নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওয়েস্ট বাস্কেটে মোচড়ানো স্মৃতি অথবা ফড়িংয়ের গল্প

০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৫



ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠেই মনে হত, স্কুলে যেতে হবে! পরক্ষনেই চোখটা আচমকা ভিজে যেত, কেঁপে উঠতো ঠোট।
ছোটবেলার ভাবতাম, বড় হওয়ায় ভালো। স্কুলে যেতে হবে না। নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠতে হবে না, থাকবে না দাঁত ব্রাশ আর টয়লেটের তাড়া। জুতোর ফিতে ফুল করে না বাঁধলেও চলবে।ব্যাগের বোঝা পিঠে চাপিয়ে সোজা স্কুল আর ওদিকে সবাই কত আনন্দ করবে, পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরবে... নারিকেল পড়লে কুড়তে যাবে, পাটকাঠির মাথায় আঠা লাগিয়ে ফড়িংয়ের পিছে ছুটবে, বৃষ্টি হলে ভিজবে, কাঠবিড়ালীর লেজ নাড়ানো দেখবে... আকাশে টেনিস বল ছুঁড়ে দিয়ে লুফে নেয়া শিখবে.....দুপুরে শুয়ে শুয়ে রাশিয়ান গল্পের বই পড়া হবে না.... নদীর ওপারে ছোপ ছোপ সবুজের গাছপালা ঘরবাড়ি পাহাড় আঁকা হবে না...

বড় হয়েছি। আমার হিসেবে ভুল ছিল। ছোটদের বড় হতে নেই।

২.
ফের ফিরে দেখা ফেলে আসে শৈশব
ওয়েস্ট বাস্কেটে মোচড়ানো কাগজের মত পড়ে থাকা স্মৃতি।

ভেবেছিলাম পাখি হব অথবা আকাশ, পাখির জন্য আকাশ;
সুবিশাল নীল!
অতপর আকাশ খুঁজিনি,
খোঁজা হয়নি পাখির হলদে ডানায়
ঝলমলো রৌদ।
আকাশের নীল সুবিশালতার সীমানা পেড়িয়ে হন্যে হয়নি।

একসময় শখ ছিলো ছোট্ট ডানার সবজে ঘাস ফড়িং, কাশবন, কুমড়ো ডগায় তিড়িং বিড়িং।

সবুজ খোঁজা হয়নি
ফড়িংয়ের সাথে তেপান্তর
দেখা হয়নি।
বড় হয়েছি আর শুধু বুড়ো হয়েছি।

৩.
তখন থাকতাম মাটির ঘরে, বাঁশের খুঁটি আর মাথার উপর খড়ের চাল। বৃষ্টি হলে চাল বেয়ে পানি পড়তো। লাল চায়ের মত রং। যেন চা ভেবে খেয়ে ফেলা যায়। আমি বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতাম। বাসায় একটা টেপরেকর্ডার ছিল।আব্বা অনেক রাত পর্যন্ত রেডিও শুনতেন। অনেক রাতে বিদেশী কাহিনী নিয়ে বাংলা নাটক প্রচারিত হত। আমার খুব ভালো মত বোঝার ক্ষমতা ছিলনা। আমি চুপ করে ঘুমের ভান করে পরে থাকতাম... নাটক শুনতে ভালোই লাগতো। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের নাটক, রাশিয়ান ইভানের নাটক, ওডিসি, । কিজিল কাঠের ছড়ি নামে একটা নাটক শুনেছিলাম যদি ঐ বইটা আব্বা আমাকে আগেই কিনে দিয়েছিলেন। বইটার নাম 'রুপেরডালি খেলা।' ঐ নাটকটা শোনার পর থেকে আমি চুপ করে নাটক শুনতে লাগলাম।নেশা হয়ে গেল। এক দিন নাটক শুনছি-
এক ভয়ানক খুনীর রোমহর্ষক নাটক। একের পর এক খুন করছে, টুকরো টুকরো করছে। পুলিশ কিছুই করতে পারছে না।মায়েরা বাচ্চাদের ঘুম পাড়ায় ঐ ভয়াংকর খুনীর নাম বলে।
আমি নাটক শুনছি আর ভয়ে উশখুশ করছি। খুন গুলো যেন আমি নিজে দেখতে পারছি.... কথা বলতে পারছিনা, আব্বা যদি জেনে যায় আমি জেগে আছি!
হঠাত্‍ কৌতুহল নিয়ে বললাম, আব্বা 'রিভার' কি ঐ খুনিটার নাম?
আব্বা বললেন, রিভার না রিপার। খুন করে শরীর বিচ্ছিন্ন করে ফেলতো বলে তাকে 'রিপার' নামে ডাকা হত। ওর আসল নাম হলো জ্যাক।সবাই বলতো 'জ্যাক দ্যা রিপার!'

