নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিঃ গুগল
মরুর ঘুম থেকে জেগে ইদানিং খেয়ালে আসেনা কে ও? কি করে, কই থাকে? সে যে একজন মানুষ এই ব্যাপার বুঝতেই অনেক সময় লেগে যায় তার। এর অর্থ কি মরু বিখ্যাত কেউ হয়ে যাচ্ছে? জ্ঞান বিজ্ঞান ঘাঁটলে দেখা যায় অনেক বিখ্যাত মানুষের এই ভুলে যাওয়া অসুখ আছে! বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে নিয়ে একটি গল্প আছে এরকম; যে আইনস্টাইন একবার ট্রেনে চেপে যাবার সময় চেকার সকলের টিকিট চেক করার পর আইনস্টাইনের টিকিট দেখতে চাইলে আইনস্টাইন তাঁর টিকিটটি খুঁজতে থাকেন, পকেটে! হাতে থাকা ব্যাগে! আরো নানা জায়গায়, চেকার আইনস্টাইনকে চিনতে পেরে বললেন,‘স্যার আপনাকে আমি চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চয়ই টিকিট কেটে উঠেছেন। আপনাকে টিকিট দেখাতে হবে না।’
আইনস্টাইন তখন বললেন, ‘না, না, ওটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
না পেলে আমি জানব কী করে যে আমি কোথায় যাচ্ছিলাম!’
পাশের ঘরে বাবা মা আছেন তাদের কথা বার্তার শব্দ আসছে, বাবা বলছে
- মরু কি আজও কলেজে ক্লাস নিতে যাবেনা? এইরকম করে করে চাকরিটাই হারাবে! ওর মা বলছে
-সবকিছু ও যা চায় যেভাবে চায় ওইভাবেই ওকে দেয়ার পরও! যদি ও সেটার ভ্যালু না দেয় তাহলে কার কি করার আছে, আমরা কি মেনে নেইনি! ও নিজেই তো রুড ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিল।নিজেকে নিজেই অশান্তির মধ্যে ফেলে রাখলে কার কি!
গত ছয়মাস ধরে ধীরে ধীরে মরুর মানসিক অবস্থা কেমন ডিমেনশিয়া রোগীর মতন হয়েছে যে; সে নিজে নিজেই ব্যাপারটা অনুমান করছে আজকাল, উদাস মনে জানালার দিকে তাকিয়ে মিষ্টির কথা ভাবতে বসে, মিষ্টি হাসলে ডান গালে একটা টোল পড়ে, কি যে মিষ্টি লাগে তখন ওকে, মানুষের নাম যে এত পারফেক্টলি ম্যাচ করে রাখা যায় ভাবাই যায় না, সাধারণত নামের সাথে হিউম্যান নেচার অপজিট টাইপ হয়, অনার্স পড়ার সময় মরুর ক্লাসে একটা ছেলে ছিল নাম আপেল, নাম শুনলেই মনে একটা লাল টকটকে আপেলের ফিগার ইমাজিনেশন হলেও বাস্তবে সেই আপেলের ব্যবহার ছিল রুক্ষ শুস্ক কুৎসিত আর বাজে। উত্তম নামে আরেকজন ছিল; তখনকার সময়ের যাবতীয় এমন কোন খারাপ কাজ নাই যে সে করেনাই,একটা অনার্স পড়ুয়া ভদ্র ঘরের ছেলে পতিতালয়ে যায় কে বিশ্বাস করবে! তবে সেই উত্তম যেত, নিয়মিত যেত।
মরু এই সব অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি মনে করতে করতে গভীরভাবে কাউকে মিস করছে এইরকম একটা বিরহের চেহারা করে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল বের করে হাতে নিলো। হোয়াটস এপ, ফেইসবুক, মোবাইল কন্টাক্ট সবখান থেকে সে মিষ্টি নামের তার জীবনের বিশেষ একজনকে ব্লক করে রেখেছে, তাকে চিঠি লিখতে শুরু করলো ফেইসবুক অনলি মি স্ট্যাটাসে,
মিষ্টি,
গত ছয় মাস ছয় হাজার বছরের মতন লেগেছে তোমাকে ছাড়া,
তুমি যে এইভাবে আমাকে ভুলতে পারবা এই সত্যটা আমি এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারিনা,
