নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবিঃ নেট
অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে বসে পড়ে যাবার পরই ঘটনার চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেল। কয়েক মুহূর্ত কিংবা কতক্ষণ অজ্ঞান নামক অন্ধকারে ছিলাম সময়টা ফিক্সড করে বলতে পারিনা, তবে ব্যাপারটা উপভোগ্য ছিল, মানুষজনের এটেনশন পাবার যে একটা ব্যাপার দুনিয়ায় আছে এবং সেটা যে ভালো লাগে খুব তখনি উপলব্ধি করলাম, ব্যাপারটা এই রকম না যে, মঞ্চে উঠে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে ভাষণ দিয়ে নেমে যেতে যেতে লোকের করতালি এবং এপ্রিসিয়েটের ফ্লায়িং ওয়ার্ড শুনে এত চোখ এবং বাক্যের মাঝে কিছুই না অনুভুত হওয়া।
তবে সাধারণ লোকজন কিন্তু অসাধারণ কিংবা খ্যাতিমান মানুষজনই বেশি পছন্দ করে, মানুষই প্রশংসা করে করে সাধারণদের দেবতা বানিয়ে মাথায় তোলে, আবার মানুষই মাথার উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে দেবতাদের নীচে ফেলে।
আমি উপভোগ করছিলাম আমাকে ঘিরে সকলের, সকল অচেনাদের ব্যস্ততা, শঙ্কা, শোক; হ্যাঁ দুই একজনের তো শোকই মনেহল।
জ্ঞান ফিরে পাবার আরও মিনিট দুই পড়ে চোখ খুলে তাকাবার আগেই, আমাকে আমার মন মনে করিয়ে দিলো ট্রেনে আছি, আমায় ঘিরে নানান মানুষের নানান কথাবার্তার শব্দ হতে থাকলো, ট্রেনের পুরো কামরার ভেতরে সবার আমাকে নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আমাকে আরও কিছুক্ষণ অজ্ঞান থাকার উৎসাহ দিয়ে রাখলো।
তারপর যখন চোখ মেলে তাকাবার মতন শক্তি অনুভব করলাম এবং তাকালাম, দেখলাম অনেকগুলো হাত আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে , অবশ্যই সেই কামড়ায় যেহেতু নারী ছিল না, কাজেই সবকটা হাত পুরুষের, অতো ভীরের ভেতরে এইটা আজগুবি হোক কিংবা অলৌকিক হোক, কেউ আমার শরীরের স্পর্শকাতর কোনখানে হাত রাখে নাই, দরজার কাছাকাছি ছিলাম গড়িয়ে পড়ে গেলে একেবারে চাকার নিচে চলে গিয়ে সরাসরি নরকের রাস্তা থেকে রক্ষার জন্যই তারা আমাকে আগলে রাখছেন।
যে ছেলেটা খারাপ ভাবে আমার গায়ে তার কনুই লাগানোর চেষ্টা করছিলেন, সে ও দেখলাম আমার এক বাহু ধরে আছে; এবার তার নিয়ত খারাপ নাহ, প্রকৃতই সাহায্য করবার চেষ্টা।
পাশে থাকা সেই হুজুর সরে গেছেন অথবা তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, তার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সাদামাটা চেহারার রাস্তাঘাটে সচরাচর দেখা যায় এমন কর্মক্লান্ত চেহারার এক যুবক, সেই যুবককে ক্রস করে তার থেকে দেখতে তুলনামুলক সুদর্শন আরেক যুবকের আমাকে সাহায্য করবার পাঁয়তারা।
বেশ অনেকজনের গলা শুনতে পেলাম পানি পানি বলে, ঐ ভীরের মধ্যে কি করে যেন পানি যোগাড় ও হয়ে গেছে, পানি মুখে দেবার আগে বোতলের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম বোতল খারাপ না, এই একই রকম বোতল আমার অফিসে আমিও একটা রাখছিলাম সিঙ্গাপুর থেকে আমার ভাইয়া এনে দিছিলো।
সবার এটেনশন অনেক পাওয়া হয়ে গেছে কাজেই উঠে দাঁড়ালাম, পুরা ট্রেনের তখন আমার প্রতি অনেক মায়া।
ওই ভিড়ের ভেতরে যেখানে একটি সুই রাখার জায়গা নেই সেখানে কি করে যেন সেকেন্ডের মধ্যে আমার বসবার জায়গা করে দিলো, ক্রেডিট আমাকে ঘিয়ে দাঁড়ানো দুই যুবকের,তারা সুপারম্যানের মতন ধরতে গেলে উড়িয়ে নিয়ে আমায় বসতে সাহায্য করলো।
মুরুব্বী টাইপের একজন জানতে চাইলেন আপনার সাথে লোক আছে কেউ? আপনি কি একা? কই যাবেন আপনি? পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো আমি আছি আমি, তারদিকে ফিরে বললাম, আপনি আমার লোক কীভাবে? আপনাকে তো চিনিনা, সে বলল আরে ম্যাডাম আমি আপনারে চিনি, আমি আপনার অফিসেরই একজন, তারপর লোকজনের দিকে তাকিয়ে বলল ম্যাডাম থাকে সারাদিন এসির মধ্যে এত গরম কোনোদিন দেখছে? অজ্ঞান হবে না তো কি হবে!
