নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কুঁজো হয়ে বসে আছি কানে ধরে আছি দুই হাঁটুর নীচের ভাজ দিয়ে হাত বের করে, কিছুতেই ধরতে পারছিনা বার বার সরে যাচ্ছে হাত সেই জন্য জঘন্য সব কথা শুনতে হচ্ছে।
ওহ না না আমি পারছিনা আমি পারছিনা আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ, আমার এখন এসব করবার বয়স না ঊনআশি বছর বয়সের বৃদ্ধ আমি আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না?
-চুপ করুন, একদম কথা বলবেন না কথা বলে বলে আমার মাথা নষ্ট করে দিয়েছেন আপনি।
-তাই বলে আমার সাথে এভাবে অন্যায় করবেন?
-কোন অন্যায় করা হচ্ছেনা আপনার সাথে,
-অন্যায় করা হচ্ছেনা? ঊনআশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন আপনাদের আর্মি ট্রেনিং এ তবু অন্যায় হচ্ছে না?
-কিশের অন্যায় আপনি নিজে থেকেই এখানে এসেছেন, আবার জয়েন করেছেন এখন এই সকল রুলস আপনাকে ফলো করতেই হবে।
-আপনারা কি বলছেন আবোল তাবোল আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না একবার চাকরীতে রিজাইন দিয়ে চলে গেলে আবার জয়েন করা যায় না।
-যায়
-কে বলেছে
-আমি বলেছি আমাদের সরকারের করে দেয়া আইন এটা।
-আপনি ভুল বলছেন,
-ঠিকাছে হয়তো আমি ভুল বলছি কিন্তু আমি বিশ বছর আগে রিজাইন দিয়েছি তারপর আর এই চাকরীতে জয়েন করিনি,
-করেছেন
-কেন আপনারা এমন করছেন আমি বৃদ্ধ মানুষ প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
-উঠে দাঁড়ান আপনি এখুনি উঠে দাঁড়ান বাঁশিতে ফু দেয়ার সাথে সাথে আমি দুই কিলোমিটার দৌড়াবেন।আমাদের পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, তাড়াতাড়ি উঠুন উঠুন দৌড়ান ওয়ান টু থ্রি.............
-বাবা, আপনাদের অবশ্যই ভুল হয়েছে আমি একটানা দশ মিনিট হাঁটলেই হাঁপিয়ে যাই আর আপনি কিনা বলছেন দুই কিলোমিটার দৌড়াতে, বোঝার চেষ্টা করুন বাবা আমি ঊনআশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধ।
-চুপ চুপ একদম চুপ। বুঝেছি বুঝেছি, আপনাকে শাস্তি না দিলে ঠিক হবেন না, এই কে আছিস এইদিকে আয়, তাড়াতাড়ি। একে গায়ে এক বালতি বরফ ঢেলে দিয়ে যা, সে আমাদের সৈন্য বাহিনীর মর্যাদা এবং শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে।
-শৃঙ্খলা নষ্ট করেছি? আমি? দেখুন দেখুন স্যার আপনাদের কোথাও ভুল হয়েছে।
এমন সময় কে জানি হিমশীতল বরফ ঢেলে দিলো বৃদ্ধের সারা শরীরে, কাঁপতে কাঁপতে ঠাণ্ডায় নীল হয়ে গেলো বৃদ্ধ। ঘুম ভাঙল প্রবল ঝাঁকুনিতে, পাশেই তার স্ত্রী জুলেখা, সেই জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছিল কি হয়েছে? হয়েছে কি আপনার এত কাঁপছেন কেন??
ঠাণ্ডায় জমে গেছেন বৃদ্ধ কোন রকম কাঁপতে কাঁপতে বললেন আমার গাঁয়ে কম্বল পেঁচিয়ে দাও খুব শীত খুব শীত, বরফ বরফ উফ বরফ এত ঠাণ্ডা, জুলেখা যত্ন করে কম্বল জড়িয়ে দেয় তার স্বামীকে, ধীরে একটু সু স্থির হয়ে এলে কোমল গলায় জিজ্ঞেস করে জুলেখা সেই দুঃস্বপ্নটা আবার দেখেছেন বুঝি??
-ওরা না মানতেই চায় না আমি যে চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছি, আমাকে বলে কিনা দুই কিলোমিটার দৌড়াতে, আমি ঊনআশি বছরের বৃদ্ধ মানুষ পারিনা দশ মিনিট হাঁটতে, থাক থাক আর বলতে হবেনা, যখন ঘুমাবেন তখন চাকরী নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না ঠিক আছে?
-তাহলে কি নিয়ে চিন্তা করবো?
-চিন্তা করবেন আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে নাতীনাতনী নিয়ে, আমাকে নিয়ে আমাদের সংসার নিয়ে।
-আর সংসার, সংসারের আর কিই বা আছে?
- সবই আছে, যতদিন আপনি আমি আছি ততদিন আমাদের সংসার ও আছে বুঝলেন?
