নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের অজানা টানে সমুদ্র বালিয়াড়ি বেয়ে বোহেমিয়ান- গৃহকোন, জীবন যাপন ফেলে চলে যায়। তুমি দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে বাঁধতে চাও জোছনা গলে হারিয়ে যায় সুখ । আছড়ে পরা ঘূর্ণিজল মনে বাজায় অচেনা সবুজ দিগন্ত ..

রোকসানা লেইস

প্রকৃতি আমার হৃদয়

রোকসানা লেইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পের মতন সত্য

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪৫

প্রিয় পাঠক, আজ আকাশের চিঠি স্থগিত থাকল। আজ আমার পিতৃস্থানীয় একজন মানুষের মৃত্যুদিবস। অনেকদিন আগে যিনি এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু তার কিছু স্মৃতি, যা তাঁর সাধ্যের মধ্যে তিনি করে গেছেন এই পৃথিবীর জন্য তাঁর আসেপাশের মানুষদের জন্য যারা তাঁর আসে পাশ ছিলেন তাদের ঘিরে আছে কিংবদন্তীর মতন সে স্মৃতিগুলো। মানুষ এমনই হওয়া উচিত বিশেষ করে যারা নেতৃস্থানীয়, জনগনের সেবায় নিয়োজিত।

গতকালতাল দেখলাম অনেকেই ফেইসবুকে, স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বৃষ্টির... প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে। এমনি এক উন্মাতাল বৃষ্টিমুখর রাত পথঘাট ডুবে গিয়েছিল অনেক বছর আগে। তোলপাড় বৃষ্টির ছাটে ডুবে যাচ্ছিল যেন সমগ্র ঢাকা শহর। একটি রিকসা পাওয়া যায়নি পিজি হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য অসুস্থ একজন মানুষকে দেখার জন্য। একটানা বৃষ্টি চলছ্লি সন্ধ্যা থেকে রাত গভীর পর্যন্ত।

তাই পরদিন সকালে তাঁকে দেখতে যেতে চেয়ে ছিলাম।

কিন্তু প্রচণ্ড অভিমানে তিনি সকালে সারা জীবনের জন্য ঘুমিয়ে পড়লেন। আর কখনও কথা বললেন না। চোখ মেলে দেখলেন না কে এলো কে গেলো। সব আগ্রহ হারিয়ে তিনি নিশ্চুপ শুয়ে থাকলেন। সে কষ্টটা দারুণ ভাবে নাড়িয়ে দেয় বুকের গহীন। ইচ্ছের তো কোন কমতি ছিল না, অথচ অপরাগ সময়ের বোঝা তবু কেনো এমন অপরাধ বোধের বোঝা হয়ে চেপে থাকে। তাঁর নির্বাক দেহটা নিয়ে কি ভয়াবহ সব কাজ শেষ করতে হয়েছিল। কেমনে করেছিলাম সে সব তা ভাবলেও অবাক হয়ে যাই। কতটা কর্তব্য পরায়ন হতে পেরেছিলাম অতটুকু বয়সে। কিছু স্মৃতি সব সবময় গভীর দাগ কেটে থাকে হৃদয়ের গভীরে।

একজন অসম্ভব সুন্দর মনের মানুষের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি অন্তরের অন্তস্থল থেকে।

.......................................................................................

গল্পের মতন সত্য

যমুনার জল বাড়ছে প্রতিদিন। আকাশ কালো হয়ে আছে মেঘের ঘনঘটায়। বৃষ্টি ঝরছে অবিরাম কদিন ধরে। রোদের দেখা নাই। জল যেন ফুসে উঠছে, খেয়ে ফেলছে শুকনা জমিন। মাঠ, ক্ষেত ভরাট করে ধেয়ে আসছে ঘর বাড়ির দিকে। উঠান, আঙ্গিনা বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে ঘর বাড়ির ভিতর। নিচু এলাকার মানুষ উঠে এসেছে স্কুল ঘরে। কিছু মানুষ ইটোর উপর বা খাটের উপার খাট তুলে ঘরে মাচা বেঁধে এখনও ঘরে বাস করছে। বড় বাড়ির উচুঁ দাওয়ায় এখনও পানি উঠে নাই কিন্তু উঠান জলে ভাসছে। মানুষজন এক হাঁটু উঠান জল পেরিয়ে করছে এঘর ওঘর।