আমি তো এখন এইটাও মেনে নিতে পারছিনা যে তুমি আসলে ছয়মাস ধরে বাড়িতে নাই,
ছয়মাস ধরে বাসায় ফিরে কত বার মনের ভুলে মিষ্টি বলে ডাকলাম
সারা না পেয়ে কতবার চুপ করলাম তুমি দেখলে না,
আমার বুকের উপর মাথা রেখে চুপ করে থাকা তোমার উপস্থিতির অভাবে
আমার ভুলে যাওয়া অসুখ হয়েছে,
কতদিন একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হলনা
কতদিন চা খেলাম না; নতুন করে রাগ করলাম না; ঝগড়া করলাম না,
এই রকম বরফ হয়ে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে; শক্ত হয়ে রইলে কি করে আমার চেহারা ভুলে?
তোমাকে ডেকে ডেকে আমি তবু ক্লান্ত হইনা,
তুমিও শোন না; আমিও ডেকে যাই; মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি।
এই পর্যন্ত ২৩৫ টা স্ট্যাটাস মরু অনলি মি করে পোস্ট করে রেখে দিয়েছে ফেইসবুক ওয়ালে মিষ্টিকে লিখে, ২৩৬ তম এই স্ট্যাটাসে পোস্ট করার সিস্টেমে ছোট্ট একটা ভুল করলেন আনমনে অজান্তে।
মরু রুবিকে ডেকে বললো ওর নাস্তা টেবিলে দিতে সাথে এক কাপ গরম চা, রুবি নামটা মরুই দিয়েছে, মেয়েটি গ্রাম থেকে এসেছে ওদের বাসায় কাজের জন্য, ওর ভালো নাম খাদিজা হলেও মরু ওকে রুবি বলে ডাকে ওর দেখাদেখি মরুর আব্বা আম্মাও রুবি বলে,
কিন্তু একদিন পাশের বাড়ির এক আন্টি এসে মরুকে জানালো রুবির আরো একটা অনেক ভাল নাম, উনি জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের বাসায় রাজকন্যা নামে যে মেয়েটা থাকে ওকে কি একটু ডাকা যাবে? টিকটক আইডি রাজকন্যা! কি দারুন লিপসিং তার! রুবি যে টিকটক খুলে বসে আছে তা মরু জানতই না, কাজেই মরু স্বাভাবিক ভাবেই বলল এরকম কেউ এই বাড়িতে থাকে না, তখনি আড়াল থেকে রুবি বেরিয়ে এলো চোখে মুখে তার টিকটক সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি ভাব! যেন সামনে পাশের বাড়ির আন্টি না লাখ লাখ মানুষ তার সাথে সেলফি তোলার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে, বিভিন্ন চ্যানেল থেকে তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছে; সেই সাক্ষাৎকারে রুবিকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনি কি ভালবাসায় বিশ্বাস করেন, রুবি তখন উদাস হয়ে বলছে পৃথিবীতে ভালবাসা বলে কিছু নেই! অভিনয় সব অভিনয়।
যাই হোক হাতমুখ ধুয়ে টেবিলে নাস্তা করতে বসে মন কেন জানি ফুরফুরে লাগতে শুরু করলো মরুর, কিছুক্ষন আগের ভাবনা গুলো তেমন করে আর মনে করতে পারছেনা; শুধু এই ব্যাপারটা নোটিশ করলো যে চা'টা চায়ের মত ভালো লাগছে না, রুবিকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল যে এইটা চা না, এইটা থ্রি ইন অন নেস্কেফি, মরু কফি খেতে পছন্দ করে এরকম অনুমান থেকে সে আগ বাড়িয়ে দোকান থেকে কফি এনে রেখেছে।
মরু প্রচুর খুশি হবার ভাব ধরে বিস্বাদ কফিটা শেষ করতে করতে বুঝতে পারল; আসলে রুবি বুদ্ধি করে থ্রি ইন অন কফি এনে রেখেছে যেন কম সময়ে তৈরি করতে পারে,সে টিকটক সেলিব্রেটি; বাসার কাজে এত সময় দিলে তার ভিউয়ার্সদের জন্য ভিডিও বানাবে কখন! নাস্তা করতে করতে রুবিকে জিজ্ঞেস করলো-
-তোমার ফলোয়ারদের খবর কি রুবি?
