নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আড়িয়াল খাঁ'র তীরে বসে ধবধবে সাদা জোস্নার রাতে কোন কারন ছাড়াই একাকী ফেইসবুক নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে একটা হেয়ালি স্ট্যাটাস চোখে পড়লো সাজুর, স্ট্যাটাস পাবলিকে দেয়া বলে ওর ফ্রেন্ড লিস্টের কেউ কেউ কমেন্ট করাতে ওর নিউজ ফিডে শো করেছিল।
স্ট্যাটাস বিবাহে ইচ্ছুক এরকম একজন পার্টনার চাওয়ার বাসনায় নানান শর্ত আরোপ শেষে ইচ্ছুক প্রার্থীগনদের গান গাইতে পারাটা বাড়তি এক্টিভিটিস হিসেবে উল্লেখ করে; গান গাইতে পারলে বাকী সকল শর্ত মাফ ইঙ্গিত করে আলোচনা শেষ করেছেন একজন।
সাজু ভাল গান গাইতে পারে এইরকম একটা কনফিডেন্স তার ভেতরে বহুদিনের, এই গানের জন্যই তার ভালবাসার ময়না পাখি দীপান্বিতা তাকে ভালবেসেছিল, কতদিন কত রাত যে মোবাইলে গান শুনিয়েছে প্রান ভরে দীপান্বিতাকে এই আড়িয়াল খাঁ সাক্ষী। তারপর এই গানের জন্যই দীপান্বিতা সাজুকে ছেড়ে চলে গেল! বলে গেল গান দিয়ে পেট ভরবে কি?
সচরাচর আমাদের সমাজে যা হয় আর কি!
তাই তো সোনালী সুখের ডানায় চড়ে বাবা মায়ের পছন্দের পাত্রকে বিয়ে করে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে আমেরিকার টেক্সাসে পারি জমালো ওর ভালবাসা; ওখানে এখন তার সুখের সংসার। এই সকল পুরানো কথা ভাবতে ভাবতে কখন সেই স্ট্যাটাসের মেয়েটাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে টেরই পায়নি সাজু, মেয়েটি মুহূর্ত কাল মাত্র তারপরেই রিকুয়েস্ট এক্সসেপ্ট করে নেয়ার সাথে সাথে সাজু ম্যাসেজ দিয়েছিল, আমার ফোনটা ধরবেন কি? কোন কথা বলতে হবেনা, ওর বলার ধরনে এমন কিছুই ছিল যে মেয়েটি ফোন রিসিভ করে চুপ করে রইলো, এ প্রান্ত থেকে সাজু তার প্রিয় গায়ক বারি সিদ্দিকির গান ধরলো তার গমগমে গলায়-
শুয়া চাঁন পাখি
আমার শুয়া চাঁন পাখি
আমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকি
আমি ডাকিতাছি, তুমি ঘুমাইছো নাকি…
মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা, পাশের বনে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, রুপালী আলো আর দীপান্বিতার ছলনার শোক এমন ভাবেই সাজুকে আবেগ আপ্লূত করে দিয়েছিল যে একেরপর এক গান গাইতে থাকলোও, গানের সাথে সাথে দুই গাল বেয়ে অঝোর ধারায় ঝরে পড়তে লাগলো চোখের জল, যেন কোন সন্ন্যাসী একাকী দুর্গম দীর্ঘ পথ হেঁটে হেঁটে পাড়ি দিতে দিতে কোথাও একটু খানি জিরিয়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছিল।
সেই রাতের পর আর আগের মতন আঘাত লাগেনি অন্তরে দীপান্বিতাকে ভেবে, সেদিন রাতে ফোনে থাকা অপর প্রান্তের মেয়েটি কিচ্ছু বলেনি শুধু একজন নিরবিচ্ছিন্ন স্রোতা হয়েছিল। মেয়েটির নাম ছিল রুপকথা, সে মাঝে মাঝেই নানান হেয়ালি স্ট্যাটাস লিখতো, সেই হেয়ালি স্ট্যাটাস যে কারো মনে এমন করে ব্যথা বেদনার তুমুল আলোড়নের ঝড় তুলবে কে জানতো।
সেই রুপকথার এইবার একুশে বই মেলায় বই বের হয়েছে; যদিও ওই একবারই রুপকথার সাথে কথা হয়েছিল, এখন যে সে সাজুকে ভুলেই গিয়েছে এরকম হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না, তবু রুকথার বই বের হবার ব্যাপার জানবার পড় থেকে সাজু বইমেলায় যাওয়ার জন্য অস্থির সময় পার করতে থাকে, বর্তমানে সে অনেক কষ্টেসৃষ্টে গ্রামে একটা স্কুল খুলেছে এখানকার বেশিরভাগ পরিবার অতি নিম্নবিত্ত হওয়ায় বাচ্চাদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে প্রায় প্রত্যেকটা পরিবার উদাসীন, বাচ্চাদের মা বাবাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ধরে