স্যুপ নাকি ব্যাঙের মাংস দিয়ে রান্না করেছে। ব্যাঙের ঠ্যাঙ তো অনেকের প্রিয়। চাইনিজরা ব্যাঙ খায়। ছোট টুকরো করে কাটা মুরগী, গরু কিছুই সে খেলোনা সবই ব্যাঙের মাংস তাই।
সব কিছুই অভ্যাস। আমরা চা পান করলে ঠিক তখনই আইসক্রিম খাই না বা জুস খাইনা। ঠাণ্ডা গরম টক মিষ্টি এক সাথে খেতে হয় না। অথচ যখন প্রথম আমেরিকার প্লেনে চড়লাম। এক সাথে জুস, আইসক্রিম, চা/ কফি সব এনে দিচ্ছে । আর যারা মদ খাচ্ছে তারা সেটাও খাচ্ছে সাথে। যতবার পানি চাইলাম গ্লাস ভর্তি বরফের টুকরো দিয়ে গেলো।
খাওয়া শুধুই অভ্যাসের ফসল আর কিছু নয়।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:৫৫

রাব্বি রহমান বলেছেন: ভাল্লাগছে ঃপি

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:২২

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ রাব্বি রহমান
ভালো থেকো

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৩০

শরীফ মাহমুদ ভূঁইয়া বলেছেন: হুম্মাহুম।

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:২৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: ওয়াক ওয়াক কি খায়.........শুভকামনা শরীফ মাহমুদ ভূঁইয়া

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:০৯

তুষার কাব্য বলেছেন: জানলাম...ভালো লাগলো... :)

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪২

রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা তুষার কাব্য

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ইয়ায়াক থু। :|| :|| :|| :| :| এইরকম আরও অনেক উদ্ভুদ খাবারের কথা শুনেছি । মানুষ বড়ই বিচিত্রময় ।

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:৩৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: বৈচিত্র আর বিচিত্র রহস্যময় জীবন মানুষের..........
শুভেচ্ছা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.