নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগের স্বত্বাধিকারী সামিয়া

সামিয়া

Every breath is a blessing of Allah.

সামিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথে ঘাটে পর্ব (১৭)

১৩ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৩১

গাড়িতে যখন মহিলাটি উঠে ঠিক আমার সামনে ইঞ্জিনের উপর বসার জন্য বিছিয়ে রাখা ফোমের সীটে বসলো; ভাবিনি তার কিছুক্ষন পর তার কাছ থেকে কি নিদারুন তিক্ত ব্যাবহার পেতে যাচ্ছি। সে খিলক্ষেত থেকে বাসে উঠেছিল।
বিশ্বরোড আসতেই আমার পাশের জন নেমে যাওয়ায় সে বসতে উদ্যত হল। তার পেট মোটা ডাহুস ব্যাগটা আমার দিকে এগিয়ে ধরল, অধিকারহীন অধিকারের সাহায্যের জন্য।

এত মোটা ব্যাগ কেন আমার দিকে বাড়িয়ে ধরেছে! আমাকে দিচ্ছে কেন confused হয়ে সামান্য ন্যানো সেকেন্ড আমি দেরি করেছিলাম আর ধরতে ধরতে নিজের অজান্তেই বলেছিলাম কেন!? ব্যাস; এটা উনার চোখে ছিল তীব্র ঘৃণিত বাজে লোয়ার ক্লাস ম্যানারলেস অপরাধ। আমি কেন বলতে বলতে ব্যাগ কিন্তু ঠিকই ধরেছি।

সে উঠে আমার গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসলো, এবং শুরু করলো আমার কঠিন অপরাধের বকা। তার প্রথম ওয়ার্ড ছিল ম্যানারলেস কোথাকার দিয়ে।
বলছিলও বেশ জোরে জোরে, উনার মোটা ভারী পুরুষালী কণ্ঠস্বর। মোষের মত গড়ন এবং চেহারা, তার ঠিক সামনেই মিষ্টি চেহারার এক আন্টি বসা, তার দিকে ফিরে বলল দেখছেন আপা কি ম্যানারলেস! কি বেয়াদব একটা! আমি ব্যাগটা এগিয়ে দিয়েছি ধরতে আমাকে বলে কেন! আরে বেয়াদব এইটুকু জানিসনা! এইগুলা আসে কোত্থেকে!!

আমি আমার অপর পাশে বসা মেয়েটির দিকে তাকালাম, মিন মিন করে বললাম উনি কি আমাকে এগুলো বলছে!!! কেন বলছে! ব্যাগ তো ধরেছি!! মেয়েটি কোন কথা না বলে দুইবার তার উঁচু দাঁতগুলো জিভ দিয়ে চাঁটা দিয়ে অন্যদিকে ফিরল, অর্থাৎ সে কোন ঝামেলায় জড়াতে চায়না।

মহিলা বলেই যাচ্ছে, লেবাস দেখছেন?? মুখের মধ্যে কি একটা পেঁচিয়ে রাখছে জামায়াত শিবিরের দল এইগুলা; মাথায় ও ঘোমটা, এইগুলার সাথে একটু কথা বলতে যান দেখবেন শরিয়া আর হাদিস কোরআন নিয়া কত কত ফতোয়া দিবে, এইগুলা মানুষ না কুত্তার জাত মানুষেরে হাত পা এর রগ,গলা কেটে কীভাবে মেরে ফেলে দেখেন না!! এইগুলার খবর পত্রিকায় তো দেখি। কি পরিমান যে খারাপ! এদের নিজের জীবনে দেখেন গিয়া শান্তি নাই এই জন্য অন্য মানুষের জীবন দোজখ বানিয়ে রাখে, আরে রাবিশ ম্যানারলেস তোদের দোজখে তোরাই পুড়ে মরবি।