-ফলোয়ারদের খবর ভালোই ভাইজান; আপনাদের দোয়ায় অনেক সাপোর্ট পাই।
মরু নাস্তা শেষ করে উঠে গেল তার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।
বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমেই একটা ফার্মেসীতে ঢুকে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন, কি ওষুধ কিনবে মনে করার চেষ্টা করতে থাকে, দোকানদার একে একে সব কাস্টমারকে বিদায় করে ওর দিকে ফিরে জানতে চাইল কি ওষুধ লাগবে? থতমত খেয়েও কিছুতেই মনে করতে পারলো না ওষুধের নাম, মাথায় একটা নামই ঘুরপাক খাচ্ছে মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি, বলল-
- ভাই মিষ্টি নামে কি কোন ওষুধ আছে?
লোকটা মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে মরুর দিকে চেয়ে, অফিসিয়াল স্যুট টাই পড়া পাগল দেখলে সবারই ভাল লাগে।
রাস্তায় নেমে রিকশায় কলেজের উদ্দেশ্যে যেতে যেতে মনে পড়লো নাপা এক্সট্রার কথা!
মরু কলেজে জিওগ্রাফি পড়ায়, ক্লাসে আজ বেশ কিছু ছেলেমেয়ে মরু ক্লাসে ঢুকতেই ফিসফিস করতে থাকলো সারাক্ষণ! লেকচার দিতে দিতে এদের ফিসফিস একটু বেশি বেশি হওয়ায় মরু লেকচার শেষ করে বিরক্ত হয়ে দাড় করালো কয়েকজনকে,
-এইমাত্র আমি কি পড়াচ্ছিলাম বলো, ফিসফিস তুলনামূলক কম করছে সেই মেয়েটি ইতস্তত করে বলল স্যার ভঙ্গিল পর্বত, ওকে বসিয়ে দিয়ে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করলো-
-ভঙ্গিল পর্বতের নাম গুলো বলো
-স্যার হিমালয়, আল্পস্, রকি,
-এদের বৈশিষ্ট্য কি?
