নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলের নীচের ঘরে

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২২

ভ্রমণ শব্দটা শুনলেই কেমন মন উচাটন হয়ে যায় আমার। লম্বা অচেনা পথ। অচেনা দৃশ্য। নতুনের সাথে পরিচয়। কত অজানারে জানা। স্মৃতির কোঠায় মূল্যবান সংগ্রহ। যা অনেক কিছুই লিখে, বলে বা ছবিতে দেখানো যায় না। আর কারো সাথে ভাগ হয় না। নিজের উপলব্ধিটা একদম নিজের মতন। দুঃসাহসিক বা ভাললাগার ভুবন চিল হয়ে ঘুরে বেড়ানোর।

আজ একটা অন্য রকম ভ্রমণের গল্প বলি।

খুব ছোটবেলায় একটা বই পেয়েছিলাম, নামছিল সাগরিকা। কতবার পড়ে কোন অজানায় সাগরতলে ঘুরে বেড়াতাম কথার বুননের সাথে। সেই থেকে মনের মাঝে সাগর নয় শুধু সাগরের তলদেশ যাওয়ার প্রচণ্ড আকাঙ্খা গভীর গোপনে লালন করে আসছি।

ছোটবেলায় পুকুরে গোসল করতাম। সবাই যখন সারা পুকুর সাঁতরে বেড়াত তখন আমি হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে গভীর জলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। মাঝে মাঝে আমার দাদী তার পিঠে চড়িয়ে সাঁতার দিয়ে, আমাকে সারা পুকুর ঘুরিয়ে আনতেন । আহা! কিয়ে দারুণ সে পাওয়া। তারপর একটু একটু করে বাবার চেষ্টায় কলাগাছ ধরে, দূরে ভাসতে ভাসতে একদিন ঠিক একা পানির উপর ভাসা শিখে গেলাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা, জলের সাথে খেলা। শুধু পুকুরে না নদীতেও সাঁতার কাটা। শৈশবটা এক দূর্দান্ত ভালোলাগার সময় হয়ে আছে জলের সাথে খেলার।

টলটলে পুকুরের জল, প্রখর সূর্যালোকে তলদেশ সবুজবরণ সুন্দর। রূপালি ঝিলিক। পানিতে ভাসতে ভাসতে শুরু হলো এক সময় জলের ভিতর ডুবে থাকার খেলা। কত গভীর জলে ডুব দিয়ে পুকুরের তল থেকে মাটি তুলে এনে বাহাদূরি দেখানো বন্ধুদের সাথে। একটা পাথর ছুঁড়ে পানিতে ফেলে তা জলের নীচ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে আসা। পুকুরে মাছ, পানা, কচ্ছপ, ঝিনুক শামুক থেকে সাপ সবই যেন আপন। সবাই এক সাথে জলের মাঝে হল্লা করি। নানা রকম সাঁতারের কৌশল দিয়ে এপাড় ওপাড় করা অথবা কিছুই না করে, শুধুই পানিতে ভেসে বেড়ানো, জলচর প্রাণী হয়ে। আবার কখনও শান্ত জলে শব্দের ঝংকার কেমন বাজে তার গবেষণায় লিপ্ত হওয়া। পানির উপরে কিছুর শব্দ করে, ডুব দিয়ে পানির নীচে সে শব্দ কেমন বাজে তা শোনা। অথবা পনির ভিতরই শব্দ করে তার বৈচিত্র অনুভব করার চেষ্টা। শৈশবের সাথে সেই জলের সাথে মিতালীর দিনগুলি কেমন দূরে সরে যেতে লাগল। পুকুরের জলে ময়লা তাই শাওয়ারের নিচে বন্দিদশার পরিচ্ছন্নতায় মন বসে গেলো।

অনেক বছর পর শাপলা ভরা ইছামতির বুকে নৌকায় বেড়াতে বেড়াতে ঝুপ করে নদীর বুকে নেমে গেলাম সাঁতার কাটতে, কারো বাঁধা নিষেধ না মেনে। খোলা আকাশের নীচে, ভরা নদীর জলে শাপলার সাথে সাঁতার কাটা। সে এক দূর্দান্ত স্মৃতি সোনালি সাপের খোলসের মতন বুক জুড়ে শুয়ে আছে। পোয়াতি শরীরে কত কিছু না করার বাঁধা নিষেধ চারপাশে। কিন্ত আশ্চর্য সে স্মৃতির পোষাক কেউ পরাতে পারবে না, নিজে অর্জন করতে না পারলে।

