নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৩৫
২৫ মে ২০২৯
প্রিয়র জন্মদিন আজ। দেখতে দেখতে কতগুলো বছর কেটে গেলো। প্রিয় আমার ছোট্ট কুট্টু সোনা বাচ্চাটা আঠরো বছরের পূর্ণ বয়স্ক মানুষ হয়ে গেলো। ও আমাকে কড়া র্নিদেশ দিয়ে রেখেছে। কাল সকাল থেকে আর কোন খবরদারী করতে পারব না তার উপর। এখন সে বড় মানুষ এডাল্ট।
আমি হাসি মনেমনে। বড় হওয়ার জন্য অস্থির ছেলে। আরে তুই যত্ত বড়ই হসনা কেনো তুই আমার পুতুলসোনা কুটুস টুকুসই তো থাকবি। তোর র্গাল ফ্রেণ্ড নিয়ে যখন হাঁটবি তখনও তুই আমার ছোট্ট সোনা। মেয়ের সামনেই তোর মাথার চুল এলোমেলে করে দিব। নাক টেনে আদর করব। জানি তুই রাগে গজগজ করবি কিছু বলতেও পারবি না আমাকে তখন। একা পেয়ে চ্যাঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করে আমাকে শিক্ষা দিতে চাইবি। আমি চুপচাপ থাকব একটি কথাও না বলে।
যখন ওর কথা শেষ হবে, চ্যাঁচামেচি থামবে তখন আমি হাতের ডিভাইসটা অন করে, ওর একটু আগের কাণ্ড দেখাব আর বলব এটা তোর বান্ধবীকে দেখাব, আবার যদি এমন করিস। আমার সাথে এমন করলে তোর বান্ধবীর সাথেও তো এমন করবি ক’দিন পর। তা হলে তোকে কে ভালোবাসবে? তোর বাপী কিন্তু আমাকে একদিনও বকেনি এমন করে জানিস তো।
তুই কোথাকার মহারাজা এসেছিস যে আমার সাথে চ্যাঁচামেচি করছিস। ঠিক আছে আমি চলে যাবো তোর বাপীর কাছে । তুই থাক তোর বড় হওয়া নিয়ে।
আর তখনই ছেলে কী করবে জানো নীল, ঝাঁপিয়ে পড়বে ছোটবেলার মতন আমার বুকে। জড়িয়ে ধরে বলতে থাকবে। এমন কথা আর কখোনো বলবা না বলো.. বলো।
আমিও সুযোগ পেয়ে বলিয়ে নিব তবে আমার সাথে কোন মেজাজ দেখাবিনা কখনও প্রমিজ করে রাখ।
শূন্যঘর বারান্দা আলো করে উচ্ছোলতায় মাখিয়ে প্রিয় আমাকে জড়িয়ে ভরে রেখেছিল স্বপ্নের আশায় এতদিন ধরে। এখন ওর নিজস্ব জগতে পাড়ি দিচ্ছে আমার থেকে দূরে। প্রতিদিন কত আয়োজন নিজের জীবন গড়ার। প্রতিদিন একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে। কত করে বললাম টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আমার কাছে থেকে পড়ালেখা করতে। কিন্তু শুনলনা ও ভর্তি হলো সেই কোন সুদূর ক্যালিফোর্নিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে। কেন বলোতো নীল।
ভাবল না কখনও আমি কী নিয়ে থাকব এবার? ওকে নিয়েই তো বেঁচে ছিলাম এতটা বছর। সব ভুলে স্বপ্নের মায়াজালে।
শেষ চিঠি লিখেছিলাম ঠিক আঠারো বছর আগে এই দিনে তোমাকে নীল। কিন্তু শেষ চিঠির পুনশ্চ লিখতে হবে এ আমার জানাছিল না।
আনন্দ ভরপুর এক মন আর হৃদয় নিয়ে ছিলাম তোমার অপেক্ষায়। তোমাকে ফিরে পাবার আনন্দ। বছর চার পরে প্রিয়তম ঘরে ফিরে আসছো; তোমাকে পাবার আনন্দে আমি ছিলাম উচ্ছোল, উদগ্রীব।
উজ্জ্বল চাঁদের জোছনা মাখামাখি হয়ে বসেছিলাম ব্যালকুনীতে, কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া উপেক্ষা করে। ব্যালকুনী থেকে নীচের রাস্তা এবং পার্কিং লট চোখে পরে। তোমাকে নিয়ে গাড়ি যখনই বাড়ির আঙ্গিনায় ঢুকবে আমি দেখতে পাবো উপর থেকে। তাই অপেক্ষা করছিলাম।
কত সময় পেরিয়ে গেছে আমার কোন হুসছিলনা। ঠাণ্ডায় আমার হাত পা অবশ হয়ে গিয়েছিল। তোমাদের গাড়িটা তখনও আসেনি।
দরজায় প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছিল। ব্যালকুনীতে ছিলাম বলে কলিং বেলও শুনতে পাইনি। দরজার শব্দে দৌড়ে ভিতরে এসে দরজা খুলে দিলাম। পুলিশসহ কয়েকজন অচেনালোক সামনে। তারা আমাকে হাসপাতালে যেতে বলল।
আমি কিছুতেই যেতে চাইলাম না। আমার নীল এতদিন পর ঘরে আসবে এ সময়ে আমি কেন হাসপাতালে যাবো।
