নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২৯ এ মার্চ রুমীর জন্মদিন। রুমীর কথা আমার খুব মনে হয়। আমার বুকের মাঝে কেমন করে উঠে। আমার অনেক কথা জানতে ইচ্ছা করে । কেমন করে ওর বুকে এতটা সাহস জন্ম নিয়ে ছিল এতটুকু বয়সে? আই এস সি পাস করে কেবল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছে আবার আমেরিকার ইলিয়ন ইন্সিটিটিইট অব টেকনোলজিতেও এডমিশন হয়ে গেছে আগষ্টের শেষ সপ্তাহে সেখানে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যাবার কথা।অথচ ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ছাত্রজীবনে লেখাপড়ার চিরকালীন সত্যটা মিথ্যা হয়ে গেছে। অনুভব করেছিল রুমী, ছাত্র হিসাবে পড়ালেখা করার স্বাভাবিক অবস্থা তখন ছিলনা। পড়ালেখার চেয়ে দেশের প্রয়োজনে রুখে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশী। মায়ের ইচ্ছায় ঐ সময়ে বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করে বড় ইঞ্জিনিয়ার হলেও নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবে চিরকালের মত বিবেকের ভ্র'কুটির সামনে কোনদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেনা। বিতর্ক প্রতিযোগীতার উজ্জ্বল তারকা রুমী মাকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল সেই মুহুর্তে যুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা। মা নিজে বুকে পাথর চাপা দিয়ে সন্তানকে উৎসর্গ করে এলেন মুক্তিযুদ্ধের জন্য। নিজে গাড়ি চালিয়ে, নামিয়ে দিয়ে আসলেন মা ছেলেকে মুক্তিযুদ্ধো হওয়ার জন্য। অতি সাধারন বেশে চলে গেলো রুমি যুদ্ধ করতে। কোথায়, যা কিছুই পরিবারের কেউ জানে না। অনেকদিন পরে খবর পাওয়া গেলো মেঘালয়ে আছে রুমি। যে ছেলেটি কখনও ভাতে একটি কালো দানা পেলে ভাত খেতনা। কয়েকমাস পরে যুদ্ধের ট্রেনিং শেষে ফিরে আসা রুমি অতি সাধারন জীবন যাপন দেখে মা অবাক হয়ে যান।
যুদ্ধের কত অদ্ভুত ভয়াবহ গল্প বলে। মা শুধু অবাক হয়ে এক যোদ্ধা ছেলেকে দেখেন। ঘরে বসে ছেলেরা কী সব পরিকল্পনা করে, দূর্দান্ত সব গেরিলা অপারেশন সেরে, পাকিদের নাভীশ্বাস তুলে দিয়ে এসে কী র্নিবিকার মুখে থাকে।
আর পাঁচ মাস পর যখন ওর আমেরিকায় উড়ে যাওয়ার কথা ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য। সেই সময় জন্মদিনের একই তারিখে উনত্রিশে আগষ্ট, দুঃসাহসী গেরিলা রুমী ধরা পড়ে পাকিস্থানি মিলিটারির হাতে। পরিচিত রাজাকার বাড়ি চিনিয়ে নিয়ে আসে মিলিটারি রাতের অন্ধকারে। বাড়িতে যে কয়জন পুরুষ ছিল সবাইকে ধরে নিয়ে যায়। একা জাহানারা ইমাম ছোটাছুটি করেন রাতের অন্ধকার রাস্তায়। স্বামী, সন্তান ভাগনা, কাজের লোকের খবর জানার জন্য। পাহারাদার উনাকে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে বলে।
একজন মায়ের দুঃসহ সময়ের স্মৃতি বুকের ভিতর মরণ কামড় তৈরি করে দেয়।
দেশের জন্য যুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে বর্বর অমানবিক নিষ্ঠুর অবিশ্বাস্য নির্যাতনে হারিয়ে যায় রুমী চিরদিনের জন্য । কোনদিন আর ফিরে আসেনি রুমী। জীবন উৎসর্গ করে চলে যায়, রুমী সারা জীবনের জন্য এ পৃথিবী ছেড়ে প্রাণ প্রিয় দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই।বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়া হলোনা জীবনে কিন্তু রইল আজীবন দেশের গর্বিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হয়ে। এক উজ্জ্বল সম্ভাবনার জীবন শুরুর সময়, কেমন করে ও চলে গেলো কতটা যন্ত্রনা নিপীড়ন বয়ে! কীভাবে ধরে রেখেছিল ওর অসম্ভব সাহস ও নিষ্ঠা মাতৃভূমির প্রতি অবিচল অঙ্গিকার, ভয়ানক নির্যাতনের মাঝে ভাবতেও আমার বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়।রুমীকে আমি কোন দিন দেখিনি কিন্তু ও আমার বুকের মাঝে বাসা বেঁধে আছে যন্ত্রনার এক দুঃসহ ব্যথা হয়ে। সাহসের এক জ্বলজ্বলে ইতিহাস হয়ে, অসাধারন এক ছোট গল্প হয়ে।রুমী ওর মায়ের বনি প্রিন্স যার জন্মদিন প্রতিটি বাংলাদেশীর স্মরণ করা উচিৎ আমি মনে করি। অথচ আমাদের সেই সাহসী বীরদের আমরা ক'জন মনে করি, ক'জনের নাম কজনের কথা আমরা জানি? যাদের প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। কী অত্যাচার কী দুঃসহ নিপীড়ন সহ্য করে দেশের জন্য উৎসর্গ করে গেছে প্রাণ। তাদের ত্যাগ আর তিতীক্ষায় আজ স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করি, দেশ নিয়ে গর্ব করি ।