আমি কল্পনায় শরীর বিচ্ছিন্ন করা খুনীটার কথা ভাবছি আর আব্বা পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আমি রাত জেগে ঘুমের ভান করে নাটক শুনি এটা আব্বা জানতেন এবং জানার পরেও তিনি কিছু বলতেন না! কেন বলতেন না, সেই কথাটা আমার একবারো মনে হলো না। আমি কল্পনায় রিপার কে দেখছি আর আব্বা পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেন..... আমার শৈশব ভালো থেকো।


ছবিঃ ফড়িং চলচ্চিত্র

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৪

আজব লিংকন বলেছেন: আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।
শৈশবে আমি যখন আমার নানুর বাসায় যেতাম সেখানেও এই লেখার মত হুবহুর পরিবেশ ছিল। কাঁঠালের আঠা পাটখড়ির মাথায় লাগিয়ে ফড়িং ধরতাম। মাটির ঘড়। একটা দীর্ঘ সময় কারেন্ট ছিল না ল্যাম্পো আর হ্যারিকেন-এর আলোয় রাতের ভুতের গল্পের আসর। মাটির চুলায় খড়ির জ্বাল ঠেলে নানির হাতের গরম পিঠা চুলার পাশে বসে খাওয়া। বিশাল আঙিনা জুড়ে ফলের গাছ। গাছে চড়ে আম পেয়ারা ডালিম বড়ই জাম কামরাঙ্গা কিংবা আতা পেড়ে খাওয়া। সকালে গরুর দুধ দোহানো দেখা। দুপুরবেলা দলবেঁধে পুকুরে গোসল। অনেক অনেক স্মৃতি...
নস্টালজিক ফিলিং

০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনাকে স্বাগতম। আমার ব্লগে পানির মত অনেক কিছু পেয়েও যেতে পারেন।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৩

বরুণা বলেছেন: আজ আমার মনে পড়েছিলো ছোটবেলায় পড়া কেলেভূত গল্পটা.....
একটা ছোট্ট ছেলে রং করতে খুব ভালোবাসতো।সারাদিন রাত রং করে করে তার সারা গাঁয়ে হাতে পায়ে লেগে গেলো নানারকম রং। সে মায়ের কথা শুনতো না গোসল করতোনা তাই তার নাম হয়ে গেলো কেলেভূত। :)

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯

আজব লিংকন বলেছেন: @বরুণা এটা কি ছিল। হা হা হা... উফ!

৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮

আমি সাজিদ বলেছেন: খারাপ করবেন না ভাই। অবুঝ মানুষ কি আর শৈশব ও স্মৃতিকাতরতা বুঝবে? আপনার লেখা ওই সবজান্তা শমসেরের একশোটা লেখা থেকেও ভালো।

৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯

আমি সাজিদ বলেছেন: মন খারাপ করবেন না ভাই।

৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২

কামাল১৮ বলেছেন: আমি নাটক শুনি ৬২ সালের পর থেকে।ঢাকার নাটক খুব একটা শুনা হতো না।আমাদের এলাকা থেকে ঢাকা ভালো শুনা যেতো না কলকাতাই ভালো শুনা যেতো।শম্ভু মিত্র ও তৃপ্তি মিত্রের নাটক রেডিওতে শুনা মানে দেখার মতো মনে হতো।
তার পর ৭২ ঢাকা চলে এলাম জড়িয়ে গেলাম বামপন্থী রাজনীতির সাথে।জীবন অন্য রকম হয়ে গেলো।তখনো বেইলি রোডে কিছু নাটক দেখা হয়েছে।দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা মনে দাগ কেটেছে।মহিলা সমিতির মঞ্চের সব নাটকই প্রায় দেখা।

৭| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪২

ব্লগ সার্চম্যান ২ বলেছেন: বড় হলেই বুড়ো বা বুড়ি হতে হয় এটাই বাস্তবতা। :|

৮| ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৪৬

সোনাগাজী বলেছেন:



প্রতিদিন ক্লাশের বেশ আগে স্কুলে যাওয়া ছিলো আমার কৈশোরের আনন্দ। ছুটির পর, ফুটবল খেলার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করতাম।

৯| ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আমাদের শৈশব অনেক রঙিন ছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.