ধরে এনে তার স্কুলে ভর্তি করিয়ে নিচ্ছে, এসব পরিবার থেকে বাচ্চাদের জন্য কোন বেতন সে নিচ্ছেনা দেবার মত টাকা পয়সা ও তাদের নেই, শিক্ষক হিসেবে সাজু নিজে ও আরো দুই চারজন এলাকার ছোট ভাই সেচ্ছায় ফ্রি সময় দিচ্ছে, সারাদিন এই সব ব্যস্ততার পর ওর প্রিয় আড়িয়াল খাঁর তীরে একাকী বসে রুপকথার কথা ভাবে, কবে কখন কিভাবে যে নিজের অজান্তে মেয়েটি চুপচাপ তার বুকের বা পাশে ঢুকে বসে গিয়েছে! তরতাজা রক্তের মতন মিশে গেছে শিরায় উপশিরায় অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে আবিস্কার করে সে।
সন্ধ্যায় আড়িয়াল খাঁর পানি চিকচিক করতে থাকে চাঁদের আলোয়, সে আলোয় নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগে, কালকিনি থেকে বইমেলা আর কতই বা দূর! কিন্তু এখন এদিক সেদিক টাকা পয়সা খরচ করাই মুশকিল, সাজু একটা এনজিও'তে চাকরী করেছে প্রায় এক বছরের মত, সেখান থেকে বেতন বাবদ যে টাকাটা পেয়েছিল, সেই টাকাটা পুরাই স্কুল খোলার পেছনে ব্যয় করেছে, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্কুল নিবন্ধন, ছয় রুমের এল সাইজের টিনের দেয়াল দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের শ্রেণী কক্ষ তৈরি, বেঞ্চ বোর্ড ইত্যাদি সরঞ্জাম কেনা, এই সামান্য শুরুতেই সব টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ওর, স্কুলের জমি অবশ্য ওদের নিজেদের, সাজুর বাবা মা দুজনেই বিরক্ত ওর উপর অন্যদের ছেলেরা পড়ালেখা শেষ করে চাকরী বাকরি করে সংসারের হাল ধরে আর তার ছেলে কিনা চাকরী ছেড়ে দিয়ে উল্টো তাদের কাছ থেকেই হাত খরচ নিয়ে চলে! তাও তার নিজের জন্য না স্কুল খুলে সমাজ সেবা করার জন্য।
এলাকার ছোট ভাই রুহুল কখন এসে বসেছে সাজুর পাশে টেরই পায়নি ও।
- কি হয়েছে ভাই মন খারাপ?
- নাতো! কখন এসেছিস!
-অনেকক্ষন
- হুম,
-আমি ভাই কাল স্কুলে ক্লাস নিতে যেতে পারবোনা, ঢাকা যাব, একটা ইন্টারভিউ আছে, আমার বদলে আমিনরে বলে দিয়েছি ক্লাস নিতে, আসা করি অসুবিধা হবে না, কথাগুলো শুনে সাজুর মাথায় তখন ঘুরছে অন্য কিছু, মাথা উপর নিচ করে মনের আবেগ অন্তরে চাপা দিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠ করে বলে উঠলো
- ঢাকা গিয়ে থাকবি কোথায়
- এক খালা আছে খিলগাঁও থাকে উনার বাসায়
- আমি যদি সাথে আসি?
- কোন সমস্যা নাই ভাই, আপনি সাথে গেলে বরং আমারই ভাল, একা একা লাগবেনা নিজেরে। কিন্তু স্কুলের কি হবে দুইজনই যদি না থাকি।
- রতনকে আমার দায়িত্ব দিয়ে যাব, দুই একদিন আশা করি ও চালিয়ে নিতে পারবে।
আড়িয়াল খাঁ'র তীর থেকে উঠে দাঁড়ায় সাজু রূপকথাকে সামনা সামনি দেখতে পাওয়ার আশার আনন্দে আপ্লূত হৃদয় নিয়ে, অথচ একদিন এই আড়িয়াল খাঁ'র পাশে দাঁড়িয়ে অস্থির অপেক্ষা করছিল দীপান্বিতার জন্য, এই আড়িয়াল খাঁ' সাক্ষী দীপান্বিতার প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গার চক্রান্ত! কিভাবে অস্বীকার করেছিল সাজুর ভালোবাসা, এই আড়িয়াল খাঁ দেখেছে সাজুর রাত জেগে অপেক্ষা! বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবে দীপান্বিতা; সাজুকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু কি স্বাভাবিক ভাবেই না অস্বীকার করেছিলো সব জানিয়েছিল আসবেনা। সেই সকল ক্ষত ভুলে নতুন করে আশা বাঁধে হৃদয়ে রুপকথার সর্বাঙ্গীণ ভাল হোক এই প্রত্যাশা শুধু, মানুষ দ্বিতীয়বার ভালবাসতে পারে কিনা সাজুর জানা নেই, ওর শুধু রূপকথাকে সামনা সামনি দেখতে পাওয়ার তৃষ্ণা, পাশে থাকতে চাওয়ার নিষিদ্ধ বাসনা এটা কি ভালবাসা নয়?
