নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিঃনেট
আমি মানুষের বাসায় কাজ করি, এখন যেখানে আছি সেই বাসায় কাজ করছি গত তিন বছর, কাজ করতে করতে আমার কখনো মনে হয় নাই আমি এই কাজকর্ম ফেলে পালিয়ে যাই যেটা অধিকাংশ কাজের বুয়ারা চিন্তা করে থাকে কিংবা অনেক সময় পালিয়ে গিয়ে ও থাকে। আমি অন্য সব বুয়ার থেকে এই ক্ষেত্রে চিন্তা ভাবনায় ধ্যান ধারনায় আলাদা।
গত তিন দিন ধরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি, আমার শরীরে জখম, মাথায় ভয়ঙ্কর আঘাত আছে; হয়তো কোমার মধ্যে আছি; এইরকম ধারণা আমার কারন অনেক চেষ্টার পরও কিছু দেখতে পাচ্ছিনা; তাকালে দুই চোখে অন্ধকার দেখি জোর করে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতেও পারিনা; বাধ্য আমি চোখ বন্ধ রাখার ব্যাপারে।
তবে শব্দ শুনতে পাই , দুইজন লোক সারাক্ষন যে আমার আশেপাশে আছে এবং তাদের নানান কথা বার্তা;
-মোটরটা অন করে দেখো; এখন বন্ধ কর, ধীরে ধীরে; এত ফাস্ট ফাস্ট অন অফ করলে তো কিচ্ছু বোঝা যাবেনা,
-সেন্সর কাজ করছে কি?
-তুমি দরকার হয় সফটওয়্যার গুলো সব ডিলেট দিয়ে দাও,
-ডিলেট দিলে তো কোন সমাধান হবেনা তুমি বুঝতে পারছনা কেন? পড়ে ওগুলো পাওয়া যাবে কি না বাজারে তার ঠিক আছে?
-বাজারে খুঁজতে যাবো কেন আমরা কোম্পানির কাছ থেকে চেয়ে নেব,
-হ্যাঁ তারা তো বসে আছে তোমাকে সফটওয়্যার দেয়ার জন্য; গত কয়দিনে এক হাজারবার ফোন করেছি একটা লোক পাঠানোর জন্য, পাঠিয়েছে কাউকে?
যারা কথা বলছেন তাদের খুব ভালো করে চিনতে পারছি আমি; একজন হচ্ছেন ছাগল ভাই; আরেকজন হচ্ছেন আনিকা আপা, ছাগল ভাইয়ের নাম জাওয়াদ আহমেদ ও হয়ে থাকতে পারে; তাকে কেউ নাম জিজ্ঞেস করলে এই নামই বলে থাকেন তবে আনিকা আপা ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে ছাগল বলে ডাকেন সব সময়।
তাদের একটা দুষ্ট বাচ্চা আছে পাঁচ বছরের; ও আমাকে কখন কিভাবে বিপদে ফেলবে সেই চিন্তায় থাকে, ঐ বাচ্চাটার জন্যই এই মৃত্যু দশা আজ; বাচ্চাদের এত আহ্লাদ দেয়া ঠিক না; বাচ্চাদের শাসন অত্যন্ত জরুরী।
গত কয়েকদিন আনিকা আপার কাছে বলতে চাচ্ছিলাম তার বাচ্চার ব্যাপারটা কিন্তু বলি বলি করে আর বলা হলো কই যা হবার তা হয়ে গেলো।
আমি গভীর কোমার মধ্যে, হাত পা নাড়াতে পারছি না, আমার পাশে থাকা আনিকা আপা আর ভাই কথা বললে মনেহয় অনেক দূর থেকে সেই কথা ভেসে আসছে! আমার যে কি হল! এরা আমাকে হসপিটালে কেন নিয়ে যাচ্ছেনা বুঝতে পারছিনা, কাজের লোক বলে কি এরা আমাকে বাঁচাতে কোন চেস্টাই করবে না? মেরে ফেলবে এরকম দিনের পর দিন ঘরে ফেলে রেখে?
