নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবেনা, কোন টিউশনি করাবেনা, ফোন করে সব স্টুডেন্টকে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে, নাবিল আসছে, নাবিল আসছে, দুইবার আনমনে বলে ওঠে ও, আজ চার বছর ২ মাস পর দেখা হবে ওদের, একা একাই হিসেব করে তন্দ্রা, চার বছর!কত লম্বা সময়! অথচ মনে হয় এই তো সেদিন, নাবিল ইউ’কে যাওয়ার আগের দিন তন্দ্রার সাথে দেখা করেছিলো, সেদিন মেয়েদের মত করে সেকি কেঁদেছিল ছেলেটা। এখনও নাবিলের কান্নার মুহূর্ত, ওর চোখের জলে ভিজে ওঠা মুখ, চোখ,গাল, এলোমেলো না আঁচড়ানো চুল, পার্কের বেঞ্চ, হাতে ধরে রাখা মোবাইল, হাতা গুটানো শার্ট, ওর চোখে ভাসছে! এই তো সেদিন!
দিনগুলো কত দ্রুত যে চলে যায়, সেদিন নাবিল ওকে কত অনুরোধ অনুনয় যে করেছিলো তুমিও চলো তন্দ্রা, কিন্তু ইউ’কে যেয়ে লেখাপড়া করার মত সামর্থ্য যে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তন্দ্রার নেই, কিংবা বাড়ি থেকেও যে অনুমতি মিলবেনা সেটা তো নাবিলের অজানা নয়। তবে কেন এরকম অবুঝের মত কথা বলেছিল!!
নাবিলের ইউ’কে পড়াশুনার ব্যাপারটা ওর বাবার হঠাৎ সিদ্ধান্তেই, আর বেশ ঝটপট সব রেডি হয়ে গেলো, দেশের পড়াশুনার থেকে বাইরের দেশে পড়াশুনা করলে নাবিলের জন্য বেটার ফিউচার তাই ওর বাবার এই সিদ্ধান্ত। অবশ্য নাবিলের যে কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক তা ওদের পরিবারের কেউ জানেনা।
এয়ারপোর্ট পৌঁছে ফ্লাইট ল্যান্ডিং টাইম জেনে নিয়ে একটা পত্রিকা কিনে লাগোয়া রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়তে লাগলো তন্দ্রা, এভাবে অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে আসেপাশে, তারপরও সবাই তন্দ্রাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে!
একটা নীল সাদা শাড়ি পড়েছে ও, হ্যান্ডব্যাগের পাশেই রাখা এক গুচ্ছ গ্লাডিওলাস , রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে বানানো ফুলের তোড়া। এখনও অনেক সময় বাকী, অনেক আগেই চলে এসেছে তন্দ্রা।
সারাটা রাত নাবিলের কথা ভেবে ভেবে নির্ঘুম কেটেছে বলে বসে বসে অপেক্ষা করে করে ঝিমুতে লাগলো এবং এক সময় খেয়াল করলো অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে, আর মাত্র মিনিট ত্রিশেক দেড়ি। তারপরই নাবিল ওর সামনে থাকবে। আচ্ছা নাবিল কি এতদিন পর তন্দ্রাকে দেখে জড়িয়ে ধরবে? ওর রিলেটিভদের কেউ সাথে থাকলে! ও অবশ্য মেইলে লিখেছিল অসুবিধা নেই তুমি এয়ারপোর্ট এসো, তারমানে হয়ত তেমন কেউ থাকবেনা। হয়ত কেবল ওদের বাসার ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়েছে ওকে রিসিভ করতে, কিংবা নাবিলই হয়ত মানা করেছে কাউকে আসতে, যেই এক রোখা ছেলে।
ইউ’কে যাওয়ার পর নাবিল প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো পড়াশুনা নিয়ে, এফ,বিতে তো নাম মাত্র একটা প্রোফাইল আছে ওর, তবু মাসে অন্তত একবার তন্দ্রার সাথে সময় বের করে কথা বলতো নাবিল, বেচারা!! এত্ত ভালো কেন যে বাসে ছেলেটা ওকে! আনমনে ভাবতে থাকে তন্দ্রা।
প্রচণ্ড রোদ উঠেছে আজ, হঠাৎ হঠাৎ গাড়ি হুসহাস করে সাইড দিয়ে চলে যাচ্ছে, একটু দূরে একটা কাঠবাদাম গাছ ভর্তি পাখি কিচিরমিচির করছে, মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে থাকে সেদিকে।
সকালে কিছুই খেয়ে না আসায় হঠাৎ খুব ক্লান্তি বোধ করে ও, হেঁটে হেঁটে একটা দোকানে এসে এক কাপ চা নিতে নিতে খেয়াল করে, এগারোটা বেজে গেছে! এর মধ্যে নাবিল চলে এলো নাতো!!