-স্যার ভঙ্গিল পর্বতের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ভাঁজ, ভূ-পৃষ্ঠের কোনো অংশে প্রবল পার্শ্ব চাপের ফলে ভু-ভাগে ক্রমোন্নতি-অবনতির সৃষ্টি হলে সেই স্থানটিতে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়। এধরনের পর্বতগুলো কখনো কখনো ৫০০০ মিটারেরও অধিক উচ্চতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। পৃথিবীর প্রধান পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে এই ধরনের পর্বতের আধিক্য দৃষ্টিগোচর হয়।
যাক ছেলেমেয়েগুলা ফিস ফিস করলেও লেকচার ঠিকই শুনেছে, ক্লাস টাইম প্রায় শেষ; মরু ওদেরকে বসতে বলে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসতে আসতে শুনতে পেল ওরা মরু স্যার মরু স্যার করে সশব্দে আলোচনা করছে।
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মরু টিচার্স রুমে এসে বসলো, সেখানে বাংলার টিচার নিগার আপা টিস্যু হাতে চোখের জল মুছতে মুছতে এডমিনের রাকিব ভাইকে কি কি যেন বলে বলে হ্যাঁ হুতাশ করছেন, রাকিব ভাই নতুন ছাত্রছাত্রীদের এডমিশনের ব্যাপার ও গার্ডিয়ান সকলদের ইম্প্রেস করার জন্য ভার্সিটি সাজানোর নানা লোকজন সরঞ্জাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে মরুর কাছে এসে নিচু গলায় বললেন, নিগার আপার বিড়াল মরে গেছে তাই এত কান্নাকাটি।
এডমিনের এই রাকিব ভাই সবার সুখ দুঃখের সাথী, সবাই তাকে বলতে পছন্দ করেন সেও শুনতে পছন্দ করেন, মোটামুটি সব টিচারদের ঘরে কয়জন সদস্য কে কি করে কার কি সমস্যা সব তার জানা, সে সামনে স্তুপ করে রাখা বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার, কাঁচা ফ্লাওয়ার রঙ্গিন কাগজপত্র আর নানা কিছু নিয়ে কাজ করছেন কলেজ সাজানোর জন্য।
কলেজের জিওগ্রাফির শিক্ষক মরু সেইদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো, এর মধ্যে রাকিব ভাই বেছে বেছে কিছু রজনীগন্ধা, জিপসি, ১৫/২০ টা লাল হলুদ সাদা গোলাপ নিয়ে কাঁটাগুলো ভালো করে সরিয়ে একটা তোড়া বানিয়ে মরুর দিকে দিয়ে বললেন, মরু স্যার আর কত অভিমান করে থাকবেন?এইটা নিয়ে যান; ভাবীকে গিয়ে নিয়ে আসেন, যাওয়ার সময় একটা শাড়িও নিয়ে যাইয়েন।
মরু ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে মিষ্টিকে আনতে শ্বশুর বাড়ি না গিয়ে বাকি দিনটা রমনা পার্কে বসে বসে গাছ পাখি মানুষজন দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিল; সন্ধ্যা নামার পর বাসায় ফেরার জন্য রিকশায় ওঠার কিছুক্ষন পর; লম্বা জ্যামে ঘণ্টাখানেক বসে থাকার পর, রিকশা ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা শাড়ির দোকান চোখে পড়তেই সেটায় ঢুকে দুইটা শাড়ি কিনে ফেলল।
হাল্কা অফ হোয়াইট শাড়ীটা ওর মার জন্য আর ডার্ক নীলরঙের কাঞ্জিভরম শাড়ি কিনল মিষ্টির জন্য।এইগুলো হাতে নিয়ে সে বাসায় চলে আসলো। বাসার পরিবেশ আজ অন্যরকম মরুর পছন্দের সব খাবারের গন্ধে ঘরময় সুঘ্রাণে ভরে আছে, বেড রুমে পরিপাটি বিছানা চাদর। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে চুপ করে বিছানায় শুয়ে কি জানি কি ভাবতে ভাবতে বিষণ্ণ মনে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে থাকার সময় অন্য কারো উপস্থিতি টের পাবার আগেই একদম বুকে এসে পড়লো মিষ্টি।