চেয়ারম্যান সাহেবের চোখে ঘুম নেই। মানুষের এই র্দূবস্থা সহ্য করা যায় না। পানির কাছে বড় অসহায়। শক্তি বড় কম যা দিয়ে লড়াই করা যায়। নিজেরই ঘর বাড়ি তলিয়ে গেছে দুবার। শুধু কি তলিয়ে যাওয়া? চিহ্নমাত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি আর। আম বাগান, কাছারি ঘর, ভিতরবাহির বাড়ির বড় দালান, রান্নাঘর, উঠোন, বাপ দাদার গড়া জমিদারি আমলের সব চিহ্ন নিঃচিহ্ন করে থৈ থৈ করে জল নেচে বেড়াচ্ছে। সব শরিকের সাজানো বাগান। একবেলার উন্মাদ মত্ততায় ভেসে তলিয়ে কোথায় যে গেলো? জলের নীচে থেকে একমুঠো মাটিও আর পাওয়া গেলো না। সাজানো বাড়ি, স্বপ্ন স্বাধের উপর খলবলে পানি নাচে। সেই সাথে এতদিনের এক সাথে থাকা আত্মিয়, বন্ধু পাড়ার মানুষ সব বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। সার সার লম্বা দালান বাড়ির পিছনে উঠোন, সামনে কাছারি। রান্নাঘরের পিছন জুড়ে বড় বড় নানা প্রজাতির আমগাছ, কাঠাল, জাম, নারিকেল সুপারী, কলা, কুল আরো কত ফল ফুলের বৃক্ষ ছিল।

ছবি হয়ে ভাসে শুধু স্মৃতি আছে আর সব জলের নিচে। সাজান ছিমছাম গ্রাম। ফূর্তিবান সুখি মানুষগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে হারিয়ে গেলো এক বিন্দু থেকে কত নতুন জায়গায়। কোন রকমে ক্ষেতি জমির উপর বাঁধা ঘর আবারো তলিয়ে গেলো, হারিয়ে গেলো নদীর গর্ভে। ভাই বোন বউ বাচ্চাসহ চড় পড়া ধূ ধূ বালুর এই মাঠে ক্ষেতি জমির উপর অন্য এক গ্রামে, ঘর বেঁধে আছেন কয়েকটা বছর হলো। এমন বিরান লাগে। গাছপালা কিছু নেই। শুধু বাস করা, নতুন বসতি গড়ে তুলার চেষ্টা।

যমুনা সর্বনাসী, কেবল সবুজের আভাসলাগা গ্রামখানা আবারও বুঝি ভয়াল হাত বাড়িয়ে এবার কেড়ে নেবে, যমুনা রাক্ষসি, এগিয়ে আসছে প্রতিদিন বিশাল থাবা মেলে। অস্থির লাগে চেয়ারম্যান সাহেবের। পায়চারি করেন ঘর ব্যাপী। পৌরসভার পাকা ঘরে চলে যান পানি ভেঙ্গে। স্কুল ঘরে জড়ো হওয়া মানুষগুলোর খোঁজ খবর নেন। ফসলের মাঠ পেরিয়ে ঘরে পানি উঠে গেলে, যতটুকু পেরেছে সংসার সাথে পুটলি বেঁধে নিয়ে মানুষ জড়ো হয়েছে বড় সড়কের উপর, স্কুল ঘরে। সারা গ্রাম জুড়ে যেটুকু শুকনো মাটি আছে তার উপর।

সব হারা এতগুলো মানুষের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করতে শহরে প্রশাসকের কাছে ছুটে যান। চাল, ডালের ব্যবস্থা করে। বালুর বস্তা নদীর কিনারে ফেলানোর জন্য ছুটে যান। রাতদিন পানি বাড়ছে, সেই সাথে ব্যস্ততা ঘুমহীন চেয়ারম্যান সাহেবের। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর খাবার নাই। মানুষেরই খাবার নাই বাজার ডুবে গেছে, হাঁট বসছে না।

বালির বস্তা ফেলে পানি আটকানোর প্রচেষ্ঠায় হাত লাগিয়েছে জোয়ান,বুড়ো ছেলে নিজেস্ব উদ্যোগে। বেঁচে থাকা আর বাঁচার তাগিদে সবার এক হাত এক মন। তিনদিন ঘুম নাই চেয়ারম্যান সাহেবের চোখে। বিছানায় এলিয়ে দিয়েছেন শরীর, ক্লান্তিতে বুজে আসছে চোখ কিন্তু মগজের কোষে ঘুরছে যমুনা রাক্ষসিকে বধ করার চিন্তা। কি ভাবে... কি ভাবে থামানো যায় এই প্রমত্ততা!