আচ্ছা বলে বৃদ্ধ ছোট একটা নিঃশ্বাস নেয়।
জানলার গ্রিল বেয়ে কীভাবে যেন একটি ঝিঙার লতা বেয়ে উঠেছে, প্রতিদিন জানলা বন্ধ করা হয় তখন নিশ্চয়ই চাপ লাগে ওটার গায়ে, তবু কি করে টিকে আছে ওটা! এরকম কি মানুষের জীবন, সয়ে সয়ে ব্যথায় আর আঘাতের পর আঘাত নিয়েই টিকে থাকে বুঝি।কিন্তু ঐ দুঃস্বপ্নটা ভীষণ ভোগাচ্ছে, এই নিয়ে ছয় বার দেখা হল, খুবি বাজে স্বপ্ন, এরপর পাঁচ দিন কেটে গেলো ভালোই ঐ খারাপ দুঃস্বপ্নটা এলোনা বৃদ্ধের স্বপ্নে, জুলেখাও খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়। আর তারপরই আবার একদিন
- এই এই আপনি এখানে কি করছেন?? আপনি প্রতি পদে পদে আমাদের আইন আমাদের নিয়ম আমাদের শৃঙ্খলা নষ্ট করছেন?
-আবার আমি স্বপ্নে?
-আপনি স্বপ্নে না বাস্তবে? আপনি বৃদ্ধ হয়েছেন বাতাশে? স্বপ্ন আর বাস্তবের পার্থক্য ধরতে পারেন না বোকার হদ্দ কোথাকার! আরে আপনি নিজের গায়ে চিমটি দিন হ্যাঁ এইতো স্বপ্ন মনে হচ্ছে? ব্যথা লাগছে না? এবার বুঝুন স্বপ্নতে কেউ ব্যথা পায়?
-তারমানে এটা বাস্তব?
-হ্যাঁ হ্যাঁ বাস্তব বাস্তব, আপনি কি ভেবেছেন আপনার সাথে আমরা তামাশা করতে বসেছি, উঠুন দাঁড়ান যান প্র্যাকটিস করে নিন আমাদের পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, উঠুন উঠুন বলছি,বলতে বলতে কি জোরে যে ঝাঁকুনি দিলো লোকটি যে জেগে ওঠার পর ও বৃদ্ধ পুরো এক ঘণ্টা থর থর করে কাঁপলো, পাশেই টেবিলের উপর জগ গ্লাস রাখা, সেটা থেকে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো, তার স্ত্রী জুলেখা গভীর ঘুমে ছিল তাকে আর বিরক্ত করলো না।
কতক্ষন ঘুমিয়েছিল মনে নেই, শেষ রাতের দিকে আবার স্বপ্নটি দেখলো তবে তেমন কোন আঘাত কিংবা ভয় পেলো না, এবার দেখলো সে একটি রাইফেল পরিস্কার করছে, তার মত অনেকেই তাদের রাইফেল পরিস্কার করছে, বোঝাই যাচ্ছে কোন এক যুদ্ধের প্রস্তুতি, আর কিছু ঘটলো না ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
সারাদিন বৃদ্ধের অস্বাভাবিক চিন্তায় কাটলো, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে ভাবতে গেলে এটা কেবলি একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র। কিন্তু তবু মনটা কেমন জানি করছে, পাশের বাড়ি থেকে রহিম সাহেব এসে বেশ কিছুক্ষন গল্প করে গেছেন, তার বয়স বৃদ্ধের থেকে অনেক কম, তাই সে তার দুঃস্বপ্নের কথা বলি বলি করেও শেষ পর্যন্ত আর বললেন না। যখন রাত হল, কিছুতেই তার বিছানায় ঘুমাতে যেতে ইচ্ছে করছিলো না, জুলেখা এসে কপালে হাত রেখে কয়েকবার পরীক্ষা করে গেছে জ্বর এসেছে কিনা, নাহ! আসেনি, তারপর যখন রাত বারোটা বাজলো কিছুতেই আর চোখের পাতা মেলে রাখতে পারছিলনা, তাই বাধ্য হয়েই ঘুমাতে গেলো।।
কানে নানারকম শব্দ আসতে শুরু করলো, সবাই দৌড়াচ্ছে ছুটছে, কেউ কেউ রাইফেল দিয়ে অনবরত গুলি ছুড়ছে, বৃদ্ধ ব্যাকুল হয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে, চিৎকার করে জানতে চাইছে, আমি কোথায়? কেউ তো বল এটা কিশের যুদ্ধ? কেউ তো বল আমায়? ওরা কারা? কিশের জন্য এই যুদ্ধ? আমাকে বাঁচাও সরাও আমাকে এখান থেকে, আমি রাইফেল চালাতে ভুলে গেছি, সেই বিশ বছর আগে আমি রাইফেল চালিয়েছি এখন আর সে সব কিছু মনে নেই, আরে আরে আমার গায়ে গুলি লেগে যাবে তো! ওহ না না! আমার হাত! ওহ আমার পেটটা, আমার পেটটা একদম ফুটো করে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো গুলি, বাঁচাও বাঁচাও! পানি পানি! একটু পানি খাব। আমাকে কেউ একটু পানি দাও, আমি! আমি ঊনআশি বছর বয়সের এক বৃদ্ধ, চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছি বিশ বছর আগে।
সকালে অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে জুলেখা, স্বামীকে অনেকদিন পর স্বস্তিতে ঘুমাতে দেখে আর টু শব্দটি ও করেনি, ঝটপট রান্না ঘরে এসে নাস্তা বানিয়ে তবেই ডাকতে গেলো স্বামীকে।
যখন বৃদ্ধের শরীর স্পর্শ করলো, ততক্ষনে দেহটি বরফের মতন ঠাণ্ডা আর ভারী হয়ে গেছে।