মরু এতই অবাক হল যে সে বেশ কিছুক্ষন এই ধরে বসে রইলো যে সে এখন ভুলে যাবার পাশাপাশি স্রিজফ্রেনিয়া রোগেও আক্রান্ত হয়ে ভুলভাল দেখা আরম্ভ করেছে, মিষ্টি ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলো--
গত ছয় মাস ছয় হাজার বছরের মতন আমারো লেগেছে তোমাকে ছাড়া,
আমি তোমাকে এক মুহূর্তের জন্য ও ভুলতে পারিনাই,
প্রতিটা ক্ষণ প্রতিটা মুহূর্তে তোমার কথা মনে পড়েছে নিঃশ্বাস নেয়ার মত।
আমি গত ছয়মাসে এখানে না থাকলে ও প্রতি মুহূর্তে তোমার খবর নিয়েছি,
কখন খেলে, কখন বাড়ি ফিরলে, কখন কলেজে গেলে, সব।
আমিও উঠতে বসতে কতবারই তো তোমার নাম ধরে ডেকেছি সাড়া পাবনা জেনেও;
তোমার বুকের উপর মাথা রাখার অভাবে
আমারো ভুলে যাওয়া অসুখ হয়েছে,
কতদিন আমাকে বেড়াতে নিলেনা
কতদিন আমিও তো তোমার সাথে চা খেলাম না, নতুন করে রাগ করলাম না, ঝগড়া করলাম না,
তোমাকে ডেকে ডেকে আমি ও যে ক্লান্ত হইনি ,
তুমি ও তো শোননি আমার ডাক মরু মরু মরু ।
মরুর মিষ্টির মুখে কথাগুলো পরিচিত মনে হলেও! ওসব নিয়ে খুব একটা ভাবনা চিন্তা ছাড়াই, খুশি খুশিতে শাড়ি আর ফুল মিষ্টির হাতে দিয়ে বাকবাকুম করতে করতে বলল যে শাড়িটার নাম কাঞ্জিভরম; সে বাড়ি ফেরার পথে নিজে পছন্দ করে কিনে এনেছে মিষ্টির জন্য, ও যে আসবে না সেটা ধরে নিয়েই আগামীকাল অবশ্যই ওকে আনতে যাবে মনে মনে ঠিক করেছিলো, তারপর বলল আর ফুলের তোড়াটা রাকিব ভাই দিয়েছে তোমার জন্যই, তুমি শাড়িটা পড়ো; আমি মার জন্য আনা শাড়িটা মাকে দিয়ে আসি, বলে মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে খেয়াল করলো না যে পেছনে ফুল আর শাড়ি হাতে নিয়ে বিতৃষ্ণা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে মিষ্টি।
মাকে শাড়ি দিতে গিয়ে জানতে পারল আসল ঘটনা, মরু সকালে যে স্ট্যাটাস লিখে অনলি মি করে পোস্ট দিয়েছি্ল, আসলে সেটা আনমনে পাবলিক করে পোস্ট দেয়ার পর! তার লিস্টে থাকা ছাত্রছাত্রী; কলিগ ও অনুরাগীদের বদৌলতে সেটি ভাইরাল হওয়ায় এই কান সেই কান করে মিষ্টি ও তার পরিবারের দৃষ্টিগোচর হওয়ায়; মিষ্টিকে ওর বাবা মা নিজে এসে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে, আর মিষ্টি ও আবেগাপ্লূত হয়ে প্রতিউত্তর কবিতা লিখে ফেলেছিল মরুকে শোনানোর জন্য।
সারাদিন এত ঘটনার মধ্যে সকালের নাস্তার পর এখন পর্যন্ত কিছু না খাওয়ায় মরু ডাইনিং এ খেতে বসলে মিষ্টি নীল শাড়ি পড়ে রাজরানীর রুপ চেহারার মধ্যেও, নাগীন নাগীন ভাব করে খাবার বেড়ে দিতে দিতে মরুকে খোঁচা মেরে বললো যে; সে মরুকে এতটা ভালবাসে যে বাসায় ফিরেই নিজেই মরুর পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে, মরুর মত অন্য লোকের দেয়া ফুল আনেনি।
এই সময় সেই পাশের বাসার আন্টি এসে হাসতে হাসতে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে খুশি হয়ে বললেন; রাজকন্যার কিছুক্ষন আগের পোস্ট করা একটা ভিডিও দেখে চলে এসেছেন, সে নানারকম খাবারের ভিডিও পোস্ট করেছে, ক্যাপশনে লিখেছে ভাবির আম্মুর রান্না করা মজাদার খাবার! ক্যাপশন পড়েই বুঝেছি মরুর বউ এসেছে, তা কি খবর? তোমার মায়ের হাতের রান্না কি শুধু মরুই খাবে আমরা খাবনা!