চায়ের কাপ রেখেই দৌড় দেয় ও। যেখান দিয়ে যাত্রীরা বের হচ্ছে ওখানে গিয়ে দেখে অনেকেই ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে, এক লোক লাল গেঞ্জি আর সানগ্লাস পড়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে একটা মাইক্রো এগিয়ে যেতেই তাতে উঠে পড়লো, এক বিদেশিনী কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো, এরপর সেও চলে গেলো, এরকম আরও আরও যাত্রীরা বের হলো চলেও গেলো কিন্তু নাবিলকে কোথাও দেখা গেলনা। নাবিলের কি তবে ফ্লাইট লেট! কি ব্যাপার! কি হলো! চিন্তার সাথে সাথে মনটা ও ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে তন্দ্রার।
ঠিক তক্ষুনি অফ হোয়াইট লং স্কার্ট পড়া একটা মেয়ের হাত ধরে বেরিয়ে এলো নাবিল।
তাদের কথা বলার ধরন মুখমণ্ডলের বহিঃপ্রকাশ দেখে যে কেউ বুঝবে তাদের ভেতর সম্পর্ক কি! মেয়েটি প্রায় লেপটে আছে নাবিলের শরীরের সাথে! কি যেন কি মনে আসতেই নাবিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে কথা বলতে বলতে হেসেই খুন! নাবিল আলতো করে নাক টেনে দেয় মেয়েটির! সেকি মুগ্ধতার ঝিলিক দুজন দুজনের প্রতি। সেদিকে চেয়ে থাকতে থাকতে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে থাকে তন্দ্রার। দৃশ্যটি অবিশ্বাস্য!
দৃশ্যটি বাস্তব কিছুতেই হতে পারেনা, যা কিছু হচ্ছে সব ভুল সব মিথ্যা এটা একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়! ঘুম ভাঙলেই দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে।
এক মহিলার বড্ড আনন্দময় কথা কানে আসে, আমাদের নাবিলটা দেখি বিদেশ থেকে পুতুল বিয়ে করে নিয়ে এসেছে গো একদম পুতুল একটা।
পিছিয়ে আসে তন্দ্রা!
যে সত্যি একটি মানুষের জীবন ধংস করে দেয় যে সত্যির ভেতরে লুকিয়ে থাকে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতা সেই সত্যির মুখোমুখি না হওয়াই ভালো!
দ্রুত পায়ে হাঁটতে শুরু করে ও, দুরের ওই আকাশটার শেষ সীমানা পর্যন্ত এক্ষুনি পৌঁছানো ভীষণ জরুরী যেন।!
এক্ষুনি হেঁটে হেঁটে পুরো পৃথিবীটা ঘুরে ঘুরে না দেখলেই নয়! ওকে ভালোবাসা নামের নিষ্ঠুরতা থেকে ছুটে পালাতে হবে; যত তাড়াতাড়ি সম্ভব! বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছে কেন! দুচোখ অন্ধকার হয়ে আসছে।
থামলে চলবে না, একবার থেমে গেলেই পরাজিত! ওকে যে করেই হোক সমস্ত বেদনাকে, সমস্ত পরাজয়কে, সমস্ত মিথ্যাকে, সমস্ত উপেক্ষাকে, সমস্ত বৈষম্যকে, সমস্ত ঘৃণাকে, সমস্ত প্রতিশোধকে সমস্ত ক্লান্তিকে, সমস্ত চোখের জলকে দু পায়ে মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই হবে।।
''শুনি ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে
অতল জলের আহ্বান।
মন রয় না, রয় না, রয় না ঘরে,
চঞ্চল প্রাণ।
ভাসায়ে দিব আপনারে,
সকল ভাবনা-ডুবানো ধারায়
করিব স্নান।
ব্যর্থ বাসনার দাহ
হবে নির্বাণ।''
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৪
সামিয়া বলেছেন: এত্ত গুলা প্লাস!!! অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭
পুলহ বলেছেন: শেষের কবিতাটা কার? রবীন্দ্রনাথের?