একবার বঙ্গোপসাগরে ঢেউয়ের সাথে ভাসছি সাঁতার কাটছি। পুরোই জলকেলির আনন্দ আবহ মনে। বিশাল ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে লবন জলের সাথে মিতালি করে বেশ কাটছে সময়। হঠাৎ একটা বড় ঢেউ এলো, পায়ের নীচে মাটি সরে গেলো। ভাবলাম সাঁতার দিয়ে তীরের দিকে যাই। ঠিক তখন তীর ছূঁয়ে ফিরে আসা ঢেউ চলছে মাঝ সাগরের দিকে তীব্রবেগে। আমাকেও টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমার মাথা জলের নীচে ঢুকে গেলো। কিছুতেই ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মাথা ভাসাতে পারছি না। জলের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছি। মনে হলো জলের ভিতর থেকে আমি আর কখনও বেরুতে পারব না। কারো সাথে আর দেখা হবে না। এ জীবন শেষ। অনেকটা দূরে টেনে নিয়েছে ঢেউ আমায়। বেশ গভীর জলে ঢেউয়ের দাপট কিছুটা কম। আমি ভেসে উঠতে পারলাম। তীরের দিকে সাঁতার দিলাম। ফিরতি ঢেউ ঠেলে দিল আমাকে তীরের দিকে। তীরে ফিরে অনুভব করলাম নতুন জীবন। কেউ জানল না আসে পাশে; কতটা ঢেউর শক্তি আমি দেখে এলাম। সে শুধু আমিই উপলব্ধি করতে পারি। দূরন্ত সেই ভয়ের সময়, এখনও জলের শক্তি আর ঘোর লাগা শিহরণ বয় মেরুদণ্ডে। এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখলাম, ঢেউ মাথা কব্জা করতে পারলে তা থেকে বেড়িয়ে আসা কঠিন।

অনেক বছর জলের সাথে দেখা হয় না তেমন ভাবে। তাই বলে কি জলের কথা ভুলে গেছি। ভুলে গেছি সেই সাগর তলের প্রবাল ঝিনুকের গল্প। আহা আমার যদি একটা সাবমেরিন থাকত। যা নিয়ে চষে বেড়াতাম সাগরতল ইচ্ছে মতন। বাস করতাম দিনের পর দিন জলের নীচের ঘরে। সাবমেরিন সে তো সাধ্যের অতিত তবে ভাবনার বাইরে না অবশ্যই আমার মনের সাবমেরিনে আমি ডুবে যেতে পারি প্রশান্ত থেকে আটলান্টিক বা বেরিং সাগরের নীচে। কোন বাধা নেই। কিন্তু শুধু ভাবনার যানে ভাসলে কি প্রাণ ভরে, বাস্তবে না হলে।

তাই সে আশায় বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে সিন্ধু করার চেষ্টায় সেই ছোটবেলার ডুব সাঁতার খেলায় মাতলাম আবার। ডুবুরি হয়ে সাগরের নীচের ধনরত্ন দেখে আসা যায়। মনের মাঝে এই চিন্তা বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য। একটু একটু জলের নীচে যাত্রা শুরু করে শিখলাম ডুবুরি হওয়ার নিয়ম কানুন।













তারপর একদিন গভীর সাগরে ভেসে গেলাম বোট নিয়ে তারপর, ডুব দিলাম গভীর সাগরে তার তল দেশ দেখার জন্য। ঠিক আজকের দিনে ছয় বছর আগে। সারাদিন জলের নীচে অদ্ভুত এক অন্য রকম ভ্রমণে চষে বেড়ালাম সাগরতল। মৎসকন্যা হয়ে। দূর্দান্ত সে অভিজ্ঞতা। পনির নীচে শ্বাস নেয়া যাচ্ছে। স্বাভাবিক বিচরণ। আর চোখ মেলে দেখা চারপাশের অদ্ভুত সব রঙিন মাছ। সুন্দর সাজানো জগৎ, যা উপরে বসে কখন দেখা সম্ভব না। ডুবুরি হয়ে সাঁতার কাটার মজা হলো ডুবে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। আর সাঁতার কাটা যায় ইচ্ছে মতন। এই অসম্ভব অর্জনটি নিজের জীবনে যোগ করতে পেরে অত্যন্ত ভালোলাগছে। তবে আরো অনেক বেশী দেখার ইচছা এখনও রয়ে গেছে। তার জন্য যেতে হবে পৃথিবীর বিভিন্ন সাগর তলে। এখন সে অপেক্ষায় আছি।



মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০০

কেএসরথি বলেছেন: ওখানে দর্শনীয় কিছু জায়গার নাম বলবেন কি?

০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: ভালো প্রশ্ন করেছেন :) মোস্ট ফ্যান্টাস্টিক জায়গা হচ্ছে সাগরের তল। আশ্চর্য এক জগৎ সেখানে; প্রবালদ্বীপ, পাহাড়, ক্যানিয়ন আর রঙিন মাছ। আরো আছে হাঙ্গর তিমি, সাপ।

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৩২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ভাল লিখেছেন ।

০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৯

রোকসানা লেইস বলেছেন: আপনার ভালোলেগেছে জেনে অনেক ভালোলাগল আমারও।

শুভেচ্ছা সেলিম আনোয়ার

৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: জলকন্যার জলপদ্য পড়ে ভাল লাগল ।
আপনার জলরাজ্য ভ্রমন অভিজ্ঞতার আরো শেয়ার চাই ।

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক সুন্দর করে বললেন। প্রথম ভালোবাসার স্মৃতি সব সময় হৃদয়ে অনেকটা জায়গা দখল করে থাকে।পরে সব এক রকমই মনে হয়। আবার এমন কোন ভালোলাগার জন্ম হলে লিখব। শুভেচ্ছা গিয়াসলিটন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.