নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২৯
২৮/১২/১০
জানো নীল,
গত ক’দিন আমি কিছু খেতে পারিনি। নাওয়া নেই, ঘুম নেই। আমি কী আবার মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলব? যথা সাধ্য চেষ্টা করছি নিজেকে স্থির রাখার। এছাড়া তো আর কিছু করার নাই। শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা করছি প্রাণপনে। তোমার আসার অপেক্ষায় আমাকে সুস্থ থাকতে হবে।
কি ভাবে খাবো আমি বলো, যত বার পানি পান করতে যাই মনে হয়, তৃষ্ণায় তোমর কণ্ঠতালু শুকিয়ে উঠেছে অত্যাচারে। পানির জন্য আহাজারী করছো আর তোমার মুখে ওরা হিসু করে দিয়েছে। মাগো, ওরা কী মানুষ! মানুষ হয়ে কেউ পারে এমন মানুষের মুখে হিসু করতে!
দিনের পর দিন খেতে দেয়নি। একটা খেজুর খেয়ে কেটেছে সপ্তাহ পর্যন্ত। খেজুর বিচি মুখে রেখে চুষেছো দিনের পর দিন, ক্ষয় হতে হতে চকলেটের মতন ছোট হয়ে গেছে মুখের ভিতর বীচি। তাও টের পেলে মুখ চেপে বের করে ফেলে দিয়েছে ওরা উল্লাসে। ঝুলিয়ে রেখেছে পা উপরে বেঁধে এভাবেই থেকেছো কত দিন হিসাব নাই। তোমার মশৃণ চামড়া ভেদ করে বসে গেছে ওদের বুট, চাবুক। তোমার কাছে যে খবর তারা জানতে চায়, তুমি তাদের কেন সে খবর দিতে পারোনি এই তোমার অপরাধ। ভুল করে ওরা তোমাকে ধরেছে সেও তোমার অপরাধ।
মি. জোন্স বললেন, উনি ছাড়া পাওয়ার আগে তোমাকে আর উনাকে তপ্ত গরম বালুর নীচে ঢুকিয়ে রেখেছিল পাশাপাশি। তোমাদের মুখ ছিল আকাশে সূর্যের দিকে। নড়ার শক্তি ছিলনা তোমাদের। বহু কষ্টে তিন চার দিনের প্রচেষ্টায় তোমরা মাথা ঘুড়িয়ে একে ওপরকে দেখতে পেয়েছিলে। দিনের প্রচণ্ড সূর্যের তাপে আকাশে মুখ করে থেকেছো, রাতে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে গেছে তোমাদের উপর দিয়ে। বালুর ভিতর দেহ আটকানো তোমাদের রেখে, পাশের তাবুতে ওরা পান আহার করেছে, উল্লাস করেছে। নিস্তেজ হতে হতে তোমরা জেগে উঠেছো ওদের হল্লায়। একজন আরেক জনকে জাগিয়ে রেখেছো বেঁচে থাকার তাগিদে। কী ভয়াবহ সময় কেটেছে তোমাদের উফ...কল্পনায় আমি সে জায়গায় পৌঁছাতে পারিনা।
মি. জোন্স ধরা পরার পরই খবর হয়ে যায়। উনি যাচ্ছিলেন একটি কনফারেন্স যোগ দিতে। উনার সাথে সারাক্ষন যোগাযোগ হচ্ছিল বিভিন্ন জনের উনার সারা শব্দ না থাকায় সাথে সাথেই খোঁজ খবর শুরু হয়। আশংকা করা হয় টেরোরিস্টের কাছে ধরা পরতে পারেন তিনি। কারণ তেমন হুমকি তাকে দেয়া হয়েছিল কয়েকবার আগেও। কিন্তু তাই বলে জীবন হাতে নিয়ে ঘরে বসে কাটাতে পারেন না তিনি। তার কাজ গুলো তাকে করতেই হবে। তিনি যাচ্ছিলেন কাজের জন্য কিন্তু দুবাই থেকে কিডন্যাপ করে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় তাকে কাজের জায়গায় পৌঁছানোর আগেই।
সেই সাথে তোমাকেও।
কিছু মানুষ নিজের জীবন বাজী রেখে অন্যের জন্য কাজ করে মি. জোন্স হারভার তেমনি এক মানুষ।
জীবনে অসংখ্যবার বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন। মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই তোমাকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে ওদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিঃস্বার্থ ভাবে। তুমি যখন প্রচণ্ড র্নিযাতনে অচেতন। পাহাড়ের খাদে,তপ্ত বালুতে তোমাকে ফেলে যেতে চেয়েছে উনি তখন ঐ ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও তোমার কথা ভেবেছেন।