এইযে এইমাত্র আমার পাশে রাখা চেয়ারটাতে আনিকা আপা ধুম করে বসে বললো ছাগল। আনিকা আপার মুখে ছাগল শব্দটা শুনতে কি যে মিষ্টি লাগে।
একবার বাসায় দুষ্ট বাচ্চাটার বার্থ ডে পার্টির আয়োজন হলো; বাসা ভর্তি মানুষ গিজগিজ করছে , আমি একা দুহাতে সব কাজ সামলাতে সামলাতে অস্থির, খাওয়া দাওয়া হয়ে গিয়েছে সবার; কেক কাটা পর্ব শুরু হবে, ভাই কেবল কেকটা এনে টেবিলে রেখেছে তাদের দুষ্ট ছেলে কোত্থেকে দৌড়ে এসে ধরাম করে কেকের উপর পড়লো, আনিকা আপা ছেলের দোষ তো দেখবে না! সে চিৎকার করে বললো কেক এখুনি কেন এখানে এনে রেখেছো ছাগল কোথাকার! এক ফোঁটা বুদ্ধি তো মাথায় নেই তোমার।সেদিন ভাই ও সে কি রাগ ব্যাপারটা সবার সামনে ঘটেছে কিনা, ভাইকে আমার বেশি ভালো লাগে তাই আমি তার দলে ছিলাম, তারপর তো একদম দুজনের মাঝে ডিভোর্স হয় হয়।
আমি অবশ্য অনেক খুশি ছিলাম ব্যাপারটায় ভাইকে আমি রান্না করে খাওয়াব বাচ্চা সহ তার মা বিদায় হোক এই বাসা থেকে অনেক বিরক্ত করেছে ছেলেটা আমাকে।
আনিকা আপা তার ছেলের কোন শাসন করেন না এই যে আমি আজ মৃত্যু সজ্জায় কার জন্য! ওর জন্যই তো নাকি, অথচ ছেলেটিকে এখন পর্যন্ত কেউ কিছু বলছে না, ভাই ও বলছে না, বললে নিশ্চয়ই আমি শুনতে পেতাম; এটা গরীবের উপর খুব অন্যায়।
একদিন মাথায় পানি ঢেলে দিয়েছিল ও ভালো করেই জানে পানি আমার কত শত্রু, আমি তো সব আশা ছেড়ে দিয়েছি; এ যাত্রায় আর বাঁচবো না; কাজের লোকেরা এইভাবেই ঘরে ঘরে নির্যাতিত হয়।
হঠাৎ মাথার মধ্যে একটা সাইরেনের মত শব্দ হলো, তারপর সব অন্ধকার; তারপর কিচ্ছু শোনা গেলো না অনেকক্ষন, এর পর ধীরে কথা শোনা গেল আবার; ঝাঁপসা একটু দেখতে পেলাম; আবার অন্ধকার; আবার আলো; আবার অন্ধকার, এইবার পুরোপুরি চোখ খুলতে পারলাম আমি।
ভাই উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে; তার একটু দূরেই আনিকা আপা তাদের বাচ্চাটাও আছে, ভাই বললেন কেমন আছো আসিমো আমাকে চিনতে পারছো? আমি ক্লিক ক্লিক শব্দ করে মাথা উপর নীচ করে বললাম ইয়েস,
আনিকা আপা হাত তালি দিয়ে উঠলো, বাচ্চাটা দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে বললো তোমাকে আর কখনো ব্যাথা দেবনা, ও ভালো কিছু বলছে ধরে নিয়ে ভালোবাসার হালকা নীল আলো জ্বেলে দিলাম চোখে।
আনিকা মিষ্টি হেসে ভাইকে বললো
-জাওয়াদ তুমি তো বাজিমাত করে দিয়েছো হোন্ডার আসিমো হাউজ কিপিং রোবটকে একদম সারিয়ে ফেলেছো!!
ওর বাঙ্গালী কাজের বুয়ার থিঙ্কিং সফটওয়ারটা ঠিক আছে?
-ওটা আগে থেকেই ঠিক ছিল
-হুম ওটার জন্য ও অন্য চিন্তা করতে পারবে না তাই ঐ সফটওয়ারটা খুব জরুরী, যাই হোক নেক্সট কিছু হলে আর রোবট কোম্পানির লোকদের পেছনে ঘুরতে হবে না আমাদের।
ভাইয়ের চোখে মুখে আনন্দ আমাকে সারিয়ে তোলার খুশিতে না আনিকা আপা ছাগল নামে না ডেকে যে নাম সবাইকে সে বলে সেই নামে ডাকার জন্যে কে জানে।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১১
সামিয়া বলেছেন: অলরেডি হয়ে গিয়েছে।
২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
মোটামুটি
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১১
সামিয়া বলেছেন: আমারো তাই মনে হয়েছে লেখা শেষ করার পর।
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: কথায় আছে "যারে দেখতে নারি-তার চলন বাঁকা" আর যাকে ভাল লাগে তার সবকিছুই ভাল লাগে।
তা সে গালি কিংবা শাসন। তা সে ছাগল বলুক বা আরো কঠিন কিছু।কথায় আছে "যারে দেখতে নারি-তার চলন বাঁকা" আর যাকে ভাল লাগে তার সবকিছুই ভাল লাগে।
তা সে গালি কিংবা শাসন। তা সে ছাগল বলুক বা আরো কঠিন কিছু।
আহা ছাগল!! বেশত ছাগল!!! দাড়ি ছাড়া ছাগল।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৩
সামিয়া বলেছেন: কমেন্ট হাসির হলেও মূল্যবান কথা। অনেক ধন্যবাদ। ছাগলের ছবিটা সুন্দর
৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: আনিকা আপার বাচ্চা ভীষন দুষ্ট। এর জন্য দায়ী তার বাবা মা।
সব মিলিয়ে গল্প ভালো হয়েছে।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৪
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ একটু অন্যরকম কিছু লেখার চেষ্টা করেছিলাম।
৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫৪
এম ডি মুসা বলেছেন: অলাদা কথা বলি, একটা রোবট কি রান্না করে খাওয়াতে পারে?
তাকে মেমরি যত দেওয়া আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং বুঝতে পারে।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৬
সামিয়া বলেছেন: জাপানে কিছু রোবট রিসেন্ট তৈরি হয়েছে কিচেনে কাজ করার জন্য রেস্তোরাঁয় অতিথিদের খাবার দেয়ার জন্য, সেই লজিক থেকে এটা লিখলাম। ধন্যবাদ।
৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৩০
এল গ্যাস্ত্রিকো ডি প্রবলেমো বলেছেন: সে যে রোবট এটা আগেই বোঝা যাচ্ছিলো।
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৭
সামিয়া বলেছেন: এটা আমার ব্যর্থতা। লেখায় আরো সময় দেয়ার দরকার ছিল ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:২৯
মাসুদুর রহমান (শাওন) বলেছেন: মানুষের জীবনও এমনই যান্ত্রিক হবার পথে...