নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা দিবস পালিত হলো, সবার বুকের ভিতর বাবার জন্য একরাশ নরম শিমুল তুলা উড়ল। বাবা নামের মানুষটি যে বাড়ির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তার অনেক শক্ত পুক্ত ভাব গম্ভীর মুখের আড়ালে কুলুকুলু বয়ে যাওয়া স্রোতধারা নদী আছে সে নদীর জলের খবর করতে সবার মন আনচান করল। খুঁজে পেতে স্মৃতি হাতড়ে বাবার সাথের ভালোলাগার মুহুর্তগুলো মনে করার চেষ্টা হলো।
বাবা দিবসটা আমাদের সংস্কৃতিতে তেমন কিছু নয়। অনেকে এই বিষয়টিকে ধারন করেছেন। অনেকে এখনও নাক সিটকান। এসব দিবস দিয়ে কি হবে? বাবা তো বাবাই, সব সময় বুকের ভিতর আছে।
পশ্চিমা বিশ্বে বিষয়টাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে পালন করে। তাদের জীবন যাপন বড় অন্য রকম আমাদের থেকে।
আমি এ্ বিষয়টাকে চিনতে শিখেছি পশ্চিমা বিশ্বে বাস করতে এসেই। হয়ত বিষয়টার গুরুত্ব অনেক ভুল যা আমাদের সংস্কৃত ধারণায় মাথায় সেটে বসে ছিল তার উর্ধে উঠে ধারন করতে পেরেছি।
প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাদের অনেক সুন্দর করে ধারনা দেয়া হয় বাবা দিবস মা দিবস সম্পর্কে। স্কুলে বসে শিক্ষকের সহযোগীতায় তারা অনেক কিছু তৈরী করে। মা বাবাকে উপহার দেয়ার জন্য। মূলত তাদের জন্য কিছু করার মাধ্যমে শিশুদের মনে একটা সুন্দর ধারনার বীজ বুনে দেয়া হয় পরিবার সম্পর্কে। বিষয়টা আমার নিজের খুব পছন্দ।
সব সময় সমাজ এবং সামাজিকতা বদলে যাচ্ছে। এখন পশ্চিমারা অনেক পরিবার কেন্দ্রীক একটা সময় যা ছিল না। আবার এরা যদি পরিবার পছন্দ না করে, স্বামী স্ত্রীর বনিবনা না হলে শুধু সন্তানের জন্য রাখ ঢাক করে কিছু ধরে রাখে না।
বনিবনা না হলে আপন ভুবন বেছে নিতে চলে যায় যে যার মতন। কিন্তু সন্তানের উপর অধিকার থাকে উভয়ের। সন্তান বাবা মা এর সাথে থাকে আলাদা আলাদা সময়ে। যা আদালত ঠিক করে দেয়। বাঙালি সমাজে যেমন অনেক বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে, মাকে সন্তানের অধিকার থেকে চিরতরে বঞ্চিত করা হয়। অনেক সময় সংসার সন্তান রেখে অনেক অসংগত সম্পর্ক গোপনে জড়িয়ে রাখে।
অনেক সৌভাগ্যবান সন্তান বাবার আদর ভালোবাসা আর যত্নে জীবনটাকে সহজ ভাবে দেখার সুযোগ পায়। আবার অনেক সন্তানের কাছে বাবা নামটাই এক ভীতিকর অস্বস্থিকর শিরদাঁড়ায় সিরসির অনুভব দান করে। সময় অনেক বদলেছে। বাবা সন্তানের সম্পর্ক অনেক সহজ হয়ে উঠছে বিশ্ব জুড়ে।
আমাদের দেশের বাবারা রামগড়ুরের ছানা হয়ে থাকা থেকে বেড়িয়ে আসছে, হাস্যউজ্জ্বল মুখে। সন্তানের সাথে সহজ নিবিড় সম্পর্কে। যা একটি শিশুর বেড়ে উঠার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
অনেককাল আগে যারা বাবার ভালোবাসায় শিক্ত হয়ে বড় হয়ে উঠেছেন বাবাকে ভয় না পেয়ে। তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। আমি একজন তাদের মধ্যে। আমার পিতাকে নিয়ে গর্ব করি। তাঁর মেধাও মননকে ধারন করে নিজেকে বিকাশিত করার চেষ্টা করি।তাঁর মতন সহজ এবং সাধারন ভাবে।
কিন্তু আমার কষ্ট হয় অগনিত বাবাহীন সন্তানের জন্য। অনেক মাকে দেখেছি। একাই বাবা মা। সেই সব মায়েদের আমি বাবা দিবসের শুভেচ্ছা জানাই।
কিছুদিন আগে আমি একটা সেমিনারে গিয়েছিলাম। যেখানে অনেক মেয়েদের কষ্টের কথা শুনলাম। বাবা না থাকার জন্য। মা যত কিছুই করুক না কেন বাবার অভাব, বাবা না থাকা সন্তানের জন্য এক বিশাল ব্যাপার।
বাবাদের উচিত খুব যত্ন করে ভাবা, সন্তান জন্ম দেয়ার আগে তাদের দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে। বিদেশে জন্মের সময় বাবাদের উপস্থিত রাখা হয়। সন্তান জন্মের যন্ত্রনা কেমন একটি মা এর, বাবা সেটা অনুভব করে পাশে থেকে্। বেশীর ভাগ বাবারা অনেক দূরে থেকে বাবা হয়ে যায়। পরিবারের মুরব্বীরা সব ধকল সামলে নেন। অনেক বাবা বুঝতেও পারেন না। কতটা কষ্ট। একটি সন্তান জন্মের সব কিছুর সাথেই বাব মা দুজনের সমান অংশ গ্রহণ দরকার। অনেক বাবার আবার জানেও না তাদের সন্তান আছে!