কপালে ভাজ, ভ্রু কুচকে আছে যন্ত্রনায়, শরীর নিস্তেজ ঘুমে, খানিক অষাঢ় হয়ে থাকা সময় কেটে যায়। এক সময় ধরফর করে উঠে বসেন চৌকির উপর। গ্রামের মানুষের কি অবস্থা? তিনি গ্রামের মানুষের প্রতিনিধি তাঁর কি ঘুমালে চলেবে এই দুঃসময়ে? পানি যদি আর খানিক বাড়ে পেরিয়ে যায় বড় সড়ক তবে শুধু এই গ্রাম নয় ভেসে যাবে আশে পাশের আরো অনেকগুলো গ্রাম। তলিয়ে যাবে কড়াল গ্রাসে, মানুষ,তাদের আবাস, সর্বস্ব। ঘরে থাকতে পারেন না চেয়ারম্যান সাহেব নিঃচিন্তে। জায়নামাজ আর তসবী হাতে বেড়িয়ে পরেন পানি ভেঙ্গে বড় রাস্তার পথে। যেখানে পানি ঠেকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে মানুষ। আর পাঁচ ছয় ইঞ্চি পানি বাড়লেই হারিয়ে যাবে সমতল জমি। হয়তো বা চিরতরে তলিয়ে যাবে যমুনার গর্ভে গ্রাম আবার। দ্রুত হাঁটেন চেয়ারম্যান সাহেব পানির উপর দিয়ে, সাপ, বিষাক্ত প্রাণিকুল কামড়ে দিতে পারে মনেও হয় না তিনি এগিয়ে চলেন। বৃষ্টি থেমেছে, ভাঙ্গা চাঁদের প্রতিফলনে অপূর্ব রূপের ছটা পৃথিবী জুড়ে। মানুষজন কেউ নাই নিথুয়াপাথার সাগর যেন যমুনা। ছয় ইঞ্চি ছাড়িয়ে পানির উচ্চতা উঠে এসেছে তিন ইঞ্চির মতন আরো। বড় অসহায় হয়ে জায়নামাজ পেতে বসেন ঐটুকু শুকনো পাড়ের উপর। নিমগ্ন হয়ে ধ্যানে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকেন দুহাত তুলে। তুমি প্রভু বিপদ থেকে উদ্ধার করো আর যদি ভাসিয়ে নেও আমাকেই সবার আগে তবে ভাসিয়ে নিও। সকাল বেলা মানুষজন এসে চেয়ারম্যান সাহেবকে প্রার্থণারত দেখতে পায়। পানি আর বাড়ে না ধীরে ধীরে পানির গতি নীচের দিকে নামতে থাকে। যমুনা নিজেকে গুটিয়ে নেয়,আস্তে আস্তে ফিরে তার আপন সীমানায়।

এই মানুষ একজন বাংলাদেশের মানুষ। একজন প্রতিনিধি ছিলেন উপজেলা পরিষদের।আঠাস বছর মানুষ তাকে ভোট দিয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে। যার অনেক সম্পত্তির বড়াই ছিল না ছিল এক মহান হৃদয়ের বড়াই। গ্রামের সাধারন মানুষ এই মহনুভব মানুষকে ভালোবেসে প্রতিপক্ষের তুমুল আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন,জাকজমকের চমকের প্রতিযোগীতায় সাদামাঠা অভাবী এই প্রতিদ্বন্দিকে বিজয়ি করেছে বারবার কারণ তারা জানত তাদের প্রয়োজনে এই চেয়ারম্যান সাহেব বুক পেতে এগিয়ে আসবেন। নিজের সমস্ত সহযোগিতা দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়াবেন। প্রতিপক্ষ ধনকুবেররা যা কখনো করবে না। যখন লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রতিপক্ষ ভোটারদের কিনতে চেয়েছে তখন ভোটাররা নিজের খেয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের জন্য কাজ করেছে। এক কাপ চা মুড়ি বিস্কিটের বেশী কোন ব্যবস্থা কখনও করতে পারেননি তিনি। কিন্তু জন প্রতিনিধি হয়ে যতটুকু সম্ভব দাবী তুলেছেন মানুষের জন্য। আদায় করে নিয়ে এসেছেন তাদের সুযোগ সুবিধা এবং সঠিক ভাবে বিলি বন্টণের ব্যবস্থা করেছেন বরাবর। তাই তাঁর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ছিল অসাধারণ।