আমি সম্পূর্ণ বধীর হয়ে যেতে চাইলাম! এসব কি বলছে উনি!! এগুলো আমাকে দেখে তার কেন মনে হচ্ছে যা আমি না ঠিক সেই ভিন্ন এঙ্গেল থেকে আমার সম্পর্কে উনি ধারনা করে গালাগালি করে যাচ্ছেন!! মনের দিক থেকে আমি পুরোপুরি আহত ক্ষত বিক্ষত! রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করে আছি কখন বাস গন্তব্যে পৌছবে। আর আমি একটু বেঁচে উঠি।

আমার খুব ঘনঘন ভাইরাস জ্বর হওয়ায় ডাক্তার এর পরামর্শে মুখে মাস্ক ইউজ করা শুরু করেছিলাম, কেনোনা ডাক্তার এর ধারনা যেহেতু আমায় ঘনঘন জ্বর অ্যাটাক করছে সো শহরের ধুলাবালির পরিমান যেহেতু খুব বেশি আর আমি ডেইলি যাতায়াত করি তাই আমার জ্বর প্রপারলি রিকভার করছেনা, তাই আমাকে টানা অন্তত ১ মাস মুখে মাস্ক লাগিয়ে ডাক্তার চলাফেরা করতে বলেছিল, আমি ওই মুহূর্তেই মাস্ক খুলে ফেলেছিলাম যখন বলেছিল মুখের মধ্যে কি একটা লাগিয়ে রাখছে!! আর মাথায় কাপড় দেয়া অবশ্যই অবশ্যই আমাদের অফিস রুলস। রুলস না থাকলেও যে মাথায় কাপড় দিতাম না তা বলছিনা।

যাই হোক সে আমাকে আরও আরও গালাগালি করে আমার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে নৌবাহিনী সদর দপ্তরের গেট পর্যন্ত পৌঁছাল, আমি চুপ ছিলাম, এছাড়া কিছু করার ও ছিলনা, ওসব কথার কিই বা জবাব দেয়া যায়!

সদর দপ্তরের সামনে বিশাল সিগন্যালে প্রায় ঘণ্টাখানেক আটকে ছিল বাস। প্রচণ্ড গরম। মহিলা তখন থামল। উনার সাথে তখন ও আমার গায়ে গা লাগিয়ে বসা, যে আন্টির দিকে ফিরে আমাকে বকাঝকা করছিল তার মুখ তখনও ছিল হাসি হাসি। আমার মন ছিল মৃত্যুর মত বিস্বাদ।


আমি জানি এইরকম খারাপ সময় মানুষের জীবনে আসে! কিছু কিছু মুহূর্ত আসে যখন নিজেকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর মনেহয়, মনেহয় আমি এত কুৎসিত আর এত ছোট!!

আমার গায়ে সেদিনও জ্বর ছিল! উনি যদি আমার মা হতেন তবে কি এমন বাজে কথা আমায় বলতে পারতেন!
অবশ্যই না!
ব্যাপারটা এখন এমন কেন যে আমরা কোন কিছু না জেনে না বুঝেই মানুষের সম্পর্কে মন্তব্য করে বসি। এবং শুধু নিজে এবং নিজের আপনজনের গুণগান করি এবং অন্য মানুষ বলতেই খারাপ। অন্য মানুষ মানেই চাইলেই তাকে আঘাত করা যাবে এবং সেটা থেকে তীব্র আনন্দের স্বাদ পাওয়া যাবে!


নিজের সম্পর্কে কেন মানুষ এত অন্ধ হয়ে যাবে যে নিজের সামান্য ভুল ত্রুটি ও নিজেরা ধরতে নারাজ। যেন প্রত্যেকে ভুল ত্রুটির উর্ধে। যেন উনারা প্রত্যেকে আল্লাহর বানানো ফেরেশতা, আর এত এত জ্ঞানী তাদের চিন্তা চেতনা কাজে কোন ভুল হতেই পারেনা।