ঢাকা পৌঁছে রুহুলের খালার বাসায় দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর কিছুক্ষন শুয়ে বসে রেস্ট নিয়ে বইমেলার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ে সাজু, বাস থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে বইমেলার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বুক কাঁপতে থাকে ওর; মোবাইল বের করে আরেকটু সিউর হয় রুপকথা আজ আসবে কি আসবে না মেলায়, সে তো রোজই এসেছে গত কয়দিন, রুপকথা মেলা শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিন তার স্টলে থাকে বিকেল ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত এই রকম প্রমিজ করে রেখেছে তার ফেইসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস পিন করে রেখে। অলরেডি এখন সাড়ে ৪ টা বাজে, সাজুর হাতে ঘড়ি থাকা সত্ত্বেও পকেট থেকে মোবাইল বের করে সময় জেনে নেয় সে, সময় যেন ভুলে যাচ্ছে বার বার।
কুড়ানো বকুল ফুলের মালা বিক্রি করতে থাকা পথ শিশুর মতন সাজু্র নিজেকে বইমেলায় বেমানান লাগে, নানান লোক সমাগম নামী দামি কবি সাহিত্যিক সমস্ত কিছু তার কাছে ঝাপসা লাগে।
অবশেষে এই রকম এলোমেলো দ্রুত অথচ স্থির চিন্তার ভেতর পৌঁছে যায় রুপকথার স্টলে, স্টলের ভেতর দুইজন মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই দেখে এগিয়ে যায়, কাঁপা কাঁপা হাতে রুপকথার বইটি হাতে নেয় সাজু যেন কত কাঙ্ক্ষিত সম্পদ।
স্টলের মেয়েটি হঠাৎ বলে ওঠে এই বইয়ের লেখিকা তো উপস্থিত আছে ভাইয়া, তার অটোগ্রাফ নেবেন না? তারপর রুপকথার দিকে ফিরে ডাকতে থাকে আপু আপনার একটা বই সেল হচ্ছে অটোগ্রাফ দিয়ে যান। রুপকথা যে আশেপাশে থাকতে পারে এরকম কোন মুহূর্তের জন্য ঠিক ওই সময়ই প্রস্তুত করতে পারেনা নিজেকে সাজু, কোন এক অজানা আশঙ্কায় মুহুর্তেই যেন নীল হয়ে যায়, নি:শ্বাস নিতে রীতিমত বাঁধা হচ্ছিল ওর, মনে মনে এত ভালবেসেছে যাকে, সে যদি তাকে দেখে তাচ্ছিল্য করে! এই সত্য সে যে কিছুতেই এক্সেপ্ট করতে পারবে না।
সাজু কোন রকম বলল আপু অটোগ্রাফ লাগবে না, বইটা দেন, বলে হাঁটা দেয় অন্য দিকে; রুপকথা ততক্ষণে খুব কাছে চলে এসেছিল, সাজু দ্রুত মুহুর্তেই ভীরের মধ্যে হারিয়ে যায়। মেলার প্রধান গেট পার না হওয়া পর্যন্ত পেছনে তাকায়নি আর। মনে হচ্ছিলো রুপকথা ঠিক ওর পেছনে পেছনে আসছে।
(২য় ও শেষ পর্ব আগামীকাল এই সময় দেয়া হবে)
ছবিঃ আমার তোলা
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩২
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৩
ইসিয়াক বলেছেন: তারপর.....
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩২
সামিয়া বলেছেন: দিয়েছি্,
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৩৬
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: গল্পের প্রতি পাঠকের আগ্রহ রেখেই শেষ করলেন। ভালো লাগলো পড়ে...
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৪০
সামিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর আধুনিক গল্প।