সাধারণ এই মানুষ যৌবনে অনেক সৌখিন ছিলেন। কন্সট্রাকসনের বড়বড় কাজ করে দুহাতে টাকা কামাতেন অঢেল খরচও করতেন তেমনি। করাচি থেকে স্যুট তৈরী হয়ে আসত। গোটা পঞ্চাসেক বুট ছিল। সৌখিনতা করতে পছন্দ করতেন আর ঝোঁকছিল সিনেমা দেখার। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে মিত্র পক্ষের হয়ে যুদ্ধ করেছেন। সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। সরাসরি পরিচিত ছিলেন হোসেন শহীদ র্সোওয়ারদি, শের এ বাংলা, ভাষানি থেকে আরো অনেকের সাথে। ততকালিন মন্ত্রী আল মাহমুদের অত্যন্ত স্নেহ ভাজন ছিলেন। আত্মার সম্পর্ক ছিল আত্মিয়তার চেয়েও বড়। ওদের বাড়িতেই থাকতেন পড়ালেখার জন্য শহরে। সে সময় আল মাহমুদ একদিন উনার ঘরে ঢুকে অবাক হয়ে বললেন, তোর এত জুতা মন্ত্রি হয়েও আমার এত কাপড়, জুতা নাইরে ভাই। সেই যে লজ্জা পেলেন। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে আসলেন সাধারনের পর্যায়ে। বাবা জমিদার ছিলেন। লোকজনের উপর কত্তৃত্ব ফলাতেন। বাড়ির পাশ দিয়ে কেউ ছাতা মাথায় বা জুতা পায়ে চলতে পারত না। তাঁর ছেলে কিন্তু মানুষের জন্য ভালবাসা অন্তপ্রাণ ছিলেন। মানুষের শোকে দুঃখে পাশে দাঁড়ানই যেন উনার কাজ।

ভারত বিভক্তির আগে দ্বিতীয় যুদ্ধ শেষে কলকাতায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। যুদ্ধ শেষের ভাঙ্গা দেশ গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ কাজ করেছিলেন। হিন্দু, মুসলিম বিভেদ ছিল না তখন স্বপ্রণদিত হয়ে কলকাতায় উনার নামে একটা বাজারের নাম দিয়ে ছিল সে সময় সতীর্থরা, ”ফরহাদরাজার” তাঁর কাজের ভালোবাসা স্বরূপ।

তাঁর শহর সিরাজগঞ্জ থেকে কলকাতা পর্যন্ত স্টিমার, রেলগাড়ী চলত সে সময়ে। যাতায়াত ব্যবস্থা খুব ভাল ছিল। ঢাকার চেয়ে কলকাতার সাথেই যোগাযোগ ছিল বেশী সে সময়। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষে গুছিয়ে উঠার আগেই শুরু হয়ে গেলো হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা রায়ট। অখণ্ড ভারতের বিভক্তি আর উত্তেজনা অচেনা হানাহানি বাসা বাঁধল পাশাপাশি বসবাসরত হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে। ছুড়ি, বল্লম, রামদা হাতে প্রচণ্ড মারামারি কাটাকাটির মধ্যে একদিন এমন বেকায়দা অবস্থায় পড়েছিলেন কলকাতায়, হিন্দু অধ্যিসুত এলাকায় গিয়ে। কিন্তু পরিচিত হিন্দু সতির্থরাই লুকিয়ে রেখে প্রাণে বাঁচায় উনাকে। অপরিচিত হয়ে উঠে সব কেমন। ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। সেখানেও চলছে একই তাণ্ডব। হিন্দু জমিদার যাদের সাথে বংশ পরমপরা সম্পর্ক তাদের বাড়িতে আক্রমণ করতে যাচ্ছে মুসলিম। নিজ বাড়িতে নারী শিশু, পুরুষ সবাইকে আত্মিয় পরিচয়ে রেখে রক্ষা করেন দাঙ্গকারীদের থেকে। সশ্রদ্ধচিত্তে সে অবদান স্বীকার করে এখনও সেই হিন্দু পরিবারের লোকজন। চির আত্মার আত্মিয় হয়ে আছেন তারা মানবিক বন্ধনে।