উনাকে না মেরে জিম্মি করে উদ্দেশ্য হাসিল করাই ছিল জরুরী। এই বিষয়টা বুঝে যাওয়ায় ওদের অত্যাচার সয়েও তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার দেনদরবার করেছেন বারবার। কিছুতেই বিরান ভূমিতে তোমাকে ফেলে যেতে দেননি। অথবা মেরে ফেলার কথা বললে, বলেছেন ঠিক আছে আমার মুখ থেকে একটি কথাও বের করতে পারবে না। আমি তোমাদের জন্য কাউকে কিছু বলব না। মেরে ফেলো আমাকেও কিছুতেই আমি সহযোগিতা করব না তোমাদের সাথে।
ওনাকে ভয় দেখাতে চেয়েছে উনার মেয়েকে ধরে নিয়ে যাবে বলে। সেই ইরাক যুদ্ধের সময় যখন উনার মেয়ের বয়েস পনের সে সময় স্ত্রীসহ উনি কাজ করছিলেন ইরাকে, মেয়ে ছিল আমেরিকায়। স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যায়। অত্যাচার করে উনার সামনে। কিস্তু অঙ্গিকারবদ্ধ মানুষ জোন্স হারভার মুখে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। স্ত্রীকে মেরে ফেলার পরও। সেই বছর মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। কী অলৌকিক শক্তিতে তিনি বেঁচে আসেন। সেই সময় স্মরণ করে শিউরে উঠেছেন বারবার। তারপরও অবিচল থেকেছেন তিনি নিজের কথার উপর। বলেছেন, তোমাদের ক্ষমতা আছে তোমরা দেখাও তা বিভৎস ভাবে আমি কি করতে পারি। অবাক হয়ে চেয়ে থেকেছে উনার মুখের দিকে একথা শুনে।
মাগো উফ নীল , আমার বুকের ভিতর জ্বলে যাচ্ছে যন্ত্রনায়। মানুষ কিভাবে এমন অমানুষ হয়। কিচায় ওরা?
নিজেদের চাওয়ার বলি অনায়াসে করে ফেলতে পারে যে কোন মানুষকে। সাজানো সংসার ছিন্নভিন্ন করে ফেলে অনায়াসে নিমিশে। শিশু, বৃদ্ধ যুবা তরুন কোন মায়া জন্মাতে পারে না ওদের মনে। ওদের হৃদয় বলে কিছু নেই।
পৃথিবী ব্যাপী যে কোন মানুয়ের জীবনের কোন মূল্য নেই ওদের কাছে।
পৃথিবীর মানুষ কি ওদের কাছে কিছু চেয়েছে কখনও। কিসের জন্য এই ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েছে ওরা।
কত পরিবারে নেমে এসেছে বিভীষিকা ওদের কারণে কে জানে। পুঙ্গু, মৃতর সংখ্যা কত, কত পরিবার হারিয়েছে ভীটা মাটি স্বজন। আমার এই এত দূরের ঘরে নেমে এসেছে কালো অন্ধকার রাত আজ কতটা বছর ধরে। কি দুঃসহ জীবনের বোঝা বয়ে গেছি আমি, সে শুধু আমিই জানি। ভেবেছো তুমি, বুঝতে পেরেছো তুমি কিন্তু তোমাকে করে রেখেছে অপারগ। সব কিছুই যে তুমি সুন্দর ভাবে গুছিয়ে ফেলতে পারো তাকে কিছুই করতে দেয়নি এতটা বছর।
আমাদের অসীম ভালোবাসার সহায় হয়ে যেন মি. জোন্স তোমার পাশেছিলেন।
উনাকে ছেড়ে দিয়েছে। তোমাকে ছাড়বে কিছু শর্ত দিয়ে। উনি সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দিন রাত এই অত্যাচারে অসুস্থ শরীর নিয়েও। উনার শরীরে ক্ষত দাগ গুলো দেখে আমি হাউমাউ করে কেঁদেছি উনাকে জড়িয়ে ধরে। তোমার কষ্ট অনুভব করে কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।
তবে অনেক মনো বলে নিজেকে ধরে রাখছি সেই সাথে। আর অল্প কদিনের অপেক্ষা তোমাকে ফিরে পাওয়ার।
তুমিও মন থেকে অনেক শক্ত থেকো নীল আমার
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪০
রোকসানা লেইস বলেছেন: তাই কী যে হচ্ছে..........শুভেচ্ছা
২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
পিনিকবাজ বলেছেন: +++
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪১
রোকসানা লেইস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পিনিকবাজ
৩| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৮
আরজু পনি বলেছেন:
প্রতীক্ষার দীর্ঘ প্রহর !
অনেক সুন্দর লিখেছেন ।।
২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪২
রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন আরজুপনি
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৩
মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্ বলেছেন: ওহ্ আল্লাহ্! এটা যেন গল্পই হয়!