দুইটা দল হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে।
একদল শুধু মাত্র ইসলামের জয়গান এবং বাড়াবাড়ি রকম ইসলামের নামে মেয়েদের হাটা চলা পর্দা বেপর্দা নিয়া গীবত করে বেড়ানো এবং ধর্মের সহজ নিয়ম কানুন নিজেদের মত কঠিন থেকে কঠিনতম করে নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের মত করে নানা যুক্তি তর্ক দিয়া প্রমানে লিপ্ত থাকা তাদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ না বল তুমি শাহবাগি জাহান্নামী অশ্লীল।

আর একদল আছে যাদের শুধু মাত্র ইসলাম ধর্ম নিয়া সমস্যা। তাদেরও কাজ হল শুধু মাত্র আল্লাহকে অস্বীকার করা এবং তা নানা যুক্তি তর্ক দিয়া প্রমানে লিপ্ত থাকা এবং ধর্মে বিশ্বাসীদের নিয়া হাসি ঠাট্টা গালাগালি ও নির্বোধ বলে রঙ তামাশা করা, তাদের হ্যাঁ তে হ্যাঁ না বল তুমি ছাগু। আই এস হেন তেন।


কারো নিজস্ব মতামত চিন্তা ধারা চাপিয়ে দেয়া উস্কানি দেয়া এই গুলো যে কি পরিমান ক্ষতিকর!! আমার কি রাইট আছে অন্যকে নিয়ে খারাপ কথা বলার!।
প্রত্যেকের নিজের মত করে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারোই নেই।


পথেঘাটে নিয়া লেখা মানুষজনের সাথে আমার প্রায়ই দেখা হয়ে যায়।ওই মহিলার সাথেও একদিন দেখা হয়েছিল, তার চেহারায় এক বিষাদ বেদনা সুস্পষ্ট সেদিন, মুখতো এমনিতেই কালো আরও কালো করে সে অন্যদিকে মুখ করে বসেছিল। আমার দিকে ইচ্ছে করেই যে চোখ পড়ছেনা সে কথা স্পষ্ট। আমার খুব ইচ্ছে করছিল তার কাছে যেয়ে বলি আন্টি আমিতো বুঝিনি আপনি আপনার ব্যাগ কেন আমার দিকে বাড়িয়ে ধরেছিলেন তাই বলেছি কেন আর মাথায় কাপড় দেয়া আমাদের অফিস রুলস আমি কোন জামায়াত শিবির না, আপনি কেন আমাকে এত বাজে বাজে কথা বললেন সেদিন!!
খুবিই ছেলে মানুষী টাইপ চিন্তা ভাবনা। আমি প্রচণ্ড বোকা হয়ে যাই মাঝে মাঝে।

কমন কথা হল কেউ কাউকে ব্যথা দিয়ে যন্ত্রনা দিয়ে অথবা ক্ষতি করে শান্তিতে থাকতে পারেনা, সেই মন্দ কথা সেই যন্ত্রনা সেই ক্ষতি দিগুন হয়ে এক সময় ফিরে আসবেই, এটা প্রকৃতির নিয়ম।

আর একটা ব্যাপার অপরাধীরা জীবনের এক সময় এসে অপরাধবোধে ভুগবেই। এটাই তাদের অপরাধের শাস্তি। এই শাস্তি ভয়ংকর।


বিঃ দ্রঃ এটা কোন গল্প নয় আমার জীবনে পথে ঘাটে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:১৫

কানিজ রিনা বলেছেন: অপরাধীরা জীবনের একটা সময় এসে
অপরাধ বোধে যন্ত্রনা নেমে আসবেই।
আর সেই যন্ত্রনাই তাদের শাস্তি।
এটাই সত্যি, ধন্যবাদ।

১৩ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

সামিয়া বলেছেন: মন্তব্য পড়ে খুব ভালোলাগলো, ভালো থাকবেন কানিজ রিনা ।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল আপু।
আপনার লেখা বরাবরই ভাল হয়

১৩ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬

সামিয়া বলেছেন: তোমার লেখা ও তো অনেক ভালো মোস্তফা সোহেল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.