অনেক নামি দামী মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। সবার ঘরের মানুষের মতন ছিলেন তিনি।

হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দির স্ত্রী ছিলেন ততকালিন পশ্চিম পাকিস্তানের মন্ত্রীর মেয়ে তাকে ফরহাদ হোসেন বোন বলতেন। হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দি এক বিশাল নাম বাংলার মানুষের কাছে। অথচ ঘরে স্ত্রীর প্রতিছিলেন অমানবিক। একদিন অন্তঃসত্বা স্ত্রীকে লাথী মেরে ফেলে দেন সিড়ির উপর থেকে। ফরহাদ হোসেন তখন ধরে ফেলেন তাকে সিড়ির নীচে থেকে এবং হাসপাতালে নিয়ে যান। মহিলাদেরকে তিনি অসম্ভব সম্মান করতেন।

আমার কখনও মনে পড়ে না বাবা ডাকা ছাড়া নাম ধরে আমাকে তিনি ডেকেছেন বলে।

মুসলিমলীগ করতেন।কিন্তু যখন ঢাকায় পশ্চিমা বাহিনীর নৃশংস আক্রমন হলো। তখন তিনি ঘোষনা দিয়ে মুসলিমলীগের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন।বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষনের সাথে একাত্ততা প্রকাশ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে নিজের ফৌজে থাকা কালিন জানা শিক্ষা দিয়ে ট্রেনিং দিতে শুরু করলেন সাধারন মানুষকে যুদ্ধের জন্য এপ্রিল থেকেই। বড় ছেলে কলেজে ভর্তি হয়েছে মাত্র বাবার শিখানো শিক্ষা নিয়ে এপ্রিলেই চলে যান ভারতে যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য । আসামে ট্রেনিং শেষ করে । অনেকগুলো সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ট্যাংক চালনা করে বড় বড় অনেক গুলো অপারেশন করেছেন । সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম মধু নিরবে নিভৃতে রোগে ভোগে চলে গেলেন কিছুদিন আগে কারো প্রতি কোন অভিযোগ না করেই। ভালো ফুটবল খেলতেন।সাইকেল চালনায় চ্যাম্পিয়ান হয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন। দেশের মুখ উজ্জ্বল করা একজন কৃতি সন্তান কোন স্বীকৃতি পাননি কোথাও থেকে।

ফরহাদ হোসেন চেয়ারম্যান দেশের ভিতরে থেকে নানা ভাবে সাহায্য সহায়তা করে গেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাজ করে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুদ্ধকালিন পুরো সময়।

যমুনার ভাঙনে তাঁর পৈত্রিক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেলে পরিবারের লোকজন শহরের উপর একখানা ভালো জমি ছিল রাস্তার পাশে সেখানে ঘর বানানোর জন্য বলতে লাগলেন। কিন্তু তিনি মনে মনে দান করেছিলেন সে জমি মানুষের জন্য। সেখানে নিজে থাকার চিন্তা করেন নাই ।নিজের বাড়ি বানালেন ক্ষেতি জমির উপর। যার আশে পাশে রাস্তা ছিল না। প্রায় মাইল তিনেক হেঁটে যেতে হতো বাড়ি আইলের পথ ধরে।বর্ষায় নৌকা ছাড়া গতি ছিল না। সরকারি অনুদান আদায় করে নিজের জমিতে গ্রামের মানুষের জন্য তিনি গড়ে তুললেন হাসপাতাল। একটাই চাওয়া ছিল মানুষের কাছে হাসপাতালে যেন উনার কবর হয় সে আশা পূরণ করা হয়েছে।