আপনার লেখা নিশ্চিতভাবেই সাবলীল। মনের ভাবের সহজ অথচ শক্তিশালী প্রকাশ।
লেখার প্রথমে ছবিটা দেখে কৌতূহলী হয়েই পড়তে ঢুকেছিলাম, কারণ আমার একটা লেখায় ( আবহমান ) আমি এক্সাক্টলি এই ছবিটাই ব্যবহার করেছি!!!
শুভকামনা জানবেন লেখিকা।
নাবিলের শরিলের সাথে-< শরীরের সাথে, পায়ে মারিয়ে-< পায়ে মাড়িয়ে
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১৮
সামিয়া বলেছেন: হুম রবীন্দ্রনাথের, একবার ভেবেছিলাম উল্লেখ করে দেব, পড়ে ভাবলাম রবীন্দ্রনাথের লেখা কে না চিনবে,
বানান ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা, অনেক অনেক থ্যাংকস।
৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫
অন্তু নীল বলেছেন:
চার বছর অনেক সময়। গল্পে আর বাস্তবে স্বাভাবিক ঘটনা।
ভালো লাগল।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ অন্ত নীল
৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০০
আনু মোল্লাহ বলেছেন: বেশ ভাল লিখেছেন। শুভকামনা জানাই
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৫
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ আনু মোল্লাহ
৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬
শাহরিয়ার কবীর বলেছেন: গল্প সুন্দর হয়েছে।
পড়ে ভালো লাগা রেখে গেলাম।
শুভ কামনা।
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৭
সামিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ শাহরিয়ার কবীর
৬| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৭
করুণাধারা বলেছেন: ভাল লাগল।
এবার তন্দ্রার ঘুরে দাড়ানোর পালা। আপনার লেখনী ভাল, লিখে ফেলুন তাড়াতাড়ি ।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩০
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ করুণাধারা
৭| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৫
ভ্রমরের ডানা বলেছেন:
গল্প ভাল্লাগসে!
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩০
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ ডানা
৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৪
ক্লে ডল বলেছেন: অটঃ আপনার কলিগ জেনি এখন কেমন আছেন?
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫
সামিয়া বলেছেন: জেনিকে আই সি ইউ থেকে এখন কেবিনে দিয়েছে, পায়ের শেষ যে সার্জারিটা হয়েছিলো, ওটা নাকি খুব নিখুত রকম ভালো হয়েছে, পা ঠিক হবে ডাক্তাররা আশাবাদী। মানসিক অবস্থা একি রকম ১ অথবা ২ বছরের বাচ্চাদের মতন অঙ্গ ভঙ্গি করে, কথা তো বলতে পারেই না, কথা বলতে পারবে কিনা সেন্স ফিরে আসবে কিনা এ ব্যাপারে ডাক্তাররা কিছু বলছেনা,
৯| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৯
দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: চমৎকার লিখেছন , শুভ সকাল ।
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯
সামিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ দৃষ্টিসীমানা
শুভ সকাল
১০| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৯
সাদা মনের মানুষ বলেছেন:
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪২
সামিয়া বলেছেন:
শুভ সকাল
১১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫১
অন্তহীন অরণ্য বলেছেন: লেখার মাঝে একদম ডুবে গিয়েছিলাম। অসাধারণ!
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
সামিয়া বলেছেন: জেনে খুব ভালোলাগলো, লেখা সার্থক হল, ধন্যবাদ অন্তহীন অরণ্য
১২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০০
সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এমনটি হয়, বিশেষ করে গ্রাম থেকে বিদেশে বা শহরে পড়তে বা কর্মক্ষেত্রে গেলে, বাস্তবতার ছোয়া মাখা গল্পের জন্য শুভেচ্ছা অনেক।
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪
সামিয়া বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
১৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৭
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বেশ ভাল লাগল । পড়তে না পড়তেই শেষ
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৫
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ মোস্তফা সোহেল
১৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪০
রাকিব সামছ বলেছেন: দারুন লেখা। আবারো একদমেই শেষ। আপনি লিখে যান আর আমরা পড়ে যাই। ভাল থাকবেন।
১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯
সামিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক অনেক রাকিব সামছ
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: লেখনি একবোরে টেনে নিয়ে গেল...
জলের তোড়ে যেমন আপনাত্ে িভসে েযতে েহয়....
কষ্টকে ফোটতে এমর লাইন- মুগ্ধকর েরাখে ---দুরের ওই আকাশটার শেষ সীমানা পর্যন্ত এক্ষুনি পৌঁছানো ভীষণ জরুরী যেন।!
++++++++++