রুমীর মা বাংলাদেশের জননী, জাহানারা ইমাম। উনার সাথে আমি পরিচিত হই যখন আমার ছেলের বয়স দুই। অসম্ভব আদরে ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখতেন সেই ছোট্ট ছেলেটাকে। মনে হয় নিজের বনি প্রিন্সের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যেত উনার। আমি তখন তার বনি প্রিন্সের হারিয়ে যাওয়ার কথা জেনে গেছি তার সেই বিখ্যাত দুঃসময়ের ব্যাথা ভরা প্রতিদিনের দিনলিপি, একাত্তরের দিনগুলি’’ পড়ে। অবাক চোখে যন্ত্রনায় জর্জরিত রমনীকে দেখতাম। কতটা শক্তি কতটা ধৈর্য থাকলে এতগুলো বছর, তরতাজা উজ্জ্বল যুবক- প্রাণ প্রিয় সন্তানের হৃদয় বিদারক মৃত্যু যন্ত্রনার কষ্ট বুকে ধারণ করেও মাথা উঁচু করে চলছেন। গলায় ক্যানসারের মতন দুর্বিসহ দূরাগ্যে ব্যাধির ভার বয়েও কথা বলে যেতেন সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়োজনে। রাজাকারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেছিলেন। কোটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন স্তিমিত হয়ে যাওয়া রাজাকারদের বিরুদ্ধে কার্যক্রম। সরকারীভাবে যখন সহায়তা করা হচ্ছিল এইসব দেশ বিরোধী হামর্দদের প্রতিষ্ঠিত করার। অশিক্ষিত মানুষ যখন কিছুই না জেনে, না বুঝে এইসব রাজাকারদের ইসলামি কথাবার্তায় ধোঁকা খাচ্ছিল। এক মায়ের সন্তান হারানোর ব্যাথা তখন বাঁধ মানেনি।বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বাধীনতা যুদ্ধ সময়ে সন্তান,স্বামী, ভাই বোন হারানোর ব্যাথায়, নির্যাতিত মানুষের কষ্ট গুমরে কাঁদছে-জর্জরিত সকলের শক্তিশালী উচ্চারণ নাই। কষ্ট ক্লিষ্ট মানুষ সব এক সাথে সমবেত হয় জাহানারা ইমামের রাজাকার বিরোধী আন্দোলনে। মানুষ সায় দেয় তাকে কারণ তিনি তাদেরই কষ্টকথা বলছেন, তিনি বাংলাদেশের পক্ষের মানুষের কথা বলেছেন, নির্যাতিত, দুঃখি মানুষের দুঃখ এক সাথে সমবেত করেছেন।অসুস্থ শরীরে ছুটে ছুটে যেতেন মিছিলে, আন্দোলনে, জন সম্মেলনে। অথচ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষগুলো যদি দেশের সুস্থ সুন্দরের চিন্তায় হাতে হাত ধরে হাঁটত। অন্যায়ের প্রতিবাদ করত আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মতন । আরেকটি সত্য সুন্দর ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য। প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার সঠিক মর্যাদার জন্য। যাদের রক্তের ধারায় আজ সবাই স্বাধীন দেশে, নিজের জাতি স্বত্তায় মাথা তুলে চলতে পারছে যদি বুঝতে পারত তাদের জীবনের মূল্য। যদি বুঝতে পারত ভুল গুলো। বেইমান রাজাকারদের তালিকা তবে আজ প্রতিটি গ্রামের মানুষ বাংলার প্রতিটি গ্রামে করে ফেলত। প্রতিটি গ্রামে থাকত মুক্তিযোদ্ধার নামের ফলক উজ্জ্বল হয়ে। প্রতিটি মানুষ চিহ্নিত সেই রাজাকারদের বয়কট করত। আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম বিভ্রান্তিতে পরত না রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার নামে।শুভ জন্মদিন শাফি ইমাম রুমি| শুভ জন্মদিন সকল মুক্তিযোদ্ধা
রুমী। শুভ জন্মদিন প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার জন্য
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৭
রোকসানা লেইস বলেছেন: এই বিষয়টা কখনো পুরানো হবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্মদিনের মাধ্যমে প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার জন্মদিনকে শ্রদ্ধা জানানোর আমার প্রচেষ্টা।
প্রতি বছর এই লেখাটা আমি পোষ্ট করব, আগেও একবার বলেছি। নতুনদের জানানোর জন্য।
শুভজন্মদিন শাফি ইমাম রুমি শুভ জন্মদিন সকল মুক্তিযোদ্ধা
২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯
আমিনুর রহমান বলেছেন:
শুভ জন্মদিন রুমী। শুভ জন্মদিন প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার জন্য।
৩০ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভ জন্মদিন রুমী। শুভ জন্মদিন প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: লেখাটা মনে হয় পুরোনো, না? শহীদ রুমির জন্যে ভালোবাসা।