সে বছর জল নেমে যাওয়ার পর দুহাত তুলে মোনাজাত করে মহান সৃষ্টি কর্তার শুকরিয়া আদায় করে কাজে নেমে পড়েন। ভাবতে থাকেন এই বন্যায় বাঁচা গেলো পরের বার কি রক্ষা পাওয়া যাবে? যমুনার দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবতে থাকেন। প্রকৌশলি জ্ঞান নাই কিন্তু উনার ধারনা আছে রাস্তা তৈরীর। ভাবতে ভাবতে পেয়ে যান এক অদ্ভুত সমাধান নিজের মনে। সোজা বাঁধ না দিয়ে যদি ইংরেজি টি অক্ষরের মতন বাঁধ তৈরী করা হয়, ক্ষয়ে যাওয়া অংশ থেকে গতিমুখ যদি ঘুরিয়ে দেয়া যায় নদীর স্রোতের তবে শহর রক্ষা পাবে। নিজের খসড়া স্কেচ মাথায় নিয়ে সে প্রস্তাব রাখেন সাবডিবিসনে, সেখান থেকে জেলায় কিছুদিন অপেক্ষা করে কোন সাড়া না পেয়ে নিজেই চলে যান সর্ব উচ্চ পর্যায়ে। প্রস্তাব বিবেচনা করার জন্য বাধ্য করেন এবং শেষ মেশ রায় আদায় করেন তাঁর আবিষ্কৃত চিন্তার পক্ষে। শহর রক্ষা হবে এভাবে বাধ তৈরী হলে। এখানেই থেমে থাকা নয় কাজকে বাস্তবে রূপ দান করে নিশ্চিত করেন, বর্ষায় উত্তাল যমুনার প্রলয় নাচন থেকে শহর রক্ষার, মানুষকে নিশ্চিন্ত করেন বন্যায় না ভাসার। যমুনার গর্ভে নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া অনেক গ্রামের মাঝে তাঁর হারিয়ে যাওয়া শৈশব কৈশোরের মতন আরো অনেক শিশু কিশোরের স্মৃতি যেন ডুবে না যায় তার ব্যবস্থ করে গেছেন ১৯৭৫ সনে টিহেট বাধ তৈরী করে। যা স্থানীয় ভাষায় ’টি-হেড” নামে পরিচিত। এক সময়ের ভয়াবহ দূর্ভোগের স্থানে এখন মানুষ যমুনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে যায় । আঠাশ বছর একটানা চেয়ারম্যান থাকার পর নিজেই ঘোষনা দিলেন পরের বার আর অংশ গ্রহণ করবেন না। মন ভেঙ্গে যায় তার ভক্তদের। রাত বিরাতে যার কাছে সমস্যা নিয়ে আসা যেতো নিঃসংকোচে। কাজের প্রয়োজনে ভোর বেলা যিনি নিজের খরচে ঢাকা রওনা হয়ে বড় বড় আফিস, মানুষের সাথে যোগাযোগ করে কাজ করে দিতেন ভালোবেসে। তেমন মানবিক মানুষ আর কোথায় পাবে তারা যার উপর নিজের দায়িত্ব অর্পণ করা যায় অনায়াসে।

তার অবকাশের পর অনেক পরিবর্তন হয়। শহর রক্ষা বাধের কোন রক্ষণা বেক্ষণ হয়না বছরের পর বছর।

যমুনা আবার কেড়ে নিচ্ছেল কড়াল গ্রাসে মানুষের বাড়ি ঘর জমি। মহানুভব সে মানুষের মতন কেউ নেই মানুষের জন্য কাজ করার। উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠায় নিজের ঘুম হারাম করে যুমনার পাড়ে জায়নামাজ পেতে বসার। যদিও পদ এবং পদাধিকারী আছেন। পদে না থাকলেও তিনি বারবার মানষের জন্য ছুটে গেছেন শহরে, ঢাকায়। যে কোন মানুষকে সাহায্য করার প্রয়োজনে নিজের লাভ লোকসানের দিকে তাকাননি কখনও ছুটে গেছেন যত দূর সম্ভব। মানুষের কাজটি করে দেওয়াই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।

কর্মমুখি মানুষটি কর্ম থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর হারিয়ে গেলেন অন্যলোকে খুব দ্রুত।





মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: খুব প্রার্থনা করি তিনি যেন সেই অদেখা ভুবনে ভালো থাকেন। শান্তিতে থাকেন।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩২

রোকসানা লেইস বলেছেন: শান্তিতে থাকুন অদেখা ভুবনে......ধন্যবাদ

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০০

মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌ বলেছেন: এরকম নেত্রিত্বের বড় অভাব আজ আমাদের দেশে! আল্লাহ্‌ তা'লা উনাকে বেহেস্ত নসীব করুন।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৩

রোকসানা লেইস বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: তার আত্মা শান্তিতে থাকুক।

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ক্ষমতা মানুষকে লোভী করে তোলে বেশিরভাগ সময়।

মঙ্গলময় তাঁকে শান্তি দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.