সবাই সেই লোকরে উপেক্ষা করে আমার খেয়াল ভালো মন্দ ব্যাপারগুলা নিয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে কেউ একজন কোনখান থেকে আমার হ্যান্ডব্যাগ এনে দিলো, এতক্ষন ওটা কই ছিল কার কাছে ছিল আমার হুশ নাই। ব্যাগের ভেতর আছে আইফোন, মোবাইল, টাকার ব্যাগ, এক কোনা খুলে দেখি সব ঠিক আছে। ট্রেন থেকে নামতে নামতে সাদামাটা চেহারার যুবককে জিজ্ঞেস করলাম আপনার নাম কি, সে আমার হাত ধরে ট্রেনের উঁচু দরজা থেকে নামতে সাহায্য করলো, দুর্বল আমি তার সাহায্যের হাত ধরা ও আমার দরকার ছিল; জানালো তার নাম হাসান।
আমার জীবনে বিভিন্ন সময় অচেনা যুবকদের যে সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি তাদের প্রায় প্রত্যেকের নাম হাসান। ট্রেন থেকে নামা সকল যাত্রীরা যারা আমাকে ট্রেনে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বিপদ সম্পর্কে জানেন, তাদের সবার দিকে চেয়ে বিদায় সুচক হাসি দিয়ে প্লাটফর্ম থেকে বেরিয়ে রিক্সা নেয়ার পর দেখি, ট্রেনের তুলনামুলক সুদর্শন যুবক সামনে দাঁড়িয়ে, বললেন তার বাড়ি রংপুর ঢাকার কিছুই সে চেনেন না তবু যদি আমি রাজি থাকি কিংবা সাহায্যের প্রয়োজন হয় তবে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে রাজি আছেন। দুই চোখে তার সরলতা, বললাম আমি ঠিক আছি একাই যেতে পারবো ডোন্ট ওরি।
ঘটনা ঘটার পাঁচদিন পর্যন্ত একটানা অফিসে যাই নাই। অফিসের অনেকে ট্রেনে অজ্ঞান হয়ে যাবার ঘটনা সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করলেন,ট্রেনে আমি তার লোক বলা ব্যাক্তি সম্ভবত সবাইকে ঘটনার ওয়াকিবহাল করেছেন।
পাঁচদিন পর অফিসে যাবার পর মেইল পেলাম অফিস থেকে মেয়েদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছেন।
এক মেয়ে কলিগ আমার দিকে লোভী চোখে চেয়ে বললেন, আপনি আর কয়দিন আগেই যদি ট্রেনে চড়তেন।
আমাদের দেশে সব খারাপ হয়, দেশের সব মানুষ খারাপ, এই ধারণা আমার নানান সময় নানান অভিজ্ঞতায় মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। এই দেশে জন্মেছি বলে কখনো আক্ষেপ হয়নি। নিজের কাজ নিজে করির মতনই দেশের কিংবা দেশের মানুষকে খারাপ খারাপ করে গালি না দিয়ে নিজে কিছু করার জন্য এগিয়ে আসাই হচ্ছে প্রকৃত দেশপ্রেম। নিজের মা বস্তিতে থাকে বলে অট্টালিকায় থাকা অন্য কোন মহিলাকে যেমন মা ডাকা যায় না তেমনি অভিবাসি হয়ে অন্য দেশে পড়ে থেকে গর্ব করার মতন কি এমন আনন্দের ব্যাপার থাকতে পারে??