ওরা তখন আমাকে বুঝাল নীল তোমাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ওদের সাথে আমি তখন হাসপাতালে গেলাম।
কী ভয়াবহ অবস্থা মাগো, পাশাপাশি বেডে বড় ভাইয়া, সুলতানা, মিতি, সাবাব শুয়ে আছে।
আমাকে দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল বড় ভাবী আর মামনি। আমি স্থবীর হয়ে আছি। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। র্নাস এসে তাড়াতাড়ি সবাইকে বাইরে নিয়ে আসল। অসুস্থ মানুষের পাশে এমন শব্দ করা ঠিক নয় তাই।
ও ঘরে একটা টিভি চলছিল। সেখানে দেখাছিল। এয়ারর্পোটে নীল তুমি পাশে মি. জোন্স হারবার। এই দৃশ্যটা আমি ঘরে বসে দেখেছিলাম একঝলক। তুমি বেড়িয়ে আসছো মি. জোন্স তোমাকে ধরে আছেন। ওপাশ থেকে মিতি আর সাবাব হাত নাড়ছে। তুমিও হাত নাড়লে। তোমার কষ্টক্লিষ্ট মুখে হাসি।
তুমি এগিয়ে যাচ্ছো সাবাবের কাছাকাছি। এসময় পুড়ো এলাকা ধূঁয়ায় ভরে গেলো। তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না। কাউকে না। টিভির সাউণ্ড বড্ড কম আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না।
মামনি বলছে, ছেলেটা হাত তুলে হাসল আমি দেখতে পেলাম। মিতি আর সাবাব আগে চলে গিয়েছিল, তাদের পিছনেই সুলতানা তার পিছে বড় ভাইয়া। মামনি আর বড় ভাবী সাংবাদিকের ভীড় ঠেলে এগিয়ে যেতে পারেনি। পিছনে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় বোম বিস্ফোরণ হয় প্রচণ্ড শব্দে। নীলকে আর দেখা যায়নি। সাথের লোকটিকেও না। ধূয়ার মাঝে তারা হারিয়ে গেছে। ধূয়ায় যেন মিলিয়ে গেলো এক নিমিশে।”
কারো একটি কথা বলারও সুযোগ হলো না নীল তোমার সাথে। এতবছর পর দেখার পরও।
আসেপাশে অনেক লোক আহত এবং নিহত। এর মধ্যে বড় ভাইয়া, সাবাব, সুলতানা আর মিতিও আহত হয়েছে।
সুস্থ মানুষগুলো সব এক নিমিশে আহত হয়ে গেলো।
নীল তোমাকে ছেড়ে দেয়ার অভিনয় করে মি. জোন্স কে দিয়ে অনেক সুযোগ আদায় করে নেয়ার পরও ওরা তোমাদের হত্যা করে ফেলল। সাথে আরো অনেক নিরিহ মানুষকে পঙ্গু আহত এবং মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিল। আমার জীবনে অনেকগুলো বছর স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে।
মামনির কথা শুনতে শুনতে, সেই যে আমি মাথা ঘুরে পরে যাই কত দিন, মাস অচেতন ছিলাম মনে করতে পারি না।
প্রচণ্ড শক থেকে ব্রেন হেমারেজ হয়ে প্রায় কমায় চলে গিয়েছিল জীবন।
বছরখানেক বাদে চোখ মেলে তাকালে পাশের মানুষ গুলোর মনে আশার সঞ্চার হলো। বেঁচে উঠব বলে। মাস ছয়েক পরে হাঁটা চলা কথা বলা শুরু হলো। চারপাশ বড় ফাঁকা বড় শূন্য লাগত। কিছুই মনে করতে পারতাম না। মনে আছে এক ফাঁকা অনুভুতি নিয়ে শিশুর মতন ঘুম আর বসে থাকার জীবন কাটাতাম।
তখন আমাকে দেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দেশে যেয়ে পেলাম প্রিয়কে। প্রিয়র দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওকে জাপটে ধরে আমার ছেলে বলে হঠাৎ করে যেন বছর দেড় পরে জেগে উঠলাম। শুরু হলো প্রিয়র সাথে জীবন যাপন। ছেলেকে কাউকে ধরতে দেই না। ওর খাওয়া ঘুম, সব আমার কাছে। মনে হয় সব আমি ঠিকঠাক ভাবে করতে পারতাম না। ছেলেটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। সাথে অন্যদেরও। কিন্তু ওই এক অবলম্বন সম্বল করে আবার ধীরে ধীরে আমি বাস্তবে ফিরতে লাগলাম। সবাই প্রিয়র উপর অধিকার ছেড়ে দিল শুধু আমার মুখ চেয়ে। আমি কী স্বার্থপর হয়ে উঠেছিলাম।
কিন্তু কী করব বলো নীল। তোমার সেই ধূঁয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার ঘটনা। আমাকে যে এক বিশাল ঝাঁকি দিয়ে মাথাটা নষ্ট করে দিয়েছিল।