সন্তান চায় বাবা মা দুজনকেই সমান ভাবে পেতে।
বৃদ্ধাশ্রমে বাবা মা কে রাখার বিষয়েও আমাদের অনেক রকম ভিন্ন ধারনা আছে। কেউ বৃদ্ধাশ্রমে বাবা মাকে পাঠিয়ে দিয়ে দায় দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যায়। কেউ আবার ঘরে রেখে কখনও বাবা মার ঘরে উকি দিয়ে দেখেন না কেমন আছে বাবা মা।
যারা পুরো একটা সংসারের মালিক তাদের নিজের একটা ঘরও থাকে না অনেক পরিবারে।
আবার অনেকে ভালোবাসেন উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাবার জন্য। বিদেশে অভিভাবকের বিশাল সম্পত্তির তোয়াক্কাও অনেক সন্তান করে না। তাদের নিজেদের এত্ত আছে উত্তরাধীকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তিকে ঝামেলা মনে করে। সম্পত্তি মানেই তার তদারকি দেখভাল অনেক কিছু জড়িত, সময় নষ্ট। সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পত্তির চেয়ে। আবার অনেকে সম্পত্তি চায়না, রাস্তায় থাকতে ভালোবাসে! ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বিশাল বাড়িতে দেখেছিলাম বাড়িটি মিউজিয়াম করে দিয়েছে। কেউ নিতে না চাওয়ায়। আবার অনেকে প্রিয় কুকুর বিড়ালের নামে উইল করে দেয় সম্পত্তি। যেখানে এক টুকরো সম্পত্তির জন্য হানাহানি রক্তারক্তি হয়ে যায় আমাদের দেশে। কী অদ্ভুত বৈচিত্র।
বিদেশে বৃদ্ধাশ্রম বিষয়টির ধারনা সম্পূর্ণ অন্য রকম। যখন বৃদ্ধ বয়সে চলাফেরায় কষ্ট। সারাক্ষণ তাদের দেখে রাখতে হয় শিশুর মতন।নিয়ম মাফিক খাবার দাবার দিতে হয়। তাদের ঘরে না রেখে বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আসা হয়। যেখানে ডাক্তার নার্স সারাক্ষণ তাদের নিয়ম করে দেখতে পারে। এক বয়সের অনেকের সাথে তাদের সময় কাটে ভালো। এবং অনেক কিছু করার সুযোগও থাকে। অনেক দিন নিজে বৃদ্ধাশ্রমে ভলাণ্টিয়ার থেকে তাদের অনেক কাছ থেকে জেনে দেখেছি ওরা নিজের ইচ্ছাতে থাকে। সন্তানের জীবনে ঝামেলা না হয়ে। আবার অনেক সন্তানকে দেখেছি প্রতিদিন নিয়ম করে এসে কিছু সময় বাবা বা মা’এর সাথে কাটিয়ে যাচ্ছে। ছেলে ছেলের বউ নাতি নাতনী থেকে মেয়ে মেয়ে জামাই সবাই আসা যাওয়া করছে। উৎসব আয়োজনে সময় করে এসে বাবা মাকে নিয়ে যাচ্ছে। কখনও মনে হয়নি বিচ্ছিন্ন পরিবার। যেমন জেনেছি দেশে থেকে বিদেশের পরিবার সম্পর্কে। আবার অনেক বুড়ো বুড়ি এতই শক্ত সামর্থ জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত নিজের বাড়িতেই থাকে। অনেক সময় ওরা একা একা মারা যায় বাড়িতে।
পরিবার বাবা মা সন্তান এক সূত্রে বাধা অথচ কত ভিন্ন সম্পর্ক প্রতিটি মানুষের জীবনে। কেউ সন্তানের জন্য উজাড় করে দেয় জীবন। কেউ মা বাবার জন্য। কেউ কিছুই পায় না হাহাকার ভরা এতিম জীবন যাপন করে।সম্পর্কগুলো আরও গভীর হোক আরো আনন্দময় হোক মানুষের জীবন।
২| ১৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
রোকসানা লেইস বলেছেন: বাবার ভালোবাসায় পরিবার আরো আন্তরিকতা গভীর ভালোবাসায় জড়াতে পারে। অথচ কেন যে অনেকে তা থেকে বঞ্চিত বুঝতে পারি না।
শুভকামনা সুমন জেবা
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১৫
সুমন জেবা বলেছেন: "পরিবার বাবা মা সন্তান এক সূত্রে বাধা অথচ কত ভিন্ন সম্পর্ক প্রতিটি মানুষের জীবনে। কেউ সন্তানের জন্য উজাড় করে দেয় জীবন। কেউ মা বাবার জন্য। কেউ কিছুই পায় না হাহাকার ভরা এতিম জীবন যাপন করে।সম্পর্কগুলো আরও গভীর হোক আরো আনন্দময় হোক মানুষের জীবন"
ভালো লাগলো ..