মরু অবাক হয়ে মিষ্টির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ধুর বলে খাওয়া রেখে উঠে চলে গেল, মায়ের রান্না করা খাবার এনেছে ভাল কথা বানিয়ে বানিয়ে নিজে রান্না করেছে বলার দরকার কি ছিল।
রাত একটা বেজে গেছে! মরু আর মিষ্টি বিছানার দুই দিকে দুইজন ঘুরে বসে আছে, একজন দেখছে তার ভাইরাল স্ট্যাটাস আরেকজন দেখছে রাজকন্যার ভিডিও। ছয়মাস দূরে থেকে কাছে আসার আবেগ জানালা দিয়ে বাতাসের সাথে পালাই পালাই করছে।
রাত দুইটার দিকে মরু খিদের সাথে আর পেরে না উঠে মিষ্টির দিকে ফিরে বলল, খাবারের সাথে রাগ করে আর কি হবে চল শাশুড়ি মায়ের হাতের রান্নাই খাই। মিষ্টিও সারাদিনের ঝামেলায় ক্লান্ত তাই কথা না বাড়িয়ে দ্রুত উঠে পড়ে মরু সাথে যেতে যেতে বলে রুই মাছের মাথা মুরিঘন্ট করায় স্বাদ হয়েছে, মিষ্টি রিনরিনে গলায় জানালো যে ওটা বাবা মরু চলে আসার পর তখনি খেয়ে ফেলেছে! মরু মনে মনে আহত হলেও আর কথা বাড়ালো না! যা ক্ষুধা লেগেছে দুইদিনের বাসি হলেও এখন আর সমস্যা নাই।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৩৩
সামিয়া বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩১
এম ডি মুসা বলেছেন: গল্প পড়তে আমার বোরিং লাগে! কষ্ট করে অর্ধেক পড়েছি! ধৈর্য হারিয়ে কমেন্ট করছি! মোবাইল দিয়ে পড়ার কারণে ফন্ট ছোট ছিল পড়তে পারি নাই, চশমা ছিল না। সরি
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৩৫
সামিয়া বলেছেন: আহা! আমিও সরি ব্রাদার।
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৩৩
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: বাহ্ সুন্দর গল্প। গল্পের ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম আপুনি।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৩৪
সামিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ,
৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫৫
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ব্লক করে দিলেও আসলে মিষ্টি দের ভুলা যায়না সামিয়া আপু।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৪
সামিয়া বলেছেন: হুম সেটাই তো
৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:২৮
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে। আগের গল্পের নামের কারণে কাহিনীটা আগেই ধরতে পেরেছিলাম। এই গল্পে সে সমস্যায় আর পড়িনি, তাই পড়ে আরামও পেয়েছি।
আইনস্টাইনের ইস্টার এগটাও গল্পে বাড়তি পাওয়া।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৫
সামিয়া বলেছেন: দারুন অনুপ্রেয়নাময় মন্তব্য, ধন্যবাদ ভাই।
৬| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২২
বিজন রয় বলেছেন: আপনার সহজ-সরল লেখা ভালই লাগে। সামাজিক একটি ভাবলুতা আছে।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:৪৬
সামিয়া বলেছেন: ভাললাগলো মন্তব্য পড়ে। ধন্যবাদ অনেক অনেক।
৭| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব গল্প লিখেছেন।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:২৮
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:০৭
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: পড়তে পড়তে প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো মরু কখনই মিষ্টির দেখা পাবে না...
যাক অবচেতন মনে ভালো কিছুই হলো...
ভালো থাকুক যারা, ভালোবাসে যারা...
পড়ে ভালো লাগলো আপা...