পথে ঘাটে পর্ব -২৯ প্রথম অংশ
২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮
সামিয়া বলেছেন: প্রথম হবার চেষ্টায় আনন্দিত হয়ে প্রথমবারের মতন কমেন্টে লাইক দিয়েছি। এই সুযগে আরও কিছু লাইন যুক্ত করি তাহলে।
২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: "পরিবর্তন তখনই সম্ভব,
যখন আমরা ব্যক্তিস্বার্থ পরিহার করে মানব কল্যাণে নিয়োজিত হবো"
২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২১
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:১৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: একটা সারাজীবন মনে রাখার মতো একটা অভিজ্ঞতা, সন্দেহ নাই।
শেষের প্যারাতে যা বলেছেন, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হতে পারে, তবে দেশের সব মানুষই খারাপ এটা যদি কেউ বলে তাহলে তার নিজেরই মাথা ঠিক নাই। ভালো-খারাপ নিয়েই এই পৃথিবী। আমাদের দেশ তার বাইরে না।
অন্যকে অবশ্যই মা ডাকা সম্ভব না, তবে সক্ষমতা থাকার পরও যদি শুধুমাত্র স্বভাবদোষে মাকে বস্তিতে রাখি, তাহলে সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই আমাদেরকে ক্ষমা করবেন না।
আপনি ভালো থাকুন, দেশ ভালো থাকুক; এটাই কাম্য।
২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৩
সামিয়া বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়ে মন ভালো হয়ে গেছে। কৃতজ্ঞতা শুভকামনা ও ধন্যবাদ।
৪| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: আপনি সাহসী মেয়ে জানতাম। কিন্তু বাংলাদেশের ট্রেন নামক বস্তুটি যে অতি সাহসীদেরকেও মোটেই পাত্তা দেয় না, একেবারে ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে চলে সে কথা মনে হয় আপনার জানা ছিল না। আমি একবার একবার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। আমারটা লোকাল ছিল না, ছিল আন্তনগর ট্রেন। হাতে মিষ্টির প্যাকেট ছিল। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, সেই মিষ্টি আমি আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারিনি। পুরো প্যাকেট ফেলে দিতে হয়েছিল। এত গাদাগাদি অবস্থা হয়েছিল যে মিষ্টির প্যাকেটটাও আমি বাঁচাতে পারিনি। প্রচন্ড ভীড়ের কারণে চিপায় পড়ে মিষ্টির প্যাকেট পটল তুলেছিল। ট্রেন থেকে নেমে দেখি মিস্টির রসে আমার কাপড়চোপড়ের অবস্থা একেবারে মাখামাখি। আর প্যাকেট চুপসে চ্যাপ্টা হয়ে শুধু একতাল ময়দা হয়ে অবশিষ্ট রয়ে গেছে।
২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬
সামিয়া বলেছেন: ওহফ আপনার অভিজ্ঞতা কতটা তিক্ত অনুমান করতে পারি, সহজে তো অজ্ঞান হয়ে যাইনি। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ, শুভকামনা।
৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আপনি আর কয়দিন আগেই যদি ট্রেনে চড়তেন।
আমিও একবার হাসানের ভুমিকায় অবতির্ন হইছিলাম ।
অভিবাসিরা অন্য দেশে পড়ে থেকে গর্ব করেন না, তারা ভাল আছেন এমন প্রচার করে নিজের মন কে সান্তনা দেন।
২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯
সামিয়া বলেছেন: আপনাকে যতটুকু চিনেছি তাতে ধারণা করা যায় আপনি একজন পরোপকারী মানুষ, কাজেই আপনার হাসানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া আশ্চর্য কিছু না।
আর আপনি তো অভিবাসীদের ফিলোসফি অত্যন্ত ভালোভাবে ধরতে পেরেছেন।। আসলে তাদের এই অবস্থা!!
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, শুভকামনা।
৬| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৮
কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: শায়মাপুর মতন ইতিমনির সব কিছুতেই আমি মুগ্ধ..............
২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৩
সামিয়া বলেছেন: আপনি বলেছিলেন লেখাটি পড়ার অপেক্ষায় থাকবেন, সত্যি পড়বেন ভাবিনি,
শায়মাপুর মতন ইতিমনির সব কিছুতেই আমি মুগ্ধ. শায়মা আপু তো বেস্ট, তার সাথে আমাকে মেলালে হয়!! তবে নামে নামে মিল কিন্তু , আমাদের, শায়মা সামিয়া
"শায়মা সামিয়া
আমরা দুটি বোন"" ছড়া বানাইছি
৭| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫৮
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
ট্রেনে কি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছিলেন?
৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৯:৪৬
সামিয়া বলেছেন: উফফ
৮| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৩২
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা, সুন্দর পোস্ট
৩০ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৪০
সামিয়া বলেছেন: ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ, শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬
ভুয়া মফিজ বলেছেন: প্রথম হওয়ার চেষ্টা, পড়ে নিয়ে আবার আসছি।