২৬ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:২৩
সামিয়া বলেছেন: Well... Next time try করবো যেনো শেষে গিয়ে হতাশ হতে না হয়। ধন্যবাদ।
২| ২৬ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৪৯
কাইকর বলেছেন: ভাল লিখেছেন
২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৩
সামিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভকামনা
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯
স্রাঞ্জি সে বলেছেন: প্রথমে ভালও লাগল, কিন্তু সমাপ্তিতে আমিও শেষ। মন খারাপ হয়ে গেল।
২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৪
সামিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভকামনা রইল
৪| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: আপু শুভেচ্ছা নেবেন। গল্পের একেবারে শেষ লাইনটি আমার সবচেয়ে মনে ধরেছে। একজন ঊনাশি বছর বয়সের বৃদ্ধের স্বপ্নের কাহিনী হলেও শেষ লাইনে এসে তাঁর দীর্ঘ জীবন যুদ্ধের অবসান হয়েছে। মৃত্যুর মাধ্যমে চিরনিদ্রায় গেলেন তিনি। জীবন যুদ্ধ থেকে পুরোপুরি অবসর নিয়ে না ফেরার দেশে।
গল্পটির মূল বক্তব্য বৃদ্ধের মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতি, দেশের কোন অসংগতি, নাকি জীবন যুদ্ধের পরিসমাপ্তি তা আমার কাছে স্পষ্ট হয়নি। পাশাপাশি, গল্পে ছোটখাটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রের উপস্থিতি থাকলে গল্পটি আরো প্রাণবন্ত হতো। শেষের টুইস্টের মতো আরো কিছু নাটকীয় দিক আপনার লেখায় আশা করছিলাম।
পড়ে মনে হয়েছে, লেখায় একটু তাড়াহুড়ো ছিল। আশা করি আমার কমেন্ট পড়ে মাইন্ড করবেন না। প্রিয় মানুষদের লেখাগুলোকে আরো বেশি গতিশীল দেখতে চাই। আপনি আমার পছন্দের একজন লেখক তাই কথাগুলো দাবী নিয়েই বললাম; আমি আপনার ফলোয়ার। আশা করি, সহজভাবে নেবেন।
(কিছু টাইপিং মিসটেক আছে। এডিট করলে ঠিক হয়ে যাবে)।
২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৪
সামিয়া বলেছেন: অনুপ্রেরণা ও বিশ্লেষণী মন্তব্য জানাবার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, ভবিষ্যতে আমি এই ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখব, ভাল থাকুন ভাইয়া শুভকামনা সব সময়।
৫| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:১০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: রিটায়ারমেন্টের পরও বেচারা আর্মি লাইফের তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলতে পারে নাই। এমনটাই হয়.....শয়নে, স্বপনে, নিদ্রায়, জাগরনে দুঃস্বপ্ন তাড়া করে ফেরে!
দারুন কল্পনাশক্তি আপনার। +++++
২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৫
সামিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা
৬| ২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬
রাজীব নুর বলেছেন: মনে হলো যেন অনুবাদ গল্প পড়লাম।
২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:১৭
সামিয়া বলেছেন: হাহাহা আমি কথাও বলি এভাবে, আমার এক বন্ধু বলে তুমি বিদেশীদের মত কথা বলো, ও অবশ্য কোলকাতার সুতরাং ওর সামনে আসলেই আমি বিদেশি, যাইহোক এটা অনুবাদ গল্প নয় ভাল থাকুন ভাইয়া শুভকামনা...
৭| ০১ লা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০২
জাহিদ অনিক বলেছেন:
গল্পটি অফ লাইনে পড়েছিলাম।
আপনার অন্যতম একটি ব্যতিক্রম ভাবনার একটি লেখা। একজন লেখকের এভাবে সবদিকেই ভাবনার তলোয়ার চালানো উচিত।
একজন বৃদ্ধ যে শেষ বয়সে গিয়েও ছুটি পায় না- তাকে তাড়া করে কর্তব্যের মরিচীকা।
খুব ভালো লাগলো আপু।
০৩ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:১৮
সামিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই শুভকামনা
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ২:১১
ঋতো আহমেদ বলেছেন: ভালোই। শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু শেষে এসে একটু হতাশ হয়েছি।