জীবনটা বড় বিচিত্র। তোমার জন্য আমার এয়ারপোর্টে যাওয়ার কথা ছিল সবার আগে দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল সবার সামনে। তা হলে তোমার সাথে ধূয়ায় আমিও মিশে যেতাম। অথচ আমি বাড়ি ছেড়ে গেলাম না তোমার অপেক্ষায়। আজও জীবনের বোঝা বয়ে বেঁচে রইলাম এই পৃথিবীর আলোয়।
ঢাকায় সমির ছেলে হয়েছিল হাসপাতালে যখন বিস্ফরণটা ঘটে পির্য়াসন এয়ারপোর্টে।
সেই ছেলে প্রিয়। যাকে দেখেই আমি, আমার ছেলে বলে ঝাঁপিয়ে পরে বুকে তুলে নিয়েছিলাম। সমি, সোহাগের কোলে দেইনি একবারের জন্যও। ওকে কোলে করে কয়েক মাস কাটানোর পর মনে হলো, এ বাড়ি আমার নয়। আমি যেন অন্য কোথায় থাকি। ঠিকঠাক কিছু মনে করতে পারি না। শুধু ভয় হয় এখানে থাকলে আমার ছেলেকে সবাই আমার থেকে কেড়ে নেবে।
ওরাই সব ব্যবস্থা করেছিল জানো। প্রিয়কে নিয়ে আমার এখানে চলে আসার। এক দেশ থেকে আরেক দেশে একটা বাচ্চা নিয়ে চলে আসা তো সোজা কথা না। কাগজ পত্রের বিস্তর ঝামেলা। তবে আমার জন্য সব সহজ ছিল। কানাডা সরকার আমার সব কিছুই স্পেশাল ভাবে দেখছিল। আমার মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে বাচ্চা এডপশনের কাজ ওরাই করে দিয়েছিল। আমার থাকা এবং চিকিৎসার দায় ভারও সরকার নিয়েছিল।
সেই প্রিয়কে নিয়ে এসে জীবনের আঠারো বছর কেমন করে কাটিয়ে দিলাম, ওকে বড় করতে করতে, তোমাকে ছাড়া নীল। প্রিয় আর একমাসের মধ্যে চলে যাবে ক্যালিফোর্নিয়া। কিছু করার নাই। সন্তানকে তাদের পথে এগিয়ে যেতে দিতে হয়। আমি মি.জোন্সের মেয়ে নওমির সাথে কথা বলে ঠিক করে নিয়েছি। ওর সাথে কাজে নেমে পরব মানুষের সেবায়। একটা কিছু অবলম্বন ছাড়াতো বাঁচা সম্ভব নয়।
তোমার কাছে যাবার আগের সময়টুকু কাটাতে হবে তো নীল।
অপেক্ষায় থেকো নীল
অনিন্দ হৃদ্যিতা তোমার হৃদয়ের জন্য
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৫৯
রোকসানা লেইস বলেছেন: নামটা পছন্দ হয়েছে কাণ্ডারী অথর্ব?
প্রশ্নটা ছিল অনেক আগে বলিনি। কারণ এটা শেষ লাইন গল্পের তাই।
ধন্যবাদ
২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:২৫
রক্তিম ঘাসফুল বলেছেন: ভাল লাগা
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০০
রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা রক্তিম ঘাসফুল
৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৪৭
সমুদ্র কন্যা বলেছেন: শেষ পর্যন্ত ফেরা হলো না নীলের! এতটা পথ পার হয়ে এসে এই পরিণতি মানতে কষ্টই লাগছে।
আকাশের চিঠি কি তাহলে শেষ হয়ে গেল!
শুভকামনা রোকসানা।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২১
রোকসানা লেইস বলেছেন: গল্পটা মিলনাত্মক হোক এ আমারও চাওয়া ছিল। কিন্তু গল্পের নিজস্ব গতি এই পথেই নিয়ে গেলো।
কষ্টটা ভাবাক কিছুদিন, জড়িয়ে থাকুক সমুদ্রকন্যাকে।
চাইলে আরো পর্ব করা যায় তবে এই পর্যন্তই থাক।
এইপর্বের শুরুটুকু পরে কী মনে হয়েছিল,জানতে ইচ্ছে করছে নিয়মিত পাঠক সমুদ্রকন্যার কাছে।
শুভেচ্ছা সমুদ্রকন্যা
৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:২৭
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
পছন্দ হয়েছে বলেইতো পড়ছি
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩২
রোকসানা লেইস বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩৫
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
অপেক্ষায় থেকো নীল
অনিন্দ হৃদ্যিতা তোমার হৃদয়ের জন্য
সুন্দর চিঠি